১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

এ মুহূর্তের প্রয়োজন সমন্বয়

এ মুহূর্তের প্রয়োজন সমন্বয় - নয়া দিগন্ত

আমাদের তরুণদের অভিনন্দন। যারা নতুন মুক্তির স্বাদ জাতিকে উপহার দিলেন। পুরো জাতিকে এক সুতোয় বেঁধে স্বপ্ন দেখালেন, পরিচিত করলেন নতুন গন্তব্যযাত্রার সাথে। তাদের অর্জন জাতীয় কবির অমর উচ্চারণকে স্মরণ করিয়ে দেয়- ‘ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়, তোরা সব জয়ধ্বনি কর’। স্মরণ করিয়ে দেয় ইসলামের বীর তরুণ হজরত আলী রা:, খালিদ বিন ওয়ালিদ, মুহাম্মদ বিন কাসিমের কথা। তারা যেমন তাদের তারুণ্যের দীপ্তিতে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলেন, তেমনি আমাদের তরুণরা হতোদ্যম নিরাশ জাতিকে নতুন করে জাগিয়ে তুললেন, দিশারী হলেন নতুন সম্ভাবনার।

গণবিপ্লবের পর সাধারণত যা হয়ে থাকে আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা দেশীয় এবং বিদেশী শক্তির অপতৎপরতা সর্বোপরি পানি রাজনীতির ছোবলে অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়ার উপক্রম। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট, লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ক্ষেতের ফসল হারিয়ে হাহাকার করছে। একই সাথে শিলিগুড়ি করিডোর বা ত্রিপুরা হয়ে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছানোর ষড়যন্ত্রের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। এ সময় প্রয়োজন ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য। দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে, এর পরিবর্তে বিভিন্ন পদ-পদবির জন্য আলটিমেটাম দিয়ে সরকারকে বিব্রত করা হচ্ছে; যা মোটেই কাম্য নয়। বিভিন্ন অন্যায়-অবিচার ও বঞ্চনার নিরসন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি কর্মযোগী প্রশাসন, প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলার স্থিতি। অর্থনীতির গতিময়তা। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন না হলে শাসন কাঠামোসহ সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার শঙ্কা থেকে যায়।

এখন সবার আগে প্রয়োজন প্রশাসনিক পুনর্গঠন। অর্থনৈতিক কর্মজোয়ার সৃষ্টি, ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা এত দিন দেশে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে, তাদের শনাক্ত এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। যাদের আদেশে এবং যোগসাজশে ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে, তাদের সঠিক বিচারের ব্যবস্থা সময়ের দাবি। ৫ মে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যা, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ১৭০ জনকে হত্যাকারী চক্র, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের হোতাদের শনাক্তকরণ ও বিচারের ব্যবস্থা এগুলো প্রাধিকারের বিষয়। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশের সাথে যেসব অসম চুক্তি হয়েছে, যেগুলো এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, সেগুলো আগামী সংসদে বিধিবদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা। দেশের বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাধিকার তালিকায় থাকা দরকার।

মতাদর্শের কারণে, অসদাচরণ শৃঙ্খলা ভঙ্গ অথবা কর্মদক্ষতার ঘাটতির কারণে সাধারণত সুবিধাবঞ্চিত বা পদবঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। ঢালাওভাবে সবাই পদবঞ্চিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনে পদায়নে মেধার মূল্যায়ন থাকে না। এর ফাঁকে বিভিন্ন কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত এবং অদক্ষদের পদায়নের আশঙ্কা থেকে যায়। যা পরবর্তী সময়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আরেকটি প্রাধিকার বিষয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি নাগরিকের দায় রয়েছে।

দেশের প্রতিটি ধর্ম বিশ্বাসের মানুষ, প্রতিটি সম্প্রদায়ের সদস্য সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। আমাদের পরিচিতি একক জাতিসত্তায়। এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের ব্যক্তি ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নিরাপত্তা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। বর্তমান সন্ধিক্ষণে সবার উচিত এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করছে তারা দেশ ও জাতির হিতাকাক্সক্ষী নয়। তাদের যথাযথ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে সংখ্যালঘু ভাইদের পাশে দাঁড়ানো প্রতিটি নাগরিকের জাতীয় দায়িত্ব। এক্ষেত্রে শুধু সরকারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদেরও সচেতন ভূমিকা পালন করা দরকার।

গত কয়েক বছরে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে, এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে টাস্কফোর্স গঠন করা এবং যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেসব দেশের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার যথাযথ প্রক্রিয়া অবিলম্বে চালু করা দরকার। সরকারের আরেকটি প্রাধিকার শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলগুলোয় চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষাঙ্গন এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করে তাদের লেখাপড়ার জগতে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি। লেখাপড়ায় যে ক্ষতি হয়েছে প্রয়োজনে দুই শিফটে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এ ক্ষতিপূরণ করা দরকার। ঘন ঘন পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষাবর্ষকে নিয়মিতকরণ প্রয়োজন; যেন শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে সময় হারিয়ে না যায়। আমাদের যে ভাই-বোনোরা এ আন্দোলনের কারণে চাকরি হারিয়েছেন, জেল খাটছেন তাদের মুক্ত করে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।

এক দিকে মাননীয় উপদেষ্টারা রাতের ঘুম হারাম করে উন্নয়নের চেষ্টা করছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রছাত্রীরা এখনো রাস্তায়, আর এ দল দাবি-দাওয়ার দফা নিয়ে রাস্তা অবরোধ করছেন- কোথায় যেন একটা সমন্বয়হীনতার আভাস, যা হাত শক্ত করছে শত্রুর, সুযোগসন্ধানীর। জাতীয় এই দুর্যোগকালে এখন প্রয়োজন নিঃশর্ত জাতীয় ঐক্য এবং সার্বিক সমন্বয়। দফাওয়ারি আন্দোলনের সময় এটা নয়। এটা যেন সোনার ডিম পাড়ার প্রত্যাশায় না থেকে হাঁসটিকে জবাই করে খেয়ে ফেলা না হয়। আমরা সেদিকে হাঁটছি না তো?


আরো সংবাদ



premium cement
মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত পুলিশ সদস্যরা গাঢাকা দিয়েছেন কক্সবাজারে পাহাড়ধসে ৬ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মি.মি. বৃষ্টি সুপরিকল্পিতভাবে ঐক্য বিনষ্টের চেষ্টা চলছে : মির্জা ফখরুল ড. ইউনূসের মেগাফোন কূটনীতিতে বিস্মিত বিরক্ত ভারত বাম চোখে কিছু দেখেন না বেলাল, গুলি একটা রয়েই গেছে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ ঢাকা আসছে গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরো ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত আমদানির প্রভাব পড়েনি ডিমের বাজারে বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ-সবজি সিন্ডিকেটের কবলে তাঁতবোর্ড প্রাথমিক তদন্তে সম্পৃক্ততা পাওয়া না গেলে মামলা থেকে নাম বাদ হবে ইউক্রেন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করলে যুদ্ধে জড়াবে পশ্চিম : পুতিন

সকল