১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারত থেকে বাংলাদেশীদের ‘পুশব্যাক’ নিয়ে কিছুই জানতাম না : মমতা

- সংগৃহীত

ভারত থেকে সম্প্রতি শত শত কথিত বাংলাদেশীকে পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে সীমান্ত পার করিয়ে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দাবি করেছেন তিনি সে ব্যাপারে বিন্দুবিসর্গও জানতেন না। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মমতা ব্যানার্জি আরো বলেছেন, এই ধরনের কথিত ‘পুশব্যাকে’র প্রশ্নে তার সরকার সিদ্ধান্ত নেবে মানবিকতার ভিত্তিতেই।

রাজ্যের অ্যাক্টিভিস্ট ও মানবাধিকার কর্মীরা অবশ্য বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা - কারণ তার সরকারের সক্রিয় সমর্থন ছাড়া সন্দেভাজন বাংলাদেশীদের সীমান্তের অন্য পারে ঠেলে দেয়া কিছুতেই সম্ভব নয়। বস্তুত ভারতের নানা প্রান্ত থেকে অবৈধ বাংলাদেশী সন্দেহে আটক নারী-পুরুষদের দলে দলে কলকাতায় নিয়ে এসে গোপনে ও জোর করে সীমান্ত পার করিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করে আসছে মাসদুয়েক আগে থেকেই।

গত বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ব্যাঙ্গালোর থেকে ৫৯ জনের এমনই একটি দলকে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসা হয়, কিন্তু দিনতিনেক বাদেই তারা সবাই রাতারাতি উধাও হয়ে যান।

গত সপ্তাহা বিবিসি উর্দুকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী দাবি করেছেন, তার সরকার এ ব্যাপারে কিছুই জানত না।

মমতা ব্যানার্জি ওই সাক্ষাৎকারে বলেন,‘এখানে যখন ওদের পাঠিয়েছিল আমাদের বলে-কয়ে কিছু পাঠায়নি। ওরা এখানে আসার পর আমরা দেখলাম। তখন ওদের খাবারদাবারও কিছু জোটেনি। এরপর দুদিনের জন্য আমরা ওদের এখানে থাকা-খাওয়ার সব বন্দোবস্ত করেছিলাম। কিন্তু তারপর ওদের কী হল, সে ব্যাপারে আমাদের কাছে আর কোনও খবর নেই।’

কিন্তু তাহলে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার যখন এভাবে কথিত বাংলাদেশীদের সীমান্তের অন্য পারে ঠেলে দিতে চায়, সেখানে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের কি কোনও ভূমিকা-ই থাকে না?

এ প্রশ্নের জবাবে মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘এখানে আমার কী করা উচিত, কী করব সেটা এখনই আমি বলতে চাই না। এটা আসলে পরিস্থতির ওপর নির্ভর করে। আগামীতে কেমন পরিস্থিতি আসে, লোকজন বিষয়টা নিয়ে কী ভাবছে, কী ঘটছে, কোনটা সঠিক বা কোনটা বেঠিক হচ্ছে, কীসে মানবিকতা আছে, কীসে ন্যায় আছে সেটাও আমাদের দেখতে হয়। তবে এটাও বলব, আমাদের ভারত এক বিরাট দেশ - আর এখানে নাগরিকত্ব একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। সেখানে অমুককে বের করে দাও, তমুককে বের করে দাও, এ সব যা ইচ্ছে তাই বলব - এগুলো একেবারেই ঠিক নয়। মানুষের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার ক্ষমতা কারওরই নেই!’

পুশব্যাকের গোটা প্রক্রিয়া থেকে মমতা ব্যানার্জি এভাবে নিজেকে দূরে রাখতে চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা মাসুমের কর্ণধার কীরীটি রায় কিন্তু বলছেন, যেভাবে গোটা ব্যাপারটায় রাজ্য সরকার জড়িত ছিল তাতে বোঝা যায় মুখ্যমন্ত্রী মোটেই সত্যি বলছেন না।

তার কথায়,‘এই রাজ্যেই তো ওই বাংলাদেশীদের এতদিন ধরে রাখা হল। সরকারের বিডিও (স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা) তাদের থাকতে দিলেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা করল, বড় বড় পুলিশ কর্মকর্তারা তদারকি করলেন - আর এখন বলা হচ্ছে কিছুই জানতাম না?’

‘এমন কী বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের হাতে ওই মানুষগুলোকে তুলেও দেয়া হয়েছে। তিন দিন পর তাদের গোপনে বর্ডারও পার করিয়ে দেয়া হয়েছে। আপনারাই বলুন, রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছাড়া এগুলো কীভাবে সম্ভব?’, পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।

ব্যাঙ্গালোর থেকে নিয়ে আসা কথিত বাংলাদেশীদের জোর করে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হাওড়া রেলস্টেশনে গিয়েছিলেন অ্যাক্টিভিস্ট নিশা বিশ্বাস। তিনিও বিবিসিকে বলেছেন,‘মুখ্যমন্ত্রীর এভাবে দায় এড়ানোর চেষ্টা খুবই হাস্যকর। কথিত বাংলাদেশীরা তো এখানে রাজ্য সরকারের হেফাজতেই ছিল।’

‘সেই এতগুলো লোক কি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল? ভোররাতে সরকার বাস পাঠিয়ে এতগুলো লোককে তুলে নিয়ে গেল, আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন আমি কিছুই জানতাম না? এটা কি হয় না কি? আমরা আরও শুনেছি এই রাজ্যের উত্তরপ্রান্তের সীমান্ত দিয়েই তাদের ঠেলে দেয়া হয়েছে। কাজেই মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলছেন, তা কিছুতেই সম্ভব নয়।’

এমন কী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কথিত বাংলাদেশীদের ব্যাপারে ‘মানবিক অবস্থান’ নিয়ে থাকে - মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবিও নস্যাৎ করে দিচ্ছেন কীরীটি রায়।

‘প্রতি মাসে আমরা কম করে এমন অন্তত দুটো ঘটনা পাই যেখানে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোনোর জন্য বাংলাদেশী নারী-শিশুদের বিরুদ্ধেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার ক্রিমিনাল কেস দিয়ে থাকে’, বলছিলেন কীরীটি রায়।

তিনি আরো বলছিলেন,‘রাজ্য সরকারের পুলিশই সেই মামলাগুলো দেয়, আদালতে দাঁড়িয়ে সরকারি কৌঁসুলি সেই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে সওয়াল করে যান - এ জিনিস তো চলছেই!’

ফলে রাজ্য সরকারের সম্পূর্ণ অগোচরেই পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়ে কথিত বাংলাদেশীদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে - স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই দাবি করলেও অনেকেই তার কথা বিশ্বাস করতে পারছেন না। সূত্র : বিবিসি।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইলপন্থীদের আধিক্য ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায়, অসন্তুষ্ট মুসলিম ভোটাররা সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার ‘বাংলাদেশের ২০২৪ সালের বন্যা মোকাবেলা করেছে তরুণ সমাজ’ সংশোধিত বাজেটে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা যাবে না ১৫ বছরের জঞ্জাল ৩ মাসে দূর করা সম্ভব নয় : তারেক রহমান শেখ মুজিবের ছবির ব্যাপারে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র বিষয় আছে গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সমর্থন দেবে ব্রিটেন আরো ৬০ দিন বাড়ল সশস্ত্রবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আ’লীগসহ ২৬ দলের মতামত না চাওয়ার ব্যাখ্যা দিলো নির্বাচন সংস্কার কমিশন পোপ ফ্রান্সিস ও ড. ইউনূসের নামে ভ্যাটিকানের নতুন উদ্যোগ আমিরাতে সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ ২ মাস বেড়েছে

সকল