২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আদালতের নির্দেশে ভারতে টিকটক বন্ধ

- ছবি : সংগৃহীত

সকাল বেলা গুগল প্লে খুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বাসিন্দা শৌর্য। গতরাতে বন্ধুর পাঠানো ভিডিও দেখার পর থেকেই শখ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল আর কি। জনপ্রিয় গানে ঠোঁট মিলিয়ে চটকদারি তালি পেতে টিকটক ডাউনলোড করতে গিয়ে দেখেন, অ্যাপটাই নেই আর। একই অবস্থা শিলিগুড়ির শোভনেরও।

নতুন করে টিকটক ডাউনলোড করতে গিয়ে অ্যাপটাই আর খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ। পাওয়া যাবেও না আর। মাদ্রাজ হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল আগেই। সেই আদেশ মেনেই জনপ্রিয় ভিডিও অ্যাপ্লিকেশন টিকটক ডাউনলোড বন্ধ করে দিয়েছে গুগল।

টিকটক অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করার জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল চিনের বাইটড্যান্স টেকনোলজি। কিন্তু তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে দেয় শীর্ষ আদালত। হাইকোর্ট গত ৩ এপ্রিল টিকটককে নিষিদ্ধ করার জন্য কেন্দ্রকে জানায়। আদালত বলে, এই অ্যাপ পর্নোগ্রাফিকে উৎসাহিত করেছে এবং শিশু ব্যবহারকারীদের নিশানা বানাচ্ছে যৌন শিকারীরা।

নিষেধাজ্ঞা চেয়ে প্রথমে এক ব্যক্তি জনস্বার্থে মামলা দায়ের করার পরই যাবতীয় ঘটনা ঘটতে থাকে। আইটি মন্ত্রকের এক কর্মকর্তা জানান, হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে কেন্দ্র অ্যাপল ও গুগলকে চিঠি পাঠিয়েছিল। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকেই ভারতের গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপটি আর পাওয়া যাচ্ছে না। গুগল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কোনও অ্যাপ সম্পর্কে গুগলের কোনও বিশেষ মন্তব্য নেই, তবে তারা স্থানীয় আইন মেনেই চলবেন।

অ্যাপল যদিও এখনও ওই চিঠির জবাব দেয়নি। টিকটকও গুগলের পদক্ষেপ নিয়ে মন্তব্য করেনি। টিকটকে ব্যাবহারকারীরা স্পেশ্যাল এফেক্ট দিয়ে ছোটো ছোটো ভিডিও তৈরি করে তা শেয়ার করতে পারতেন। এটি ভারতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে কিন্তু কিছু রাজনীতিবিদ সমালোচনা করে বলেন যে এর বিষয়বস্তু অনুপযুক্ত। অ্যাপ বিশ্লেষক সংস্থা সেন্সর টাওয়ার জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে ভারতে ২৪০ মিলিয়ন বার ডাউনলোড করা হয়েছে এই অ্যাপ।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ভারতের ৩০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী এটি ডাউনলোড করেন। যা ডিসেম্বরের চেয়ে ১২ গুণ বেশি। জোকস থেকে শুরু করে মজাদার ভিডিও ক্লিপস এবং বলিউডের বিখ্যাত গানে ঠোঁট মেলানোর এই অ্যাপ্লিকেশন অল্পবয়সীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়। গত সপ্তাহে সুপ্রীম কোর্টে আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল বাইটড্যান্স।

তারা বলেন, এটি ভারতে বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নেওয়া পদক্ষেপ। শীর্ষ আদালত ফের হাইকোর্টে এই মামলাটি পাঠায়। সেখানেই একজন বিচারপতি অ্যাপে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে বাইটড্যান্সের আবেদন খারিজ করে দেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবী কে নীলামেগাম। সূত্রের খবর, আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে টিকটক, এবং মামলার পরবর্তী ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগও করছেন তারা।

২৪ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি। টেকলেগিস অ্যাডভোকেটস অ্যান্ড সলিসিটরের প্রযুক্তি আইনজীবী সলমান ওয়ারিস বলেন, বাইটড্যান্সের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ভারতীয় আদালতের মামলার উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে যাতে সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের বিষয়বস্তু বিষয়ে নিয়ন্ত্রণের কথা উঠে আসছে।

সুপ্রীম কোর্টে বাইটড্যান্স যুক্তি দেয় যে, টিকটকে সামগ্রীর ‘খুব সামান্য' বিষয়ই অনুপযুক্ত বা অশ্লীল বলে বিবেচ্য। কোম্পানির অধীনে এই মুহূর্তে ভারতে কাজ করছেন ২৫০-এর বেশি মানুষ এবং ব্যবসা সম্প্রসারিত করে আরও বিনিয়োগের পরিকল্পনাও ছিল ওই সংস্থার। এনডিটিভি।


আরো সংবাদ



premium cement