নতুন পর্বে গাজা যুদ্ধ?
- মাসুম খলিলী
- ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৫০
ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ নতুন এক পর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই যুদ্ধকে শুধু ইসরাইলের লক্ষ্য অর্জনের সীমিত পরিসরে রাখার প্রচেষ্টা সম্ভবত কাজ করছে না। এর সাথে সরাসরি আরব রাষ্ট্রিক অরাষ্ট্রিক পক্ষ যেমন যুক্ত হয়ে পড়ছে, তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোও সরাসরি জড়িয়ে যাচ্ছে এর সাথে।
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা
কয়েকটি ঘটনাকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমটি হলো, রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি হামাস প্রতিনিধিদলকে মস্কো সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। হামাস নেতাদের জন্য মস্কো সফর হয়তো বা নতুন নয়, তবে গাজা যুদ্ধ যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে তাতে রাশিয়ার এই সঙ্ঘাতের সাথে যুক্ত হওয়ার সঙ্কেত হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা যেতে পারে। চীন সরাসরি কোনো ভূমিকায় না এলেও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের ব্যাপারে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বৈশ্বিক ফোরামে।
দ্বিতীয়ত, ইসরাইল লেবাননের গভীরে সামরিক হামলা চালিয়ে দেশটির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে আর হিজবুল্লাহ এর পাল্টা আঘাত হিসেবে একদিকে ইসরাইলের অভ্যন্তরে জোরদার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে এর আগের যুদ্ধে ইসরাইল লেবাননের যে অংশটি দখল করে নিয়েছিল তার একটি অংশ পুনর্দখল করেছে।
তৃতীয়ত, মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিরোধ অক্ষের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আনসারুল্লাহ হুথিরা লোহিত সাগরে ইসরাইলি স্বার্থসংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোর সাথে ব্রিটিশ ও আমেরিকার জাহাজের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলের অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে বোমা হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পরে, হুথি আঘাতে ব্রিটিশ পণ্যবাহী জাহাজ ‘রুবাইমার’ ডুবে গেছে। আমেরিকান এমকিউ-৯ রিপার অ্যাটাক ড্রোন নামিয়েছে আনসারুল্লাহ। আমেরিকান কার্গো জাহাজ ‘সি চ্যাম্পিয়ন’ ও পণ্যবাহী জাহাজ ‘নেভিস ফরচুনা’তে আঘাত করা হয়েছে। এখন লোহিত সাগরের পুরো অঞ্চলটি আগুনে জ্বলছে এবং শুধু ইসরাইলের সাথে সংযুক্ত জাহাজ নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সংযুক্ত অন্যান্য অনেক জাহাজও আর রুট ব্যবহার করতে পারে না। ইসরাইলের অর্থনীতিকে রক্ষার জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের নিজস্ব অর্থনীতিতে আঘাত করেছে।
চতুর্থত, ইরান প্রতিরক্ষা শক্তি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামরিক বাহিনী আধুনিক ও শক্তিশালী করার অংশ হিসেবে নতুন নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে। দেশটি তার সবচেয়ে উন্নত এন্টি-এয়ার সিস্টেম স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করেছে সিরিয়া ও লেবানিজ সেনাবাহিনীর কাছে। দেইর আল-জোর প্রদেশে সিরিয়ার সেনাবাহিনীকে মার্কিন প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের সমতুল্য ইরানের খোরদাদ-১৫ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সিস্টেমটি ১২০ কিলোমিটার থেকে ৬টি ফাইটার-জেট এক সাথে যুক্ত করতে পারে। ইরান তাদের নতুন অত্যন্ত অত্যাধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম উন্মোচন করেছে। এটি ২০ সেকেন্ডেরও কম সময়ে ১২টি লক্ষ্য খুঁজে বের করে এবং বিশেষভাবে স্টিলথ বোমারু বিমান (বি-২) লক্ষ্য করার জন্য এটাকে ডিজাইন করা হয়েছে। ইরানের যুদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধি ইসরাইলের সাথে লেবানন ফ্রন্ট আর গোলান ফ্রন্টে সর্বাত্মক যুদ্ধের একটি সঙ্কেতও হতে পারে।
পঞ্চমত, ব্রিকস প্লাসকে একটি সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে ফিলিস্তিন ইস্যুতে। ব্রিকসের সদস্য দক্ষিণ আফ্রিকা ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় ওআইসির বিভিন্ন সদস্য দেশ পক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো গণহত্যার অভিযোগে ইসরাইলকে আদালতের বিচারের মুখোমুখি করা হলো। অপরাধ আদালত এ মামলার শুনানিতে ইসরাইলকে যুদ্ধ বন্ধের কোনো নির্দেশনা না দিলেও দেশটি যে যুদ্ধাপরাধ করতে পারে এমন প্রমাণাদি গ্রহণ করেছে।
এই বিচার প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পর্যায়ে ফিলিস্তিনের ভূমি জবরদখল করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফিলিস্তিনিদের নির্মূল ও তাদের জমি দখলের সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকায় আইসিজের এই মামলায় ইসরাইল হেরে যেতে পারে। এই কারণে নেতানিয়াহু আগে থেকেই ঘোষণা জারি করে রেখেছেন যে, ইসরাইল আন্তর্জাতিক আদালতের কোনো রায় মানবে না। এর মধ্য দিয়ে ইসরাইল কার্যত নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্যারিয়া বা দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র হিসাবে তুলে ধরল।
ইসরাইলের আসল চেহারা ও সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন
১৭ বছর ধরে সর্বাত্মক অবরোধের মধ্যে থাকা গাজার মতো একটি ক্ষুদ্র উপত্যকা দখলের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর পরাশক্তি ও তার মিত্রদের পৃষ্ঠপোষকতায় যুদ্ধ করে প্রায় পাঁচ মাসে দখল নিতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল। এই যুদ্ধে যে পরিমাণ বোমা ইসরাইল গাজার হাসপাতাল স্কুল কলেজ ও আবাসস্থলে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ইরাক যুদ্ধে সাত বছরেও সেটি করেনি। বিশ্ব ইতিহাসে নৃশংসতায় ইসরাইল সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা সিলভা বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি প্রধান হিটলার হলোকাস্টের যে নৃশংসতা ইহুদিদের বিরুদ্ধে ঘটানোর কথা বলা হয় সেটি ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ঘটাচ্ছে। সিলভা অন্য অনেক রাষ্ট্র নেতার মতো শুধু লিপসার্ভিস দিয়েই ক্ষান্ত হননি। সে সাথে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছেন। তার নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতকে তেলআবিব থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।
গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বে এমন কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে যার গন্তব্য অনেক ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী হতে পারে। ৭ অক্টোবর হামাসের সার্জিক্যাল অপারেশনের আগে বৈশ্বিক এজেন্ডা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার বিষয়টি এক প্রকার বিদায় হয়ে গিয়েছিল। ইসরাইলের আরব প্রতিবেশীরা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে একের পর এক ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে।
হামাসের অভিযানের পর ইসরাইল সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে গাজায়। এর মধ্যে ইসরাইল গাজার প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার টন বোমা ফেলে। ২৯ হাজারের কাছাকাছি ফিলিস্তিনিকে তারা হত্যা করেছে যাদের অর্ধেকের বেশি হলো নারী ও শিশু। ৮৫ শতাংশের বেশি ফিলিস্তিনি গাজায় বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই অবর্ণনীয় ত্যাগের বিনিময়ে ফিলিস্তিনে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডাটি শুধু ফিরেই আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বলতে হচ্ছে, ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্যই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে।
নেতানিয়াহু কী চাইছেন?
গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধ এখন একেবারেই দক্ষিণ সীমান্তে রাফার শহরগুলোতে চলে গেছে। নেতানিয়াহু ও তার যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্যরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত রাখার কথা বলছে। একই সাথে মিসরকে সীমান্ত খুলতে চাপ প্রয়োগ করে অখণ্ড ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাইছে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের সাথে স্থায়ী বন্দোবস্তের বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদেশ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে। এ ধরনের একটি ব্যবস্থা শুধু পূর্বশর্ত ছাড়াই দু’পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে পৌঁছানো হবে। ইসরাইল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের একতরফা স্বীকৃতির বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে। ৭ অক্টোবরের গণহত্যার পর এ ধরনের স্বীকৃতি সন্ত্রাসবাদের জন্য একটি বিশাল পুরস্কার এনে দেবে এবং ভবিষ্যতে শান্তি প্রতিষ্ঠাকে রোধ করবে।’
বস্তুত নেতানিয়াহু প্যারিস আলোচনায় যে বিষয়ে সম্মত হয়েছিলেন তা থেকে গত সপ্তাহে তার চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ায় পিছিয়ে গেছেন। বলা হচ্ছে, দেশটি মিথ্যার সাথে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে। তারা কখনো কখনো এটি বলে যে, প্রতিরোধ আন্দোলন আমাদের বন্দীদের বিনিময়ে উচ্চমূল্য চায় এবং কখনো কখনো বলে যে, এটি প্রতিরোধকে ভেঙে ফেলতে চায়। এটি এখন স্পষ্ট যে, নেতানিয়াহু এমন একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়ে সিরিয়াস নন যা আগ্রাসনের অবসান ঘটাবে, ফিলিস্তিনি জনগণকে স্বস্তি দেবে এবং এই দীর্ঘ আগ্রাসনের পরে গাজা থেকে দখলদারিত্ব প্রত্যাহার করবে। নেতানিয়াহু সম্ভবত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান, সেটি চান নিজের চেয়ার রক্ষার জন্য হয়তোবা।
হামাসের বক্তব্য
গাজায় হামাসের উপপ্রধান ড. খলিল আল-হাইয়া প্রতিরোধ সংগঠনটির সর্বশেষ অবস্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ পঞ্চম মাসের কাছাকাছি এবং ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ এখনো তার অবস্থানে সংগ্রাম করছে, তার জনগণকে রক্ষা করছে এবং আমাদের জনগণের মারাত্মক ক্ষতি সত্ত্বেও শত্রুর সন্ধানে রয়েছে। দখলদার শক্তি বেসামরিক মানুষ, সুবিধা, বাড়ি, বাসস্থান, বাস্তুচ্যুতি এবং অনাহার মাধ্যমে আমাদের মানুষ হত্যা করার চেষ্টা করছে। আজ, দখলদারিত্ব তার লক্ষ্য অর্জনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে, তারা না গাজা উপত্যকায় বন্দীদের উদ্ধার করতে অথবা প্রতিরোধের ক্ষমতাকে তারা ধ্বংস করতে পেরেছে।’
হামাস নেতা বলেন, দখলদারিত্ব গাজা উপত্যকা বা এর কোনো অংশ থেকে প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করে এবং বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তন প্রত্যাখ্যান করে অথবা এই আগ্রাসনের অবসান ঘটাতে চায় না। এখনো অবধি, তারা পর্যাপ্ত সাহায্য বিতরণ, হাসপাতাল, বেকারি এবং অবকাঠামো মেরামত, এমনকি তাঁবুসহ আশ্রয়ের গ্যারান্টি দেয়নি। হামাসের দাবি বড় বা অন্য কিছু বলে দখলদারিত্ব বাস্তবতা পাল্টানোর চেষ্টা করে। আমরা নিশ্চিত করি যে, বন্দীদের মুক্ত করা আমাদের অগ্রাধিকার, তবে এটির পাশাপাশি আমাদের উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ফিলিস্তিনিরা কীভাবে শান্তিতে থাকবে, কীভাবে আমরা তাদের মুক্তি দিতে পারব, তাদের আশ্রয় নিশ্চিত করতে পারব এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনব। কুদস, বন্দীদের মুক্ত করা, আল-আকসা মসজিদকে মুক্ত করা এবং একটি সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের মূল লক্ষ।
হামাসের এই নেতা বলেন, পশ্চিম তীর এবং গাজা স্ট্রিপ নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কারণ আমরা এখনো এর দখলে আছি। তবে, আমাদের জনগণের একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য ও মানবাধিকার রয়েছে এবং প্রতিরোধশক্তি এখনো পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষেত্রে সক্ষম। দখলদারিত্ব যেমন উপত্যকার উত্তরাঞ্চল, গাজার কেন্দ্রীয় অঞ্চল ও খান ইউনিসে প্রতিরোধের সক্ষমতা ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি রাফাহর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেও ব্যর্থ হবে। দখলদার শক্তি ভয় দেখানো, অনাহার এবং অন্যদের হাতিয়ার ব্যবহার করার চেষ্টা করে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ দলগুলো, ইহুদিবাদী সামরিক, রাজনৈতিক এবং মিডিয়ার চাপের কাছে কোনোভাবেই নতি স্বীকার করি না।
পরিস্থিতি কোন পথে?
ইসরাইলের এখনকার চাওয়াটি বেশ খানিকটা মিসরের ওপর নির্ভর করে। এটি কতটা পূরণ করবে মিসর তা বলা কঠিন। মিসরে যিনি শাসক হিসেবে ক্ষমতায় আছেন তাকে ইসরাইল ও তার পৃষ্ঠপোষকরাই অভ্যুত্থান করে ক্ষমতায় এনেছেন। জনগণের ভোট ছাড়াই তাকে বারবার ক্ষমতায় নবায়ন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটে ফেলে ঋণের জালে আটকে থাকার টুলসগুলো তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। এখন ১৬০ বিলিয়ন ডলার ঋণে আটকে আছে মিসর। সেই ঋণ মাফ করে দেয়ার বিনিময়ে ইসরাইলের প্রস্তাবে সীমান্ত খুলে দিতে চাপ দেয়া হচ্ছে সিসিকে।
সিসি জানেন, রাফা সীমান্ত খুলে দেয়ার পর ফিলিস্তিনিরা সিনাইয়ে প্রবেশ করলে তাদের অর্ধেক উদ্বাস্তুই মারা যাবে। এখন যে যুদ্ধ গাজায় হচ্ছে সেটি চলে যাবে মিসর উপত্যকায়। গাজার ওপর দিয়ে ইসরাইল বেনগুরিয়ান খাল খনন করে সুয়েজের বিকল্প সংযোগ তৈরি করবে। এখন সুয়েজ খাল থেকে মিসরের বছরে যে ১০ বিলিয়ন ডলারের মতো রাজস্ব আয় হচ্ছে তার বড় অংশ চলে যাবে ইসরাইলের হাতে। মিসরের নীল নদের পানি রেনেসাঁ বাঁধের উজান থেকে সরিয়ে এনে পশ্চিম তীর ও অন্যান্য মরু এলাকায় নিয়ে গিয়ে চাষাবাদ করা হবে। মিসর স্থায়ীভাবে এক পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
সেই পরিণতি সিসি ও মিসরের জেনারেলরা মেনে নিলে সেটি চূড়ান্তভাবে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। এই পথ গ্রহণ খুব সহজ নয়। আর ফিলিস্তিনিদের ৭৫ বছর ধরে চলে আসা প্রতিরোধ যুদ্ধকে এক ফুঁৎকারে যে নেভানো যাবে না সেটি এর মধ্যে প্রমাণ হয়ে গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা