১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

হজযাত্রার কাহিনী

হজযাত্রার কাহিনী - সংগৃহীত

(২য় পর্ব)
তায়েফেও আমরা গেয়েছি। সেখানে দু’টি বিষয় লক্ষণীয়। এক. প্রাকৃতিক আবহাওয়ার শীতলতা। দুই. সামরিক আবহাওয়ার উষ্ণতা। পাহাড়-পর্বতে ঘেরা তায়েফ। শীতল মেঘ ও উষ্ণ রৌদ্রের লুকোচুরি খেলা। সৌদি আরবের অন্যত্র যেখানে তীব্র গরমের দাপট, সেখানে তায়েফে শীতকালের পূর্বাভাস। তায়েফে আমাদের মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা: অকথ্য নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। তখন তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন আবু তালিব। তিনি ছিলেন হজরত আলী রা:-এর পিতা ও হজরতের চাচা। তায়েফে হজরত মুহম্মদ সা: তাঁর চাচা আবু তালিব ও অন্য স্বজনরাসহ অন্তরীণ ছিলেন দীর্ঘ দুই বছর। কিন্তু আজকাল তায়েফের পরিচিতি অন্যরকম। স্থানে স্থানে সামরিক স্থাপনা। আবার আবহাওয়া কিছুটা শীতল। কিন্তু গ্রামীণ জীবন চোখে পড়ে না। আসলে তায়েফ জায়গাটা উঁচু বলে শীতল। তায়েফে যাওয়ার রাস্তায় মাঝে মাঝে উট দেখা যায়। উটকে ‘মরুর জাহাজ’ও বলা হয় এর বিশেষ ধরনের জীবনযাত্রার জন্য। উট নিজদেহে পানি সংরক্ষণ করে রাখতে পারে অনেক।

আমরা মসজিদে কেবলাতাইন এবং মসজিদে কুবায় গিয়েছি। ‘মসজিদে কেবলাতাইন’ অর্থ দুই কেবলার মসজিদ। ওখানে সর্বশেষ রাসূল সা: তাঁর সাহাবিদের নিয়ে জেরুসালেমকে কেবলা হিসেবে নির্দেশ করে সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে আয়াত নাজিল হয় পবিত্র কাবা শরিফকে কেবলা করার জন্য। তখন মুসল্লিরা নামাজের মধ্যেই মুখ ঘুরিয়ে নেন কাবা শরিফের দিকে। এ জন্য এই মসজিদকে ‘কেবলাতাইন মসজিদ’ বলা হয়।

মহানবী সা: মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পরে সর্বপ্রথম মসজিদ হচ্ছে, মসজিদে কুবা। এখানে তিনি জামাতের সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। এই মসজিদকে মসজিদে কুবা বলা হয়। এই ঐতিহাসিক মসজিদও আমরা পরিদর্শন করেছি।

মসজিদে কেবলাতাইন সম্পর্কে আরো বলা যায়, মুসলমানদের প্রথম কেবলা ছিল ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে অবস্থিত ‘বায়তুল মুকাদ্দাস’ বা ‘মসজিদে আকসা’, এরপর কেবলা হচ্ছে মক্কা শরিফে অবস্থিত পবিত্র কাবাঘর।

সৌদি আরব রাষ্ট্র হিসেবে উন্নত হচ্ছে ঠিকই, কারণ চার দিকে, অনেক উন্নয়ন অবকাঠামোর দেখা মিলল। তবে মনে হলো, রাষ্ট্রটি কিছু জায়গায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। আমরা একদিন সফরে গিয়ে কোনো কোনো জায়গায় গিয়ে বুঝলাম যে, কুসংস্কার আবার কায়েম হচ্ছে। যেমন, মানতের জন্য ফল কেনা এবং দেয়াল ধরে কান্নাকাটি করা। সৌদি আরবে হজযাত্রীদের শৃঙ্খলার জন্য অনেক বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। যেমন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী (মহিলা পুলিশসহ), স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রভৃতি মিলে বিরাট কর্মী ফৌজ। ওদের অনেকে কুসংস্কারবিরোধী বলে মনে হলো।
আরবিতে লিমিটেড কোম্পানিকে বলে ‘শিরকা’। পাখির আরবি ‘তায়েরান’, আবার উড়োজাহাজের আরবিও ‘তায়েরান’। হোটেলের আরবি প্রতিশব্দ ‘ফান্দুক’; আর আলমারিকে বলেন ওরা ‘সান্দুক’।

আবার ব্যক্তিগত হজযাত্রার কাহিনী। মশার কামড়ে দুর্ভোগ শুরু ঢাকার আশকোনা হাজী ক্যাম্পে। বাসা থেকে রাত সাড়ে ৮টায় বের হয়ে শেষরাতে বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হয়। কাস্টমস, ইমিগ্রেশন-এসবের ঝামেলা পার হয়ে অবশেষে বিমানে ওঠার পূর্বমুহূর্তে আমি আটকা পড়লাম। আমাকে আলাদা করা হলো। এর কোনো কারণই জানানো হলো না। প্রায় ১০ মিনিট পর ছাড়া হলো। আমি দেখলাম, আমার সহযাত্রীরা পাশে একটি রুমে সবাই বসে আছেন। যাওয়ার সময় আমাদের বিমান জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। সমুদ্রের বুক ভরে ওই বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়েছে। পাশেই লোহিত সাগর। একধরনের লাল রঙের জলজ উদ্ভিদের সমুদ্রগর্ভে উপস্থিতির কারণে এর নাম ‘লোহিত সাগর’। এর অপর পাশে মিসরের স্বৈরশাসক জেনারেল আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসির ক্রয় করা কয়েকটি দ্বীপ। এর আগে দীর্ঘক্ষণ আরব সাগরের উপর দিয়ে উড়েছে আমাদের উড়োজাহাজটি। জেদ্দা বিমানবন্দরে দীর্ঘক্ষণ ওড়ার পরে অবতরণ করে। আমরা জেদ্দা থেকে বাসে করে মক্কা শরিফ যাই। স্বেচ্ছাসেবকরা আমাদের সহায়তা করেন। জেদ্দাতে বেশকিছু খেজুরগাছ আছে। কিন্তু তখনো কোথাও কোনো উট দেখলাম না। কথিত আছে, জেদ্দায় প্রথম মানবী, বিবি হাওয়া আ: অবতরণ করেছিলেন। আজকে সেই জেদ্দা অত্যাধুনিক নগরী। একই সাথে বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর। জেদ্দায় অত্যাধুনিক অট্টালিকাগুলোও আমরা দেখেছি। জেদ্দা থেকে মক্কা অনেক দূরে । কিন্তু কোথাও গ্রাম চোখে পড়েনি। দুপুরের দিকে মক্কা শরিফে গিয়ে পৌঁছলাম।


আরো সংবাদ



premium cement