২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
দেশ জাতি রাষ্ট্র

নন্দিত ইউনূসের নিন্দিত রায়

ড. মুহাম্মদ ইউনূস - ফাইল ছবি

বাংলাদেশের জনচরিত্রে নন্দিত অথবা নিন্দিত হওয়া কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আমাদের চরম ও পরম হওয়ার বদনাম রয়েছে। আমরা যাকে নন্দিত করতে চাই, তার বন্দনা করতে করতে আকাশে উঠাই। আবার যাকে নিন্দিত করতে চাই তাকে মহাসাগরের গহিন গভীরে নিক্ষেপ করি। আমাদের ইতিহাস ভূগোলে এর ভূরিভূরি প্রমাণ রয়েছে। আমাদের জাতীয় বীরদের বীরত্বগাথা ও প্রশংসা-প্রশস্তি হিমালয়ের মতো উঁচু। তবে জাতীয় বীরদের ব্যাপারে আমাদের ঐকমত্য নেই বললেই চলে। এ ক্ষেত্রেও বিভাজন ও বিতর্ক স্পষ্ট। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় একেকজন একেক নেতা-নেত্রীর ভক্ত-অনুরক্ত। বিপরীত ব্যক্তি ও নেতাকে বন্দনা তো দূরের কথা, বদনাম করে করে ক্লান্ত হয় লোকজন। অতীতের মতো এ প্রবণতা এখনো বহমান।

রাবীন্দ্রিক ভাষায় বলা যায়, ‘আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি; পরের অনুকরণে আমাদের গর্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিকস এবং নিজের বাকচাতুর্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহ্বল হইয়া উঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য।’
রবীন্দ্রনাথের এই উদ্ধৃতিটি নিরর্থক নয়, বরং প্রাসঙ্গিক। গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি বিব্রতকর দিন। এ দিন প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয়, অধীন। বিগত ৫০ বছরে সব সরকারই দাবি করেছে- বিচারব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। কার্যত তা কখনো ছিল না। তবে বিগত ১৫ বছরের আওয়ামী রাজত্বে ক্রমহ্রাসমান বিধির মতো তা তলানিতে পৌঁছেছে। স্বাধীন থাকার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করে এ দেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা যে শিক্ষা পেয়েছেন তারপর আর কেউ সে পথে হাঁটার সাহস পাবেন, এমনটি ভাবা যায় না।

সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে একনায়করাও তাদের আরোপিত নির্বাচনকে অবাধ দেখানোর জন্য প্রকাশ্যত বিচার বিভাগকে স্বাধীন দেখাতে চান। আর এখানে আইন-কানুন, রীতি-রেওয়াজ, সভ্যতা-ভব্যতার কোনো তোয়াক্কা না করেই বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ করা হয়েছে। হাজার হাজার গায়েবি, গজবি ও আজগুবি মামলার জন্য আমরা পুলিশকে দায়ী করি। পুলিশের রাজনৈতিক আচরণ অপ্রত্যাশিত কিংবা অসম্ভব নয়। কিন্তু ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় মানুষ যেখানে নিবিষ্ট সেই বিচার বিভাগের ভূমিকা যখন অসম্ভবকে সম্ভব করে তখন নাগরিক সাধারণ ক্ষুব্ধ না হয়ে পারে না।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বিবিসিকে বলেছেন, তাদের হিসাবে শুধু গত চার মাসেই এক হাজার ৫৬১ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মামলায়, যারা দলের সাবেক এমপি বা এমপি প্রার্থী ছিলেন কিংবা চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। শুধু ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ছয় থানার নাশকতার আলাদা সাত মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের ৯৪ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীর অসংখ্য নেতাকর্মীকে তথাকথিত বিচারের নামে জেলে পাঠানো হয়েছে। যেখানে ১০-২০ বছরের মামলা ঝুলে আছে সেখানে অবৈধ প্রক্রিয়ায় অসম্ভব দ্রুততায় বিরোধীদের মামলার রায় হয়েছে।

বিগত বছরে এ ধরনের কার্যক্রম লক্ষ করে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ‘দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’ নোবেলবিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায়ও আমরা এই রকেট-সুপারসনিক গতি লক্ষ করেছি। এক মাসে ৯ থেকে ১০টি তারিখ দেয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শুনানি করা হয়েছে। ড. ইউনূসের আইনজীবী অভিযোগ করেছেন, তারা ১০৯টি কনট্রাডিকশন দিয়েছেন। যেখানে একটি কনট্রাডিকশন দিলেই খুনের আসামি খালাস হয়ে যায়, সেখানে আদালত কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি। সরকার পক্ষের উকিল বলেছেন, নোবেলবিজয়ী হলেও তিনি তো আইনের ঊর্ধ্বে নন। এখানে তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে লেবার ল ভায়োলেট করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আদালত তাদের শোকজ করেছেন। তারা জবাব দিয়েছেন। কিন্তু আদালত তাদের জবাব সন্তোষজনক মনে করেননি।
উল্লেখ্য, ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালত ড. ইউনূসসহ অপর তিনজনকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং একই সাথে প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল করার শর্তে ড. ইউনূসসহ চারজনকেই এক মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন একই আদালত। জামিন পাওয়ার পর আদালত থেকে বেরিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে দোষ করিনি, সেই দোষে শাস্তি পেলাম। এই দুঃখটা মনে রয়ে গেল।’

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদের বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে বিজয়নগরের টাপা প্লাজায় স্থাপিত তৃতীয় শ্রম আদালতের সামনে গতকাল বেলা ১১টা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন। উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকারকর্মী। বেলা পৌনে ২টার দিকে আদালতকক্ষে প্রবেশ করেন ৮৩ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেলা সোয়া ২টার দিকে এজলাসে বসেন বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা। রায় ঘোষণার শুরুতেই বিচারক আসামিপক্ষের আগের পৃথক দু’টি আবেদন নামঞ্জুর করেন। পরে তিনি জানান, ‘রায়টি বড় হবে। এ-ফোর সাইজে ৮৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়। পুরো রায় পড়ছি না।’ বিচারক রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পড়ে শোনান।

তিনি একপর্যায়ে বলেন, ‘এখানে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বিচার হচ্ছে না। ড. ইউনূস, যিনি গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান, তার বিচার হচ্ছে।’ বিচারক মামলাটির বিস্তারিত প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকারখানা অধিদফতরের পরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে গিয়ে শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। পরে তা সংশোধনের জন্য বিবাদিপক্ষকে ওই বছরের ১ মার্চ চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন সংশোধনের পর গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে এর জবাবে ৯ মার্চ যে চিঠি দেয়া হয়েছিল, তা সন্তোষজনক ছিল না। ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর শ্রম ট্রাইব্যুনালে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। গত বছরের ৬ জুন মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। ২২ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। গত ২৪ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়। মামলায় অভিযোগ আনা হয়- শ্রম আইন-২০০৬ ও শ্রম বিধিমালা-২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিসকাল পার হলেও তাদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি।

প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বার্ষিক ছুটি, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেয়া হয়নি। গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেয়া হয়নি। রায়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ড. ইউনূসসহ অন্যরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে লিখিত বক্তব্য জমা দেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক শুনানিতে বলেছিলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ মামলা হয়নি। তবে বাদিপক্ষের সাক্ষ্য ও তাদের উপস্থাপিত দলিল থেকে প্রমাণিত হয়েছে, শ্রম আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের একজন পরিদর্শক মামলা করেছিলেন। আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থনে লিখিতভাবে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয় নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী। কারণ, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। তবে গ্রামীণ টেলিকমের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে স্থায়ী কর্মীর মতো ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড), আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি), অর্জিত ছুটি ও অবসরকালীন ছুটি দেয়া হয়ে থাকে।

গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নিজস্ব নীতিমালা আছে, যা অনুমোদনের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু আবেদন বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকমকে কিছুই জানানো হয়নি। এরপর ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট পুনরায় গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগের নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট নীতিমালা অনুমোদনের জন্য মহাপরিদর্শক বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ আদেশ দেয়া হয়নি। রায়ে আদালত বলেন, গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগের নীতিমালা অনুমোদনে যথাযথ আদেশ না দেয়ার বিষয়ে আসামিপক্ষ আদালতে আসতে পারতেন। আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়, গ্রামীণ টেলিকম নিয়োগের নীতিমালা অনুমোদন না হলেও নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগসহ অন্যান্য কার্য সম্পন্ন করেছেন; যা শ্রম আইনের লঙ্ঘন।
রায়ে আদালত বলেছেন, মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইনের তিনটি ধারা এবং শ্রম বিধিমালার একটি ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আদালত শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ও ৩০৭ ধারা অনুযায়ী, আসামিদের ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। একই সাথে ৩০ দিনের মধ্যে শ্রম আইন অনুযায়ী, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সাজার রায়ে বিস্ময় প্রকাশ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা-বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের র্যাপোর্টিয়ার ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাবেক মহাসচিব আইরিন খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ দেশে বহু শ্রম আইন লঙ্ঘনকারী রয়েছে। শ্রমিকরা ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য লড়াই করছেন। শ্রমিকনেতাকে গুলি করে মারা হচ্ছে। অথচ আইনকে অস্ত্র বানিয়ে ড. ইউনূসের মতো একজন নোবেলজয়ীকে সাজা দেয়া হলো। এটি পলিটিসাইজেশন অব জাস্টিস সিস্টেম।’

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এই মামলা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। নির্বাচনের আগের মুহূর্তে মামলার রায়টি ঘোষণা করার পেছনে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। কয়েক মাস আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে কারণটি জানা যায়। কাদের বলেছেন, ‘আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে হটাতে পারেনি। তাই ড. ইউনূসকে নিয়ে নতুন খেলা শুরু করেছে বিএনপি। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের এই অশুভ খেলা খেলতে দেয়া হবে না। ওয়ান-ইলেভেনের মতো ইউনূসের নেতৃত্বে একটি নতুন সরকার, এমন কথা-বার্তা বাজারে এসেছে। সেই দুঃস্বপ্ন দেখছেন কি না জানি না। ইউনূস সাহেবের খায়েশ ছিল, সে খায়েশ এখনো পূর্ণ হয়নি।’

আওয়ামী লীগের এই ইউনূসভীতি আদিকালের। তিনি যখন নোবেল পুরস্কার লাভ করেন জাতি আনন্দিত হলেও আওয়ামী লীগ আনন্দিত হয়নি। গুজব ছিল এরকম যে তাদের প্রাপ্যটি স্বজনপ্রীতি করে পশ্চিমারা প্রফেসর ইউনূসকে দিয়েছে। সেই সময় থেকে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা ইউনূসবিরোধী বিষোদগার করে আসছেন। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন না করার জন্য কোনোরকম প্রমাণ ছাড়াই তারা প্রফেসর ইউনূসকে দায়ী করেছেন। সরকার প্রধান নিজে তার সম্পর্কে বলেছেন, সুদখোর, রক্তচোষা ইত্যাদি। মামলার শুরুতে বিশ্বনেতারা ও নোবেলবিজয়ী ব্যক্তিরা যখন প্রফেসর ইউনূস সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রী তাকে বিবৃতি ভিক্ষাকারী বলে তিরস্কার করেছিলেন।

স্মরণ করা যেতে পারে, তাদের মধ্যে শতাধিক নোবেলবিজয়ী ছিলেন। গত ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো-ভিত্তিক গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান সিজিয়ন পিআর নিউজ ওয়েয়ার তাদের ওয়েবসাইটে এই বিবৃতি প্রকাশ করে।

বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বদের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মতো উঁচু ব্যক্তিত্বকে অবশেষে দণ্ডিত করা হলো। এটি দেশে ইতোমধ্যে ব্যক্তিবিদ্বেষপ্রসূত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বিনাশের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত হয়েছে। বাংলাদেশ জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য যিনি বয়ে এনেছেন অসম্ভব সম্মান তার প্রতি এই রায় বাঙালি জাতিকে অপমান করার শামিল মনে করেন স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক প্রবীণ রাজনীতিক আ স ম রব। অপর দিকে, সরকারের মন্ত্রী ও কর্তাব্যক্তিরা তাদের পদক্ষেপকে জায়েজ করার সাফাই গাইছেন। অবশ্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করে, যে সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্য সব অন্যায়কে ন্যায় মনে করে, তাদের কাছে অসামান্য প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সামান্যই বটে। ক্ষমতা কোনো কোনো মানুষকে অন্ধ করে তোলে। তার কাছে ন্যায়-নীতি ও কৃষ্টি-কালচার কোনোই গুরুত্ব বহন করে না। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ লর্ড এক্টনের সেই বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শেষ করি, ‘power tends to corrupt; absolute power corrupts absolutely.'

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement