১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে নেহরু মডেলের পরিবর্তন চান জয়শঙ্কর

- ছবি : সংগৃহীত

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি জওহরলাল নেহেরু হন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

সরকারপ্রধানের পদে আসীন হওয়ার পর অভ্যন্তরীণ শাসনকাজ পরিচালনা, পররাষ্ট্রনীতি ও উন্নয়নদর্শন নিয়ে একটি মডেল বা রূপরেখা প্রস্তুত করেছিলেন নেহেরু। স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত ‘নেহেরু ডেভেলপমেন্ট মডেল’ নামের সেই রূপরেখাই অনুসরণ করছে ভারত।

তবে এখন, বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এই মডেলের পরিবর্তন, পরিমার্জন ও সংস্কার জরুরি বলে মনে করছেন ভারতের পররাষ্টমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর। কারণ ১৯৪৭ সালের যে প্রেক্ষাপটে নেহেরু এই রূপরেখা প্রস্তাব করেছিলেন, একের পর এক ভৌগলিক ও রাজনৈতিক ঘটনা, পরিবর্তন ও ঘাত-প্রতিঘাতের জেরে গত ৭৭ বছর আগের সেই প্রেক্ষাপট বহুলাংশ বদলে গেছে।

রোববার নয়াদিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’স ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সাময়িকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জয়শঙ্কর। সেখানে নিজ বক্তব্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যখনই আমরা (ভারতের) পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তনের জন্য বলি, অর্থাৎ এমন কিছু যা সরাসরি নেহেরু ডেভেলপমেন্ট মডেলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তখনই একটি পক্ষ কঠোরভাবে সমালোচনা শুরু করে। ব্যাপারটিকে তারা এমনভাবে উপস্থাপন করে— যেন আমরা তাদের ওপর রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করছি।’

‘অথচ আমরা কিন্তু নেহেরু ডেভেলপমেন্ট বাতিল করতে চাই না; আমরা শুধু বলছি যে বর্তমান সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই রূপরেখার পরিমার্জন, সংস্কার প্রয়োজন। যেমন, নেহেরু ডেভেলপমেন্ট মডেলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পররাষ্ট্রনীতি। ১৯৪৭ সালের প্রেক্ষাপটে এই নীতি প্রস্তাব করেছিলেন নেহেরু। কিন্তু স্বাধীনতার পর ১৯৪০, ১৯৫০, ১৯৬০, ১৯৭০ সহ গত প্রায় আট দশকে এই উপমহাদেশে ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক অনেক পরিবর্তন ঘটেছে…এবং শুধু উপমহাদেশেই নয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে।’

‘বিশেষ করে, গত নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে যে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দিন দিন আরও ব্যাপক ও শক্তিশালী হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যকার আন্তঃনির্ভরশীলতা আরও বিস্তৃত আকার নিচ্ছে, ফলে রাষ্ট্রগুলোর পরস্পরের প্রতি ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে।’

‘এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। আজ থেকে ৭০ কিংবা ৮০ বছর আগে আমাদের জাতীয় ও পররাষ্ট্রনীতি প্রযুক্তির যে ব্যবহার ছিল, তার চেয়ে বর্তমানে তার ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ বেশি।’

‘তো, যদি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ভৌগলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন রাষ্ট্রের আন্তঃসম্পর্কের প্যাটার্নের পরিবর্তন আমরা মেনে নিই, তাহলে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তনের ব্যাপারটি মেনে নিতে আমাদের বাধা কোথায়?’

জয়শঙ্কর বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, আমাদের আরও বাস্তববাদী এবং প্র্যাকটিক্যাল হওয়া উচিত এবং দেশ, জনগণ ও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করা উচিত। ‘বিকশিত ভারত’ গড়ে তোলার জন্য একটি বাস্তবানুগ এবং প্রায়োগিক পররাষ্ট্রনীতি আমাদের জন্য জরুরী।’

সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস


আরো সংবাদ



premium cement