চৌকিদার হওয়ার ধুম পড়েছে ভারতে
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৮ মার্চ ২০১৯, ১৩:৩৫
নির্বাচন সামনে আসলে এই পাক-ভারত উপমহাদেশে অনেক কিছুই করতে হয়। যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন হয়ে গেছেন ‘চৌকিদার নরেন্দ্র মোদী’। রোববার থেকেই নিজের টুইটারে ঝুলিয়ে দিয়েছেন নতুন এই নামটি। তার দাবি, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীই নন, দেশের চৌকিদারও।
এতটুকু পর্যন্ত ভালোই চলছিল। কিন্তু এরপরই শুরু হয় আরেক অধ্যায়। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন যেমন নিজের মতো করেই অন্যদের চুল কাটতে বলেন, তেমনি মোদিও দলের ছোট-বড় নেতা, সমর্থকদের নামে আগে ‘চৌকিদার’ শব্দটি যোগ করার আহ্বান জানান।
মুহূর্তের মধ্যে ভারতে চৌকিদারের সংখ্যা বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে।
অমিত শাহ, পীযূষ গয়াল, শিবরাজ সিংহ চৌহান, বাংলার মুকুল রায়রাও নিজের নামের আগে ‘চৌকিদার’ শব্দটি জুড়ে দেন টুইটারে। প্রথম দিকে নিতিন গডকড়ি, রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের মতো নেতারা এ থেকে দূরে সরে ছিলেন। কিন্তু পরে তারাও মোদীকে ‘ফলো’ করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে মোদি এখানে ‘দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’ এই থিওরিটা অনুসরণ করতে চাইছেন। কারণ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধি যেভাবে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানটিকে জনপ্রিয় করে তুলছেন, তা থেকে রেহাই পেতেই যেন ‘চৌকিদার’কেই সবার মাঝে ভাগ করে দিচ্ছেন।
এদিকে চৌকিদার হয়েই যে ভোটের ময়দানে মাত করে দিচ্ছেন তা নয়। জনগণের প্রশ্নের মুখেও পড়তে হচ্ছে। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে যেসব মুসলমান হত্যার শিকার হয়েছেন বা গুম হয়েছেন তাদের স্বজনেরা চৌকিদারদের প্রতি প্রশ্ন তুলছেন, এত চৌকিদার থাকতে আমাদের সন্তানদের খবর পাচ্ছি না কেন? এ ধরনের প্রশ্নের জবাবে বিব্রত হতে হচ্ছে চৌকিদারের দল বিজেপিকে।
আরো পড়ুন : মোদি সরকার টিকছে কি না, জানা যাবে ২৩ মে
বিবিসি, ১০ মার্চ ২০১৯, ২১:১৮
ভারতে আগামী ১১ এপ্রিল থেকে ১৯ মে পর্যন্ত মোট সাত দফায় দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে এদিন ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচনের ফল গণনা করা হবে ২৩ মে, বৃহস্পতিবার। রোববার বিকেলে দিল্লিতে ডাকা এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতে আগামী নির্বাচনের এই তফসিল ঘোষণা করেন দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা।
এর আগে কংগ্রেস-সহ ভারতের বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করেছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সারা দেশ জুড়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের সুযোগ করে দিতেই ভারতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য এদিন সেই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
তারা আরও জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে সব দল ও প্রার্থীদের যে 'মডেল কোড অব কন্ডাক্ট' বা আদর্শ আচরণবিধি মেনে চলতে হয়, তা আজ রোববার থেকেই বলবৎ হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা আরও জানিয়েছেন, গত সাধারণ নির্বাচনে সারা দেশে মোট নয় দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হলেও এবারে তা কমিয়ে সাত দফায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোথায় কবে ভোটগ্রহণ হবে, তা স্থির করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাহিনীর 'মুভমেন্ট' এবং কোথায় কবে তাদের পাওয়া যাবে সেই ফ্যাক্টরটি বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
"যেমন আমরা দেশের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে একসঙ্গে ভোট করাতে চেয়েছি, কারণ সেখানে প্রচুর নিরাপত্তা কর্মীর প্রয়োজন হবে। সেখানকার প্রয়োজন মিটলে তারপর অন্যান্য জায়গায় তাদের মুভ করানো হবে", বলেন সুনীল অরোরা।
যে সাত দফায় সারা দেশে ভোটগ্রহণ হবে, সেই তারিখগুলো হল ১১ এপ্রিল, ১৮ এপ্রিল, ২৩ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল, ৬ মে, ১২ মে ও ১৯ মে। শেষ দফার ভোট মিটলে তার চারদিনের মাথায় একসঙ্গে সব পর্বের ভোট গোনা হবে।
পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার আসন আছে মোট ৪২টি। সাত দফার ভোটগ্রহণের প্রতি দিনই ওই রাজ্যের কোনও না কোনও আসনে ভোট নেওয়া হবে। এর আগে ভারতের বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন শাসক দলকে সুবিধে করে দিতেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতা ও এমপি আহমেদ প্যাটেল পাঁচ দিন আগে টুইট করেছিলেন, 'কেন এখনও ভোটের দিন ঘোষণা করা হচ্ছে না? প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফর শেষ হওয়ার জন্যই কি নির্বাচন কমিশন অপেক্ষা করছে?'
প্রসঙ্গত, গত এক মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সারা দেশে অন্তত ১৫৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন বা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন, যেগুলোর মোট খরচ হাজার হাজার কোটি টাকা।
ভোটের দিন ঘোষণা হলে যেহেতু আদর্শ আচরণিবিধি চালু হয়ে যায়, তাই তখন আর প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের কোনও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করতে পারেন না।
কিন্তু কমিশন এদিন দাবি করেছে, তাদের তফসিল ঘোষণায় কোনও দেরি হয়নি। বিরোধীদের অভিযোগকেও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা বলেছেন, "বর্তমান লোকসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩ জুন। এর আগে ২০১৪ সালে বিগত লোকসভার মেয়াদ শেষ হয়েছিল সেই বছরের ৩১ মে। ফলে স্পষ্টতই আমাদের হাতে কয়েকটা বাড়তি দিন ছিল।"
এদিকে ভারতে ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানা প্রশ্ন তুলেছিল। কিন্তু কমিশন এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে, ভারতে এবারের নির্বাচনে ইভিএমের প্রয়োগ কোনও ভাবেই সঙ্কুচিত করা হবে না।
তবে প্রতিটি ইভিএম যন্ত্রের সঙ্গেই ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফায়েবেল পেপার অডিট ট্রেইল) থাকবে, যাতে ইভিএমের ফল নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে কাগজের ব্যালটের মাধ্যমে তা যাচাই করার সুযোগ থাকবে।
এদিকে যে বিতর্কিত কাশ্মীর ভূখন্ড নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান গত সপ্তাহেও যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল, সেখানে লোকসভা নির্বাচন হলেও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এখনই করানো হচ্ছে না। ভারত-শাসিত জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে এখন রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিম ও ওড়িশা এই চারটি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরের নাম সেই তালিকাতে নেই।