২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশ জাতি রাষ্ট্র

পাকিস্তানের নড়বড়ে গণতন্ত্র ও সেনাবাহিনী

পাকিস্তানের নড়বড়ে গণতন্ত্র ও সেনাবাহিনী - ফাইল ছবি

সভ্যতার সুপ্রভাত থেকে রাজা, রাজ্য, রাজধানী প্রলয়ে-বিলয়ে শক্তির আধিপত্য ছিল নিরঙ্কুশ। মানুষের সভ্যতার ইতিহাস যত এগিয়েছে, ততই শক্তির মদমত্ততা হ্রাস পেয়েছে। রাজতন্ত্রের পরিবর্তে বিকাশ হয়েছে গণতন্ত্রের। শত শত বছর ধরে বিকশিত এই গণতন্ত্রের রকমফের যাই হোক না কেন, জনগণের সম্মতিই শেষ কথা বলে গ্রহণ করা হয়েছে। এই সম্মতির পরিবর্তে শক্তি প্রয়োগে গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়েছে বারবার। গণতন্ত্রের পরিবর্তে সেনাতন্ত্র বারবার বিধ্বস্ত করেছে রাজনীতির স্বাভাবিক ধারাকে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে রাজনীতিবিদদের বলা হয় সতত, স্বাভাবিক শাসক। আর যখনই রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেনাতন্ত্র অথবা সামরিক শাসন, স্বাভাবিকভাবেই অস্বীকৃত হয়েছে সাধারণ মানুষের অধিকার। সভ্যতার ইতিহাসের বহু শত বছর ধরে রাজতন্ত্র রাজত্ব করেছে। তখন সেনাবাহিনী ছিল রাজার একান্তই অধীন। বিদ্রোহ ও বিশ্বাসঘাতকতা যে ঘটেনি তা নয়। তবে তা অভিহিত হয়েছে ‘অস্বাভাবিক’ অভিধায়। গণতন্ত্রের যুগেও সেনাবাহিনী থেকেছে বেসামরিক নেতৃত্বের অধীনে। সাধারণভাবে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্তৃত্ব মেনে নিয়েছে।

ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের অবসানে আবার নতুন করে শক্তিতন্ত্র, সেনাতন্ত্র বা সামরিক শাসনের ইতিহাস শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতাই দায়ী বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন। কোনো কোনো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ভূমিকার কারণে রাজনীতিবিদদের পরিবর্তে সেনাবাহিনী তথা মুক্তিবাহিনীর শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সময়ের দ্বৈত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট কখনো কখনো সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শিক দ্বন্দ্বে উদ্বুদ্ধ অথবা প্রভাবিত হয়েছে অনেক দেশের সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ উত্তরকালে সেনা হস্তক্ষেপের যে প্রাবল্য ঘটে তা এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশকে আক্রান্ত করে।

১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় দু’টি বৈরী রাষ্ট্র- পাকিস্তান ও ভারত। শুধু ধর্মীয় বৈরিতা নয়, দেখা যায় আদর্শিক ও নেতৃত্বের বৈসাদৃশ্য। ভারতে ডজন ডজন পরিপক্ব রাজনীতিবিদ থাকায় এবং দেশটি বিশাল আয়তনের হওয়ার কারণে সেখানে একক শক্তির প্রয়োগ ছিল অসম্ভব। সেখানে প্রথম থেকেই সেনাবাহিনী পাশ্চাত্য ধারার বেসামরিক নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব মেনে নেয়। কিন্তু পাকিস্তানের অবস্থা ছিল ভিন্ন। সেখানে পাকিস্তানের জাতির পিতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর একক কর্তৃত্বই ছিল শেষ কথা। তবে সেটি ছিল স্বাভাবিক শ্রদ্ধা ও সম্মানসূচিত। জিন্নাহর পরে পাকিস্তানের নেতৃত্ব দিতে পারে এ রকম নেতার সংখ্যাও ছিল অনেক কম। পাকিস্তানে কায়েদে আজমের পর যে নেতাকে সবচেয়ে বেশি সম্মান দেয়া হতো তিনি ছিলেন কায়েদে মিল্লাত নামে অভিহিত লিয়াকত আলী খান। সামরিক ষড়যন্ত্রে ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর আততায়ীর গুলিতে তিনি প্রাণ হারান। (বিস্তারিত বিবরণের জন্য দেখুন- রাওয়ালপিন্ডি ষড়যন্ত্র, সোহরাব হাসান, প্রথমা প্রকাশনী) জন্মের প্রথম থেকেই যে রাষ্ট্রটি সামরিক ষড়যন্ত্রে আক্রান্ত হয়েছে, সেই দেশটি ৭৬ বছর পর আজো সে দেশটি সামরিক বাহিনীর জাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট। সামরিক রাজনীতির গবেষকরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা, সেনাবাহিনীর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও ষড়যন্ত্র সামরিক অভ্যুত্থানের কারণ। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

পাকিস্তানের প্রথম সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে ১৯৫৮ সালে। প্রেসিডেন্ট ধুরন্ধর ইস্কান্দার মির্জা নিজের ক্ষমতা সংহত করার অভিলাষে রাজনীতিবিদদের অব্যাহত দ্বন্দ্ব-বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে ৭ অক্টোবর ক্ষমতা গ্রহণের আহ্বান জানান। ২৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট মির্জা নিজেই ক্ষমতাচ্যুত হন। সেনাপ্রধান জেনারেল আইয়ুব খান ১০ বছর ক্ষমতায় থাকেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে না দিয়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা অর্পণ করেন। আবার সামরিক আইন শুরু হয়। এই সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঘটায় ইতিহাসের এক ভয়াবহ গণহত্যা। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে শক্তি প্রয়োগের অন্যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।

১৯৭১ সালের গণহত্যা ও বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে সে দেশে এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিচারপতি হামিদুর রহমান হন সেই তদন্ত কমিশনের প্রধান। তিনি স্পষ্টত সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন। একাত্তর-পরবর্তীকালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর মতো ধূর্ত রাজনীতিবিদ ক্ষমতায় এলেও গণতন্ত্র অর্জিত হয়নি। ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জুলফিকার আলী ভুট্টো কারচুপি করেন। নির্বাচন-পরবর্তীকালে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন’-এমআরডি গঠিত হয়। সব বিরোধী রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করে। ভুট্টো আন্দোলন সামাল দিতে না পেরে নিজেই সামরিক আইন জারি করেন। সেনাপ্রধান জিয়াউল হক ক্ষমতা গ্রহণ করেন। দুর্ভাগ্যজনক ইতিহাস এই যে, ভুট্টোর ডেকে আনা সামরিক শাসক জিয়াউল হকই তাকে ফাঁসিতে ঝুলান। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সময়কালে গণতন্ত্রের চর্চা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফের দ্বন্দ্বে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।

২০০৭ সাল পর্যন্ত পারভেজ মোশাররফ পাকিস্তানের ক্ষমতায় থাকেন। এরপর বেসামরিক শাসনের একটি বড় বিরতি। স্বাভাবিক ভোটেই অবশেষে ক্ষমতাসীন হন। এরপর জনগণের স্বাভাবিক রায়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন পৃথিবীখ্যাত ক্রিকেট খেলোয়াড় ইমরান খান। প্রথম দিকে সখ্য থাকলেও শেষ দিকে বিরোধে জড়ান সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির ও খেলোয়াড় থেকে রাজনীতিবিদ ইমরান খান। বিরোধ হয়ে দাঁড়ায় সেনাবাহিনী বনাম জনগণের। গত বছরের ৯ মে ইমরান খান সমর্থকরা সামরিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। দুই ব্যক্তি তথা দুই প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমে উঠে। বলা হয়ে থাকে, মার্কিন ষড়যন্ত্রে ইমরান খান সংসদীয় অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। ইমরান খানকে মামলার পর মামলায় দিয়ে অবশেষে জেলে নিক্ষেপ করা হয়। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-পিটিআইকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বিগত কয়েক বছরে হেন অন্যায় ও অপকর্ম নেই যা সেনাপ্রধান ইমরান খান ও তার দলের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেননি। শেষের দিকে সেনাপ্রধান বেপরোয়া হয়ে উঠেন। জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিয়েছেন, বিচার ব্যবস্থাকে ইমরান দমনের হাতিয়ারে পরিণত করেছেন এবং আমলাতন্ত্রকে সেনাতন্ত্রে পরিণত করেছেন। ঘোষিত নির্বাচনে ইমরান খানের দল প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ইমরান খান তথা পিটিআই কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে দলীয় লোকদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। সেনাবশংবদ নির্বাচন কমিশন পিটিআইকে শুধু নির্বাচনের অযোগ্যই ঘোষণা করেনি, তারা তাদের প্রতীকও স্থগিত করে দিয়েছিল।

এত বাধা-বিপত্তি, অন্যায়-অত্যাচার, দলে বিভক্তি- এরপরও পিটিআই প্রার্থীরা স্বতন্ত্র নির্বাচন করে একটি ঐতিহাসিক চমক সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ নির্বাচনী ফলাফল অনুযায়ী- ২৬৪ আসনের মধ্যে ১০১ আসন পেয়েছে পিটিআই-সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপরই মুসলিম লীগ নওয়াজ শরিফ পেয়েছে ৭৫টি আসন। ভুট্টো প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান পিপলস পার্টি-পিপিপি পেয়েছে ৫৪টি আসন। এরপরই রয়েছে মুহাজিরদের পার্টি ‘মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট’-এমকিউএম- তারা ১৭ আসন পেয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৬ আসনের মধ্যে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। যাই হোক, ২৬৫ আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার গঠনে ১৩৪ আসন প্রয়োজন। দেখা যাচ্ছে, কোনো দলই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেনি। তবে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পিটিআই। কিন্তু সেনাপ্রধান তথা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী কোনোক্রমেই ইমরান খানকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না। তাই পরস্পরবিরোধী মুসলিম লীগ ও পিপিপি সব বিরোধ ভুলে ক্ষমতার লালসায় আঁতাত ঘটনের জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই কঠিন অবস্থার মধ্যেও সরকার গঠনের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে পিটিআই।

ইমরান খান জেল থেকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। বর্তমান নির্বাচনে ভুট্টোর পিপিপি তুলনামূলকভাবে ভালো করেছে। তাদের সনাতন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সিন্ধুতে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। পাঞ্জাবে তাদের আসন সংখ্যা বেড়েছে। এখন সরকার গঠন নিয়ে দর কষাকষি চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন, সেনাপ্রধান ও তার অনুগত লোকেরা মুসলিম লীগ এবং পিপিপির যৌথ প্রযোজনাকে অনিবার্য করে তুলবে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রিত্ব ভাগাভাগির চিন্তা করছে দুই দল। মুসলিম লীগ-নওয়াজ তিন বছর ও পিপিপি দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর ভাগাভাগির ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। সর্বশেষ জানা যাচ্ছে, বিলওয়াল ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

ইমরানের খানের দল পিটিআই জানিয়েছে, তারা জোট সরকার গঠন করবে না। প্রয়োজনে বিরোধীদল হিসেবে কাজ করবে। তবে এখন পিটিআই-সমর্থকরা ব্যস্ত আছে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আন্দোলনে। আর নওয়াজ মুসলিম লীগ ব্যস্ত হারানো ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে। তারা ইতোমধ্যে ১৭ আসন পাওয়া এমকিউএমকে রাজি করাতে পেরেছে। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইমরান খানের সমর্থনে জয়ী হয়েছেন তাদেরও বশীভূত করার ভয় ও লোভ দেখাচ্ছে তারা।

আপাতদৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে, নওয়াজ শরিফ তার হারানো মসনদ ফিরে পেতে যাচ্ছেন। বিলওয়াল ভুট্টোকে অপেক্ষা করতে হবে। তবে জোড়াতালির সরকার যে ভালো হয় না, তা যে কেউ বোঝে। স্বার্থের সঙ্ঘাত তো লেগেই থাকে। মালয়েশিয়ায় মাহাথির মোহাম্মদের সাথে চুক্তি হয়েছিল আনোয়ার ইবরাহিমের যে, তিন বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর ইবরাহিম প্রধানমন্ত্রী হবেন। কিন্তু তিন বছর যেতে না যেতেই আনোয়ার ইবরাহিমকে ক্ষমতাচ্যুত ও কারাদণ্ড দেন মাহাথির মোহাম্মদ। সুতরাং পাকিস্তানের এই মিত্রতা অচিরেই যে শত্রুতায় পরিণত হবে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

এখানে তিনটি বিষয় গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে। প্রথমত, সেনাবাহিনীর ভূমিকা। দ্বিতীয়ত, পরস্পর বিপরীত মেরুর দুই দলের সমঝোতা। তৃতীয়ত, একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমরান খানের তৎপরতা। ইমরান খান স্বাভাবিকভাবেই জোর প্রচেষ্টা চালাবেন জোটের পতন ঘটাতে। যেহেতু তিনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন, সংসদীয় বিধি মোতাবেক সরকার গঠনের দাবি তারই অগ্রগণ্য। জোড়াতালির সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে ইমরান খানের দল যেকোনো সময়ই চ্যালেঞ্জ করতে পারবে। আর পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাদেশের মতো ৭০ ধারা নেই যে, কেউ দল পরিত্যাগ করলে সদস্যপদ হারাবে। তাই আশঙ্কা রয়েছে ‘হর্স ট্রেডিং’য়ের। রাজনীতির কেনাবেচার বাজারে কখন কী হয় বলা যায় না। বিশেষ করে পাকিস্তানের মতো অস্থির ও ক্রয়-বিক্রয়ের সমাজে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রী যেই হোক না কেন, তিনি থাকবেন অব্যাহত চাপের মুখে। এই চাপ আসবে সেনাবাহিনী থেকে এবং ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক এলিটদের থেকে। আর সামরিক বাহিনীর প্রভাবমুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ অধরাই থেকে যাবে। পাকিস্তানের ৭৬ বছরের ইতিহাসে বেশির ভাগ সময় কেটেছে সামরিক শাসনে। রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণে থেকেছে অল্প সময়ে। তবে ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অনিবার্যভাবেই থেকে যাচ্ছে। একবার জাস্টিস কায়েমি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান মিলিটারি ইজ সো মাইটি দ্যাট দ্য কনকুয়োরড দেয়ার ওউন টেরিটরি’। সেই মাইটি মিলিটারি ১৯৭১ সালে দেশের পূর্বাংশ হারিয়েছে। গণতন্ত্র না থাকলে বিখণ্ড পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের ভবিষ্যতও অনিশ্চিত।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement