০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`
অন্য দৃষ্টি

রামের নব রাজ্যের যাত্রা

রামের নব রাজ্যের যাত্রা - ফাইল ছবি

বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় রামমন্দির উদ্বোধন করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ উপলক্ষে তার সরকার দেশে বিদেশে নজিরবিহীন প্রচারণা চালিয়েছে। রামের সৌজন্যে শহরটিকে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। প্রভু রাম ও তার শীর্ষ মোদি ও বিজেপির জোশ বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এটি শুধু একটি মন্দির উদ্বোধন নয়, একই সময় তিনি এই মন্দিরে ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠা’ করছেন।

প্রাণ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আমরা একটু খোলাসা করে বুঝে নিতে পারি। যেমন : মানুষের মরে যাওয়া মানে তার দেহে আর প্রাণ না থাকা। মারা গেলে মানুষটিকে আর ডাকা হয় না। তার পতিত দেহটিকে বলা হয়, অমুকের লাশ। কারণ অমুক ব্যক্তি আর দেহের ভেতরে নেই বা তার প্রাণ দেহটিতে নেই। আমরা যদি ঘুমের অবস্থাটা কল্পনা করি বুঝতে পারব। মরে যাওয়ার পর পশুপাখি গাছপালার দেহটি অর্থহীন নির্বোধ বস্তুনিচয়ে পরিণত হয়। মোদি অযোধ্যার রামমন্দিরে ‘রামলালা’র প্রাণ প্রতিষ্ঠান করেছেন। অর্থাৎ প্রভু রামচন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে সেখানে ফিরিয়ে এনেছেন। মন্দিরের ভেতরে মূর্তি রামচন্ত্র শুধু পাথরের কোনো মূর্তি নয়, তিনি সেখানে অবস্থান নেয়া একটি কার্যকর সক্ষম সত্তা। অন্তত মোদির বিশ্বাস এটি। মানুষ যখন মনে করে, মূর্তি তার অভীষ্ট কাজটি করতে সক্ষম বা তার কাছে প্রার্থনা করলে সে সাড়া দিতে পারে, প্রার্থনাকারীর মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে পারে, এমন ভাবনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে মন্দিরটিতে প্রাণ আছে বলা যায়। রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা বলতে সম্ভবত এমনটা বোঝাতে চান নরেন্দ্র মোদি।

ধর্মগুরুরা মোদির এই ধারণার সাথে ভিন্নমত পোষণ করছেন। হিন্দু ধর্মের পুরোহিতদের প্রধান চার শঙ্করাচার্যের কেউই এই জমকালো অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। আমন্ত্রিত হয়ে অনুষ্ঠানটিতে হাজির না হওয়ার পক্ষে তারা যুক্তি তুলে ধরেছেন। তাদের মতে, অসমাপ্ত মন্দিরের উদ্বোধন ও রামমূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হিন্দু ধর্মমতে অধর্ম। তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, মন্দির উদ্বোধনের নামে যা হচ্ছে, তা ধর্ম নয় বরং রাজনীতি। মোদি ও তার গোষ্ঠী ভারত রাষ্ট্রকে নিয়ে কোন দিকে যাত্রা শুরু করেছেন তা বোঝা গেল তার ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধার অশোভন বক্তব্যে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব মন্দির উদ্বোধনের আগেই তার রাজ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অযোধ্যার রামমন্দির প্রতিষ্ঠা অখণ্ড ভারত গড়ে তোলার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। অখণ্ড ভারতের ব্যাপ্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, এর সীমানা পাকিস্তানের সিন্ধু ও পাঞ্জাবে গিয়ে শেষ হবে না, শেষ হবে আফগানিস্তানে গিয়ে। তার এই সীমাহীন উচ্চাকাক্সক্ষা বাস্তবায়ন হলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ছাড়াও তিব্বত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও শ্রীলঙ্কা ভারতের পেটে ঢুকে পড়বে। বিশ্ব মানচিত্র থেকে এই দেশগুলো নেই হয়ে যাবে। বিজেপির আদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শ এটি।

আধুনিক রাষ্ট্রগুলো সভ্য হয়েছে এ কারণে যে, তারা অন্যের মতের গুরুত্ব দেয়। ধর্ম ও বর্ণের ঊর্ধ্বে মানুষের মৌলিক মানবিক মর্যাদা স্বীকার করে। জাতিসঙ্ঘ প্রণীত সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ একে একটি স্থায়ী ভিত্তি দিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো একে পরিপালন করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। সভ্য দেশে রাজনৈতিক দলের নেতার প্রাথমিক গুণ হচ্ছে মানবাধিকারের সর্বজনীন সনদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন। প্রকৃত গণতান্ত্রিক দেশে প্রকাশ্যে অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের কর্মসূচি নিয়ে কেউ রাজনীতিতে আসতে পারে না। এমনটা কেউ ভাবলে তাকে আধুনিক ব্যবস্থায় অযোগ্য মনে করা হয়। রাজনীতির মাঠে তার জন্য স্পেস থাকে না। ভারতের নেতারা প্রকাশ্যে প্রতিবেশী দেশ ও ভিন্ন ধর্মের লোকদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অশালীন কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। এগুলো যে তারা কথার কথা বলে না, আসলেই করতে চায়, তা বিশ্বাস করার জোরালো যুক্তি পাওয়া যাচ্ছে। নতুন সংসদ ভবনে অখণ্ড ভারতের মানচিত্র সাঁটা হয়েছে। গত বছরের ২৮ মে মোদি সেটা ঘটা করে উদ্বোধন করেছেন।

গত বছর শেষের দিকে মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দেশটির ক্রমেই বর্ণবাদী হওয়ার ব্যাপারে বিপুল হইচই হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক বক্তৃতায় আশঙ্কা করেছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভারত খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে যেতে পারে। মোদি ও তার গোষ্ঠী যখন অখণ্ড ভারত গড়ার কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে চলছেন তখন দেশটির ভেতরে সংখ্যালঘুরা ক্রমেই উচ্ছেদের মুখে রয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ অধিকার হারানোর শঙ্কায় রয়েছে। তারা যখন অখণ্ড ভারতের কথা বলছে ভারতের মানুষের মনের মধ্যে বিপুল বিতৃষ্ণা ও বিভাজন দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় ভারত দেশটিকে অখণ্ড বলা দুষ্কর। এই কথাটি দেশটির ভেতরের লোকরা বলছে। এ নিয়ে আরেকজন মোদি, যিনি অশোকা মোদি নামে পরিচিত, ‘ইন্ডিয়া ইজ ব্রোকেন’ নামে একটি বই লিখেছেন। মোদির শাসনের মূল্যায়ন তুলে ধরে, তিনি দেখিয়েছেন দেশটির পশ্চাৎ যাত্রার কোন বাঁকে হারিয়ে যাচ্ছে। একটি প্রাণবন্ত গতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার বদলে মোদির শাসনে ভারত রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি, লুটপাট, নদী ভরাট, ঋণখেলাপি, মুদ্রা পাচার, নিম্নমানের ওষুধ বিক্রির মতো আত্মঘাতী পথে হাঁটছে। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন, এক ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ কায়েম হওয়ায় সব জায়গায় প্রতারণা অসাধুতা চেপে বসেছে। রাষ্ট্রব্যবস্থার এই নেতিবাচক ক্ষয় তার আগেই বাংলাদেশে শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সেটা হতে পেরেছে মোদির ভারতের আশকারায়। বেশির ভাগ মানুষের ধারণা এমনই।

jjshim146@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement
নতুন জার্মানির পুরনো রূপ, উড়িয়ে দিয়েছে হাঙ্গেরিকে বাংলাদেশের পর্যটক না যাওয়ায় ধুঁকছে কলকাতা তালেবানের কূটনৈতিক বিজয়, কিরগিজস্তানের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ ভারতের ৬০ কিমি এলাকা দখল করে ফেলেছে চীন? জনমত সমীক্ষার পাশাপাশি তহবিল সংগ্রহেও কমলা পিছনে ফেললেন ট্রাম্পকে ধাক্কা সামলে লড়াই শ্রীলঙ্কার গাজা আমেরিকার যুদ্ধ, আমরা চোখের পলকে এই যুদ্ধ থামাকে পারি : মার্কিন প্রেসিডেন্টপ্রার্থী সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কমিটি গঠন বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সাজিদের পরিবারকে বিএনপির আর্থিক সহযোগিতা সংস্কার ও ষড়যন্ত্র এখনো সমান্তরালেই হজযাত্রার কাহিনী

সকল