২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

স্বৈরাচারের পতন ও নবযুগের সূচনা

শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ইতঃপূর্বে ঘটে যাওয়া বহু তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও অর্জনের ঘটনাগুলো বিচার বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি, যে কোনো ন্যায়ভিত্তিক যৌক্তিক রাজনৈতিক কখনো ব্যর্থ হয়নি। এসব আন্দোলন সংগ্রামের প্রকৃতি ও আদর্শগত অবস্থানে ভিন্নতা থাকলেও অবৈধ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এগুলো সর্বদাই বিজয়লাভ করেছে। বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসেও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ হয়েছে। কোথাও সফল হয়েছে, কোথাও ব্যর্থ। সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি, আধুনিককালে কোনো স্বৈরশাসকই গণঅভ্যুথানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে মসনদ রক্ষা করতে পারেনি।

সাম্প্রতিককালের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও গত ১০০ বছরে আমরা অতিশয় কদর্যভাবে বিদায় নিতে দেখেছি বেশ কয়েকজন মহাপরাক্রমশালী স্বৈরশাসককে। এসব বহুনিন্দিত স্বৈরাচার আত্মমহিমায় এতই মগ্ন ছিলেন যে, কখন তারা জনতার রুদ্ররোষে উপলখণ্ডের মতো ভেসে গেছেন- নিজেরাও বুঝতে পারেননি। হিটলার শেষ মুহূর্তে ভেবেছিলেন জার্মান আর্যজাতির নীলরক্ত কখনও পরাভূত হবে না। কুখ্যাত এই ফুয়েরারকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। তারই স্বৈরমিত্র মুসোলিনীর পরিণতি আমরা জানি। মার্কোস পলায়ন করেন দেশবাসীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। রক্ষা পাননি ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কো।

ক্ষেত্রবিশেষে আত্মরক্ষার অনুকম্পা পেলেও স্বৈরতন্ত্রের অনিবার্য পরিণতি ডেকে এনেছে হত্যার মহামিছিল, দুর্ভিক্ষ এবং বিচ্ছিন্নতার মতো বিপর্যয়।

তবে ইতিহাসের সেই বহুচর্চিত আপ্তবাক্য: ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ইতিহাসের শিক্ষা কেন ক্ষমতার কষ্টকল্পিত প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে না- সে এক রহস্যময় জিজ্ঞাসা; যার উত্তর কোনো দিন কোনোকালেই কোনো স্বৈরাচার দিতে পারেননি। তবে নিষ্ঠুরভাবে ভোগ করেছেন ইতিহাসের অমোঘ পরিণতি।

স্বৈরাচার শেখ হাসিনাও তার ব্যতিক্রম নন। তার অলিন্দ উপচে পড়েছিল স্বৈরাচারের সর্বপ্রকার উপাদানে- কী অর্থনীতি, কী রাজনীতি, কী সমাজ, সংস্কৃতি- সর্বত্র হাসিনার আগ্রাসী স্বৈরতন্ত্র ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো। বিশ্বের বহু স্বৈরাচারীর অসংখ্য ‘কীর্তি’ বিবর্ণ হয়ে গেছে হাসিনার ‘মহাকীর্তির’ কাছে।

আপনারা সবাই গত ১৫ বছরে হাসিনা সরকারের ‘অবদান’ সম্পর্কে জানেন। ‘জানেন’- এই শব্দটি ব্যবহার করার চেয়ে আমার মনে হয় ‘মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন’ বলা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ন্যূনতম অস্তিত্বের বিনাশ সাধন করেছেন, অবারিত লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছেন, ঋণভারে বিধ্বস্ত করেছেন সমগ্র জাতিকে (বৈদেশিক ঋণ ১৯ লাখ কোটি টাকা), নিষ্ঠুর পৈশাচিকতায় নির্মম হাতে গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করেছেন, অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করেই তিনি তৃপ্ত হননি- স্বৈরাচারের নির্বিঘ্ন রাজ প্রাসাদ গড়ে তোলার কুবাসনায় হাজার হাজার দেশপ্রেমিককে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন, জীবন-যাপনের ন্যূনতম চালিকা চাহিদাগুলো দুর্লভ করে ১৮ কোটি মানুষের জীবনকে করে তুলেছেন অবর্ণনীয় কষ্টের কারাগার। আমি বিভিন্ন প্রবন্ধ নিবন্ধে এবং সভা সমিতিতে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। গভীরভাবে এই আশাবাদও ব্যক্ত করেছি যে, হাসিনাতন্ত্রের পতন অনিবার্য। কেননা ইতিহাসের অপ্রতিরোধ্য সত্য এবং সেই সত্যের পথে ইতিহাসের অভিযাত্রা কেউ রুখতে পারে না।

২০২৪ সালের জুলাই মাস এবং আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণআন্দোলন আমার পূর্ব ঘোষিত প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। গণআন্দোলনেই যে হাসিনার স্বৈরতন্ত্রের পতন হবে এ বিষয়ে আমি পূর্বেই সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করি। একই সাথে আমি এ কথাও গভীরভাবে বিশ্বাস করেছিলাম যে, উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিকশিত নবজাগরণের বা রেনেসাঁর উন্মেষ থেকেই নবপর্যায়ের একটি গণআন্দোলনের সূচনা হবে।

ঐতিহাসিক বিজয়লগ্নে দাঁড়িয়ে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি যে, এবারের গণআন্দোলন বৈশিষ্ট্যগত ও গুণগতভাবে ছিল বহুলাংশে ভিন্নতর; মৌলিকতার দিক থেকে এবং প্রকৃতির দিক থেকে। আমি বালক বয়সেই ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি; এ আন্দোলনের তাৎপর্য বুঝতে না পারলেও। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে আমি কেবল একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারীই ছিলাম না, একজন সংগঠকের ভূমিকাও পালন করি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই। আমার জীবনে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তির সব আন্দোলনে আমি সক্রিয় থেকেছি।
একটি অনুশীলনশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকলে রাষ্ট্রীয় জীবনের সব স্তরে নেমে আসে কালাপাহাড়ের অত্যাচার। এ ধরনের অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয় অর্থনীতি। হাসিনার অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের হাতে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে। তার অনিবার্য ফলভোগ করতে হয়েছে সমগ্র দেশবাসীর।

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের সব দিগন্তে এক নতুন সূর্য উঠেছে। এ সূর্যের প্রতিটি আলোকবিন্দুতে আমি দেখতে পাচ্ছি রেনেসাঁর দ্যুতি।

কেন না, একমাত্র রেনেসাঁ মুক্তির পথ দেখাতে পারে। সবকালে সব দেশে রেনেসাঁর মতো উন্মেষণাও ঘটতে পারে। নিজের দেশের বাস্তবতায় সে দেশের জনগণ মুক্তির পথ খুঁজে নেবে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক বিন্যাস ও পটভূমির আলোকেই আজ এক নতুন রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। আমার বহু প্রত্যাশিত এ রেনেসাঁ ইউরোপের মতো নয়; চরিত্রগতভাবে এ রেনেসাঁ শুধু বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনার ক্ষুরধার দিয়ে ইহলৌকিকতার জয়গান নয়- এ রেনেসাঁ জাতীয় মুক্তির চেতনায় আলোকিত একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রেনেসাঁ। এ নব উন্মেষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের এক সম্মিলিত অঙ্গীকার। এ নবজাগরণ জাতির নব উদ্বোধনের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এ রেনেসাঁ বাংলাদেশের সামগ্রিক জাতীয় চেতনা, আবেগ ও প্রত্যাশার এক উজ্জ্বল অগ্রদূত।

এ দেশের ছাত্রসমাজ এ রেনেসাঁর জন্ম দিয়েছে। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছে রেনেসাঁর চিরাচরিত ধারণা। ভাবমানসের অতীন্দ্রিয় কুহক থেকে রেনেসাঁকে সরিয়ে এনেছেন স্বৈরতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের মুক্তিতে। তারা কার্ল মার্ক্স-এর সেই অমর বাক্যের মূর্তরূপ দিয়েছেন বাংলাদেশে- Philosophers have hitherto interpreted history, now the task is to change it. বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ মার্ক্স-এর গভীর প্রত্যাশাকে আজ পূর্ণ করেছে। তারা গণমানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সেনানায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে পরিবর্তনের সূচনা করেছে।

ছাত্র-জনতার এ আন্দোলনে অসংখ্য সম্ভাবনাময় নবীন প্রাণ ঝরে গেছে হাসিনা স্বৈরাচারের নির্বিচার সশস্ত্র আক্রমণে। নিহত হয়েছে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ। দুগ্ধপোষ্য শিশুও রেহাই পায়নি ফ্যাসিবাদের হত্যা উৎসব থেকে। আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। চিরতরে পঙ্গুত্বের শঙ্কায় শত শত আহত মানুষ। নিহত ও আহতদের প্রতি রইলো আমার গভীর সমবেদনা।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর কোনো বিপ্লবই রক্তপাতহীন নয়; কোনো বিপ্লবই পুষ্পসজ্জিত সড়কপথের আনন্দদায়ক শোভাযাত্রা নয়। বিপ্লব মানেই আত্মত্যাগ, বিপ্লবের অপর নাম আত্ম উৎসর্গ। আমাদের ছাত্রজনতা বিপ্লবের ধ্রƒপদী পথই অনুসরণ করেছেন। তাদের প্রতি রইলো আমার আন্তরিক অভিনন্দন। বিশেষ করে স্বৈরতন্ত্রের সব ধরনের ভয় ভীতি, রক্ত চক্ষু, রক্ত পিপাসা ও গুলি উপেক্ষা করে, আত্মবলিদানে উদ্বুদ্ধ ছাত্রনেতৃবৃন্দকে আমি অভিবাদন জানাই। তাদের বিজয় আজ জাতির অমর বিজয়কাব্য।

ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। গভীর আনন্দের কথা যে, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমি মনে করি, বিপ্লব বিজয়ী ছাত্র-জনতার এ নির্বাচন যথাযথ এবং ন্যায়সঙ্গত। ড. মোহাম্মদ ইউনূস আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। দেশ ও জাতির এই মহাক্রান্তিলগ্নে তিনি জাতিকে নেতৃত্ব দেবেন যথাযোগ্য ভূমিকায়, বর্তমান সঙ্কট উত্তরণে তার সুচিন্তিত ও বাস্তবমুখী উদ্যোগ জাতিকে এক নতুন অভিজ্ঞতায় অভিষিক্ত করবে- এ বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই। দারিদ্র্য দূরীকরণের মধ্য দিয়ে মানবতার সার্বিক মুক্তির যে সুশৃঙ্খল পদ্ধতিগত সামষ্টিক আন্দোলনের সূচনা তিনি করেছেন- তা কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত। অবিচল মহীরুহের ন্যায় ড. ইউনূস তার সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন। জাতির এই ক্রান্তিকালে তিনি একই অবস্থান বজায় রেখে জাতিকে সঠিক পথে নেতৃত্ব দেবেন বলে আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি। গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় তিনি সংশপ্তকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন।

সন্দেহাতীতভাবে তিনি অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পরাজিত স্বৈরাচারের চর অনুচরেরা দেশের ভেতরে ও বাইরে চুপ করে বসে নেই। তারা আবার সিংহাসনে বসার স্বপ্নে বিভোর। এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েও ফ্যাসিবাদের দোসরের অভাব নেই। সুতরাং, সরকারকে অতি সতর্কতার সাথে সব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবেগের আকস্মিকতা এবং বিজয়ের বিহ্বলতায় কোনো ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হবে না। পরাজিত শক্তিকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আমি গভীরভাবে আস্থাশীল যে, ড. ইউনূস বর্ণিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন রয়েছেন।

একটি স্থিতিশীল শৃঙ্খলাপূর্ণ সরকার ব্যবস্থা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিলুপ্ত গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনা সময় সাপেক্ষ হলেও অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃঙ্খলাকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বৈরাচার পতনের অব্যবহিত পরই এমন কিছু অনভিপ্রেত ঘটনা দেখেছি যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি এত বড় একটি ঐতিহাসিক অর্জনের গুরুত্ব মøান করে দিতে পারে। সরকারের স্বাভাবিক প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে- এ নিয়ে দুশ্চিন্তার তেমন কিছু নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কয়েকটি আশু দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে, যেমন-
অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।

জুলাই-আগস্টে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
সাম্প্রতিক হত্যা, লুটপাটসহ সব অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে হবে। বিচারহীনতা ও জবাবদিহির অনুপস্থিতি জাতিকে সর্বদিক থেকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়ে একে সম্পূর্ণরূপে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে। সুতরাং, সরকারকে এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে।
বিদ্যমান প্রশাসন কাঠামোতে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত এ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত করা বা পুরস্কৃত করা- উভয় বিষয়েই বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।

যে কোনো প্রকার বা যে কোনো ক্ষেত্রেই হোক দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে হবে। গত ১৫ বছরের সীমাহীন দুর্নীতিই আজ বাংলাদেশকে নিঃস্ব রিক্ত করছে।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্রহীনতার অবাধ ও উলঙ্গ চর্চার প্রতিফলন ঘটেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সুস্থ বিকাশ না ঘটলে এই গণবিপ্লবের সাফল্য অর্জিত হবে না।

শিক্ষাব্যবস্থা বলতে বাংলাদেশে আজ কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিগত ফ্যাসিস্টরা শিক্ষা নামক বিষয়টাকে হত্যা করেছে। সুতরাং, এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটি সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

বর্ণিত দায়িত্বগুলো সম্পাদনের জন্য প্রয়োজন সময়, সদিচ্ছা, পরিকল্পনা ও আন্তরিকতা। আমি জানি যে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার এগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে পারবেন। জনমানুষের বহু দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে এ সরকার আন্তরিকতার সাথে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
কামনা করি গণতন্ত্রের এই যাত্রাপথ শুভ হোক।

লেখক: সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত


আরো সংবাদ



premium cement