কিভাবে একটি সুশৃঙ্খল আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিলো
- ড. এ কে এম মাকসুদুল হক
- ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৬:০৪
গত পয়লা জুলাই থেকে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে ছাত্ররা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু সরকার অদূরদর্শিতার সাথে শক্তি দিয়ে আন্দোলন দমনের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে দুই শতাধিক ছাত্র-জনতা প্রাণ হারান। আহত হয়েছেন আরো কয়েক হাজার। একই সাথে হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ আন্দোলনের ঘটনা পরিক্রমার একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ দরকার। আন্দোলনটিকে মোটামুটিভাবে তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়।
প্রথম ধাপ : প্রথমত ১ জুলাই ছাত্ররা সরকারের কাছে দাবি উত্থাপন করে সমাধানের অনুরোধ করে ৪ জুলাই পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। অন্যথায় আন্দোলনের হুমকি দেয়। এ সময় তারা মিছিল-মিটিংয়ের মধ্যে তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ রাখেন। সরকার কর্ণপাত না করলে আন্দোলনকারীরা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অবস্থান কর্মসূচি করে কয়েক ঘণ্টা ধরে রাস্তাঘাট বন্ধ রাখেন। এতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসে। দেশবাসী আন্দোলনের উত্তাপ পেতে থাকে। কিন্তু সরকার এটি তো আমলে নেয়নি; বরং বিভিন্ন ধরনের তির্যক মন্তব্য করতে থাকেন অনেক নেতা। আর কয়েকজন মন্ত্রী এটিকে হাইকোর্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন বলে হুমকি দেন। ফলে ছাত্রদের আন্দোলন নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে। ৫ জুলাই থেকে তারা বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। ৭ জুলাই থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ‘বাংলা ব্লকেড’ শুরু হয়। ৯ জুলাই তারা সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। পুলিশ একটু একটু করে শক্ত অবস্থানে যেতে থাকে। এর মধ্যে গত ১৪ জুলাই শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেন।
দ্বিতীয় ধাপ : এ পর্যায়ে এসে স্বাভাবিক গতিতে চলা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠে। ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর চীন ফেরত সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিকের একটি লিডিং প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই প্রশ্ন কতটুকু প্রাসঙ্গিক ছিল বা কি উদ্দেশ্যে করা হয় সেই বিতর্কে না গিয়ে বলা যায়, এটি আন্দোলনকে বেগবান করে। প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন- তবে কি ‘রাজাকারের’ নাতিরা চাকরি পাবে? ‘রাজাকার’ শব্দটি আমাদের দেশে অত্যন্ত অপমানজনক। কাজেই ‘শব্দটিকে’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিতে পারেননি। ফলে এটি আন্দোলনের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো কাজ করে। ওই রাতে (১৪ জুলাই) ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাত্রছাত্রীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল করেন। তারা স্লোগান দেন- ‘তুমি কে আমি কে : রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, সরকার সরকার।’
‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে তারা রাতভর প্রতিবাদ জানান। কিন্তু এ স্লোগান খণ্ডিত করে অপবাদ দেয়া হয় যে, ‘শিক্ষার্থীরা নিজেদের রাজাকার পরিচয় দিয়েছেন।’ এ বিষয়টি রাজনীতিকরণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা হয়। এক শ্রেণীর মিডিয়া এ অপপ্রচারে যোগ দেয়। অন্য দিকে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রাজাকার হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন’, এ অজুহাত তুলে তাদের শায়েস্তা করার জন্য ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়া হয়। এমনকি সরকারের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন- এদের দমনের জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ক্ষমতার দাপটে টগবগ করা ছাত্রলীগ এতে হুঙ্কার দিয়ে উঠে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত অবস্থায়ও হামলা করে। এমনকি অসংখ্য ছাত্রীকে লাঠি-হকিস্টিক হাতে পেটাতে দেখা যায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। ফলে ১৫ জুলাই দেশব্যাপী সাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন।
বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীও রাস্তায় নেমে আন্দোলনে শরিক হন। এমনকি অনেক অভিভাবকও শিক্ষার্থীদের সাথে রাস্তায় নামেন। ছাত্ররা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা দেন। অন্য দিকে সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। একই সাথে পিছু হটা ছাত্রলীগের পাশে এসে দাঁড়ায় রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ শিক্ষার্থীদের সাথে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ শক্তির সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ধাপে ক্ষমতাসীন নেতানেত্রীদের আরো একটি প্রবণতা লক্ষণীয় ছিল। তারা এ আন্দোলনে রাজনীতির ট্যাগ লাগানোর চেষ্টা করতে থাকেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বার বার বলতে থাকেন, আন্দোলন ছাত্রদের হাতে নেই। বিএনপি-জামায়াত এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের হাতে চলে গেছে। তিনি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে এদের রুখে দাঁড়ানোর আদেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আন্দোলনকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নাশকতা ঠেকানোর আদেশ দেন।
তৃতীয় ধাপ : আন্দোলনকারীদের দমনে পুলিশ-র্যাব ও ছাত্রলীগ-যুবলীগ একসাথে মাঠে নামে। কঠোর হাতে আন্দোলন দমনের কাজে লিপ্ত হয়। এ প্রক্রিয়ায় রংপুরে ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবু সাঈদকে পুলিশ প্রকাশ্যে ঠাণ্ডা মাথায় বুকে গুলি করে হত্যা করে। এদিন ঢাকায় দুই ও চট্টগ্রামে আরো তিনজনসহ দেশে মোট ছয়জন নিহত হন। এ দিকে আবু সাঈদকে বুকে গুলি করে হত্যা করার মর্মান্তিক দৃশ্য ফেসবুকে সারা বিশে^ ছড়িয়ে পড়ে। এ হত্যাকাণ্ড দেশবাসীকে মর্মাহত করে। প্রতিবাদী সাধারণ মানুষ আন্দোলনকারীদের সাথে নেমে পড়েন। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সব মৃতের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। কিন্তু শুধু চট্টগ্রামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। চট্টগ্রামে একই সময়ে কথিত ছাত্রলীগের হামলায় তিন ছাত্র নিহত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ভাষণে ছাত্রদের ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দেন। দ্রুত উচ্চ আদালতে সন্তোষজনক কোনো রায় আসতে পারে বলে ছাত্রদের শান্ত হতে বলেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্যে ছাত্ররা হতাশা ব্যক্ত করেন। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় জনগণ অবাক হন!
এর মাধ্যমে আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে যায়। ১৭ জুলাই হতাশাগ্রস্ত জনগণ আন্দোলনে যোগ দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। শুরু হয় ব্যাপক সংঘর্ষ। পুলিশ আরো মারমুখি হয়ে উঠে। ফলে সংঘর্ষ চরম আকার ধারণ করে। পাঁচ দিনে দেশজুড়ে ২০১ জন নিহত হয় (প্রথম আলো : ২৫ জুলাই ২০২৪)। ২০ জুলাই কারফিউ জারি করা হয়। সেনাবাহিনী নামানো হয়। এর পরও বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষ চলে। আরো প্রায় ২২ জন নিহত হন। এমতাবস্থায় সরকার নমনীয় হয়ে ২১ জুলাই হাইকোর্টের শুনানি এগিয়ে নিয়ে আসে। ওই দিন রায় দিয়ে ৯৩ শতাংশ মেধাবীদের জন্য রেখে বাকি ৭ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেন যার ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়। সংঘর্ষ স্তিমিত হয়ে আসতে থাকে। কিন্তু এর আগে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। দেশবাসী এক সর্বাত্মক আন্দোলনের রূপ দেখতে পান। এক দিকে দুই শতাধিক তাজা প্রাণ ঝরে পড়ে, যাদের মধ্যে অনেকে ছাত্র। অন্য দিকে বিটিভি ভবনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়।
এখন প্রশ্ন হলো- যৌক্তিকভাবে চলা একটি অহিংস আন্দোলন কিভাবে এমন যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করল? ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে নির্মোহ পর্যালোচনা করলে এর অনেক কারণ বেরিয়ে আসে।
তাৎক্ষণিক কারণসমূহ : ক. আন্দোলনটি ছিল সর্বজনীন, অরাজনৈতিক ও যৌক্তিক। সাধারণ মানুষ এটি গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ক্ষমতাসীন সরকার বিএনপির আন্দোলনের মতো এটিকে শক্তি দিয়ে দমন করা সম্ভব বলে ধরে নিয়েছিল।
খ. ক্ষমতার দাপটে তাদের মধ্যে দাম্ভিকতা তৈরি হওয়ায় তারা এ আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছিল, ছাত্ররা এতে অপমান বোধ করেছিলেন।
গ. আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগকে এ আন্দোলন দমনে যথেষ্ট মনে করায় ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। ফলে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
ঘ. নারী শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের পেটানোর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল, যা পরে বিক্ষোভে রূপ নেয়।
ঙ. ২০১৮ সালের আন্দোলনের সময়টি ছিল জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে, তাই ক্ষমতাসীনরা তখন সতর্ক ছিলেন এবং দ্রুত সুরাহা করেন। কিন্তু এবারের আন্দোলনের সময় থেকে নির্বাচন অনেক দূরে থাকায় তারা অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন আন্দোলন দমনে।
চ. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব দিয়ে ছাত্রদের জোরপূর্বক বের করার বিষয়টি ছিল সাধারণের জন্য আরো স্পর্শকাতর। তারা এ প্রক্রিয়া ভালোভাবে নেননি।
ছ. বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ প্রশাসন ও শিক্ষকদের একটি বড় অংশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা সরকারের লেজুড়বৃত্তির কারণে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকত্ব নিতে অস্বীকার করেন। ছাত্র হত্যার বিষয়ে নীরব থাকেন। ফলে জনমনে এবং সাধারণ ছাত্রদের মনে ক্ষোভ আরো বৃদ্ধি পায়।
জ. প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সময়োপযোগী হলেও তাতে সাধারণ মানুষের হতাশা দূর হয়নি বলে অনেকে মনে করেন।
ঝ. আন্দোলন সবচেয়ে বেশি বিস্ফোরণমুখ রূপ নেয় বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর। তিনি বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হওয়ার ঘটনা দ্রুত আন্দোলনকে সহিংসতার পর্যায়ে নিয়ে যায়। অবশ্য এ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট বক্তব্য থাকলে হয়তো বা এ ধরনের বিস্ফোরণ ঘটত না বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
দীর্ঘমেয়াদি কারণ : দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানুষের মধ্যে একটু একটু করে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছিল। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু সেগুলোর কোনো প্রতিকার করা হয়নি। কর্ণপাত করা হয়নি; বরং সমালোচনার প্রতি খুব স্পর্শকাতর ও প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে পড়েছিলেন কর্তাব্যক্তিরা। তবে আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি কারণসমূহ নিম্নরূপ হতে পারে :
ক. সুশাসনের অভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, ব্যাংক লুট ইত্যাদি কারণে মানুষ হতাশায় ভুগছেন। এক দিকে সরকারি চাকরির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেপরোয়া দুর্নীতি অন্য দিকে প্রায় দুই কোটি যুবক চাকরিপ্রার্থী। জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী।
খ. বেকারত্বের কারণে অসংখ্য তরুণ এমনিতে হতাশগ্রস্ত। কোটা ব্যবস্থায় তারা ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন।
গ. ভারতের সাথে সাম্প্রতিক রেল করিডোর চুক্তিতে অনেক সচেতন নাগরিক অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তিস্তার পানির ব্যবস্থা না দিয়ে; বরং তিস্তা প্রকল্পে ভারতীয় হস্তক্ষেপ অনেককে ক্ষুব্ধ করে রেখেছে।
ঘ. সমাজ পরিবর্তনশীল, মানুষও পরিবর্তন চান। দীর্ঘদিন ধরে একই দল একটানা ক্ষমতায় থাকা এবং সমালোচকদের মতে যেনতেনভাবে বা জোর-জবরদস্তিমূলকভাবে ক্ষমতা ধরে রাখায় নাগরিকদের একটি অংশ আগে থেকে নাখোশ রয়েছেন।
ঙ. আজকের তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ গত তিন তিনটি নির্বাচনে ভোট দেয়ার সুযোগ পায়নি। ফলে এ বঞ্চিত তরুণরা হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
চ. সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করেছে বলে ক্ষমতাসীনরা অভিযোগ করছেন। এটি অমূলক কোনো অভিযোগ নয়। বাংলাদেশের যেকোনো আন্দোলনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভর করে থাকে। অতীতে দিনাজপুরে ইয়াসমিন হত্যাবিরোধী আন্দোলন, কানসাটের পল্লীবিদ্যুতের বিরুদ্ধে আন্দোলন ইত্যাদিতে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশ করেছে বলে তখনকার বিএনপি সরকার দাবি করে। কোনো বিরোধী দল এ সমস্ত সুযোগ হাতছাড়া করে না। বিরোধীরা প্রকাশ্যে এই আন্দোলন সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু এসব জানা-বুঝা সত্ত্বেও সরকার দ্রুত আন্দোলন বা ক্ষোভ প্রশিমত করার ব্যবস্থা না নিয়ে বরং শুধু বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করেছে যে, এই আন্দোলনে ‘বিএনপি-জামায়াত’ ভর করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সব পক্ষের জন্য কিছু শিক্ষা নিয়ে এসেছে। বুদ্ধিমানের কাজ হবে ওই সব শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণার্থে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা। তবে এ মুহূর্তে দোষারোপের মাধ্যমে দলীয় স্বার্থ হাসিলের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষিদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : maksud2648@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা