মূত্র সঞ্চয় করুন : ভারতের মন্ত্রীর নতুন ফর্মুলা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ মার্চ ২০১৯, ১২:৫৮
গো-মূত্রের পর এবার মনুষ্য মূত্র নিয়ে নতুন ফর্মুলা দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি। তিনি বলেছেন, ইউরিয়া আমদানি করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। বরং এর জন্য মূত্র বা ইউরিন সঞ্চয় করলেই হবে।
গত রোববার নাগপুরের একটি সভায় ভারতের সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রী নিতিন গড়কাড়ি এ প্রস্তাব দেন। তার ভাষায়, মূত্র সঞ্চয় করলে ভারতকে কৃষিকাজের উন্নতির জন্য আর দেশের বাইরে থেকে মূল্যবান সার আনাতে হবে না । এজন্য তিনি বিমানবন্দরে মূত্র সঞ্চয়েরও প্রস্তাব দিয়েছেন।
নিতিন বলেন, জৈব সার হিসেবে মানুষের মূত্র ব্যবহার করা যেতে পারে।
এর আগে গো-মূত্রের প্রয়োজনীয়তার কথা বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা মন্ত্রীর মুখে শোনা গিয়েছে এর আগেও। তবে এবার নাগপুর মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের ‘মেয়র ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এ ধরনের প্রস্তাবে অবাক হয়ে গিয়েছেন অনেকেই।
নিতিন তার বক্তৃতায় শুধু এ ফর্মুলাই দেননি। বরং এর গুরুত্বও বোঝানোর চেষ্টা করেন। জৈব সার কী ভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা যেতে পারে, এমন কয়েকটি পদ্ধতির কথাও বলেন। সেই প্রসঙ্গেই মানুষের মূত্র সঞ্চয়ের কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষের মূত্র সঞ্চয় করলে তা থেকে অ্যামোনিয়াম সালফেট ও নাইট্রোজেন পাওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে মূত্র সঞ্চয়ের কথা বলেছি আমি। আমরা ইউরিয়া আমদানি করি। কিন্তু যদি দেশজুড়ে মূত্র সঞ্চয় করা যায়, তবে কিছুই আর ফেলতে হবে না।’
অবশ্য তিনি নিজেই বলেন, অন্য কেউ তার সঙ্গে সহমত হতে চান না, কারণ তার দেয়া প্রস্তাবগুলো অভিনব।
কয়েক বছর আগে নিতিন জানিয়েছিলেন, নিজের মূত্র সঞ্চয় করেন তিনি। দিল্লির বাংলোর বাগানে সার হিসেবে তিনি এগুলো ব্যবহারও করেন। এর ফলে তার বাগানের ফলন ২৫ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। এছাড়া চুলের বর্জ্য জমিয়ে অ্যামাইনো অ্যাসিড বের করার উদাহরণও দিয়েছিলেন তিনি।
আরো পড়ুন : গরুর দুধের চেয়ে মূত্রের দাম বেশি!
০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪২
কলকাতাতেই গরুর দুধের দামকে পিছনে ফেলে দিয়েছে গোমূত্রের দাম!
আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র গোমূত্রের রোগ প্রতিরোধক গুণের দাবিকে বিন্দুমাত্র স্বীকৃতি না দিলেও ব্যবসায়ী মহলের খবর, গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যের পথ অনুসরণ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতায় গত তিন-চার বছরে তুঙ্গে উঠেছে গোমূত্রের বিক্রি। বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে ‘গোমূত্র চিকিৎসা ক্লিনিক’। বিক্রি হচ্ছে ‘গোমূত্র ক্যাপসুল’ এবং ‘ডিস্টিল্ড’ ও ‘মেডিকেটেড’ গোমূত্র!
ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ফার্মাকোলজির শিক্ষক স্বপন জানার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘‘গোটাটাই ভণ্ডামি। গাছগাছালি থেকে রাসায়নিক বের করে ওষুধ হতে পারে। তার ফার্মাকো কাইনেটিক্স ও ডায়নামিক্স রয়েছে। গোমূত্রের এমন কিছুই নেই।’’
অথচ ভারেতর কলকাতা শহরেই এর চাহিদা দেখে ভিন রাজ্যের নামী গোশালা থেকে গোমূত্র আনিয়ে ব্যবসা করছেন একাধিক এজেন্ট। তাদেরই অন্যতম ললিত আগরওয়াল বললেন, ‘‘গত কয়েক বছরে এখানে গোমূত্রের চাহিদা পাঁচ গুণ বেড়েছে। মাসে প্রায় ১০ হাজার লিটার গোমূত্র বিক্রি হয় পশ্চিমবঙ্গে। এ রাজ্যে তেমন উৎপাদন নেই। তাই আমরা নাগপুর থেকে আনিয়ে দিই।’’ ললিতের কথায়, ‘‘এক লিটার গোমূত্রের দাম ৩৫০ টাকা। আর ওখান থেকে আনা দুধ আমরা বিক্রি করি ১৫০ টাকা (ভারতীয় রুপি) লিটারে।’’
সাধারণত কলকাতায় গরুর দুধ লিটার প্রতি ৩৫-৪৮ টাকার মধ্যে মেলে। তার প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিকোচ্ছে গোমূত্র। নাগপুরের যে ‘গো বিজ্ঞান অনুসন্ধান কেন্দ্র’ থেকে ললিতেরা কলকাতায় গোমূত্র ও দুধ আনান, সেটি মূলত আরএসএস-পোষিত সংস্থা। গোটা ভারতে তাদের ৫০০-র বেশি গোশালা রয়েছে। সেখানকার চিফ কোঅর্ডিনেটর সুনীল মানসিংহের দাবি, ‘‘পশ্চিমবঙ্গেও আমরা ১৬টি জায়গায় গোশালা শুরু করেছি। সেখান থেকেও কিছুদিনের মধ্যে ডিস্টিল্ড গোমূত্র মিলবে।’’
ক্যালকাটা পিঁজরাপোল সোসাইটি নামে একটি সংস্থার পাঁচটি গোশালা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। সেখানকার কোঅর্ডিনেটর সর্বেশ্বর শর্মা বলেন, ‘‘প্রতি বছর ২০-২৫ শতাংশ হারে গোমূত্রের বিক্রি বাড়ছে। কলকাতায় মাসে প্রায় ৩ হাজার লিটার গোমূত্র বিক্রি হয় আমাদের। ১ লিটার গোমূত্রের দাম পড়ে ১৭৫ টাকা। সেখানে আমরা ১ লিটার দুধ বিক্রি করি ৫০ টাকায়।’’
মধ্যপ্রদেশের ইনদওরে গোমূত্র থেরাপি ক্লিনিক চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী বীরেন্দ্র জৈন। ফোনে বললেন, ‘‘কলকাতাতেও আমাদের অনেক রোগী আছে। অনেক নেতারা ওষুধ নিয়ে যান। মেডিকেটেড গোমূত্র ২১০ টাকা করে লিটার বিক্রি করি। মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার লিটার বিক্রি হয়।’’
দীর্ঘ কাল বাম প্রভাবে থাকা রাজ্যে গোমূত্রে এমন ভক্তি? সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্রের ব্যাখ্যায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভিন্ন সংস্কৃতি গ্রহণে একটু বেশি এগিয়ে। এ রাজ্যে এখন গণেশ পুজো, ধনতেরস, বিয়েতে মেহন্দির ধুম। তেমন ভাবেই চলে এসেছে গোমূত্র।
ক্রমবর্ধমান ‘মাল্টিরেসিয়াল সোসাইটি’ বা হিন্দিবলয়ের মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির প্রভাবও এর পিছনে রয়েছে।’’