এবার নির্বাচনে আসলে প্রতিপক্ষ কারা
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৫, আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৮
সবাই যদি বলে, ৭ জানুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন ‘আমাদের ও মামাদের’ অর্থাৎ- মামা-ভাগনের যেমন মধুর সম্পর্ক, তেমনি এবারের নির্বাচনে পক্ষ আর প্রতিপক্ষের আদর্শ তথা রাজনৈতিক দর্শন অভিন্ন। পক্ষশক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছে শাসক দল। আর প্রতিপক্ষকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই রাজনৈতিক সংগঠন। পক্ষ-প্রতিপক্ষ সবাই আওয়ামী লীগের প্রিয়ভাজন। শাসকদলের আশীর্বাদপুষ্ট স্নেহধন্য। তাই যারা বলছেন, এ নির্বাচন মামা-ভাগনের নির্বাচন। তাহলে তাদের কথা বলা থেকে ফেরাবেন কিভাবে। আসলে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের প্রার্থীদের সাথে একই রাজনৈতিক সংগঠনের মনোনীত-অনুমোদিত স্বতন্ত্ররূপী প্রার্থীদের মধ্যে এটি একটি ‘ফ্রেন্ডলি ম্যাচ’ বা ডামি নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বলা যায়, এই কথিত ভোট হচ্ছে শুধুই আওয়ামী লীগের জন্য এবং কেবল আওয়ামী লীগ সদস্যদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই নির্বাচন ‘সুসম্পন্ন’ হবে। আর বিজয়ীও হবে আওয়ামী লীগ। এমন নির্বাচনকে কেউ হাস্যকর, অর্থহীন ভোট ভোট খেলা হিসেবে অভিহিত করে এবং এ জন্য অর্থব্যয়কে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যয় বলে ক্ষমতাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড বলে ধরে নেয়া যায়।
যে নির্বাচনের ভোটারের জন্য প্রকৃত কোনো বিকল্প বেছে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই, তাকে কোনোভাবেই নির্বাচনের সংজ্ঞার ভেতর স্থান দেয়ার অবকাশ কোথায়। সে কারণে দেশের মানুষ কোনোভাবে সেই ‘ঐতিহাসিক’ ভোটরঙ্গকে নির্বাচন বলে মেনে নেবে না। একই সাথে গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকেও তার কোনো স্বীকৃতি পাওয়া আদৌ সম্ভব নয়। তবে এই আয়োজনের পরিণতিটা কী হবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের ভোটকে নানা বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে কথিত ভোটকে কেউ ভণ্ডামি বললে, কিভাবে ভিন্ন কিছু বলা যাবে।
এখন জানা বোঝার ব্যাপার হচ্ছে, এই ভোটরঙ্গের পরিণতি কী হবে। প্রথমত, ঘরোয়াভাবে তথা দেশের ভেতরের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াটা কী হতে পারে। এখন আগেভাগেই যে চিত্রটি দৃশ্যমান বা বোদ্ধাসমাজ যা ভাবছে, সেটি হলো-দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ কি গণতন্ত্রের সমাধিসৌধ রচনা করে নিজেদের দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে নির্বাসনে পাঠানোর সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করে ফেলতে চাইছে কি। যে দলটি গণতন্ত্রের জন্য বারবার আন্দোলন-সংগ্রাম করে এসেছে, তারা কি এবার সেই ঐতিহ্যের অতীত থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করছে না তো! শিশু-কিশোর খেলতে গিয়ে বলে- এক দান, দুই দান, তিন দান। আওয়ামী লীগও এমন তিনবার, তিন ভোট করে। সে দলের শেকড় জনগণের মন-মস্তিষ্ক থেকে উপড়ে ফেলল বলে মনে করা হলে কি ভুল বলা হবে। প্রশ্ন হলো, ঐতিহ্যবাহী দলটির ভেতর এখন কি দূর দেখতে পাবেন এমন নেতৃত্বের অভাব সঙ্কট আছে বলে ধরে নিতে হবে। এই দলের লাখ লাখ কর্মী ভবিষ্যতে গণতন্ত্র ইস্যুতে কথা বলা সব পথ কি বন্ধ করে দেয়ার পথ রচনা করা হচ্ছে না কি। এই দলে প্রচুর বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী সাধক, শুদ্ধ সাংস্কৃতিক কর্মী আছেন বলে সবাই জানত। এই দলের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হিসেবেই তারা সাধারণের কাছে সম্মানিত ছিলেন। দলের এমন এক সন্ধিক্ষণে তারা এখন কি ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলে ধরে নিতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে এখন হাজারো প্রশ্ন জনমনে সৃষ্টি হয়েছে। এসব জ্ঞানীজনের কেউ কেউ যে কথা বলেননি বা মতামত লিখে জানাননি, তা কিন্তু নয়। তবে তাদের বক্তব্য- অভিমত থেকে এটি বোঝার কোনো উপায় নেই। তারা মাঠের রাজনৈতিক কর্মীর মতো মোহাচ্ছন্ন নয়। সময়ের তাগিদে কালের সঠিক কথাটি বলতে তারা যেন শঙ্কাগ্রস্ত, দ্বিধান্বিত এবং পাছে লোকে কী বলে, এমন বিভ্রান্তিতে আছেন বলে মনে হচ্ছে। আগামী দিনে ইতিহাস আওয়ামী লীগের এমন ব্যত্যয়ের জন্য তাদের রেহাই পাওয়ার পথ অবশিষ্ট থাকবে কি।
ওপরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ যেন তাদের ঐতিহ্য-গৌরব হারানোর পথ ধরে অগ্রসর হচ্ছে। অপর দিকে, তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকেও তারা নানা জেল-জুলুম করে নিশ্চুপ-নিঃশেষ করতে মরিয়া প্রায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের যে দেহভঙ্গি-মনোভঙ্গি ও বাস্তবে তাদের যে কর্মকাণ্ড, মারদাঙ্গা আচরণ ও বাক্য বচন, তাতে এটি পরিষ্কার- ওই দলের নেতাকর্মীরা বিএনপিকে হাতের নখের ওপর তুলে উকুন মারার মতো নিঃশেষ করতে চায়। তবে ইতোমধ্যে এটি বারবার প্রমাণ হয়ে গেছে, সেটি তাদের ভ্রান্তিবিলাস, শুধুই মরীচিকা। এমন ভাবনা নিয়ে পথচলা বিবেচনাপ্রসূত নয়। আর যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নেয়া যায়, নিজেদের নিঃশেষ করার সাথে সাথে বিএনপিকে তারা শেষ করে দিয়ে যাবে, তাহলে এ প্রশ্ন উঠবেই- আওয়ামী লীগ দেশকে কি রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিশূন্য করতে চায়। তবে আওয়ামী লীগ কি দয়া করে বলবে, সেই রাজনৈতিক শূন্যস্থান কী দিয়ে পূর্ণ হবে বলে ভাবছে। শাসকদল বারবার সংবিধান সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করছে। অথচ তাদের ভূমিকা থেকে মনে করার কারণ রয়েছে- তারা রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অপমৃত্যু কামনা করছে।
যাক, এখন ফিরে যাওয়া যাক এই রচনার ধারাবাহিকতায়। আজকে আওয়ামী লীগের ‘নির্বাচন’ নিয়ে যত বিপদে আছে তা থেকে উদ্ধারের জন্য রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, রাষ্ট্রে যত স্তম্ভ বা উপাদান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো মরিয়া হয়ে সরকারকে সাহায্য করছে। এসবই আইন-কানুন নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী। এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারা। সরকারকে মদদ দিতে গিয়ে ওই সব প্রতিষ্ঠান খোদ রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রভুত ক্ষতি করে চলেছে। সেই সব মদদদাতা শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রেরই ক্ষতি করছে না, আওয়ামী লীগ আজ যে দেউলিয়াত্বের দ্বারে এসে পৌঁছেছে, সে পথে এগিয়ে যেতে প্রশাসন, রাষ্ট্রের নানা স্তম্ভ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কিছুমাত্র কম নয়। তারা একটি দলকে সেবা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রের সাথে বৈরিতাসুলভ আচরণ করছে। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রতি অনুরাগে সিক্ত। অপর দিকে, অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতি এতটাই বিরাগভাজন যা কিনা সুশাসন, জবাবদিহিতা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ভঙ্গুর দশায় নিয়ে যাচ্ছে। এবার সবাই যেন জনগণের প্রতিপক্ষ শক্তি হিসেবে রূপ নিয়েছে। আজ দেশের সার্বিক দুর্দশার জন্য শুধু ক্ষমতাসীনদের জনগণ দায়ী করছেন না, তাদের সাথে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সমভাবে দোষী সাব্যস্ত করছে। সেই রাষ্ট্রীয় স্তম্ভ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন যন্ত্রকে- যারা দেশকে বিবেচনায় নয়, সরকারকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নীতি-নৈতিকতার সীমান্ত অতিক্রম করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে কি তাদের জবাবদিহিতার কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না।
এদের সবাইকে ভাবতে হবে- এই দিন দিন নয়, আরো দিন আছে। সেই দিনগুলো খুব দূরে নয়। যখন সবাইকে জবাব দিতে হবে, মূল্য গুনতে হবে। কিছু লোককে কিছু সময়ের জন্য প্রবোধ দিয়ে রাখা যায়। কিন্তু প্রবোধ একসময় ফিকে হয়ে যায়। আর প্রবোধ কখনো সত্য রুখে দিতে পারে না। শাক দিয়ে কখনো মাছ ঢাকা যায় না। সত্যের কোনো দ্বিতীয় সত্তা নেই। তেমনি ইতিবাচকতাকে কখনোই নেতিবাচকতা দিয়ে রোখা যায় না, যাবে না। খোদ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রবোধের যে দেয়াল দিয়ে সত্য থেকে দূরে রাখা হয়েছে, সেই দেয়াল কিন্তু অচিরেই ভেঙে পড়বে। সেই সাথে এটিও এখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে- যাদের ভুলিয়ে ভালিয়ে শাসকরা তাদের সাথে নির্বাচনী ট্রেনে তুলে নিয়েছিল; তাদের কেউ কেউ এখন সেই ট্রেনের চেইন টেনে গাড়ি থেকে নামতে শুরু করেছে। আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষমতাসীনদের সেই ট্রেনে কতজন সহযাত্রী হিসেবে থাকবে তা এখন দেখার বিষয়।
সবাই এটি জানেন ও বুঝতে পারছেন, আওয়ামী লীগ কেন স্বাভাবিক একটি নির্বাচন করতে বা মোকাবেলা করতে ভীত। তার অনেক কারণ রয়েছে। সব কিছু বলার প্রয়োজন নেই, সেসব কথা বহু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে ছোট্ট কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। পত্র-পত্রিকায় কিছু দলিল পেশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে প্রায় প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে একটি খবর খুব বড় করেই এ খবর ছাপানো হয়। যার শিরোনাম ছিল- ১৫ বছরে ব্যাংকিং খাতে লুট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। এই ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কারা লুট করেছে সেটি হয়তো অনেকে জানেন। এর দায় অবশ্যই শাসক শ্রেণীর সরকার তথা আওয়ামী লীগ সরকারকেই সে দায় নিতে হবে।
দেশে সুশাসনের অভাব বলে কায়েমি স্বার্থবাদীদের তৎপরতা সব সীমা অতিক্রম করেছে। বাণিজ্যে রয়েছে শক্তিশালী সব সিন্ডিকেট। এদের দৌরাত্ম্যে জনজীবন এখন দুর্বিষহ। এই প্রশাসন এখন আবার আরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকতে চায়। তাদের আবারো ভোট দিয়ে অপশাসনকে আরো দীর্ঘতর করার কোনো অর্থ, যুক্তি কি থাকতে পারে। সাধারণ মানুষ রাজনীতির মারপ্যাঁচ বোঝে না এটি ঠিক কিন্তু তাদের নিত্যদিনের যে ভয়াবহ সঙ্কট
চলছে, তার কারণ কি, কেন এবং কারা এ জন্য দায়ী! সেটি পুরোপুরি উপলব্ধি করে। তাই ৭ জানুয়ারিতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার কোনো আগ্রহ তাদের হবে না।
ndigantababar@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা