২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
অন্য দৃষ্টি

বেছে নিন ধর্ষক না হয় অক্ষম বুড়ো

জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প - ফাইল ছবি

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বয়স ৮১ বছর। এই বয়সে মানুষ কমই বেঁচে থাকে। অনেকে থুড়থুড়ে বুড়ো হয়ে অন্যের ওপর নির্ভর হয়ে বাঁচেন। আমাদের দেশে সরকারি কাজে অবসর নেয়ার বয়স ৫৯ বছর। সেই হিসাবে বাইডেন ইতোমধ্যে আমাদের অবসর বয়সের ২২ বছর বেশি বয়স নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। এই সীমাও তিনি ৯ বছর আগে পেরিয়ে গেছেন। শিক্ষা গবেষণা ও আবিষ্কারে আমেরিকা এগিয়ে। এই সময় তাদের সবচেয়ে সভ্য জাতি বলা যয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে কেন এমন অশীতিপর মানুষকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এই প্রশ্ন সামনে আসাটা স্বাভাবিক।

শারীরিক সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তা থাকলে বেশি বয়স সমস্যা নয়। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে এই দুই ক্ষেত্রে বাইডেন বেশ কয়েকবার বড় অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। সফরে মাথাঘুরে কয়েকবার পড়ে গেছেন। চারদিকে ঘিরে রাখা শক্তসামর্থ্য প্রহরীর মধ্যে তাকে অসহায় হয়ে পড়ে যাওয়ার দৃশ্য মিডিয়ায় দেখা গেছে। স্মৃতিশক্তিও ঠিকভাবে কাজ করছে না তার। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বলে উল্লেখ করেন। তার একদিন আগে তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে ২০২০ সালের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বড় ভুল করে বসেন। তিনি জানান, নির্বাচনে তার জয় ঠেকিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছিল। আর সেটি তাকে জানিয়েছেন জার্মানির চ্যান্সেলর হেলমুট কোহল। অথচ কোহল মারা গেছেন ২০১৭ সালে। সেই সময় জার্মান চ্যান্সেলর ছিলেন অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। তার কয়েকদিন আগে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে প্রয়াত ফ্রাঁসোয়া মিতেরার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। মিতেরা ১৯৯৬ সালে মারা গেছেন।

তালগোল পাকানোর এই ঘটনাগুলো সর্বসাম্প্রতিক হলেও এর বেশ আগে থেকে তিনি বড় ধরনের স্মৃতিভ্রষ্টতায় ভুগছেন। প্রেসিডেন্টের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারেন কিনা সে জন্য প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এ জন্য একটি স্পেশাল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। তারা কয়েক সপ্তাহ আগে বিচার বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনে বাইডেনকে ‘দুর্বল স্মৃতিসম্পন্ন একজন সহানুভূতিশীল বয়স্ক ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে ‘অস্পষ্ট’, ত্রুটিপূর্ণ’ ও ‘কমজোরি’। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি থেকে তিনি ইতোমধ্যে আরেক দফা প্রার্থিতার জন্য মনোনয়ন পেয়ে গেছেন। তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দলটির মধ্যে দেখা যায়নি।

আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে দ্বিদলীয় শাসন চলছে। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান- এ দুই দলের বাইরে কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন না। রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত হতে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনিও একেবারে শেষ বয়সে রয়েছেন। শারীরিক কমজোরি ও স্মৃতিভ্রষ্টতা থাকলেও বাইডেনের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের কোনো অভিযোগ নেই। রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের বয়স ৭৭ হওয়ার পাশাপাশি রয়েছে তার বিরুদ্ধে ডজন খানেক অভিযোগ। এ ধরনের গুরুতর অপরাধ একজন সাধারণ মানুষ করলে নিশ্চিত জেলের ঘানি টানতে হতো। কিছু অভিযোগ ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে।

মার্কিন লেখক ও সাংবাদিক এলিজাবেথ ক্যারলের করা ধর্ষণ মামলার রায় বিশ্লষণ করলে বোঝা যাবে, ট্রাম্পের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কোন পর্যায়ের। ওই মামলার আর্জিতে ক্যারল জানান, ১৯৯৬ সালে এক বন্ধুকে উপহার দেবেন, সেটি পছন্দ করে দেয়ার জন্য ট্রাম্পের সহযোগিতা চান। উপহার কিনতে গিয়ে ম্যানহাটনের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ড্রেসিংরুমে তাকে আটক করে ধর্ষণ করেন ট্রাম্প। আদালত ধর্ষণের শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৬৫ মিলিয়ন ডলার, সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য ১১ মিলিয়ন ডলার এবং ক্যারলের মানসিক ক্ষতিসাধনের জন্য আরো ৭ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার জরিমানা হয় ট্রাম্পের। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আরেকটি মামলার রায় হয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেয়ার কারণে আদালত গত মাসের মাঝামাঝি ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করেন। সুদসহ তাকে সেটি ৪৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হবে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের বাড়িতে রাখা, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গণনায় হস্তক্ষেপ ও ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অভিযোগে মামলা রয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার ফ্যাক্ট চেকিংয়ে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্ট থাকার সময় ট্রাম্প মিথ্যা বলেছেন কিংবা বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন ৩০ হাজার ৫৭৩টি। এ ধরনের একটি মিথ্যা বলাই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে খারিজ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। গড়ে প্রতিদিন ২১টি করে মিথ্যা তিনি বলে গেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এমন মাত্রার যে, একটি সভ্য দেশে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এমনকি আমেরিকার সংস্কৃতি অনুযায়ী, সেই দেশটিতে এমন গুরুতর অভিযোগ নিয়ে এর আগে কেউ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস পাননি। ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কাজ করছে উল্টো। এসব স্কেন্ড্রাল প্রকাশ পাওয়ার পর এমনকি আদালতে তার বিরুদ্ধে রায় হওয়ার পর চালিত জরিপে দেখা গেছে, তার সমর্থন কমেনি। ক্ষেত্র বিশেষে তাদের জোশ বেড়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের প্রতি তাদের মর্যাদা একটুও কমছে না। নিকি হ্যালিকে ইতোমধ্যে ট্রাম্প তার নিজের রাজ্যে পরাজিত করেছেন। যেখানে হ্যালি গভর্নর ছিলেন। ট্রাম্পের প্রার্থিতা তাই অনেকটাই নিশ্চিত বলা যায়।

জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প ও বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে। যদিও তারা জানে, বাইডেন জয় পেলে তারা রাষ্ট্রীয় দায়-দায়িত্ব এমন একজনের ওপর দেবেন যিনি স্বচ্ছন্দে হাঁটতে পারেন না। সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় স্মৃতিশক্তিও তার কাজ করছে না। প্রতিটি জিনিসের একটা মেয়াদ থাকে। মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সেটি বাতিল করা হয়। বাজারে এ ধরনের পণ্য রাখা অপরাধ। এ জন্য উন্নত দেশগুলোতে আইন কঠোর। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য রাখার জন্য জেল-জরিমানা করা হয়। আমেরিকার মতো একটি দেশে কোন কারণে দক্ষ সক্ষম লোকদের বাদ দিয়ে একজন বুড়োকে বাছাই করা হলো। অন্যদিকে রয়েছে একজন ধর্ষক, সম্পদ লোভী ও জাত মিথ্যুক। আমেরিকার আসলে হলোটা কী?

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement