১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

অর্থনীতিতে চাই দূরদর্শী পদক্ষেপ

অর্থনীতিতে চাই দূরদর্শী পদক্ষেপ - নয়া দিগন্ত

দূরদর্শী, সময়োপযোগী ও দক্ষ নীতি-উদ্যোগ কিভাবে একটি দেশের অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে শ্রীলঙ্কা তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ২০২১-২২ সালের দিকে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কঠিন সঙ্কটে ক্রমে তলিয়ে যাচ্ছিল। দেশটিতে আমদানি পণ্যের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি জনজীবন পর্যুদস্ত করে দেয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুদদারি এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, নিত্যপণ্যের সরবরাহ তদারকির জন্য একজন মিলিটারি জেনারেলের নেতৃত্বে ‘কন্ট্রোলার অব সিভিল সাপ্লাইজ’ নামের কঠোর নজরদারি সংস্থা গড়ে তুলেও অবস্থা সামাল দেয়া যাচ্ছিল না। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে পৌঁছে যাওয়ায় খাদ্য আমদানির সামর্থ্য ছিল না বললে চলে। গাড়ি, স্যানিটারি আইটেমসহ কিছু ইলেকট্রনিক পণ্যের আমদানি পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে হয়।

রুপির মান এক ডলারে ১৯০ রুপি থেকে বেড়ে ২৩০ রুপিতে পৌঁছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়, অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সুদাসলে পরিশোধ করতে হতো। অর্থাৎ দেশটি ‘আর্থিক দেউলিয়া’ ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন এক বছরে এক-চতুর্থাংশে নেমে আসে। রফতানি আয়ের প্রধান সূত্র এলাচি ও দারুচিনি রফতানিও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে বৈদেশিক আয়ে ধস নামে।

শ্রীলঙ্কা ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ আটকে গিয়েছিল। সবচেয়ে মারাত্মক হয়েছিল, ‘সভরেন বন্ড’ ছেড়ে আন্তর্জাতিক অর্থবাজার থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পুঁজি সংগ্রহ করা, যেগুলোর ম্যাচিউরিটি ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। কিন্তু সুদাসলে ওই বন্ডের অর্থ ফেরত দেয়ার সামর্থ্য ছিল না। ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে রীতিমতো অচল হয়ে পড়েছিল দেশটি। তার জেরে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের মার্চে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। গণরোষে পড়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। বলতে গেলে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক ধস পারিবারিক একনায়কত্বের ফসল।

মাত্র দেড় বছরের মধ্যে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশটি যে ঘুরে দাঁড়াতে পারল তার কারণ হিসেবে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রিয়াঙ্কা দুনুসিংহে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু নীতি পরিস্থিতির উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে রেমিট্যান্স ও পর্যটনের মতো কিছু ক্ষেত্রে অটোমেটিক রিকভারি হয়েছে। সরকারি ব্যয় কমানো ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি সংস্কারকার্যক্রম জোরদার করার ফলে দ্রুত ঘুরতে শুরু করেছে অর্থনীতির চাকা। সরকার ব্যয় কমিয়ে রাজস্ব বাড়িয়েছে আর সংস্কারকার্যক্রম জোরদার করে করজাল বিস্তৃত করেছে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, যে কারণে সঙ্কটের সৃষ্টি, সেটি আমলে নেয়া। সঙ্কটের মূল কারণ ছিল বাজেট ও বহিস্থ অর্থনীতির ঘাটতি, যে কারণে ঋণ সঙ্কট তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার যৌথ ব্যবস্থা নিয়েছে। ঋণসঙ্কট মোকাবেলায় ঋণ পুনর্গঠন করছে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে নতুন কর আইন করাসহ করহার বাড়ানো হয়েছে এবং ব্যয় সঙ্কোচন করা হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির একটি কারণ ছিল দেশ থেকে অর্থ বেরিয়ে যাওয়া। ডলার বেরিয়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় মূল্য কমে যায়, যে কারণে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। নতুন গভর্নর বসিয়ে সরকার তাকে স্বাধীনভাবে নীতি-সুদহার বৃদ্ধি ও মুদ্রার একক বিনিময় হার নিশ্চিত করার সুযোগ দেয়। শ্রীলঙ্কায়ও মুদ্রাবাজারের কারসাজির কারণেও মুদ্রার বিনিময় হারে প্রভাব পড়ে, মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তবে মুদ্রার বিনিময় হার ওঠানামা করলেও নীতি সুদহার বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরা গেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সঙ্কটের চূড়ান্ত সময়ে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৪৯ শতাংশের বেশি। নতুন সরকার শ্রীলঙ্কা থেকে তিন লাখেরও বেশি মানুষ কাজের জন্য বিদেশে পাঠিয়েছে, যাদের মধ্যে চিকিৎসক, প্যারামেডিক্যাল, তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মতো অনেক উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন কর্মী আছেন। এরা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠানোর কারণে দেশটির প্রবাসী আয় ৭৬ শতাংশ বেড়েছে।
শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তাদের গভর্নর সঙ্কট মোকাবেলায় আগের নীতি থেকে সরে এসেছিল। কৃষি খাতে আগের ভুল নীতি থেকে সরে এসেছে শ্রীলঙ্কা। পর্যটন খাত চাঙ্গা করা, প্রবাসী আয় বাড়ানো ও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের সাথে সমন্বয় করার মাধ্যমে তারা রিজার্ভ বাড়িয়েছে। বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা পরিশোধ করতে অর্থনীতির চাকা আরো সচল করেছে। তাদের অগ্রাধিকার অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। ফলে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে খানিকটা সময় লাগছে। তবে তারা ঠিক পথে আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকেরও চাই দক্ষ ও দূরদর্শী নীতি
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো ভুল পথে ঘুরছে; এ ভুল স্বীকারও করতে চান না আমাদের নীতিনির্ধারকরা। দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে প্রয়োজন ভুল চিহ্নিত ও স্বীকার করা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং জনসম্পৃক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসা। বাংলাদেশে এখন বিদেশী মুদ্রার সঙ্কট তীব্র। আমদানি-রফতানির ছত্রছায়ায়, শেয়ারবাজার ও ব্যাংক লুট করে কিছু দুর্নীতিবাজ আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনীতিবিদ বিদেশে অর্থপাচার করছেন। বৈদেশিক আয় আসছে হুন্ডিতে। রাজস্ব আয়ে অব্যবস্থাপনা। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিতে।

এই কঠিন অর্থনৈতিক সঙ্কটের সময় দ্বিমুখী নীতি নেয়ায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেক ভালো উদ্যোগও সফল হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা অদূরদর্শী ও অসময়োপযোগী নীতি-উদ্যোগ এবং ঘোষণায় আর্থিক খাতে বিভিন্ন সময়ে অস্থিরতা দেখা গেছে। এর ফলে আমানতকারীদের ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের প্রবণতা বেড়েছে, আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে জনগণ। সাম্প্রতিককালে কিছু ব্যাংককে দুর্বল ঘোষণা করে আমানতকারীদের আতঙ্কিত করে তুলেছে সংস্থাটি। আবার জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূতের উদ্যোগে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। একটি গ্রুপের মালিকানাধীন পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের চলতি হিসাবে বড় রকমের ঘাটতি থাকার পরও তাদের ঋণ বিতরণ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। এমন দ্বিমুখী নীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির অনেক ভালো উদ্যোগও ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করছে না ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করার কথা ঘোষণার পর বিশেষ পর্যবেক্ষণে থাকা কয়েকটি ব্যাংক থেকে আমানতকারীরা ব্যাপক হারে টাকা তুলে নেন। আগে থেকে পর্যবেক্ষণে থাকা কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তারা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও নির্বাহী কমিটির সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা যোগ দিতে পারলেও এখন পারছেন না। তারা অনিয়ম ধরলেও অনেক ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। এখন সরকারি-বেসরকারি ১৫ ব্যাংক চলছে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক দিয়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান যখন কোনো ব্যাংককে দুর্বল হিসেবে ঘোষণা দেন, তখন সেটির টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এটা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পেশাদার আচরণের মধ্যে পড়ে না।

২০২২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছিলেন, ডিসেম্বর নাগাদ ডলার সঙ্কট কেটে যাবে। এরপর প্রায় দেড় বছর হতে চললেও ডলার সঙ্কট কাটেনি। এখনো চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছেন না ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। এতদিনও ডলারের বাজার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করে চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ওপরে, যা এখন কমে হয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়েছে। এখন আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের দাম ১১০ থেকে ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সুদহার ৬-৯ শতাংশে আটকে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর্থিক সঙ্কটে, বিশেষ করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঠেকাতে গত বছরের জুলাই থেকে সুদের হার নির্ধারণে ট্রেজারি বিলনির্ভর স্মার্ট সুদহার চালু করে সংস্থাটি। এতে সুদহার সাড়ে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গত সপ্তাহে তা বাতিল করে সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা হয়েছে।
আগে ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলো নিলেও এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে পর্ষদ পরিবর্তন করে দেয়। ফলে স্বতন্ত্র পরিচালক পদটিকেও বিতর্কিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালায় চলতি বছরে স্বেচ্ছায় ও আগামী বছরের মার্চ থেকে জোরপূর্বক একীভূত করার বিষয়টি উল্লেখ আছে। তবে এটিকে অবজ্ঞা করে সম্প্রতি সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তার অতি উৎসাহে পাঁচ ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে আমানতকারীরা বেসিক ব্যাংক থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা ও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা তুলে নেন। জোর করে একীভূত করার বিরোধিতা করেছে ন্যাশনাল ও বেসিক ব্যাংক।

তদারকি না করে কিছু পরিচালককে ব্যাংকগুলো দুুর্বল করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে পুরো খাতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক ও কঠোর সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় আজ ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কাউকে দুর্বল হিসেবে ঘোষণা না দিয়ে বরং সঠিক তদারকির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর উন্নতির দিকে নজর দেয়া দরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। জোরপূর্বক একীভূত না করে ব্যাংকগুলোর নিজেদের উদ্যোগে এক হওয়ার সুযোগ রাখা উচিত। কাউকে ধরা, কাউকে ছাড়ার নীতি আর চলতে পারে না। ডলারের দাম আরো আগে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে সমস্যা কেটে যেত।

দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে জরুরি ভিত্তিতে ও বিচক্ষণতার সাথে সৃজনশীল কিন্তু প্রাসঙ্গিক নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিনিয়োগের হার বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগের মধ্যে ভারসাম্য আনা এবং সম্প্রসারণমূলক রাজস্ব ও মুদ্রানীতি গ্রহণ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ঋণপ্রবাহ বাড়লেও সঠিকভাবে উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হলে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকবে। আবার রাজস্ব ভারসাম্য উন্নয়নে রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কর ব্যবস্থার পুনর্গঠন করলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে যেমন সহায়ক হবে, একই সাথে ধনী ও গরিবের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য কমাতেও সাহায্য করবে।

বেকার সমস্যা সমাধানে বেসরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি সরকারের দক্ষ শ্রমবাজার তৈরিতে বিভিন্ন গ্যারান্টেড স্কিমের আওতায় শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে সচেষ্ট হওয়া দরকার। শক্তিশালী কৃষি খাত ছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যচাহিদা মেটানো দুষ্কর। এ জন্য কৃষি খাত উন্নয়নে ভূমির উর্বরতা হ্রাস, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অধিক হারে সারের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ অন্যান্য নেতিবাচক দিক মোকাবেলায় সচেষ্ট হতে হবে। শিল্প খাতের উন্নতির স্বার্থে ক্ষুদ্র, শিশু ও গ্রামীণ শিল্প বিকাশে কর অবকাশসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি দরকার। শিল্প খাতে পণ্যের বৈচিত্র্য আনা এবং দেশের ভেতরে ও বাইরে শিল্পপণ্যের নতুন বাজার সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের দক্ষতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ফিন্যান্স ম্যাগাজিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের নিয়ে একটি গ্রেডিং সূচক প্রকাশ করেছে। সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ‘ডি গ্রেড’ পেয়েছেন। অথচ ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার গভর্নর শক্তিকান্ত দাস পেয়েছেন এ গ্রেড। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দলাল ভীরাসিংহে ‘এ মাইনাস’ ও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জামিল আহমেদ ‘সি মাইনাস’ এবং নেপালের মহাপ্রসাদ অধিকারী পেয়েছেন ‘বি মাইনাস’। অধিকন্তু বলতে হয়, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অতীতে গভর্নর হতেন উচ্চশিক্ষিত, আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্ম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্বাধীনচেতা অর্থনীতিবিদরা। অথচ গত দুই মেয়াদের গভর্নর অবসরপ্রাপ্ত আমলা। কথিত আছে, আমলারা মূলত সরকারের আদেশ নির্দেশ প্রতিপালন করেন মাত্র। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে অভ্যস্ত নন; যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সর্বোপরি, যেকোনো অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণের আগে নীতিনির্ধারকদের পরিস্থিতি ও প্রকৃতি অনুধাবন জরুরি। যদি নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে দূরদর্শী, সময়োপযোগী ও দক্ষ নীতি-উদ্যোগ নিতে পারে তাহলে আগামী বছরগুলোতে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন স্থিতিশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement