২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের ধর্মঘট

ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের ধর্মঘট - সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও হায়দরাবাদসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের একটি সরকারি হাসপাতালের ৮০ জন চিকিৎসক পদত্যাগ করেছেন। গত মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। চতুর্থ দিনের মতো আজ তারা ধর্মঘট পালন করছেন।
গত মঙ্গলবার হাসপাতালে মারা যাওয়া এক রোগীর আত্মীয়রা এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালের দুই জুনিয়র চিকিৎসককে অপদস্ত করে। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হুঁশিয়ারিকে না মেনে চিকিৎসকদের তরফ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিরাপত্তা না পাবেন ততক্ষণ তারা কাজে ফিরবেন না।
শুধু এনআরএস নয় রাজ্যের সব হাসপাতালেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর জেরেই কলকাতার আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৮০ জন চিকিৎসক একযোগে ইস্তফা দিলেন। এর মধ্যে অনেক সিনিয়র চিকিৎসকও রয়েছেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রথমত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। দ্বিতীয়ত, রাজ্যের হাসপাতালগুলোতে যে পরিস্থিতি চলছে, তা পুরোপুরি প্রশাসনিক ব্যর্থতা। এর দায় রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। এই দায় তাকেই নিতে হবে। সিনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, রাজ্যের প্রত্যেকটি হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং পরিকাঠামোয় দুরবস্থা চলছে। এই অবস্থায় চিকিৎসকদের পাশে না থেকে মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে চিকিৎসকদের হুমকি দিলেন তা তারা মেনে নিতে পারছেন না।
এমন অবস্থায় ইন্টার্নদের পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্তাররা কার্যত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। আর তা শুরু হলো আরজিকর হাসপাতালের ৭০ থেকে ৮০ জন চিকিৎসকের গণইস্তফার মধ্য দিয়েই।

পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে নয়াদিল্লি, মুম্বাই ও হায়দরাবাদের চিকিৎসকেরাও এক দিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার থেকেই পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকরা ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন। চতুর্থ দিনের মতো আজ তারা ধর্মঘট পালন করছেন।

আগেই নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সের সব পরিষেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এনআরএসের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন করতে কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, মহারাষ্ট্রসহ একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) এবং মুম্বাইয়ের জে জে হসপিটালসহ বেশ কিছু হসপিটালের চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছেন। ফলে এসব হাসপাতালে আউটডোর এবং জরুরি পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে এনআরএস আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশেই।
গত বৃহস্পতিবার এইমসের চিকিৎসকেরা হেলমেট পরে এবং মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেন। তবে পরিষেবা সচল ছিল। ওই অবস্থাতেই সব বিভাগে চিকিৎসা দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। সেই সাথে বৃহস্পতিবারই ঘোষণা করে দেয়া হয়েছিল যে, শুক্রবার হাসপাতালের সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে। সারা দেশের সব মেডিক্যাল কলেজকেও এক দিনের এই প্রতীকী কর্মবিরতিতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল এইমসের রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন।

উত্তরপ্রদেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির অধীনস্থ ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল সায়েন্সেস (আইএমএস)। এনআরএসের আন্দোলনে সমর্থন জানাতে এই মেডিক্যাল কলেজেও পরিষেবা বন্ধ করে কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন চিকিৎসকেরা। সংগঠনের রেসিডেন্টস অব আইএমএসের (বিএইচইউ) তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, আউটডোর, ইনডোর এবং সাধারণ অস্ত্রোপচারের কাজকর্ম বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা এবং জরুরি অস্ত্রোপচার চালু থাকবে।

কলকাতার আন্দোলনের রেশ ছড়িয়েছে দক্ষিণের দুই রাজ্য অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানাতেও। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকেরাও এনআরএসের আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এখানে পরিষেবায় খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। চিকিৎসকেরা হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। হাসপাতাল সুপারের দফতরের কাছে গিয়ে শেষ হয় সেই মিছিল। তেলঙ্গানার হায়দরাবাদে নিজাম ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসের চিকিৎসকেরাও একটি প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নিয়েছেন।

সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে

 


আরো সংবাদ



premium cement