২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

তৃতীয় স্বাধীনতা : সরকারের যত রকমফের

তৃতীয় স্বাধীনতা : সরকারের যত রকমফের - নয়া দিগন্ত

কোনো জাতি তিন তিনবার স্বাধীন হয়েছে এমন ইতিহাস কেবল বিরলই নয়, বিশ্বে এর দ্বিতীয় নজির নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই তিন ললাটলিখন সৌভাগ্যের না দুর্ভাগ্যের, তা নিয়ে আলোচনা, গবেষণা হতে পারে। আমরা গবেষক নই যে, এ নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করব। তবে বিষয়টি জরুরি। তিনবার স্বাধীনতা পাওয়ার ফলাফল নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হলে অনেক মিথ, অনেক বিভ্রান্তি দূর হতে পারে। জাতির ইতিহাস তাতে স্বচ্ছ ও পাপমুক্ত হবে।

আগামী দিনে পথচলার পাথেয় হবে। সব জাতির জন্য তার সত্যিকারের ইতিহাস জানা জরুরি
এ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দলকে অদ্বিতীয় বানানো, তাদের কোনো কোনো নেতাকে দেবতাতুল্য করে তোলা হয়েছে। আবার কোনো দলকে অবমূল্যায়ন করা, অপবাদ দেয়া, জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে। এসব বিষয় অবশ্যই সবাইকে বুঝতে হবে এবং আগামী প্রজন্মকে জানাতে হবে; যাতে অতীতের কোনো মিথ অথবা অপবাদ-অবহেলার কথা ভুলে না যাই। যার যতটুকু ভালো, যতটুকু মন্দ তার সঠিক মূল্যায়ন হলে আগামীতে বিভ্রান্তি দূর হবে।

প্রথম স্বাধীনতার গোড়ার কথা আমরা জানি না, সে লড়াই দেখা হয়নি। তবে অগ্রজদের কাছ থেকে কিছু কথা শুনেছি, ইতিহাসের অল্পস্বল্প পাঠ গ্রহণ করেছি। তবে প্রথম দফার স্বাধীনতার শেষার্ধে অনেক বিষয়ই যৌবনে প্রত্যক্ষ করেছি। আরো অনেকে আছেন যাদের সেটি দেখার সুযোগ হয়েছে। তখনকার শাসকদের প্রায় সবাই ছিলেন তদানীন্তন পাকিস্তান মুসলিম লীগের ‘হার্ড কোর’ সদস্য। সেই প্রশাসনের কাছ থেকে এ অঞ্চলের মানুষ সীমাহীন শোষণ বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার ছিল। শাসকরা নিজেদের অদ্বিতীয় ভাবত। এখানেই শেষ নয়, পশ্চিমাঞ্চলের কাছ থেকে এ অঞ্চলের মানুষ অবহেলা, হেয় প্রতিপন্ন হয়ে দীর্ঘ সময় চরম মনোকষ্টে ভুগেছে। লোকদেখানো ও চক্ষুলজ্জার কারণে সামান্য উন্নয়ন করেছে। তবে পশ্চিমাঞ্চলের সাথে তুলনায় সেটি ছিল তিল ও তালের মতো। সে সময় দুর্নীতিও ছিল। রাজনীতিকরা দূরে সরে থেকে সব দায় দুই অঞ্চলের আমলাদের ঘাড়ে ফেলে দিয়েছিল। সে জন্য দুই অঞ্চলের বিভক্তির ঠিক পূর্বাহ্ণে ৩০৩ জন আমলাকে দুর্নীতির দায়ে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। অবিভক্ত পাকিস্তানের শেষ স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান ও তার সহচর এবং তার সব উত্তরসূরিই দুই অঞ্চলের গণতন্ত্র মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সব মৌলিক অধিকার ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছিল। সর্বশেষ সেই দানব এ অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে। অবিভক্ত পাকিস্তানের অংশ হয়ে থাকার পুরো সময়টি ছিল গ্লানিকর ও দুঃস্বপ্নের এক অধ্যায়।

১৯৭১ সালের মার্চ থেকে এ অঞ্চলের লাখো ছাত্র-জনতা, সেনা সদস্য, তৎকালীন ইপিআর, পুলিশ হানাদার পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে। সেই যুদ্ধ হয়ে আছে ইতিহাসে অপরিসীম ত্যাগ আর বীরত্বের এক মহাকাব্য। একাত্তর সালের ডিসেম্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে। যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়েছিলেন লড়াকু অসম সাহসী মুক্তিযুদ্ধের মহানায়করা। আর যুদ্ধ শেষে ক্ষমতায় আসীন হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় যারা আনন্দ উল্লাস আর উৎসবে মত্ত ছিল। উড়ে এসে জুড়ে বসল প্রমোদকাননে থাকা আওয়ামী লীগের যত চেলা চামুণ্ডার দল।

তখন থেকেই এ দেশে হত্যা-সন্ত্রাস, ধর্ষণ, লুটপাট, দখল ও ছিনতাইসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ছিনতাইয়ে নারকীয় যত কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত শুরু হয়; যা ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত অব্যাহতভাবে জারি ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র দখলে নিয়ে এমন কোনো জায়গা ছিল না, যেখানে দুর্নীতি, আত্মসাৎ, অপকর্মের আওয়ামী কালো ছায়া পৌঁছায়নি। সে জন্য আওয়ামীদের প্রাণপুরুষ বাধ্য হয়ে বলেছিলেন, ‘সবাই পায় স্বর্ণের খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি’। এমন সব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, সে সময় দেশে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেই সাথে আওয়ামীদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নেপথ্য থেকে বেরিয়ে আসে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত তার হেরফের হয়নি।

আওয়ামী সরকারের অযোগ্যতা, অদক্ষতা চুরি চামারি আর সম্পদ পাচার ও আত্মসাতের ফলে ১৯৭৪ সালে দেশে মারাত্মক দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল। ওই মন্বন্তরে লাখ লাখ মানুষের জীবনাবসান ঘটে। সে সময় দেশের বাইরে থেকে অনাহারি মানুষের জন্য যা কিছু সাহায্য এসেছিল, সেটিও লুটেপুটে খেয়েছিল লীগের স্বার্থপর হৃদয়হীন তথাকথিত নেতাকর্মীরা। এই লুটপাটে ‘মহানায়ক’ ছিল সে সময়ের রেডক্রসের প্রধান ও লীগ নেতা গাজি গোলাম মোস্তফা।

সেই মন্বন্তরের কারণ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন ভারতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ নোবেল লরিয়েট অমর্ত্য সেন। তার গবেষণায় উঠে আসে, ওই দুর্ভিক্ষ খাদ্যের অভাবে হয়নি, হয়েছে তৎকালীন শাসকদের অদক্ষতাজনিত কারণে। শাসকরা মজুদদারদের পক্ষে ছিল, লুটপাটকারীদের নীরব সমর্থক ছিল। এসবের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনীহা ছিল। তার পরিণতিতে ঘটে লাখো প্রাণের করুণ অবসান।

দুর্ভিক্ষ শেষ না হতেই আবারো লুটপাট হত্যা জখম সন্ত্রাস পরসম্পদ দখলের মহোৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল। ক্ষয়প্রাপ্ত অর্থনীতির জন্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বিনাশ ঘটে। তখন বাংলাদেশকে বলা হলো তলাবিহীন ঝুড়ি। এমন সব কর্মকাণ্ডে এদেশ নরকতুল্য হয়ে ওঠে। এমন এক পরিস্থিতিতে দিশেহারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় আওয়ামী সরকার সব অপকর্ম লুকাতে এবং অক্ষমতা অযোগ্যতা ঢাকতে দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রের গলাটিপে ধরে তাদের মৃত্যুকে অনিবার্য করে। স্মরণ করতে হবে, এর আগেই ১৯৭৩ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করে লীগ সরকার। গণতন্ত্রের মাথায় কুঠারাঘাত করা হয় পাতানো ওই নির্বাচনে। মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে। গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে কফিনে ভরে পেরেক মেরে দেয়া হয়েছিল। সেই অন্ধকার যুগের সময়টাকে প্রবীণ ও সাহসী এক সাংবাদিক মাত্র একটি বাক্যে সব মানুষের অনুভূতিটা প্রকাশ করেছিলেন। লিখেছিলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই।’
এমন পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে ক্ষোভ দুঃখে প্রতিবাদে জেগে উঠতে না পারে সে জন্য লীগ সরকার সরকারি অর্থ খরচ করে একটি দলীয় বাহিনী গঠন করে। সেই রক্ষীবাহিনীর প্রধান কাজ ছিল যেখানে লীগ সরকারের সন্দেহভাজন যত প্রতিপক্ষ তাদের হত্যা, নিধন ও গুম করে ফেলা। আজ যে হত্যা গুম হামলা মামলার মতো জঘন্য সেই শৈলীর অবসান ঘটেছে।

আরো স্মরণ রাখতে হবে আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষকে আমৃত্যু রাষ্ট্রের কর্ণধার বানাতে এবং তার বংশের ভেতরই যাতে অনাদিকাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতা দোল খেতে পারে সেই আলোকে জাতীয় সংবিধান সাজানো হয়। ওই সংবিধানকে আওয়ামী দলের সংবিধানে পরিণত করা হয়। সে জন্যই ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংবিধান নিয়ে যথেচ্ছাচার করেছে লীগ। সংবিধানে এমন ব্যবচ্ছেদের সুযোগ তৈরি হয়েছিল ১৯৭৫ সাল থেকে। তাতে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সে বছরই এমন এক আগস্ট মাসেই আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষসহ সপরিবারে দুঃখজনকভাবে বিদায় নিতে হয়েছিল এই ধরাধাম থেকে। সেই আওয়ামীদের সাজানো গোছানো প্রথম সংসার তাসের ঘরের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে। আওয়ামীদের সেই সরকারের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে দুঃশাসন দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী ও গণতন্ত্র হত্যাকারী মানবতা বিনাশকারী বাকশাল সরকার হিসেবে।

সামান্য বিরতির পর ১৯৭৯ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণ করে জনগণের সব অধিকার ফিরিয়ে দেন। যেমন রাজনৈতিক সংগঠন করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যা খর্ব করা হয়েছিল তার প্রায় সবগুলোর প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে দিয়েছিল শহীদ জিয়ার সরকার। পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। এসব অবশ্যই সেই তরুণ প্রেসিডেন্টের সদিচ্ছার প্রতিফলন। তার প্রশংসিত এসব কৃতিত্বকে ছাপিয়ে অনেক উপরে নিতে দেশের জন্য নতুন এক রাজনীতি জনগণ উপহার দিয়েছিলেন শহীদ জিয়া। যেটা বাঙালি জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে দেশের সব মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটান। তাতে সব ধর্ম বর্ণ গোত্র সম্প্রদায় এক ছাতার নিচে এসে দাঁড়াতে পারে। সেটি ছিল ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ। এই ভূখণ্ডের সব মানুষের মধ্যে যাতে অটুট ঐক্য গড়ে উঠতে পারে সেই নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল তার হাত ধরে।
শহীদ জিয়ার স্বল্পকালীন দায়িত্ব পালনকালে দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল দেশকে অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে, সমৃদ্ধির দিগন্ত ছুঁতে। সেই সরকারকে ইতিহাসে স্থান করে দেবে স্বপ্নপূরণের এক সরকার হিসেবে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে ১৯৮১ সালের মে মাস পর্যন্ত অতিক্রম করতে দেয়নি। মানুষের চোখের মণি ‘কমল’কে অসমাপ্ত কাজ ফেলে রেখে চলে যেতে হয়েছিল।

এরপর আবারো গণতন্ত্রকে ধূলিমলিন করে ১৯৮২ সালে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন সেনাপ্রধান লে. জেনারেল এইচ এম এরশাদ। দীর্ঘ প্রায় এক দশক ক্ষমতায় থেকে গণতন্ত্রসহ অনেক কিছুই লাইনচ্যুত করা হয়েছিল। তবে অস্বীকার করা ঠিক হবে না, ভালো-মন্দ নিয়েই সময় শেষ করেছেন এরশাদ। দল ভাঙাগড়ার সংস্কৃতি তিনি প্রবর্তন করে গেছেন। তার সরকারকে নিয়ে জনমনে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। সেনাসদস্যদের ঘাড়ে চেপে তিনি যেমন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তেমনি সেনাসদস্যরা তাকে ঘাড় থেকে নামিয়ে দিলে তিনি চিৎপটাং হন।

১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের একটা নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এ যাবৎকালের সবচেয়ে স্বচ্ছ একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন শহীদ জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদার এক কোয়ালিশন সরকার। এরশাদের দল ভাঙার কর্মকাণ্ডে বেগম জিয়ার একটি ভাঙাচোরা দল ও তাদের এক মিত্র দলকে নিয়ে সরকার গড়েছিলেন। তবে তার স্বামী শহীদ জিয়া যেমন সমাজের ক্লিন ও ক্রিমদের নিয়ে সরকার গড়েছিলেন, বেগম জিয়া কিন্তু সেভাবে সরকার সাজাতে পারেননি। তার প্রতিপক্ষ ছিল খল ও কূটচাল দেয়ার মতো নিকৃষ্ট প্রাণী। সেই নিকৃষ্টদের বরাবর মদদ দিয়ে গেছে, দেশের বাইরে থেকে এক শক্তি। ফলে বেগম জিয়া সরকার স্থিতিশীল পরিবেশে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তার পর গণতন্ত্র মানবাধিকার আর দেশের স্বার্থের প্রতি বেগম জিয়ার সরকার প্রতিশ্রুতি ও আপসহীন ছিলেন। তার সরকারই দেশে নির্বাচনব্যবস্থাকে কলুষমুক্ত পরিশুদ্ধ করার ব্যবস্থা সংবলিত এক ঐতিহাসিক পদ গ্রহণ করেছিল সংবিধান সংশোধন করে। এ জন্য প্রচুর ঝুঁকি তার সরকারকে নিতে হয়েছিল। যাই হোক, বেগম জিয়ার প্রথমবারের সরকার গণতন্ত্রের ভিত্তিমূলকে শক্তিশালী করার যে অবদান রেখেছে। অবশ্যই ইতিহাসে তার স্থান হবে কোনো সন্দেহ নেই। তার পর আরো দু’টি সরকার অতীত হয়েছে। তবে তাদের এমন কোনো উল্লেখ করার মতো কোনো বৈশিষ্ট্য ছিল না। এরপর সেনাসমর্থিত যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল।

তারা সংবিধানে বেঁধে দেয়া সময়ের চেয়ে অধিক সময় ক্ষমতায় থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করেছিল। সেই সরকারের গঠিত নির্বাচন কমিশন নীতি-নৈতিকতা আইনকানুন সব কিছু শুধু লঙ্ঘনই করেনি; তারা ক্ষমতাবহির্ভূত বহু কাজ করে কলঙ্কজনক নজির রেখে গেছে। সেই নির্বাচন কমিশন ঘাড়ে করে নিয়ে এসে লীগকে সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল। সেনাসমর্থিত সরকার নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে জঘন্য অপরাধ করে। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এসে এ যাবৎ যত অন্যায় অপরাধের পাহাড় সৃষ্টি করেছে তার জন্য লীগসহ মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন-ইয়াজউদ্দিন গংদের পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত করে বিচারের আওতায় নেয়া উচিত। এমনকি এরপর আরো দুই দলান্ধ নির্বাচন কমিশনকে তাদের সংবিধানপরিপন্থী কার্যক্রমের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। পূর্বোক্ত নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে দুর্বৃত্ত, দুরাচারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী মানবাধিকার হরণকারী, বৈষম্য সৃষ্টিকারী মামলা-হামলাকারী জেল-জুলুম, মানুষ হত্যাকারী আয়নাঘরসহ আরো নির্যাতনের বহু ঘর তৈরিকারী পাষণ্ড আওয়ামী সরকারকে ক্ষমতা দখল করার ক্ষেত্রে সহায়তাকারীদের সবাইকে পর্যায়ক্রমে শাস্তির মুখোমুখি করা দরকার।

গত ১৬ বছর থেকে আওয়ামী পাষণ্ডরা সরকারে থেকে যত অপরাধ করেছে। তার ষোলোকলা পূর্ণ করে ঘর ছেড়ে পালিয়েছে আওয়ামী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। অথচ এক দিন আগেও তিনি দম্ভ করে বলেছিলেন শেখের বেটি দেশ থেকে পালায় না। গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা বিডিআর হত্যাকাণ্ড, হেফাজতের গণহত্যা, জামায়াতের নেতাদের ফাঁসি, আয়নাঘরের নির্মমতা, হাজারো শিশু-কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী ও অসংখ্য মানুষকে খুন করেছে। শেখ হাসিনা হিটলার, মুসোলিনিসহ ইতিহাসের সব খুনি স্বৈরাচারীকে টপকে অনেক উপরে ওঠে গিয়েছিল।
পরবর্তীতে দীর্ঘ সংগ্রাম আত্মত্যাগ শেষে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণমানুষের যে সরকার গঠিত হয়েছে সেটি ১৮ কোটি মানুষের অভিপ্রায় অভিব্যক্তির বহিঃপ্রকাশ। জনগণ মনে করে, ‘এটা আমাদের সরকার’। এটার প্রটেক্টর ১৮ কোটি মানুষ, বীর সশস্ত্রবাহিনী। সবাই আজ এককাতারে। আজ জনগণ বলছে, ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখ হচ্ছে আমাদের তৃতীয় স্বাধীনতা দিবস। যে বিপুল ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে এই স্বাধীনতা এসেছে, এত মূল্য দিয়ে আর কাউকে স্বাধীনতা কিনতে হয়নি। এ জন্য কত মা তার সন্তান হারিয়েছে, কত বধূ তার স্বামী হারিয়েছেন, কত স্বামী তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন, সেই ইতিহাস রচনা করা হলে তার কলেবর হবে বিশাল। দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর জাতি দেখেছে কত ভয়ঙ্কর এক শাসক ক্ষমতা দখল করে লুটপাট, খুন-খারাবি করেছে। তার সামান্য বয়ান তো উপরে দেয়া হয়েছে।

আর তৃতীয় স্বাধীনতার পর জাতি দেখেছে। এই স্বাধীনতার স্থপতিরা দেশ নিয়ে ও দেশের মানুষদের নিয়ে গান করছেন, রাস্তা ধোয়ামোছা করছেন, রাস্তায় ট্রাফিকিং করছেন। রঙতুলি নিয়ে দেয়াল সাজিয়েছেন। মানুষকে সেবা দিয়েছেন। দুস্থদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এসব আগে ছিল কল্পনাতীত, অভূতপূর্ব। এরা যে ভবিষ্যতে দেশ-জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গৌরব, সমৃদ্ধির দিগন্ত ছুঁতে পারবেন- এ প্রত্যয় দৃঢ়তর হয়েছে।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সব উপদেষ্টা দক্ষ ও যোগ্য সক্ষম; এতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা একজন আন্তর্জাতিকব্যক্তিত্ব। তাদের সবার কাছে কোটি জনতার হাই এক্সসেপটেন্স রয়েছে। জনগণ বিশ্বাস করে তাদের ঘাড়ে যে চ্যালেঞ্জ সেটি সহজ নয়। কেননা ভাঙা কেল্লায় বিজয়ের নিশান ওড়াতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। সে জন্য তাদের সময় দিতে হবে। সেই সময়টুকুতে ধৈর্য ধরতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি ধৈর্যশীলদের সাথে থাকেন।

ndigantababar@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement