১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
সময়-অসময়

কোন পথে রাষ্ট্র সংস্কার

কোন পথে রাষ্ট্র সংস্কার - নয়া দিগন্ত

রাষ্ট্রের যে সংস্কার প্রয়োজন এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই বললেই চলে। তবে সংস্কার কোন পথে হবে এবং কী কী সংস্কার করতে হবে- এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে শাসনতন্ত্রের সংস্কার। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সংস্কারের জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যাবে না। আবার সংস্কার করতে গিয়ে রাষ্ট্র চালনায় যদি বিপত্তি ঘটে তাহলে এই সংস্কার নিয়ে এখন যে ব্যাপকভিত্তিক ঐকমত্য রয়েছে সেটি নাও থাকতে পারে। ফলে সংস্কার করতে হবে সময় নষ্ট না করে, আর কর্তৃত্ববাদী সরকার রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান অচল করে রেখে গেছে সেগুলোর উন্নতি করে যতটা সম্ভব স্বস্তিও ফেরাতে হবে।

সংস্কার কোন পথে
ছাত্র-জনতার একটি বিপ্লবের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে। শাসনতান্ত্রিক ভাষায় বলা যায়, ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু এরকম পরিস্থিতিতে আসা অতীতের সরকারগুলোর থেকে এ সরকার ব্যতিক্রম। এবারের সরকার জরুরি অবস্থা অথবা সামরিক শাসন কোনোটাই জারি করেননি। অথবা বিশেষ পরিস্থিতির কথা বলে সংবিধান স্থগিতও করেননি। ফলে এই সরকারের বৈধতার প্রশ্নে বিচারিক পর্যালোচনায় নেতিবাচক কোনো অনুসিদ্ধান্তে আসা অসম্ভব নয়। বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার সময় এই প্রশ্ন জোরালোভাবে না এলেও ভবিষ্যতে এ প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল এই প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রশ্ন তিনি আগের সরকারের নিয়োগকৃত ব্যক্তি হিসেবে তুলেছেন বলে মনে হয় না। তিনি যথার্থই বলেছেন, সংবিধান কার্যকর অবস্থায় ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে না পারলে সংবিধান কার্যকরে বাধা সৃষ্টির জন্য তার মৃত্যুদণ্ড হওয়ার অবকাশ রয়েছে। এই প্রশ্ন তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে যারা ৫ আগস্ট দিনের প্রথম ভাগে কারফিউ ভঙ্গকারী জন¯্রােতে গুলি চালাতে অস্বীকার করায় হাসিনা পদ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭(খ) অনুযায়ী, সংবিধানের মৌলিক বিধানগুলো ‘অসংশোধনযোগ্য’। সেই সাথে অসাংবিধানিক পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারীদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করার এবং সর্বোচ্চ দণ্ড দেয়ার বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এটি ঠিক যে ৮ আগস্ট যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেয় তখন জরুরি অবস্থা বা কারফিউ জারি করা হলে তা কার্যকর করার মতো অবস্থা নিরাপত্তা বাহিনী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল না। ছাত্র-জনতার শক্তিই ছিল তখন পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো একটি রেফারেন্সকে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এরপরও সরকারকে অস্থির করার অনেক উদ্যোগের কথা শোনা গেছে, কিছু বাস্তবে অনুভবও করা গেছে। ভেসে বেড়ানো গুজবের মধ্যে বিচারিক ক্যু, ব্যুরোক্র্যাসি ক্যু, পুলিশ বিদ্রোহ, আনসার বিদ্রোহ ইত্যাদিও ছিল। এর সাথে গোপালগঞ্জে সেনাবাহিনীর ওপর আঘাত এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি এবং তিনি শিগগিরই দেশে ফিরছেন বলে তার পুত্র জয়ের ঘোষণা, দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় কঠোর নিরাপত্তায় পতিত স্বৈরাচারকে রাখার ব্যবস্থা ইত্যাদি উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

প্রশ্ন হলো, এ অবস্থায় সরকারের কার্যকর বৈধতার পথ কোনটি। এর মধ্যে একটি হতে পারে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’র পথ ধরে সংবিধান বাতিল বা স্থগিত করা। আসমা জিলানী মামলার পর থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে সাংবিধানিক সঙ্কটের সময়ে ডকট্রিন অব নেসেসিটি মতবাদটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত ও আলোচিত। ‘ডকট্রিন অব কন্টিনিউইটি’ মতবাদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সব কার্যাবলি এবং এর প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান কোনোরূপ বাধা ছাড়াই সার্বক্ষণিকভাবে অবিরাম কার্যকর রাখতে হবে। রাষ্ট্র একটি ধ্রুবক, শাসনব্যবস্থা যাই হোক না কেন এবং সঙ্কট যেভাবেই বিকশিত হোক না কেন রাষ্ট্র চলমান থাকবে, অন্যথায় রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। সংবিধানের অধীনে সৃষ্ট শূন্যতাও রাষ্ট্রের চলার গতিরোধ করতে পারবে না।

এ সময়ের জন্য একটি পথ হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রপতির পদ নিয়ে ফরমানের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রশাসন পরিচালনা করা। সংবিধানের ৪৮(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপ্রধানরূপে ‘রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করিবেন এবং এই সংবিধান ও অন্য কোনো আইনের দ্বারা তাহাকে প্রদত্ত ও তাহার উপর অর্পিত সব ক্ষমতা প্রয়োগ ও কর্তব্য পালন করিবেন।’ এই ধরনের ক্ষমতা শুধু কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি সংবিধানের অধীনে সব ধরনের ক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, বিশেষ করে যখন বিগত সরকার গণরোষানলে কার্যত অচল এবং দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে পড়েছে তখন সংসদ ভেঙে দেয়ার পর একটি গ্রহণযোগ্য কার্যকর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করাটা রাষ্ট্রপতির জন্য বৈধ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু ঝুঁকিটি হলো, এখন যিনি রাষ্ট্রপতি তার অতীত রেকর্ডের কারণে তিনি যে কোনো সময় তার প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা পরিষদ হিসাবে রাষ্ট্রশাসনরত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অনাহূত যে কোনো পরিস্থিতি অনিবার্য করে তুলতে পারেন। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করতে পারেন। আর এই প্রশাসনের বৈধতা ভবিষ্যৎ সরকারের দেয়া বা শাসনতান্ত্রিক সংশোধনের মাধ্যমে বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে দেয়া যেতে পারে।

সরকারের সামনে আরেকটি পথ হলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিলের সংশোধনী বিচারিক প্রক্রিয়ায় রদ করে এ ব্যবস্থা বহাল করা এবং বিশেষ জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনা করে একবারের জন্য বর্তমান সরকারের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত বাড়ানো। যাতে রাষ্ট্র ও সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বিচারিক কাঠামো থেকে দলবাজ বিচারকদের বিদায় করার ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের বিপ্লবী দাবি বিবেচনায় আনার একটি বিষয় থাকতে পারে।

প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সময় বেশি লাগবে না। কিন্তু বিচারিক পদক্ষেপ নিতে হলে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে এবং সে প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল যে ৯০ দিনের কথা বলেছেন তার দুই মাসের মতো অবশিষ্ট আছে। এর মধ্যেই এই পদক্ষেপ নিতে হবে যা কিছুটা হলেও জটিল হতে পারে, যদিও সুপ্রিম কোর্ট এ জন্য সময় দিতে পারে। সময় নেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি হলো আগের সরকার ব্যাংকের টাকা লুটপাট করে এসব প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়াত্বের মুখোমুখি করেছে। বন্যার মতো দুর্যোগ এবং কিছু দেশের সরকারের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিত্যপণ্যের সরবরাহ বিশেষত, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও সারের সরবরাহ ঘাটতির ঝুঁকি তৈরি করেছে। এসব সরবরাহ অবিচ্ছিন্ন রাখার বিষয়টি সহজ নাও হতে পারে। এ অবস্থায় এসব জরুরি বিষয় মোকাবেলার সাথে সাথেই শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়টি দেখতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারে অন্তত চারজন আইন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রাজ্ঞ।

কী সংস্কার করতে হবে
সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, পুলিশিং ব্যবস্থা, নিরাপত্তা কাঠামো, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিচারব্যবস্থাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্র্র সংস্কারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মত হলো, বিদ্যমান সংবিধান সংশোধনের চিন্তা বাদ দিয়ে এটির পুনর্লিখন করতে হবে। বদিউল আলম মজুমদারসহ কিছু বিশেষজ্ঞ বিচারিক ব্যবস্থার মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের বিদ্যমান কাঠামোতেই সংস্কার আনা সম্ভব মনে করেন। এমনও বলা হচ্ছে, ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর বর্তমান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৭(৩) ও ৫৮(৪) অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের নিয়ম রয়েছে। এই অনুচ্ছেদগুলোয় বলা হয়েছে যে, সংসদ ভেঙে যাওয়ার পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রীরা নবনির্বাচিত সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করে যাবেন। যেহেতু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এবং অনেক মন্ত্রী ইতোমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং তারা নিজেরাই একটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন, তাই সংবিধানের প্রতিটি অক্ষর পালন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আলোচনাও বর্তমানে অবান্তর। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যমান অবয়ব অবৈধ নয়। সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন আরো সংক্ষিপ্ত পথের কথা বলছেন। তার মতে, আদালতের মাধ্যমে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ এর নির্বাচন ও সরকার অবৈধ ঘোষণা হলে দ্রুত আরেকটি নির্বাচন করার মতো সংস্কার হয়ে যাবে।

বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র ও কার্যকর নির্বাচনব্যবস্থা আনতে হলে নতুন সংবিধান লেখার বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে। একই সাথে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো বদলাতে হবে। এক্ষেত্রে মৌলিক যেসব প্রস্তাব সামনে এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, ইউরোপের অধিকাংশ দেশের মতো দলভিত্তিক আনুপাতিক নির্বাচনব্যবস্থা, নেপালের মতো দলভিত্তিক ও সরাসরি অধিক ভোটে নির্বাচন পদ্ধতির সমন্বয় করা, দুই কক্ষবিশিষ্ট আইন সভা ও প্রাদেশিক ব্যবস্থা চালু করা, আইনসভাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর নিয়ন্ত্রণে আনা।

বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থার বড় দুর্বলতা হলো রাষ্ট্র শাসনে জনগণের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব না থাকা। এ ব্যবস্থায় ৫০ ভাগ ভোট পেয়ে ৯০ ভাগ আসন অথবা ৪০ ভাগ ভোট পেয়ে ১০ ভাগ আসন পাওয়া সম্ভব। অনেক প্রার্থী নির্বাচন করলে ২৫ ভাগ মানুষের ভোট পেয়ে ১০০ ভাগ ভোটারের প্রতিনিধি হওয়াও সম্ভব। বাস্তবে সেটি হয়েছেও। আনুপাতিক ব্যবস্থায় জনগণ যত ভোট যে দলকে দেবে সে দলের প্রতিনিধিত্ব তার প্রায় কাছাকাছি থাকবে। অন্য দলের সহযোগিতা ছাড়া সরকার গঠন সহজ না হওয়ায় কর্তৃত্ববাদী হওয়ার পথ সঙ্কীর্ণ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রাদেশিক ব্যবস্থা হলেও ক্ষমতার মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্য থাকবে। কেন্দ্রে এক দলের সরকার হলে প্রদেশে অন্য দলের সরকার থাকতে পারে। যেটি ভারত পাকিস্তানের মতো দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার পথে যাওয়া কঠিন করেছে।

মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, জনমত অপরিবর্তনীয় নয় এবং মানুষ সাধারণত খুব দ্রুত অতীত ভুলে যায়। প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার জন্য কাক্সিক্ষত বা প্রয়োজনের চেয়ে মেয়াদকালকে দীর্ঘায়িত করার যে কোনো পদক্ষেপ তাদের অজনপ্রিয় করে তুলতে পারে। ফলে সরকারকে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের বক্তব্য হলো, এবার যা ঘটেছে তা অভ্যুত্থান। এটি ঘটেছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এবং তার সরকার কর্তৃক জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে। সংবিধানের যে অংশগুলো শেখ হাসিনা সংশোধন করেছেন, সেগুলো বাতিল ঘোষণা করতে হবে। অন্যান্য সরকারের আমলেও যেসব সংশোধনী ও আইনের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছিল, সেগুলোও বাতিল করতে হবে। সবার আগে আইনসভার কর্তৃত্ব তৈরি করতে হবে। আর তা করতে হলে আইনসভার সদস্যদের সত্যি সত্যি নির্বাচিত হতে হবে। কোনো সদস্য যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তাহলে বিচারপতিদের অপসারণের যেমন বিধি আছে, তেমনি তাদেরও অপসারণের বিধান থাকতে হবে। সরকারের তিন বিভাগের মধ্যে আইনসভাকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে। এর অধীনে অর্থাৎ আইনসভার যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন।

ড. সলিমুল্লাহর সাথে নীতিগত দ্বিমত করার অবকাশ হয়তো নেই। তবে নির্বাচনের পদ্ধতির সংস্কার না করলে অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনে জনমতের পুরো প্রতিফলন ঘটবে না। মনে রাখতে হবে নির্বাচিতরাও স্বৈরাচার হয়। এটি ঠেকানোর জন্য কাঠামোর মধ্যেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে একটা দ্বিধা আছে। তাদের উচিত জনগণকে বিশ্বাস করা। জনগণের সমর্থন না পেলে, সেনাবাহিনীর উল্লেখযোগ্য একটা অংশের সাহায্য না পেলে, গত ছাত্র-জনগণের আন্দোলনে যে পরিমাণ প্রাণহানি আর রক্তপাত ঘটেছে, তার থেকে আরো অনেক বেশি ঘটতে পারত। ড. সলিমুল্লাহ যথার্থই বলেছেন, এ অবস্থায় দেশকে নৈরাজ্য ও অধঃপতনের হাত থেকে বাঁচাতে হলে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, সংস্কার করতে তাদের কত সময় লাগবে তা পরিষ্কার ঘোষণা করা।

অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ারভুক্ত নয়, এমন সংস্কারে হাত দেয়াও উচিত হবে না। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না যা বৃহৎ অনেক পক্ষকে সরকারের বিপক্ষে নিয়ে যায়। এটি সংস্কারের অনেক ভালো উদ্যোগ বিফল করার ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। দিল্লি শেখ হাসিনার সরকারকে অন্য কারো জন্য স্পেস না দিয়ে একান্ত নিজের করতে গিয়ে পুরো রাষ্ট্রে প্রভাব হারিয়েছে। এ সরকারেরও উচিত হবে না একান্তভাবে কোনো পক্ষের হতে গিয়ে অন্য সবাইকে বৈরী করা। ভারসাম্য ও সক্রিয়তা প্রফেসর ইউনূসের সরকারকে অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

mrkmmb@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেফতার সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা-শেখ রেহেনাসহ ২৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা গাজার চলমান ঘটনাবলী সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভুল : বসনিয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে ভারতের আসাম-মেঘালয় সীমান্তে আটক ৬৫ বাংলাদেশী ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুসলিম উম্মাহ'র মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব : ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হোসেনপুরে স্কুলশিক্ষকের বসতঘর পুড়ে ছাই রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টির আভাস 'শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে' সিংগাইরে ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশ উদ্ধার সাতক্ষীরায় বজ্রপাতে মৎস্যচাষির মৃত্যু সাংবাদিক শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর ওপর ডিম নিক্ষেপ

সকল