করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মাঝে পাকিস্তানে ডাক্তাররা কেন বিক্ষোভে?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১২ এপ্রিল ২০২০, ০৯:৫২
ছবিটা হওয়ার কথা ছিল আনুষ্ঠানিক এক বৈঠকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা দেয়ার একটি ছবি।
কিন্তু তার বদলে টুইটারে ছড়িয়ে পড়া পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির ব্যয়বহুল এন-৯৫ মাস্ক পরা ছবিটি পাকিস্তান সরকার ও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সম্মুখভাগে থাকা সেনাদের মধ্যকার উত্তেজনাটা আরো উস্কে দিয়েছে।
পাকিস্তান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (পিএমএ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল : ‘বিভিন্ন মিটিং এবং পরিদর্শনে রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের এন-৯৫ মাস্ক পরতে দেখা গেলেও এই ধরণের মাস্ক এবং পিপিই পেতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।’
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় বিশ্বের অনেক দেশই তাদের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকলেও পাকিস্তানের একটি শহরে - যেখানে এখন পর্যন্ত ২৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে - পিপিই'র সংকটের কারণে চিকিৎসকরা বিক্ষোভ করায় পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
তারপর থেকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আলভি ব্যাখ্যা করে যাচ্ছেন যে, ওই মাস্কটি সম্প্রতি চীনে সফর করার সময় তাকে উপহার দেয়া হয়েছিল এবং তারপর থেকে ওই একটি মাস্কই তিনি ব্যবহার করেছেন। বর্তমানে তিনি সাধারণ একটা মাস্কই ব্যবহার করছেন বলেও জানান।
কিন্তু পাকিস্তানের চিকিৎসকরা তাতেও খুশি নন।
গত মাসের শুরু থেকে পাকিস্তানে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে পিপিই সংকটের বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেছে।
গত বছরের শেষদিকে পাকিস্তানের সরকার চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিতদের শীর্ষস্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা পাকিস্তান মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (পিএমডিসি) বন্ধ করে দেয়ার বিস্ময়কর সিদ্ধান্ত জানানোর মাস ছয়েক পরই সেখানে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হয়।
পাকিস্তানে আনুমানিক ২ লাখের মতো চিকিৎসক রয়েছে।
ওই সিদ্ধান্তের ফলে ১৫ হাজার নতুন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট তাদের সনদপত্র পাননি আর প্রায় ৩০ হাজার চিকিৎসক তাদের নিয়মিত পাঁচ বছরের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ নবায়ন করতে পারছেন না, যেটি না করলে দেশে এবং দেশের বাইরে আইনত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারবেন না তারা।
এসব বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের চিকিৎসকদের মধ্যে এমনিই ক্ষোভ বিরাজ করেছিল, তার উপর সুরক্ষা উপকরণের ঘাটতি থাকার বিষয়টি সামনে আসার পর পুরো দেশেই চিকিৎসকরা বিভিন্ন মাত্রায় বিক্ষোভ এবং আন্দোলন শুরু করেছেন।
তবে কোনো অঞ্চলের বিক্ষোভই কোয়েটার মতো সহিংস ছিল না - আর তার পেছনে যুক্তিযুক্ত কিছু কারণও ছিল।
পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশ - যেখানে বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে মাত্র দু'টি, যার দুটিই রাজধানী কোয়েটায় - রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত হওয়ায় সেখানে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এমনিতেই কম। প্রায় দুই দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো সেখানে বিদ্রোহ করার চেষ্টা করে আসছে।
ফেব্রুয়ারি ও মার্চে ইরান থেকে আসা হাজার হাজার তীর্থযাত্রীদের মাধ্যমে বালুচিস্তানে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়, যা ছিল পাকিস্তানের প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা।
ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পরপরই তাফতান সীমান্ত অঞ্চলে কোয়ারেন্টাইন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়, কিন্তু ওই ব্যবস্থা 'খুবই অপ্রতুল এবং অপেশাদার' ছিল বলে সমালোচনা করেন বালুচিস্তানের তরুণ ডাক্তারদের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির খান।
তিনি বলেন, ‘ঐ ক্যাম্পে মানুষকে গাদাগাদি করে রাখা হয়, তার কারণে যাদের মধ্যে সংক্রমণ ছিল না তারাও সংক্রমিত হয়েছে।’
দুই সপ্তাহ আগে কোয়েটায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ৯৬ জনের ৪০ জনের মধ্যেই যখন কোনো ভ্রমণের ইতিহাস পাওয়া যায়নি - অর্থাৎ সামাজিক সংক্রমণ হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায় - তখন চিকিৎসকদের মধ্যে আশঙ্কা আরো বেড়েছে।
এরপর চিকিৎসকরা সুরক্ষা উপকরণের দাবি জানালে কেন্দ্রীয় সরকার সেগুলোর ব্যবস্থা করে এবং এন-৯৫ মাস্কের রসিদে সই করে স্থানীয় হাসপাতালগুলো।
কিন্তু পরে দেখা যায় মাস্কগুলো আসলে কে-৯৫ মাস্ক, যেগুলো নরসুন্দররা বিউটি পার্লারে চুল কাটার সময় ব্যবহার করেন।
এখন পর্যন্ত কোয়েটায় অন্তত ১৭ জন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তার চেয়েও ভয়ের বিষয় হলো, ডাক্তার ইয়াসির খানের ভাষ্যমতে, কোয়েটার আক্রান্ত কোনো স্বাস্থ্যকর্মীই করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
কোয়েটার তরুণ চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়াইডিএ'র হিসেব অনুযায়ী বালুচিস্তানই একমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশ নয়। ওয়াইডিএ'র হিসেবে ১৬ জন চিকিৎসক এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এবং করাচি ও গিলজিত-বালতিস্তানে দুইজন চিকিৎসকও আক্রান্ত হয়েছেন।
কতজন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছে, সেই তথ্য জানতে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বিবিসি অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বুধবার অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যখন কোয়েটার সিভিল হাসপাতাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে পদযাত্রা করে বিক্ষোভরত চিকিৎসকরা।
অর্ধেক রাস্তায় পুলিশ তাদের থামায় এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করার সময় চিকিৎসকদের লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। আহত হন অনেকে, গ্রেফতার করা হয় প্রায় ২৫ জনকে।
এরপর তাদের ছেড়ে দেয়া হয় এবং তারা ধর্মঘটও প্রত্যাহার করে নেয়।
তবে পিপিই'র দাবিতে তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। সরকার যদিও বলছে যে তাদের জন্য পিপিই পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তা এখনো তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।
সূত্র : বিবিসি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা