১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১, ১১ রজব ১৪৪৬
`

ভারত কেন এখন আফগান তালেবানের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চায়?

তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি - ছবি : সংগৃহীত

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি গত সপ্তাহের বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এক বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকটি আফগান নেতৃত্বের ওপর ভারতের প্রভাব বাড়ানোর ইচ্ছার প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত এক বছর ধরে ভারত ধীরে ধীরে তালেবানের সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে। কিন্তু সর্বশেষ এ বৈঠকটি ভারত ও তালেবান সরকারের প্রথম উচ্চস্তরের সম্পর্ক স্থাপন হিসেবে প্রতীয়মাণ হয়েছে।

ভারত গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে সাহায্য ও পুনর্গঠন কাজে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বৈঠকের আলোচনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো, আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য ও মানবিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্প পুনরায় শুরু করার জন্য চুক্তি এবং আফগানিস্তানে স্বাস্থ্য খাত ও শরণার্থীদের সহায়তা করা।

তবে, সেই বিবৃতিতে সবকিছু স্পষ্ট না হলেও বিষয়টি এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

গত মাসে আফগানিস্তানে পাকিস্তানের বিমান হামলায় ৪৬ জনের নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারতের নিন্দা জানানোর মাত্র কয়েকদিন পরেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো।

ভারতের মুম্বাইয়ে সাবেক আফগান ছাত্র ইকরামউদ্দিন কামিলকে তালেবান কূটনীতিক হিসেবে নিয়োগের ফলে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক, ইরান ও উজবেকিস্তানের পাশাপাশি ভারতও ক্রমবর্ধমান সম্পর্কোন্নয়ন দেশগুলোর তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ দেশগুলো তালেবানদের আফগান দূতাবাসগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দিয়েছে। ২০২২ সালে ভারত কাবুলে তাদের দূতাবাস আংশিকভাবে পুনরায় চালু করার জন্য একটি ছোট প্রযুক্তিগত দলও পাঠিয়েছিল।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো নয়াদিল্লি ও কাবুলের মধ্যে সম্পর্ক আরো গভীর হওয়ার ইঙ্গিতই দেয়।

ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ও ফেলো কবির তানেজা বলেন, ‘এই পদক্ষেপটি সম্ভবত কৌশলগত পরিবর্তন না-ও হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘২০২১ সাল থেকে কাবুলে তালেবান-বাস্তবতার প্রতি ভারতের সতর্ক ও দীর্ঘস্থায়ী দৃষ্টিভঙ্গির এটি একটি স্বাভাবিক অগ্রগতি মাত্র। অন্যান্য প্রতিবেশীর মতো, ভারতের জন্যও তালেবান একটি বাস্তবতা। তাই আফগানিস্তান ও আফগান জনগণকে উপেক্ষা করা কোনো বিকল্প হতে পারে না।’

নয়াদিল্লির জিন্দাল স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সহযোগী অধ্যাপক রাঘব শর্মা এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। এ ধরনের সংলাপ থেকে নীতি খুব কমই উদ্ভূত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি পূর্বের নীতির ধারাবাহিকতা, যেখানে আমরা তালেবানের সাথে জড়িত। কিন্তু আমরা সত্যিই আমাদের জড়িত থাকার গভীরতা স্বীকার করতে চাই না।’

তালেবানদের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণকারী থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তালেবানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা এখনো প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছি।’

গবেষণায় দেখা গেছে যে কাতার, চীন ও তুরস্কসহ দেশগুলো তালেবানদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে রয়েছে, যেখানে প্রভাবের দিক থেকে পাকিস্তান পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ’ভারত অনেক দিন থেকেই বলছে যে আফগানিস্তানের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে এবং তাদের সাথে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে। কিন্তু তারপরও আপনাকে কথাটা মেনে চলতে হবে। প্রজাতন্ত্র সরকারের পতনের পর আমরা আফগানিস্তানকে হিমাগারে রেখেছি। কেবলমাত্র যখন আমাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হয়, তখন আমরা এটি সমাধান করি।’

কবির তানেজা জানান, এসব কিছুর মধ্যে আফগানদের জন্য ভিসার সম্ভাবনা এ বৈঠকের একটি ইতিবাচক দিক হতে পারে। তিনি বলেন, ‘মিশ্রি-মুত্তাকির বৈঠকে প্রধান বিষয় হলো, আফগানদের জন্য বিশেষ করে শিক্ষা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য পর্যটনের ক্ষেত্রে ভিসার একটি অংশ আবারো চালু করতে পারে ভারত।’

তবে রাঘব শর্মা বলেন, এ বৈঠকটি ভারতের থেকে তালেবানের বেশি প্রয়োজন ছিল। তালেবান তাদের সাবেক মিত্র পাকিস্তানের সাথে সামরিক সংঘর্ষে লিপ্ত। তাই তারা দেখাতে আগ্রহী যে তাদের কাছে বিকল্প রয়েছে।

ভারত বেশ কিছু কারণে তালেবানদের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অনিচ্ছুক হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে’ নৈতিক সংকটে ফেলতে পারে।

আফগানিস্তানে ভারত একটি শক্তিশালী উপস্থিতি বজায় রেখেছে। ২০০১ সালে তালেবানের পতনের পর দেশটিতে সর্বপ্রথম কূটনৈতিক মিশন পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে ভারত ছিল অন্যতম। তবে ভারতের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ থাকার পরেও আফগানিস্তানে তাদের সুসংহত নীতির অভাব ছিল।

ভারত এ অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হওয়ার পরও আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্তরের কুশিলবদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদে ভারতের স্বার্থকে ব্যাহত করে।

রাঘব শর্মা বলেন, ‘প্রথমে আমরা হামিদ কারজাইকে (সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট) এবং তার পরে আশরাফ গণিকে সব রকমের সহযোগিতা দিয়ে ভুল করেছি। আমরা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমনটাই করেছি, শেখ হাসিনাকে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ভারতের আফগান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণার অভাব রয়েছে। তাই এটি শোধরাতে ভারতের সময় লাগতে পারে।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement
‘তরুণ প্রজন্ম মাতৃভূমিকে নতুন করে সাজাতে চায়’ এইচএমপি নিয়ে সতর্কতা জারি, ৭ নির্দেশনা কালিয়াকৈরে স্কুলশিক্ষককে পেটানোর অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা-জয়সহ ৯৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা গ্রিনল্যান্ড নিতে চান ট্রাম্প, যে চার উপায়ে এর সমাপ্তি হতে পারে কল্যাণরাষ্ট্র তৈরি হলে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উন্নতি হবে : অ্যাডভোকেট হেলাল বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে কেরানীগঞ্জের অস্থায়ী আদালতে বিএসএফের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন : প্রণয় ভার্মাকে পররাষ্ট্র সচিব হাফেজ আবির বাচঁতে চায় গজারিয়ায় গৃহবধূ মাহমুদা হত্যার বিচার দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠক

সকল