২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্বৈরাচারের পরিণতি এমনই হয়

শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

শত শত নাগরিক হত্যার পর বোন শেখ রেহানাসহ নিজের ও পরিবারের সদস্য ছাড়া সবার সর্বনাশ করে পালালেন মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা। গোটা দেশ, দল, প্রশাসন ও পরিবারের বাইরে প্রত্যেক নেতাকর্মীকে ফেলে গেছেন অনিরাপদ করে। দাম্ভিকতার ঔদ্ধত্যের অনিবার্য পরিণতিতে দেশ ছেড়ে বেঁচেছেন শেখ হাসিনা। তাদের এ অবস্থায় রেখে জনরোষে পরিবারের কিছু সদস্য আগেভাগে সরিয়ে দিয়ে কেবল ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার ঘটনা মানতে পারছেন না এখন অসহায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও মন্ত্রীরা। তাদের প্রশ্ন, তিনি যদি দেশ ছেড়ে পালাবেন তাহলে শুধু শেখ পরিবারের সদস্যদের বাঁচিয়ে শেষ মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের কেন তোপের মুখে ফেলে গেলেন?

পদত্যাগে সই করার আগ পর্যন্ত নানা ছলাকলায় ক্ষমতা না ছাড়ার ব্যাপারে অটল ছিলেন শেখ হাসিনা। শেষ সময়েও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং আরো রক্তপাতের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার কিছু আয়োজন করতে থাকেন তিনি।

পদত্যাগের ঘণ্টা দুয়েক আগেও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ধমকিয়েছেন গোটা দেশ রক্তাক্ত করে দিতে। আর দলীয় কয়েক নেতাকে হুকুম দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের যেখানে পাবে সেখানে যা ইচ্ছা তা করতে। তাদের মধ্যে চালাকচতুররা এটাসেটা ঘটিয়ে ফেলবেন বলে হম্বিতম্বি করলেও বাস্তবে মাঠে নামেননি। অবশ্য কিছু আবেগী ও দলপাগলরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমে জানমালের সর্বনাশ করেছে, কোথাও আবার নিজেরাও মরেছে। একপর্যায়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হয়েও অনিশ্চয়তায় কালক্ষেপণ করতে থাকেন। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার।

পদত্যাগ অবধারিত হওয়ায় এক দেশের প্রভাবশালীর বুদ্ধিতে তিনি জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ভাষণ রেকর্ড করার ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন। সেটায়ও কুলাতে পারেননি। ততক্ষণে গোয়েন্দা তথ্য আসে দ্যাটস টু লেট। পদত্যাগে যত দেরি হবে, তত বিপদ আরো বাড়বে। মার্চ টু গণভবন সফল করতে হাজার হাজার আন্দোলনকারী এগোচ্ছেন গণভবনের দিকে। আধাঘণ্টার মধ্যে তারা পৌঁছে যেতে পারেন গণভবনে।

হাসিনার পক্ষে সেনাবাহিনীর আর কোনো সমর্থন না থাকায় কালবিলম্ব না করে কেবল ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে পৌঁছে দ্রুত একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতের উদ্দেশে চম্পট দেন। খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারীদের সাথে লাখ লাখ মানুষ নেমে আসেন রাস্তায়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বের হয় বিজয় মিছিল। সব মিছিলের গন্তব্য হয়ে ওঠে শাহবাগ। সারা দেশসহ ঢাকার অলিগলি ও রাজপথসহ গণভবন থেকে জাতীয় সংসদ- সব চলে যায় উল্লসিত ছাত্র-জনতার দখলে। তার দেশত্যাগের পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। এর সাথে অবসান ঘটে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের।

২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের কাছে পরাজয়ের পর ২০০৯ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আবারো ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪, ২০১৯ ও ২০২৪-এর নির্বাচনে জয়লাভ করে সব মিলিয়ে পরপর চারবার সরকার গঠন করে দলটি। যদিও ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচন ছিল ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ। এর আগে ১৯৯৬ সালের জুনে সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ।

শেখ হাসিনা না পালিয়ে কারাগারে গেলে এমন দুর্গতিতে পড়তেন না বলে নিশ্চিত তার দলের অনেক নেতার অভিমত। তাদের যুক্তি হচ্ছে, গণ-অভ্যুত্থানে প্রয়াত এইচ এম এরশাদের পতন হলেও তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি; জেলে গেছেন। এতে তিনি পরে বারবার সংসদ নির্বাচনে জিতেছেন। তার দলও এখন টিকে আছে। শেখ হাসিনা দলকে এবং দলের নেতাকর্মীদের জন্য সেই অবশিষ্টও রেখে যাননি।

ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে গিয়ে স্বৈরাচারী হাসিনা অপব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জাতির প্রতিপক্ষ ও ঘৃণার পাত্র বানিয়ে দিয়ে গেছেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে ভিন্নমত শুধু দমন নয়, গুম-হত্যা, দেশের সম্পদ হরিলুট-পাচারসহ হেন অপকর্ম নেই যা না করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপব্যবহারের মাধ্যমে।

শেষতক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তার হুকুমে ছাত্রদের বিরুদ্ধে যে দমন-পীড়ন চালানো হয় তা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার অবিশ্বাস্য নজির সৃষ্টি করেছে। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান অবশ্য হত্যাকাণ্ডের তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের অর্থনীতির যে সর্বনাশ শেখ হাসিনা করে গেছেন তা পূরণ করা সত্যিই দুরূহ একটি কাজ।

দেশে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকার সরকারি ঋণ রেখে পালালেন তিনি। এ হিসাবের অঙ্কটি বাস্তবে আরো বেশি হবে বলে ধারণা অর্থনীতি সম্পর্কে বুঝবানদের। দেশী ও বিদেশী উৎস থেকে এ ঋণ নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা নেয়ার সময় সরকারের ঋণস্থিতি ছিল মাত্র দুই লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। সে হিসাবে আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনামলে সরকারের ঋণস্থিতি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ২০৬ কোটি টাকা বেড়েছে, যা সরকারের মোট ঋণের প্রায় ৮৫ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যে গত দেড় দশকে সরকারের অস্বাভাবিক ঋণ বৃদ্ধির এ ক্ষতচিত্র দগদগে হয়ে আছে। এ সময়ে অবাধ লুণ্ঠনের শিকার দেশের ব্যাংক খাত। জনগণের লুণ্ঠিত এসব অর্থ পাচার হয়েছে বিভিন্ন দেশে। গত দেড় দশকে দেশের কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, এর প্রকৃত হিসাব নির্ণয় করা সম্ভব নয়। কারণ দেশের কোনো পরিসংখ্যান ঠিক নেই। সব জায়গায় গোঁজামিল। বহু বছর ধরে সরকার ক্রমাগতভাবে তথ্য গোপন করেছে। নতুন সরকার অর্থনীতির ক্ষতি নিরূপণে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠন করে সেই চেষ্টা করতে পারে।

এ দিকে প্রতিবেশী ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের সর্বনাশ করে গেছেন শেখ হাসিনা। দেশটির বাণিজ্যিক সম্পর্ককে ফেলেছেন বিপদে। ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে এখানে। গত আট বছরে ভারত বাংলাদেশকে রেল, সড়ক, বন্দর পরিকাঠামো তৈরিতে ৮০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। আচমকা শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে মোদি সরকার বিব্রত।

শেখ হাসিনার বিদায়ের পর নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত গৌতম আদানির সংস্থার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং প্রতি মাসে ৯ কোটি ডলারের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে দিল্লিতে নানা গুঞ্জন চলছে। আদানি গোষ্ঠী ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২৫ বছরের জন্য এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করেছে। গত বছরের জুন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। গোড্ডায় উৎপাদিত তাপবিদ্যুতের পুরোটাই আসে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে কখনো এমন পরিস্থিতি হবে তা ছিল ভারতের ধারণার বাইরে। এ দিকে শেখ হাসিনাকে পালিয়ে তাদের দেশে থাকার জায়গা দিয়ে নিজেরাও বিব্রতকর অবস্থায় আছে ভারত। দেশটি না পারছে তাকে গিলতে, না পারছে ফেলতে। যা দিন কয়েক আগেও তা ছিল স্বপ্নেরও বাইরে।

দেশে দেশে পতিত শাসকের কার সাথে তুলনা হবেন বাংলাদেশের শেখ হাসিনা? বিচার বা তুলনা হবেন কোন জাতে? বাকি জীবনটা বেঁচে থাকবেন কার পাতে? দেশে দেশে স্বৈরাচার বা কর্তৃত্ববাদের পরিণতি যুগে যুগে অনেকটা কাছাকাছি হয়। জনগণের অভিশাপ আর গালি এদের কপালে জোটে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে তার এ পরিণতি ডেকে এনেছেন। স্বৈরাচাররা সবাই মনে করে তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী। তাই স্বেচ্ছাচারিতা ও জুলুম-নির্যাতনের মাধ্যমে জনগণের ঘৃণা তারা কিছু মনে করে না। তাদের কেউ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে, কেউ আবার নিজের জীবন দিয়ে কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করেন। পৃথিবীর বহু দেশে এর নজির বিদ্যমান। ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো বাহামন্ডে একজন স্প্যানিশ সামরিক জেনারেল যিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্পেন একজন স্বৈরশাসক হিসেবে, কৌডিলো উপাধি গ্রহণ করে। স্প্যানিশ ইতিহাসের এ সময়কাল, সাধারণত ফ্রাঙ্কোইস্ট স্পেন বা ফ্রাঙ্কোবাদী একনায়কত্ব হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৫ সালে তার স্বাভাবিক মৃত্যুর সাথে সাথে স্পেনে একনায়কত্ব গোষ্ঠীর পতন হয়। এ ইতিহাস কারো জানার বাইরে?

তানজানিয়ার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী বাহিনী ১৯৭৯ সালে সফলভাবে কাম্পালা দখল করে এবং ইদি আমিনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। আমিন নির্বাসনে যান, প্রথমে লিবিয়ায়, তারপর ইরাকে এবং অবশেষে সৌদি আরবে, যেখানে তিনি ২০০৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বসবাস করেন। ইরানের পরাক্রমশালী শাহেনশাহ রেজা শাহ পাহলভির দোর্দণ্ড প্রতাপে দীর্ঘ বছর প্রবল পরাক্রমে ইরানের রাজসিংহাসন দখলে রাখলেও ১৯৭৯ সালে বিদায় নিতে হয় ইসলামী বিপ্লব সফল হওয়ায়। পতনের পর তার স্থান জোটে মিসরে। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

আরেক সাড়া জাগানো স্বৈরশাসক ফিলিপাইনের ফার্দিনান্দ মার্কোসও বড় হতভাগা। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন সরকারপ্রধান যে কতটা নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকে পরিণত হতে পারে, মার্কোস তার দৃষ্টান্ত। ১৯৬৫ সালে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ১৯৭২ সাল থেকে তিনি দেশ শাসন করছিলেন সামরিক আইনে। ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। ১৯৮৩ সালে ম্যানিলা এয়ারপোর্টে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিক বেনিগনো অ্যাকুইনোর হত্যাকাণ্ডের পর মার্কোস প্রচণ্ড জনবিক্ষোভের মুখে পড়েন। এরপর নির্বাচনে কারচুপি ঘিরে নিহত অ্যাকুইনোর স্ত্রী কোরাজন অ্যাকুইনোর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা তীব্র গণ-আন্দোলনে ১৯৮৬ সালে গণ-অভ্যুত্থানে তার ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে। দেশত্যাগে বাধ্য হন তিনি। আশ্রয় জোটে যুক্তরাষ্ট্রে।

সেখানে তার করুণ মৃত্যু হয়। রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নিকোলাই চসেস্কু একনায়কত্ব কায়েম করে রোমানিয়াকে শাসন করেছিলেন দীর্ঘদিন। কিন্তু ১৯৮৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানে তার পতন ঠেকানো যায়নি। অবশেষে ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে সস্ত্রীক তার মৃত্যু হয়। যুগে যুগে এমনই হয় স্বৈরাচারের পরিণতি। তবে বাংলাদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে পুঁজি করে বেসামরিক স্বৈরশাসক উপাধি একমাত্র শেখ হাসিনার।

দেশে প্রায় ১৫ বছর ধরে, বিশেষ করে বিডিআর হত্যাকাণ্ড থেকে শুরু করে দেশের মানুষের ওপর অবর্ণনীয় অনাচার, নিষ্পেষণ ও নির্যাতন করেছেন তিনি। সব ধরনের ও সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ এর শিকার হয়েছেন। এসবের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্রোধের বিস্ফোরণে নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছে তার বিরুদ্ধে। এ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এরই মধ্যে নানা ধরনের সুযোগসন্ধানী অপশক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফায়দা নেয়ার সুযোগ নিচ্ছে এবং নেবে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী-জনতার ‘অভ্যুত্থান’ শেষ হলেও এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়ে দেশ থেকে পলায়ন করার মধ্য দিয়ে ইতিহাসের এক নতুন মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ তা ঠিক। কিন্তু দেশ গড়ার পথে সবচেয়ে বড় যে উপাদানটি বর্তমান বাংলাদেশে অনুপস্থিত, তা হলো গণতন্ত্র। যে গণতন্ত্র অনেক বছর ধরে অনুপস্থিত, তা ফিরিয়ে আনা হবে অভ্যুত্থানের ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির অন্যতম বড় অর্জন।

বুদ্ধিজীবী শ্রেণী ও শিক্ষিত সমাজকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, আমলাতন্ত্র ও এতে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখতে হবে পরিপূরক সহকর্মী হিসেবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বকেও এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। না হলে বেপরোয়া, দুর্বল ও অযোগ্য আমলাতন্ত্র কখন কার ওপর চড়াও হয়ে কোন আচরণ করে বসবে তা অনুমান করাও দুরূহ হয়ে পড়বে। আর এ অভ্যুত্থান ও গণতান্ত্রিক অবস্থার মধ্যবর্তী সময়ে যারা দেশকে নেতৃত্ব দেবেন তাদের মানসিকতা কি হবে- এ প্রশ্ন এখন সবার মনে।

লেখক : কলামিস্ট
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement