১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

সময়ের কথকতা

সময়ের কথকতা - নয়া দিগন্ত

এক মাস হলো জাতি একটি ছাত্র-গণবিপ্লব দেখেছে। গ্রাম থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত প্রতিটি গণমানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এর আগে আর কখনো দেখা যায়নি। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, বিচার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থসহ প্রতিটি বিভাগের শৃঙ্খলা ফেরেনি এখনো। স্বাভাবিকভাবেই এটি একটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। গত ১৭ বছরে এসব ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে দলীয় নিয়োগ পদ্ধতি অনুসৃত হওয়ার পরিবর্তিত প্রেক্ষিতে বিপ্লবের আদর্শিক কর্মকর্তা খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তদুপরি বিপ্লবোত্তর জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বাহিনী কর্তৃক সচিবালয় ঘেরাওয়ের মাধ্যমে প্রশাসনকে অচল করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলাবাহিনী এখনো পুরোপুরি পুনর্গঠিত হতে পারেনি। প্রচুর পরিমাণে গুলি, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ চলে গেছে দুষ্কৃতকারীদের হাতে। এর মধ্যে দেশের বেশির ভাগ ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে বিভিন্নভাবে হামলা করা হয়েছে যেন ওষুধ তৈরি ব্যাহত হয়। একই সাথে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর হামলার সূত্র ধরে পুরো স্বাস্থ্যসেবাকে জিম্মি করে রাখার চেষ্টাকে বিচ্ছিন্নভাবে নেয়া যায় না। একই সাথে শুরু হয়েছে ছাত্র-গণবিপ্লবকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস। রাজনৈতিক নেতাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা এখন দৃশ্যমান। আর্থিক বিশৃঙ্খলার এখনো পরিপূর্ণ সমাধান হয়নি। বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশাসন এখনো সুষ্ঠুভাবে কাজ করছে না। এসবের জন্য প্রয়োজন জাতীয় নেতাদের প্রজ্ঞা-বিচক্ষণতা ও ধৈর্য।

এ অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে পরাজিত অপশক্তির কালো ছায়া। চাঁদাবাজির নামে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বকে হেয় করার অপচেষ্টা এখন প্রকাশ্যে। শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফেরেনি এখনো। আমাদের ছাত্রছাত্রী ভাইবোনেরা আজ দু’মাসের বেশি সময় ধরে শ্রেণিকক্ষের বাইরে। তাদের পাঠকক্ষে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুতই। না হলে তাদের জীবনের মূল্যবান সময় হারিয়ে যাবে চিরতরে। শহরে, গ্রামগঞ্জে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের অপমান ও মর্যাদাহানির হিড়িক পড়েছে। অথচ শিক্ষকরাই জাতি গঠনের কারিগর। এই কারিগরদের অপমান এবং অশ্রদ্ধা সমগ্র জাতির অপমান। এর মধ্যেই দু-এক জায়গায় সনাতন ধর্মীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এবং ছাত্র-জনতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়ভাবে এর মোকাবেলা করেছে। এ দিকে অসাধু, লোভী ব্যক্তিরা সীমান্তে গড়ে তুলেছে তাদের অভয়ারণ্য, যা ব্যবহৃত হচ্ছে অবাধ চোরাচালানি ও মানবপাচারের কাজে। এর সুযোগ নিয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে পরাজিত অপশক্তির সহায়করা। সীমান্তের ওপার থেকে তারা ষড়যন্ত্র এঁটে যাচ্ছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। সার্বিক অবস্থার মোকাবেলায় আমাদের ছাত্রসমাজ পালন করছে ঐতিহাসিক ভূমিকা।

শিক্ষাঙ্গনগুলোকে অস্থির করে তোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ওষুধশিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা বাধাগ্রস্ত করার সাথে সাথে ওষুধ প্রাপ্তিকে অনিশ্চিত করে তোলা হচ্ছে; যেন জনগণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠবে প্রশাসনের ওপর; একইসাথে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী এই শিল্পক্ষেত্র যেন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশ হারাবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি খাত। চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাড়ি দেয়ার সংখ্যা বাড়বে। প্রাণরক্ষাকারী ওষুধ আমদানি খাতে ব্যয় হবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। এভাবেই এক ঢিলে অনেক পাখি মারার চেষ্টা সম্পর্কে সবাইকে সজাগ থাকার প্রয়োজনীয়তা অসীম।

গার্মেন্ট শিল্প খাতকেও অস্থির করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। অস্থির হয়ে উঠেছে পোশাকশিল্পাঙ্গন। এভাবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাতকে অচল করে দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সৈনিক-ছাত্রজনতার ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জরুরি। জরুরি দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলের সংহতি ও ঐকমত্য। পরিবর্তে দেখা যাচ্ছে বোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিবিশেষ রাজনৈতিক ঐক্যে ফাটল ধরানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। দুঃখজনকভাবে টকশোর নামে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ ধরনের প্রচারণার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া এসব অপচেষ্টার মোকাবেলা দেশ ও জাতির স্বার্থে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল প্রাধিকার, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাসহ একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করা। বিভিন্ন দাবিদাওয়া এবং শিল্পকারখানার বিশৃঙ্খলার আড়ালে প্রকারান্তরে এই লক্ষ্যকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে কি না- জাতীয় নেতাদেরকে গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। সব দাবিদাওয়া পূরণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি প্রকারান্তরে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণের অনাস্থার প্রকাশ কি না তাও ভেবে দেখা দরকার। জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। সরকার যাতে বিব্রত না হয় লক্ষ রাখতে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব বিষয়ের অবতারণা একসাথে করা হলে সমাধান সম্ভব হবে না।

লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
কুলিয়ারচরে ‘জশনে জুলুস’ মিছিলকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৯ সাম্প্রতিক বন্যায় ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি : উপদেষ্টা আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি : যুবদল সভাপতি সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফোরকান, সম্পাদক কাইয়ুম এনআইডি কার্যক্রম অন্য কোথাও গেলে ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে : ইসি সচিব ছাত্র আন্দোলনে ছররা গুলি, ৫ শতাধিক মানুষের অন্ধত্ব বরণ আবারো ক্ষমতায় ফেরার কৌশল আঁটছে শ্রীলঙ্কায় বিতাড়িত রাজনৈতিক পরিবারটি আজুখাইয়া সীমান্তে ট্রলি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একজন নিহত মুরাদনগরে গোমতীর নদীর পানি কমার সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে ভাঙ্গন ঈশ্বরগঞ্জে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত নাটোরে শেখ হাসিনাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

সকল