১৮ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩০, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

শিক্ষায় লকডাউন : সামনে কোন বাংলাদেশ

শিক্ষায় লকডাউন : সামনে কোন বাংলাদেশ - ছবি : নয়া দিগন্ত

(লেখাটি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রিন্ট সংস্করণে ২০ জুলাই, ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।)

বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের ইতিহাসে এক ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছে সাধারণ মানুষসহ প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, চলমান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা। নিহত হয়েছেন অসংখ্যজন এবং আহত হয়েছেন শত শত শিক্ষার্থীসহ অনেক সাংবাদিকও।

ঠিক এই সময় চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে সরকার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসতে রাজি আছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে একমত। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানিয়ে এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। ৭ আগস্ট মামলার যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও এগিয়ে আনা হবে।
এ দিকে, শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসতে সরকার সম্মতি জানালেও আলোচনায় বসতে রাজি নন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। তারা বলছেন, ‘লাশ-রক্ত মাড়িয়ে’ সংলাপে বসতে রাজি নই। গুলির সাথে কোনো সংলাপ-আলোচনা হয় না। আহত-নিহতদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা থেকে আমাদের মৃত্যু শ্রেয়। সরকারের উদ্দেশে তারা বলছেন, আলোচনা তো আগেই করতে পারতেন। তা না করে রাজাকারের বাচ্চা বলে গালমন্দ করে বলেছিলেন, আদালতের বিচারাধীন বিষয় আমাদের কিছুই করার নেই। অথচ এখন এতগুলো তরতাজা নিহত প্রাণের বিনিময়ে আলোচনায় বসতে চাচ্ছেন! তবে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের কিছু দাবি আছে। সেই দাবিগুলো পূরণ সাপেক্ষে আলোচনা হতে পারে। দাবিগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে লিখে আমরা লিখিত আকারে জানাব, যাতে করে ভুলভাবে আমাদের দাবি উত্থাপিত না হয়।

কোটা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা বৈষম্য অবসান করে সাম্য-সমতা আনার দাবি। একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন। এ দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চান। তারা মনে করেন, কোটার একটি নির্দিষ্ট সীমায় রেখে বিশেষ সুবিধা হিসেবে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা তাও বংশপরম্পরায় নাতি-পুতিতেও থাকতে হবে, এটি কোনোমতেই যৌক্তিক নয়। তারা ক্ষমতা চাননি, সরকারের পদত্যাগও চাননি। বৈষম্যের সমাধান চেয়েছিলেন। তাদের চাওয়াটা অযৌক্তিক মনে হলেও আলোচনা করা যেত। তা না করে অসহিষ্ণুতা, রাজাকারের নাতি-পুতি বলে হামলার চরম নিষ্ঠুরতা গোটা পরিস্থিতির বাঁক ঘুরিয়ে দিলো। এই হত্যা-নিপীড়নের কী দরকার ছিল?
নাগরিকদের কেউ কোনো কিছু দাবি করলেই তাকে শত্রুপক্ষ বানিয়ে এখন রাজাকারের তকমা দেয়া হয়। একাত্তরের ২৫ মার্চের সেই ভয়াল রাতে ছাত্র-শিক্ষকদের রক্তে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি ভিজে গিয়েছিল, যে ক্যাম্পাসে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল শহীদদের লাশ, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদদের উত্তরসূরিরা নিজেদেরকে রাজাকার পরিচয় দিয়ে সেøাগান দিচ্ছে! কী পীড়াদায়ক! মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলের নিরঙ্কুশ বা একচ্ছত্র শাসনামলে বেড়ে ওঠা দেশের তারুণ্যের একটি বড় অংশ নিজেরা নিজেদের রাজাকার বলে সেøাগান দিচ্ছেন। ভাবা যায়? কেন, কখন, কোন প্রেক্ষাপটে, কার কারণে তৈরি হলো? পরে তারা এর জবাব দিয়েছেন, চাইলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার; তুমি কে আমি কে- রাজাকার-রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে- স্বৈরাচার স্বৈরাচার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না, আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না, লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না- ইত্যাদি স্লোগানের মাধ্যমে।

কিসের মধ্যে কী হয়ে গেল! এক মাসের মধ্যে দুইবার ভারত সফরের পর প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর, ভারতসহ কোনো কোনো দেশের বেজার হওয়ার গুঞ্জন, একই সময়ে কোটা নিয়ে আদালতের হুকুমনামা, কোটা আন্দোলন আরো চাঙ্গা হয়ে ওঠা, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর সংক্ষিপ্ত, দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে কোটা আন্দোলনকারীদের কটাক্ষ করে ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?’ এর পরপরই মারমুখী ছাত্রলীগ। তারও পর ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হুমকি, ওদেরকে দমাতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত। যথারীতি আক্রমণ। হেলমেট বাহিনীর লাঠিপেটা, পুলিশের গুলি। একাধিক প্রাণহানি। পরিস্থিতিটা একেবারে অন্যদিকে চলে গেল। গোটা শিক্ষাঙ্গনে লকডাউন। রাজধানীকেন্দ্রিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় গোটা দেশে। গ্রাম-গ্রামান্তরেও।
মনে রাখতে হবে, একাত্তরে জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করা অকুতোভয়রা কোনো সনদের জন্য যুদ্ধ করেননি।

যুদ্ধ জয়ের পর তারা ভাতা বা দান-অনুদান পাবেন, সেই ভাবনাও ছিল না। আবার যুদ্ধের পরও কারো সাথে এমন কোনো চুক্তি হয়নি। তাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-পুতিদের জন্য কোটা রাখতে হবে- সেই বায়নাও হয়নি। তাদের মন-মননে ছিল কেবলই দেশপ্রেম, নতুন দেশ তৈরি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের বিপরীতে মুক্তিযুদ্ধকে একটি ট্রেডিং এবং একের পর এক ভুয়া তালিকা করে ফেক মুক্তিযোদ্ধা তৈরির দুষ্ট চিন্তাশীল ধড়িবাজরা এখন মৌজ-মাস্তিতেই আছেন। এই দোকানদারিতে তারা প্রথমে মুক্তিযোদ্ধা এবং পরে তাদের সন্তানদেরও ভুয়া তালিকাভুক্ত করে দিলেন। তারা এ প্রজন্মের কাছে শত্রু, চক্ষুশূল। বর্তমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে তা পরিষ্কার। যার জেরে কোটা সংস্কারের কথা চলে এসেছে কোটা বাতিলে। সেই সাথে নতুন নতুন নানা কথা। মুখ ফসকে নয়, গলা ফাটিয়ে বলা হচ্ছে কথাগুলো। বৈষম্য দূর করার জন্য যারা সে সময় যুদ্ধ করেছিল তাদের অনেকেই এখন যে যুদ্ধকে ব্যবহার করে বৈষম্য ও লুটপাটের আইটেম হয়ে যাওয়া বড় কষ্টের। আর কোটায় মোটা হয়ে রাজার আকার ধরা ভুয়াদের জন্য স্বস্তির ও প্রাপ্তির।

এই ভুয়ারা সবার আগে সুবিধা নিতে পারদর্শী। গণ্ডগোল বা নষ্টের অন্যতম গোড়া এরা। অবশ্য এরা সুযোগ গ্রহীতা। আর দাতা রাজনৈতিক শক্তি। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের তালিকা তৈরি করতে গিয়েও কম কেলেঙ্কারি হয়নি। প্রতিবন্ধী, পাহাড়ি ও সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য অবশ্যই কোটা লাগবে। কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা অনেক বেশি। একটি ন্যায্য স্তরে নিয়ে আসাটাই হবে বিবেচনার কাজ। এর সমাধানে যেন কোটাও থাকে, আবার কোটার বিরোধিতা তৈরি না হয়। তার আগে ৫৫ হজার তালিকাভুক্ত ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করে, সেগুলোকে বাদ দেয়া জরুরি। নইলে সমস্যা জিইয়েই থাকবে। আর সমস্যা জিইয়ে রাখলে একদিকে মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে ভাবসাব, পছন্দ না হলেই কাউকে রাজাকার বানানো হবে, বিপরীতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের তাচ্ছিল্য করার ঢোলে আরো বাড়ি পড়বে। এতে অঘটন আরো পাকবে।

কোটা নিয়ে সংবিধানে কিছু বলা নেই। ১০ শতাংশ কোটা থাকবে, না ৩০ শতাংশ কোটা থাকবে। সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৯-এ বলা আছে- ‘সকল নাগরিকের সমান সুযোগ থাকবে।’ আর ২৯-এ বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।’ তবে অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মূলধারার সঙ্গে যুক্ত করতে কিছু কোটা থাকতে পারে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের দুরবস্থা দূর করার লক্ষ্যে চাকরির ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। তখন মুক্তিযোদ্ধারা অর্থনৈতিকভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩-৫৪ বছরে এসে এখনো ৩০ শতাংশ কোটা সৃষ্টি করা যুক্তিসঙ্গত নয়। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিতে পারে। বার্ষিক প্রণোদনা দিতে পারে। প্রয়োজনে ঘরবাড়ি বানিয়ে দিতে পারে। আরো অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মেধার গুরুত্ব দেয়াটাই সঠিক। তা না হলে মেধাবীদের প্রতি বৈষম্য করা হবে, হচ্ছে। রাষ্ট্র বৈষম্য করতে পারে না।

কোটা ব্যবস্থার কারণে অনেক মেধাবী আজ চাকরি পাচ্ছে না। এটি চলতে থাকলে তো দেশ এগিয়ে যাবে না। দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থেই কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে কোটা কতটুকু থাকবে, তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যারা রাস্তায় আছেন তারা অনেক মেধাবী। তাদের দাবি অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই। দেশে এখনো অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে যারা ভাতা নেন না। অনেকে সার্টিফিকেটও নেননি। তারা বলেন, আমরা সার্টিফিকেটের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি।

বর্তমান পর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন এর মধ্যে দেশের বৃহত্তর রাজনীতির কোনো ছাপ ছিল না। আন্দোলনের স্লোগান ছিল, মেধা না কোটা, মেধা মেধা। আন্দোলনকারীরা একটি মেধাভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছিল। দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ শ্লথগতির হওয়ার ফলে ব্যক্তি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি চাকরি একমাত্র ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে সরকারি চাকরিতে মেধার স্বীকৃতি চাকরি ক্ষেত্রে বৈষম্যের অবসান ঘটাবে বলে ছাত্র-ছাত্রীদের বিপুল অংশের বিশ্বাস।

ঘটনা বেশ পরিষ্কার। পাকিস্তানি আমলেও এমন হয়নি যে, হামলা করে আহত করে হাসপাতালের গেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, যেন আহতরা চিকিৎসা না পায়। ইসরাইলিদের মতো বর্বরতা। বেশ কুবুদ্ধি করেই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নস্যাতের চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার চালিয়ে এ আন্দোলনকে ভুলভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শুরুতে দেশ গড়ার যোদ্ধাদের দিয়েই ভালোভাবে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব ছিল। সে সময় তার দরকারও ছিল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কোটায় না নিয়ে পরে তাদের সন্তানাদি, নাতি-পুতিদের জন্য কোটা দেয়া হলো। এর মধ্যে রাজনীতি ও বিভেদের নানা মসলা ঢুকিয়ে দেয়া হলো। স্বাধীনের পর পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র, সিএসপি, প্রত্যাগত সৈন্য ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সব কিছু পুরনো ব্যবস্থা চালু রাখা হলো। এর জের পদে পদে সইতে হচ্ছে অনিবার্যভাবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া সমাধান নয়। এতে আন্দোলনকারীদের দুর্বল করা যাবে বা আগের মতোই তাদের ঘরে উঠিয়ে দেয়া যাবে, এ ধারণা কি বর্তমান পরিস্থিতিতে চলে? যারা ঘরে উঠবে না, তাদের ওপর নিপীড়ন চলবে। সরকার আন্দোলন দমাতে পারার বড়াই করবে। ক্ষমতায়ও টিকে থাকবে। তা কি এখন স্বাভাবিক মনে হয়? মনে রাখতে হবে, একাত্তরেও এভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করা হয়নি। এবারের শাটডাউন বা লকডাউনটা বড় নোংরা। ইউজিসিকে দিয়ে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার আগে, সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইভাবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব কলেজ ও প্রতিষ্ঠানগুলোও বন্ধ থাকবে।

সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ক কমিটি। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে। অন্য দিকে, ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিক্যাল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সব কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়।

এগুলো কোন কিসিমের ফরমান? এতে নতুন এক বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি হলো দেশের শিক্ষা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জনমের মতো বন্ধ করা হয়নি। খুলবে কখনো না কখনো। কিন্তু, কোটা সংস্কার আন্দোলকারীরা যে রাজাকার হয়ে গেলেন? তারা তরুণ। সংখ্যায় অনেক। মাথায় লাল-সবুজ প্রতীকসংবলিত ফেটি ধারণ করা এই তারুণ্যের দেশপ্রেমকে সন্দেহ করা প্রকারান্তরে গোটা দেশের মানুষের দেশপ্রেমকে সন্দেহ করা। এরাই রাজাকার হয়ে গেলে আমাদের সামনে কোন বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে?
সরকার আদালতের সিদ্ধান্তের কথা বললেও আদালত তো স্পষ্ট করেই দিয়েছেন, সরকার চাইলে কোটা সংস্কার করতেই পারে। কিন্তু সেখানেও সরকার পক্ষের চাতুরি ও ধৈর্যচ্যুতি। মন্ত্রীদের রাজনৈতিক বক্তৃতা তো আছেই। একদিকে, সরকারি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে, আরেক দিকে সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের এনালগের চেয়েও নিচুমানের বক্তব্যের মধ্যেও আগামী দিনের বাংলাদেশের একটি কদাকার ছায়া, যে কারোরই বোধগম্য।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট
rintu108@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement