২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
তৃতীয় নয়ন

হজযাত্রার কাহিনী

হজযাত্রার কাহিনী - ছবি : সংগৃহীত

(প্রথম পর্ব)
আমাদের ইতিহাসে অতীতে পবিত্র হজযাত্রার দৃষ্টান্ত খুব কম। কারণ, অতীতে হজযাত্রীদের ওপর দস্যুদের হামলা হতো। বৈরাম খাঁকে হিমু মোগল বাদশাহ আকবরের ক্ষমতা আরোহণের আগে হজে পাঠিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তিনি নিহত হন। খুব সম্ভবত গুজরাটে। গুজরাটের কাছেই বর্তমান মুম্বাই নগর। আমাদের দেশে বোম্বাইয়া হাজী বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। কথাটির সত্যতাও রয়েছে। অতীতে আরবে যাওয়ার পথ ছিল অত্যন্ত দুর্গম। আর হজ করতে হলে আরবে যেতে হতোই। গ্রামের একজন হজে গেলেও সাথে অনেক লোক যেতেন। তখন আজকের মতো বিমান যোগযোগ ছিল না। জাহাজে করে প্রায় সবাইকে যেতে হতো। প্রথমে কলকাতা হয়ে বোম্বাইতে যেতে হতো। বোম্বের জাহাজঘাটে হজযাত্রীদের অনেকে জাহাজে উঠতে পারতেন না। তাদেরকে নিয়ে গ্রামের লোকজন ফিরে আসতেন। তারা পরিচিত ছিলেন ‘বোম্বাইয়া হাজী’ নামে। আগে আমাদের দেশ থেকে সফিনায় আরব ও সফিনায়ে হুজ্জাজ জাহাজযোগে হজে যাওয়া যেত। তখন হাজী ক্যাম্প ছিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। এখন সেখানকার বিল্ডিংগুলো পড়ে আছে। এখন যেতে হয় ঢাকার আশকোনা হয়ে বিমানযোগে হজে।

মদিনা শরিফে থাকেন এমন প্রবাসী আইনজীবীও হজ উপলক্ষে মস্তবড় আলেম সাজেন। তারা সোস্যাল মিডিয়াতে ও টিভিতে অনেকরকম প্রোগ্রাম করেন। কিন্তু সৌদি আরবের পুলিশ সম্পর্কে কিছু বলেন না। সে দেশে মহিলাদের জন্য মহিলা পুলিশ আছে। সৌদি আরবে মক্কা ও মদিনা শরিফে মুসল্লিদের ভিড় হয়। অনেক পঙ্গু-প্রতিবন্ধী চেয়ার কেনেন এ জন্য। কিন্তু সৌদি আরবে দিবারাত্রির সময় সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয়া হয় না। সৌদিতে নামাজের ওয়াক্ত ঠিক করেন আলেমরা। ফজরের জামাতের পরে সূর্য ওঠারও বাকি থাকে না। জোহরের নামাজের জামাত হয়ে যায় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে; আসরের জামাত যখন হয়, তখন আমাদের দেশে বলা যায় দুপুর; মাগরিবের জামাত হয় সন্ধ্যা ৭টার পরে। সৌদি আরবের নামাজের সময়ের পার্থক্য আমাদের দেশের হিসাবে মেলে না। দুই দেশের সময়ের পার্থক্য তিন ঘণ্টা ধরা হয়; কিন্তু বাস্তবে আরো বেশি।

আমরা হজের নিয়ম-কানুনকে কঠিন করে ফেলেছি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: যাকে সহজ রেখেছেন, তাকে আমরা সহজ রাখিনি। যেমন- হজসংক্রান্ত একটি বইতে নফল নামাজকে ওয়াজিবও বলা হয়েছে, যা বাস্তবে সম্ভব নয়। হজের নিয়ম-কানুনকে আমরা এমন পেঁচালো করে ফেলেছি যে, মুয়াল্লিমের সাহায্য ছাড়া এগুলো মানা যায় না।

সৌদি আরব নিশ্চয়ই উন্নত দেশ। উন্নয়ন অবকাঠামো সে দেশে প্রচুর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ‘মরুজাহাজ’ উট, গ্রামীণ জনজীবন, বিখ্যাত সব পত্রিকা এগুলো যেন হারিয়ে যাচ্ছে। সৌদি বার্তা সংস্থা ‘এসপিএ’ (SPA-Saudi Press Agency) সারা বিশ্বে নামকরা। পত্রিকাগুলোর মধ্যে Arab News, Saudi Gazette, Jeddah Times, Riyadh Daily-ইত্যাদি নামকরা। মক্কা-মদিনা থেকেও বিখ্যাত পত্রিকা বের হয়; কিন্তু সেখানে কোনো লোকের হাতে কোনো পত্রিকা দেখা গেল না। পত্রিকা কেনা সে দেশে দুঃসাধ্য ব্যাপার। পত্রিকা দেখাই যায় না।

সৌদি আরব মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। এখানকার মক্কা শহরে জন্মেছিলেন নবীশ্রেষ্ঠ হজরত মুহাম্মাদ সা: যিনি আজীবন মদিনা শরিফে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে গেছেন। মক্কার পূর্বনাম ছিল বাক্কা। মদিনা ছিল ইয়াসবির। ‘মদিনা’ কথাটার অর্থই হচ্ছে ‘শহর’। মক্কার পবিত্র স্থানগুলো ঘিরে যে হারাম শরিফ, সেখানে কোনো অমুসলিম প্রবেশ করতে পারে না।

‘হারাম শরিফের’ অর্থ ‘নিষিদ্ধ স্থান’। জেদ্দা নগরীতে বিবি হাওয়া বেহেশত থেকে নেমেছিলেন বলে কথিত আছে। এখন সেই জেদ্দাকে চেনাই যায় না। এত অত্যাধুনিক শহর ও বন্দর। এবার হজে গিয়ে সৌদি আরব সফর করেছি। গিয়েছি মদিনা শরিফ ছাড়াও জেদ্দা, তায়েফ প্রভৃতি স্থানে; কিন্তু কোথাও গ্রামীণ জীবন চোখে পড়েনি। সৌদি আরব থেকে খুরমা-খেজুর বোধ হয় এভাবে হারিয়ে যাবে। হজ পালনের বাইরেও আমরা ঐতিহাসিক কিছু স্থান পরিদর্শন করেছি। যেমন- গারে হেরা ও গারে নূর। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের স্মরণে স্থাপিত তোরণ, ওহুদ প্রান্তর, কিছু ঐতিহাসিক মসজিদ; কিন্তু কোথাও গ্রামীণ জীবন দেখা যায়নি। খেজুরবাগান আছে মাঝে মধ্যে।


আরো সংবাদ



premium cement