২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তারল্য সঙ্কট উত্তরণে সুশাসন ও আস্থা

তারল্য সঙ্কট উত্তরণে সুশাসন ও আস্থা - নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর নগদ তহবিল কমছে দিনে দিনে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার এই কঠোর তারল্য পরিস্থিতির কারণ ব্যাংকের নগদ স্টক কমে যাওয়া এবং ভল্টে নগদযোগ্য ক্রেডিট কঠিন চাপের মধ্যে থাকা। ফলে, তহবিল সঙ্কটে জড়িত ব্যাংকগুলোতে তাদের ব্যালেন্সশিট পরিপাটি রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সমর্থনের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ব্যাংকের তারল্য কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ঋণ-পুনর্নির্ধারণ ব্যবস্থাকে সহজীকরণ করার ফলে এনপিএল বেড়ে যাওয়া, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঙ্কোচনমূলক আর্থিক নীতিনির্ধারণ, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে উচ্চতর সরকারি ঋণ নেয়া এবং সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো মুদ্রা মুদ্রণ না করে হস্তান্তর না করা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

অন্যদিকে, তহবিল সরবরাহ চেইনে রেমিট্যান্স হ্রাস এবং রফতানির অর্থ প্রাপ্তি হ্রাস পাওয়াও ব্যাংকগুলোর তারল্য স্টককে সঙ্কুুচিত করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাংকের তারল্য ধারাবাহিকভাবে কমে অক্টোবরে বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাড়তি তারল্য ১.৫৮ ট্রিলিয়ন টাকায় নেমে এসেছে। জুলাই মাসে ব্যাংকে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ছিল ১.৮১ ট্রিলিয়ন টাকা। যদিও ব্যাংকের ভল্টে উপলব্ধ নগদ তহবিল সেপ্টেম্বরের ৩০৭ বিলিয়ন টাকা থেকে অক্টোবরে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩১৬ বিলিয়ন টাকা হয়েছে, তবে ২০২২ সালের অক্টোবরে ৩৪২ বিলিয়ন টাকার তুলনায় এই পরিমাণ এখনো কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত বাড়তে থাকে যখন বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমতে থাকে। এই উন্নয়ন সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো তারল্য সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে প্রধানত উচ্চ এনপিএল এবং বাংলাদেশের ব্যাংকের অর্থ সহযোগিতা বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মেয়াদি ঋণে খেলাপি হওয়ার সময় বাড়িয়েছে। এ কারণে যথাসময়ে টাকা ফেরত আসছে না। ফলে তারল্য সঙ্কট হবে, এটিই স্বাভাবিক। এখন, ব্যাংকগুলো সম্পূর্ণরূপে অভ্যন্তরীণ সরকারি ব্যাংক, যাদের তারল্য চাপ রয়েছে তাদের ঋণের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, অর্থবাজারে অর্থের প্রবাহ কমাতে পলিসি রেট ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নীত করেছে যার প্রতিফলন ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০ ডিসেম্বর তহবিল সঙ্কটে থাকা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২৪ হাজার ৬১৫ কোটি টাকা স্বল্পমেয়াদি ধার দিয়েছে যা দেশের ইতিহাসে রেকর্ড। এই ধারে সুদের হার ছিল ৯ দশমিক ১৩ টাকা যাও বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড।

এনপিএলের কারণে ব্যাংকিং শিল্পের সম্পদের একটি মূল অংশ কাজ করছে না অথচ ব্যাংকগুলো তাদের বিদেশী অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতাগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য বিবি থেকে ডলার কিনতে ক্রেডিট ব্যয় করছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ব্যাংকগুলোর মাসিক ডলার-ক্রয় বিনিয়োগ চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে গড়ে প্রায় ১২৫ বিলিয়ন টাকা (১ দশমিক ১৪৭ বিলিয়ন ডলার) অক্টোবর মাসে যা ছিল ১৩২ বিলিয়ন (১ দশমিক ১৯৮ বিলিয়ন ডলার)। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগে ব্যাংকগুলোর উপর তারল্য চাপ কমাতে ডেভলপমেন্ট মেকানিজমের মাধ্যমে সরকারের অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার বড় অংশ পূরণ করত। কিন্তু সম্প্রতি বিবি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তারল্য সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার সহায়তা থেকে সরে এসেছে। এ কারণগুলো তারল্য হ্রাসে অবদান রাখছে। যদি বিবি তারল্যকে সমর্থন করা বন্ধ করে দেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরো তীব্র হতে পারে। অভিজ্ঞ ব্যাংকার সতর্ক করে বলেন, মুদ্রাস্ফীতির চাপ জনগণকে তাদের সঞ্চয় নগদ করতে বাধ্য করছে।

ইসলামী ব্যাংকগুলোর তারল্য সঙ্কট
সবচেয়ে কঠিন তারল্য সঙ্কটে পড়েছে ইসলামী ব্যাংকগুলো। এই ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে তারল্য সঙ্কটে থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে চলতি হিসাবের ঘাটতি অর্থ সমন্বয় করতে সতর্কতামূলক চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই সময়ের মধ্যে ঘাটতি সমন্বয় না করা হলে অন্যান্য ব্যাংকের সাথে লেনদেন বন্ধ হবে কি না, তা পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমন্বয়ে ব্যর্থ হলে পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আপনাদের সম্পাদিত ক্লিয়ারিং স্টেটমেন্টের জন্য নির্ধারিত হিসাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ চুক্তি মোতাবেক ব্যাংকগুলোকে সব বা নির্দিষ্ট কোনো ক্লিয়ারিং প্ল্যাটফর্ম থেকে বিরত রাখা হবে। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত সমস্যার কারণে এসব ব্যাংক তারল্য সঙ্কটে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নিয়ে ভবিষ্যতে কাজ করবে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশ্বাস দিয়েছে, আগামীতে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য বলেছে, ওই পাঁচটি ব্যাংককে তাদের সতর্কতামূলক চিঠি দেয়া হয়েছে, মানি পেমেন্ট সেবা বাতিলের সিদ্ধান্ত নয়। তবে সতর্কতায় কাজ না হলে এক সময় মানি সেবা বাতিল হতেও পারে। উল্লিখিত পাঁচটি ব্যাংকের চলতি হিসাবের স্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, চলতি হিসাবের স্থিতি দীর্ঘদিন ধরে ঋণাত্মক যা স্বাভাবিক ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিষয়টি বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। উল্লেখ্য, এই পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে একটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক, যে ব্যাংকের নিজস্ব তারল্য ঘাটতি তো কখনো হয়নি; বরং বিভিন্ন ব্যাংককে বিভিন্ন সময় মানি সেবা দিয়ে আসছে অনেক বছর থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্য বলেছে, ‘এখন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য। এরপর বহিস্থ চাপ থেকে বের হয়ে এলে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকের সুশাসন নিয়ে কাজ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’ বিবির প্রতিনিধি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের চলতি হিসাব ঋণাত্মক হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সহায়তা দেয়া হয়, যা পরবর্তীতে সমন্বয় করে নেয়া হয়। এটি চলমান প্রক্রিয়া। এর আগেও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে ৭০০ কোটি টাকার সহায়তা দেয়া হয়েছিল।

ব্যবসায়িক লেনদেনের জন্য নগদ টাকার প্রয়োজন হয়। একইভাবে দৈনন্দিন কেনাকাটা, বাড়ি ভাড়া, বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধসহ নানা কারণে একটি অংশ সবসময় মানুষ নগদে কাছে রাখে। জিনিসের দর বাড়লে ব্যবসায় বা ব্যক্তি টাকা রাখার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। এর বাইরে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানুষ নগদে হাতে রাখে। আবার হুন্ডিতে প্রবাসী আয় বাড়লে তখনো নগদ টাকা বাড়ে।

অনেকটা লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, ডলার সঙ্কট এবং বৈশ্বিক মন্দার সম্মিলিত প্রভাবে ভবিষ্যতে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা আছে- এমন ভয়ে কেউ কেউ ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে ফেলার ভাবনায় তাড়িত হয়ে থাকতে পারেন। এটি ব্যাংকের তারল্য বা নগদের সঙ্কট নয়; বরং আস্থার সঙ্কট। সেই সাথে অবশ্য রয়েছে ভালো ব্যাংক ও খারাপ ব্যাংকের পার্থক্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংক ব্যবস্থায় অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ফলে ভালোভাবে পরিচালিত ব্যাংকে আমানতের সমস্যা হচ্ছে না।

এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী?
এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত বাণিজ্যিক ব্যাংককে এই বলে সতর্ক করা- তারা যাতে মাঝারিসহ বড় চেক অনার করার সময় গ্রাহক হয়রানি না করে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি নগদায়নে যাতে গড়িমসি করা না হয়, গ্রাহকদের যেন না ঘোরায়। কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকের কর্মকর্তার খারাপ আচরণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব আকারে ছড়িয়ে গেলে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হবে। গ্রাহকরা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে টাকার বিনিময়ে যে সেবা চান, তাকে সেই সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নিজের রেগুলেটরি ক্ষমতা পোক্ত করা, ব্যাংকিং সেবা কিংবা অর্থ উত্তোলনে হয়রানি হচ্ছে কি না, সেসব যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেয়া। গ্রাহক যদি বুঝতে পারেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সঠিক সময়ে সঠিক নিয়ন্ত্রণ করছে না, তাহলে তারল্য সঙ্কট না থাকলেও আস্থার সঙ্কট কিছুতেই কমবে না।

ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি, অনিয়ম হলে এর নেতিবাচক প্রভাব রাষ্ট্রকে বিপদের দিকে ধাবিত করে। তবে আজকের সময়ে দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে ব্যাংক খাতের প্রসার যেমন দ্রুত ঘটেছে, তেমনি বেড়েছে এ খাতে অনিয়ম। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তছরূপ থেকে শুরু করে বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, এটিএম কার্ড জালিয়াতিসহ ছোট-বড় অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। ব্যাংক খাতে এসব ঘটনার বড় কারণ হলো- সুশাসনের অভাব। যারা অপরাধের সাথে জড়িত তাদের বিচার হয় না। আইন তাদের স্পর্শ করতে পারে না, যার কারণে ব্যাংক খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছে। ব্যাংক খাত ও অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, ব্যাংকের টাকা লুটকারীরা যত বড়ই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

অনেককেই বলতে শুনেছি, বর্তমানে ক্ষমতাসীনদের নীতি হচ্ছে- ‘যে আমার সাথে নেই, সে আমার বিরুদ্ধে’। ওদিকে বিরোধী পক্ষও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা পন্থা অবলম্বন করছে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মনে। আমাদের দেশের গণমানুষ কিন্তু এখনো যথেষ্ট সাবধানী। অনেক হিসাব-নিকাশ করেই চলে, সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এত সাবধানী হয়েও তাদের কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে তখন তারাই গোষ্ঠীস্বার্থে অসংযমী ও বেপরোয়া হয়েছে। সরকার আইএমএফসহ অন্য দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার চেষ্টা করছে। দাতাদের সাথে এ নিয়ে দরকষাকষিও করছে। এটি নিশ্চিত আমাদের সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার করতে হবে। কিন্তু বিরাজমান বাস্তবতায় রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ খুব একটা কাজে দেবে বলে মনে হয় না।

পরিশেষে বলতে হয়, ব্যাংক খাত নিয়ে দুশ্চিন্তার জায়গাটি তৈরি হলো মূলত সুশাসনের অভাব, বেপরোয়া দুর্নীতি, ব্যাংক পরিচালনায় রাজনৈতিক ও পরিচালকদের হস্তক্ষেপ এবং খেলাপি ঋণের মাত্রাতিরিক্ত ঊর্ধ্বগতির কারণে আমানতকারীদের ব্যাংকের উপর আস্থা কমে যাওয়া। করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব এই দুর্বলতাকে আরো গভীরে নিয়ে গেছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক গতিতে বাড়ায় তা প্রকাশ্যে চলে আসে। এতে মানুষ নতুন করে সঞ্চয় করতে পারছে না; বরং আগের সঞ্চয় ভেঙে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছে। ঋণ পরিশোধ কমে গেছে। বিশেষ ছাড়ে ঋণকে নিয়মিত রেখে কোনো সুদ আদায় না করেও কাগুজে মুনাফার মাধ্যমে আয় বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ ছাড়ের পরও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপির মধ্যে আদায় অযোগ্য বা কুঋণের পরিমাণই অনেক বেশি। বড় গ্রাহকদের ঋণের বড় অংশই এখন কুঋণে পরিণত হয়েছে। এসব কারণে ব্যাংক খাত নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে। উল্লেখ্য করা যেতে পারে, নির্বাচনের আগে সবসময়ই বিনিয়োগে স্থবিরতা থাকে। এ সময় ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত টাকা পড়ে থাকার কথা। অথচ ব্যাংকগুলো এখন তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। সুতরাং নির্বাচনের পরে এই সঙ্কট আরো ভয়াবহ হবে, সেটিই স্বাভাবিক।

লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement