২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দুই প্রশ্নের উত্তর

জয়নুল আবেদীন - ফাইল ছবি

একুশে পদকপ্রাপ্ত আ ন ম সিরাজুর রহমান বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী ব্রিটিশ সাংবাদিক। ১৯৬০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে কাজ করেন। বিবিসি বাংলার উপ-প্রধান হিসেবে অবসরে যান। অবসরের পর তিনি বিভিন্ন সংবাদপত্রে লিখতেন। সিরাজুর রহমান বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছিলেন। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দলনেত্রী নির্বাচিত করার পরের বছর তার সাক্ষাৎকার প্রচার করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তা তুলে ধরেন ২০১৫ সালের ১৩ মার্চ নয়া দিগন্ত পত্রিকায় ‘প্রতিশোধস্পৃহারও কি কোনো সীমা থাকতে নেই’ শিরোনামে লেখা কলামে। এটি ছিল তার জীবনের শেষ কলাম।

ওই সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনাকে যে দু’টি প্রশ্ন করা হয়েছিল সে দু’টি প্রশ্নের উত্তর শোনার সাথে সাথে স্টুডিও ম্যানেজারকে রেকর্ডিং বন্ধ করে দিতে বলেছিলেন সিরাজুর রহমান। কেন ম্যানেজারকে রেকর্ডিং বন্ধ করতে বলেছিলেন? ২০১৫ সালের ১৩ মার্চ প্রকাশিত কলামটি সম্ভবত ক্ষমতাসীন সরকারের চোখে পড়েনি। চোখে পড়লে কবর থেকে তুলে এনে তাকে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করানো হতো।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আমরা নিজেদের ‘পাকিস্তানি’ পরিচয় দিতাম। বাংলাদেশের যারা বিদেশ থাকেন তাদের কাছে পরিচয়টি ছিল অনেকটা লজ্জার। আমি যে বছর প্রথম লন্ডন যাই (২০০৩ সাল) সেই বছর মিস্টার বাংলাদেশের বাসায় বেড়াতে গিয়ে এমন নামের কারণ জানতে চেয়েছিলাম। উত্তরে তিনি বলেন, ‘সে অনেক কথা। আমি ১৯৬৩ সালে এ দেশে লেখাপড়া করতে আসি। লেখাপড়া শেষ করে দেশে ব্যবসায় শুরু করি। এ দেশে এশিয়ানদের একটা কমিউনিটি আছে। এশিয়ান কমিউনিটির কাছে আমাদের কোনো পরিচয় ছিল না। হিন্দিভাষীরা ছিল ভারতীয় এবং উর্দুভাষীদের বলা হতো পাকিস্তানি। আমরা বাংলাভাষীরা না পাকিস্তানি না ভারতীয় কোনোটা ছিলাম না। তারা আমাদের পাকিস্তানি হিসেবে মানত না। তাদের যুক্তি- তোমরা প্রথমে দিল্লির, পরে ব্রিটিশের সর্বশেষ পাকিস্তানের উপনিবেশের স্থায়ী বাসিন্দা। তোমাদের নিজের কোনো দেশ নেই। এ কারণে সবার কাছে ছোট হয়ে থাকতাম। সবাই অবহেলা করত। এসব কারণে, একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন আমরাও দেখছিলাম। শুরু হলো স্বাধীনতার আন্দোলন। দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ দেশের বাঙালি কমিউনিটি রাত-দিন পরিশ্রম করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যার্থে দেশে পাঠিয়েছি। যেদিন দেশ স্বাধীন হলো সেদিন কী যে ভালো লেগেছিল- মনে হলো পুনর্জন্ম হয়েছে। বুক ফুলিয়ে স্বাধীনতার পরপর স্বাধীন দেশের মাটিতে পা ফেলতে কেমন লাগে সে অনুভূতির জন্য আমরা দু’জন (স্বামী-স্ত্রী) ছুটে যাই বাংলাদেশে। বিমান বন্দর নেমে বুক ভরে বাতাস নেই। স্বাধীন দেশের বাতাস, একান্ত নিজস্ব বাতাস, কত ভালো লাগল। ঠিক করি আর বিদেশ নয়, ব্যবসায়-বাণিজ্য গুটিয়ে এক সময় দেশেই চলে আসব। জীবনের শেষ নিঃশ^াস স্বাধীন দেশের মাটিতেই ত্যাগ করতে চাই। বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমরা স্বামী-স্ত্রী নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে হলফনামার মাধ্যমে আমাদের নাম পরিবর্তন করে রেখেছি ‘আবদুস সামাদ বাংলাদেশ’ ও ‘হোসনে আরা বাংলাদেশ’। নামের ললাটে ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি লিখে মাথা উঁচু করে লন্ডন চলে আসি। (জয়নুল আবেদীন, বিলেতের পথে পথে, পৃষ্ঠা : ১২২-১২৩)

মিস্টার বাংলাদেশের মতো সিরাজুর রহমানসহ যারা প্রবাসী তারাও একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখতেন। স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেতে গিয়ে নানাভাবে সাহায্য করতেন পূর্ব পাকিস্তানের নেতাকর্মীদের। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সিরাজুর রহমানের ভাই সম্পর্কসহ বন্ধুত্বপূর্ণ ভাব ছিল। তিনিই বিবিসিতে শেখ মুজিবের সাক্ষাৎকার প্রচার করে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত করেছিলেন।

বাকশাল
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে একদলীয় ও রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়। গণতন্ত্রের হত্যা বাকশাল প্রতিষ্ঠার জের ১৫ আগস্ট। দেশ আবার ডুবে গেল নিবিড় অন্ধকারে। এ বিষয়ে সিরাজুর রহমানের বলেন, ‘মুজিবের দুই মেয়ে হাসিনা ও রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দুই বোনকে দিল্লিতে এনে রাজনৈতিক আশ্রয় দেন। তাদের তত্ত্বাবধানের ভার দেয়া হয় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’কে। দিল্লির সুশীলসমাজের সাথে তাদের যোগাযোগের সুযোগ বড় বেশি ছিল না।

এ দিকে, পরপর কয়েকটি রক্তঝরা সামরিক অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের কার্যকর ক্ষমতা হাতে পান। বহু প্রমাণ আছে, গোড়ার মুহূর্ত থেকে তিনি হারানো স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সঙ্কল্প নিয়েছিলেন। হাসিনা ও রেহানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক উদ্যোগ তিনি কিছু দিনের মধ্যে নিয়েছিলেন। শেষে তিনি পঞ্চম সংশোধনী মোতাবেক সংবিধানে নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবিত করার পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে দিল্লি পাঠিয়ে দুই বোনকে দেশে ফিরিয়ে আনেন।’ ... দেশে ফেরার পর সদ্য বৈধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকে দলনেত্রী নির্বাচিত করতে বিলম্ব করেননি। পরের বছর আওয়ামী লীগ থেকে বিবিসিতে আমাকে জানানো হয়, নেত্রী শেখ হাসিনা লন্ডন সফরে আসবেন। স্থির করে ফেললাম, শেখ হাসিনাকে তার পিতার মতো বিশ্বমিডিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। প্রথমে আমি তার সম্মানে বিবিসির বুশ হাউজের কেন্দ্রীয় বার্তাকক্ষে এক চা-চক্রের আয়োজন করেছিলাম।

উদ্দেশ্য ছিল, আওয়ামী লীগ নেত্রী বিবিসির সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে মনখোলা মতামত বিনিময় করবেন। শেখ হাসিনা প্রায় দুই ডজন সহচর নিয়ে বুশ হাউজে হাজির হলে আমরা হতাশ হয়েছিলাম। সহকর্মী জন রেনার ও আমি স্থির করলাম যে, আমরা দু’জন নেত্রীকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্টুডিওতে নিয়ে যাব এবং সেখানে সব বিষয়ে তার মতামত জানার চেষ্টা করব। প্রথমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নেবেন জন রেনার।আলোচনার সূত্রপাত তিনি করেছিলেন ইংরেজিতে এভাবে :

জন রেনার : শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। দলনেত্রী হয়ে আপনার ভালো লাগছে?
শেখ হাসিনা : (ইংরেজিতে) না, মোটেও ভালো লাগছে না। আমি রাজনীতি ভালোবাসি না, রাজনীতিকে ঘৃণা করি।

জন রেনার : (বিস্মিত হয়ে) তাহলে আপনি কেন রাজনীতিতে এলেন? কেন দলনেত্রী হতে গেলেন আপনি?

শেখ হাসিনা : (ক্রুদ্ধ, ইংরেজিতে) ওরা আমার বাবাকে খুন করেছে, আমার মাকে খুন করেছে, আমার ভাইদের খুন করেছে, তাদের জন্য কেউ এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলেনি। আমি তার প্রতিশোধ নেবো। প্রতিশোধ নেবো বলেই রাজনীতিতে এসেছি।

ইশারায় জনের অনুমতি নিয়ে স্টুডিও ম্যানেজারকে রেকর্ডিং বন্ধ করতে বলি।
... সে মুহূর্ত থেকে আওয়ামী লীগের সব কথা ও কাজে প্রতিশোধস্পৃহার লক্ষণ খুবই প্রকট। দুই বোন দিল্লি থেকে ঢাকা এসেছিলেন ১৯৮১ সালের ১৭ মে। তার ১৩ দিনের মাথায় অত্যন্ত জটিল একটি সামরিক ষড়যন্ত্রে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। চট্টগ্রাম জেলার এক মাঠের মধ্যে যেভাবে তার লাশ লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল তাতে ধারণা করা স্বাভাবিক যে, তার পরিচয় বরাবরের জন্য গুম করে ফেলাটা ছিল উদ্দেশ্য।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক অভ্যুত্থান করে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। জেনারেল এরশাদের এই সামরিক অভ্যুত্থানে বেগম খালেদা জিয়া অসন্তুষ্ট হলেও শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট ছিলেন।

আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এরশাদের ক্ষমতা গ্রহণে তিনি অখুশি হননি। আওয়ামী লীগের পত্রিকা বাংলার বাণী প্রথম সম্পাদকীয় নিবন্ধে সামরিক সরকারের সাফল্য কামনা করে। এরশাদের অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হবে, রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা যে অনেক পিছিয়ে যাবে, সে সম্পর্কে আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো সন্দেহ ছিল না। তা সত্ত্বেও সভানেত্রীসহ আওয়ামী লীগ এরশাদের স্বৈরতন্ত্রকে স্বাগত করেছিল। ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, মূলত আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে এরশাদের সামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রায় ৯ বছর স্থায়ী হতে পেরেছিল। এর একটিমাত্র ব্যাখ্যাই সম্ভব। রাষ্ট্রের ও গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে জেনেও প্রতিশোধস্পৃহা থেকে আওয়ামী লীগ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনে ইন্ধন জুগিয়েছিল। নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনা সম্পর্কে সিরাজুর রহমান বলেন, ‘সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়া ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে গালিগালাজের কোনো প্রয়োজন ছিল কি? তাতে ব্যক্তি, রাজনীতিক, এমনকি মুজিবকন্যা হিসেবেও তার সামান্যতম মর্যাদা বৃদ্ধি ঘটেছে কি? এর বদলে তখন থেকে যদি তিনি সুশাসন ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিতেন তাহলে এত দিনে জাতীয় পর্যায়ে তার গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যেতে পারত, জাতি সম্ভবত ভোট দিয়ে তাকে প্রধানমন্ত্রী করে রাখতে চাইত। কিন্তু সেটি কি তাদের কাম্য ছিল? আমার সন্দেহ হয়। প্রায়ই মনে হয়- ক্ষমতা, দেশ শাসন, এমনকি রাজনীতিক হিসেবে দেশের ও বিশ্বের সম্মান এবং মর্যাদা আওয়ামী লীগের কাম্য নয়।’

স্বাধীন রাষ্ট্রের তকমা
সিরাজুর রহমানের ভাষায়, ‘ভাগ্যাহত বাংলাদেশও মাঝে মধ্যে সৌভাগ্যের মুখোমুখি হয়েছিল। একটা বঞ্চিত ও নির্যাতিত জাতি সংগ্রাম করে স্বাধীন হয়েছে, শত প্রতিকূলতা জয় করেও জাতি-সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধার সাথে সে প্রয়াস দেখেছে। সাহায্য, বাণিজ্য ইত্যাদি নিয়ে তারা এগিয়ে এসেছে। পৃথিবীর আর কোনো দেশ বাংলাদেশের মতো এত ঋণ, অনুদান, বাণিজ্যিক সুবিধা পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু তাতে চূড়ান্ত লাভ আমাদের কী হয়েছে? পদ্মায় সেতু তৈরির মূলধন সংগ্রহ করতে আমাদের অসুবিধা হয়নি। বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থা খুব সহজ শর্তে আমাদের ঋণ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল।

আমরা যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ দেশে শুল্কমুক্ত তৈরী পোশাক রফতানির বাজার পেয়েছিলাম। সে সুযোগ নষ্ট না করলে পোশাক রফতানির ব্যাপারে আমরা এত দিনে বিশ্বের সেরা দেশে পরিণত হতে পারতাম। কিন্তু সেসব সুযোগ আমরা হেলায় নষ্ট করেছি। পোশাক রফতানির জিএসপি সুবিধা আমরা হারিয়েছি ক্রেতা দেশগুলোর সাথে অহেতুক বিবাদ ও বিতর্ক করে। আমদানিকারক দেশগুলো এ শিল্পের উন্নতির যেসব প্রস্তাব করেছিল, তাতে কার ক্ষতি হতো? সরকারের? কারখানা মালিকদের? পোশাক শ্রমিকদের? কিংবা বাংলাদেশের? এখন যে এ শিল্প ধ্বংস হতে বসেছে, এ বাজার যে আমাদের হাতছাড়া হতে চলেছে, তাতে লাভবান হচ্ছে কে? আমাদের সাফল্যে যারা ঈর্ষাতুর ছিল তারা।’

১৯ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে নয়া দিগন্তে ‘ডিম পাড়ে হাঁসে, খায় বাগডাশে’ শিরোনামে আমার একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে লিখেছিলাম, বিশ্বে কেউ পেয়েছে তেল, কেউ পেয়েছে লোহা, স্বর্ণ ও হীরার খনি আর আমরা পেয়েছি ‘মানুষের খনি’। বিদেশের যে পরিমাণ সম্পদ আছে সে পরিমাণ মানুষ নেই- আর আমাদের যে পরিমাণ মানুষ আছে, সে পরিমাণ সম্পদ নেই। সম্পদ ভোগ করতে গেলেও মানুষ লাগে। মানুষের খনির কারণে বিশ্বের নজর পড়েছে আমাদের জনসম্পদের দিকে। হু হু করে বাড়ছে রেমিট্যান্স। আমরা স্বর্ণ ও হীরার খনি না পেলেও পেয়েছি মানুষের খনি। মানুষের খনি পেয়েছি বলে সারা দুনিয়া ছড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। কলামে লিখেছিলাম, জানা যায়, দুনিয়ার নানা দেশে এখন এক কোটি ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৮৯৫ জন বাংলাদেশী কর্মরত আছেন।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কাজ করছেন ৫০ লাখ শ্রমিক। তাদের ৮০ শতাংশ নারী। সে হিসাবে গার্মেন্টে কাজ করা মেয়েদের সংখ্যা ৪০ লাখের মতো। কারো কারো মতে, প্রকৃত সংখ্যাটি আরো বেশি।

সরকার পতনের পর বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আগস্ট মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০৭ কোটি ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩১ শতাংশ। আমাদের পোশাক শিল্পের ঊর্ধ্বগতিসহ এভাবে রেমিট্যান্স বাড়তে থাকলে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। তা না হয়ে দুই প্রশ্নের উত্তর পূর্ণ করতে গিয়ে ব্যাংকগুলো এক দিকে তারল্য সমস্যায় ধুঁকছে। অন্য দিকে হাজার হাজার কোটি টাকার কুমিরসহ বাড়ির পিয়ন মালিক হচ্ছেন ৪০০ কোটি টাকার।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement