২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

১৬ জুন : নারায়ণগঞ্জ ট্র্যাজেডি

- ছবি : সংগৃহীত

১৯৭৪ সালের ১৬ জুন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার চারটি জাতীয় পত্রিকা চালু রেখে বাকি সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ায় সাংবাদিক সমাজ প্রতি বছর ১৬ জুন দিবসটিকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের কালো রাত্রি হলো ২০০১ সালের ১৬ জুন। প্রতিহিংসার রাজনীতি কত প্রকার ও কি কি হতে পারে তা ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। প্রতিহিংসাকে কার্যকর করার জন্য পূর্ব জামানার বিভিন্ন কৌশলের সাথে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে গুপ্তহত্যা এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘আইন’ ও আইনের বা (LEFT) হাত।

আইনকে অপপ্রয়োগ করে বা ইচ্ছামতো আইন প্রণয়ন করে বেতনভুক্ত রাষ্ট্রীয় সার্ভেন্টদের মাধ্যমে রাষ্ট্র নিজেই প্রজাদের নিপীড়ন করে, মনোবাসনা পূর্ণ করে। পৃথিবীব্যাপী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বহু অপপ্রয়োগের অনেক ঘটনা রয়েছে যা কিছু অংশ প্রকাশিত, বাকি বেশির ভাগই রয়েছে অপ্রকাশিত, অথবা মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে ভিন্নভাবে প্রকাশিত, কোথাও প্রভাবশালীদের চাপে, কোথাও ভিন্ন ভিন্ন কারণে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিপীড়িতদের উপায় উপকরণের দুর্বলতা ও মিডিয়ার পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের কারণে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের অনেক ঘটনাই হয় চাপা পড়ে থাকে; নতুবা প্রচারিত হয় ভিন্নভাবে। ইতিহাসের পাতায় কোথাও ভিলেন হয়ে পড়ে নায়ক, নায়ক হয়ে যায় ভিলেন এবং পৃথিবীর অনেক ঘটনাই ঘটেছে যার জন্য নায়ক বা ভিলেন কেউই দায়ী নয়; বরং সংগঠিত হয়ে থাকে তৃতীয় পক্ষ দ্বারা, কিন্তু দোষ চাপানো বা মামলা দেয়া হয় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

নারায়ণগঞ্জের সেই ১৬ জুনের পৈশাচিক ঘটনা অনেক কথা অনেক ব্যথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সেদিন চাষাঢ়াস্থ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ অফিসে পৈশাচিক বোমা হামলায় ২২ জন নিরীহ সাক্ষাৎকারপ্রার্থী পুরুষ-মহিলা নিহত হয়, যাদের মধ্যে নজরুল ইসলাম বাচ্চু নামে সম্ভাবনাময় কণ্ঠশিল্পী নিহত হয়েছিল, শামীম ওসমানসহ (তৎকালীন ও বর্তমান এমপি) অনেকেই আহত হয়েছেন, চন্দনশীল সম্ভাবনাময় উদীয়মান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব চিরতরে দু’টি পা হারিয়েছেন যিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং আরো অনেকেই পঙ্গু হয়েছেন, এমন পৈশাচিক ঘটনার নিন্দা জানানোর কোনো সুযোগ পাইনি, কারো দুঃখের সাথে নিজের অশ্র ঝরাতে পারিনি। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০৫ নম্বর কক্ষে পড়ন্ত বেলায় আমার কিউবিক্যালে বসে যখন ঘটনা শুনে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে থাকার জন্য নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখনই জানতে পারি আমার নেতৃত্বে বোমা হামলার অভিযোগে আমার শহরের বাড়ি মজলুম মিলনায়তনে হামলা হয়েছে, আহত-নিহতের বিক্ষুব্ধ লোকজন আমার বাড়ির টিনের ঘর গোলাগুলি করে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে, পেট্রোল দিয়ে বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়ায় আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা এক কাপড়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। পরে আরো জানতে পারি, মিডিয়াতে প্রকাশিত হচ্ছে ‘তৈমূর আলম খন্দকারের নেতৃত্বে এই পৈশাচিক হামলা।’

এ সংবাদ শুনে মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (রূপগঞ্জ) সাবেক ইউপি সদস্য মফিজ মেম্বারের পুত্র ছাত্রদল নেতা শফিক সুপ্রিম কোর্ট থেকে হোন্ডায় চড়িয়ে আমাকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (শিক্ষকদের কোয়াটারে) একটি গোপন স্থানে রেখে আসে। মিডিয়াতে আমার নাম প্রকাশের কথা আমার পরিবার থেকেও জানানো হয়। পরে জানতে পারি, আমাকে প্রধান আসামি করে বিএনপির আরো ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ থানায় ৯(৬)২০০১ ধারা ৩০২ দণ্ডবিধি এবং নারায়ণগঞ্জ থানায় ১০(৬)২০০১ ধারা ৩/৪ বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি পৃথক মামলা করা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর নিজের ওপর ধিক্কার জন্মে এ জন্য যে, ঘটনার সাথে যাদের সম্পৃক্ততা নেই তাদের ২২ জন লোক হত্যায় জড়িয়ে আসামি দেয়ার নামই কি রাজনীতি? মামলার কথা মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হওয়ায় আমিসহ মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত সব আসামি গভীর আত্মগোপনে চলে গেলাম। রাতের অন্ধকারে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে অন্য আত্মীয়ের বাড়ি ছাড়াও নিকটস্থ জানাশোনা বিশ্বস্ত লোকজনের বাড়িতে পলাতক থাকতে শুরু করি। সর্বশেষ আত্মগোপনে ছিলাম ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার ধানমন্ডির বাসভবনে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের বা আহত-নিহতদের আত্মীয়স্বজনের হামলার আশঙ্কা ও পুলিশের হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য এজাহারভুক্ত সব আসামি সবাই দূর-দূরান্তে চলে গেছে, হাতের কাছে কাউকেই পাওয়া যায় না।

আমি প্রধান আসামি হওয়া সত্ত্বেও মোবাইল ফোন খোলা রেখেছি অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য। হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য আত্মসমর্পণ করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করি। কিন্তু কেউই সম্মত হয়নি। পরে সিদ্ধান্ত নিই, আমি নিজে একাই হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করব। কারণ, যেহেতু আমরা এই পৈশাচিক বোমা হামলায় জড়িত নই সেহেতু কোর্টে আত্মসমর্পণ করার মতো মনোবল আমার রয়েছে। মিডিয়ার সংবাদ শুনে আমার জ্যেষ্ঠ কন্যা ভিকারুননিছা স্কুলের তৎকালীন ছাত্রী (ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম) আত্মগোপন অবস্থায় টেলিফোনে আমাকে বলেছিল, ‘রাজনৈতিক কারণে কি তোমরা বোমা মেরে মানুষ খুন করতে পারো?’ এ ধরনের অপবাদের মানসিক যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে আমাকে কাটাতে হয়েছে ১৩টি বছর।

আমাদের বিরুদ্ধে ঘটনার সম্পৃক্ততা না পেয়ে ওই মামলাগুলোতে ২০০৩ সালে এপ্রিল মাসে সিআইডি ফাইনাল রিপোর্ট দেয়, সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি করে আমাদের নির্দোষ মন্তব্য করে ঘটনাটি তৃতীয় পক্ষ দ্বারা সংগঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রতিবেদন দেন। ২০০৯ সালের ২ জুন বাদিপক্ষের আবেদনে মামলাটি আবার পুনরায় চালু হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর মামলাটির অমানসিক যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে চলাবস্থায় ২ মে ২০১৩ জানতে পারি, ওই পৈশাচিক ঘটনার সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় সিআইডির ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরামর্শ করে মামলা থেকে আমাদের অব্যাহতি দেয়ার জন্য আদালতে প্রার্থনা করে। কারণ, পত্রিকায় দেখেছি- দিল্লি রেলস্টেশন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার প্রস্তুতিকালে কোটালিপাড়ায় মোরসালিন ও মুত্তাকিন নামে দুই ভাই গ্রেফতার হলে দিল্লি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা চাষাঢ়ার আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা বিস্ফোরণের কথা স্বীকার করে। এ দুই ভাই ব্রিফকেসসহ শামীম ওসমানের কাছে একটি সুপারিশের জন্য এসেছিল বলে শনাক্ত হয়। পুলিশের মন্তব্য- ওই ব্রিফকেসেই বোমা সংরক্ষিত ছিল। এভাবেই আল্লাহপাক সত্যকে প্রকাশ করে দেয়ায় আমরা অযাচিত হয়রানি থেকে বেঁচে যাই, নতুবা এত বড় অপবাদ ও অভিযোগের পরিসমাপ্তি কিভাবে হতো তা জানি না।

আমি আগাম জামিন নেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি মর্মে টেলিফোনে ব্যারিস্টার মওদুদ আহাম্মদ স্যারকে জানালে তিনি বলেন, তুমি সারেন্ডার পিটিশন রেডি করো, কোর্টে আমরা সবাই থাকব। সব কিছু রেডি করে ২২ জুলাই ২০০১ বিচারপতি আমিরুল কবির ও বিচারপতি আব্দুর রাজ্জাক সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে আমার আগাম জামিনের শুনানি হয়। শুনানিতে প্রয়াত খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহম্মদ, প্রয়াত ব্যারিস্টার মওদুদ আহাম্মদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আমার জামিনের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন এবং শুনানি করেন খোন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহাম্মদ, তিনি মামলা দু’টির বাদি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের শহর কমিটির তৎকালীন সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট খোকন শাহা নিজে বাদি হয়ে ইতোপূর্বে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে আরো কয়েকটি মামলা দিয়েছিল। ওই মামলাগুলোর এজাহার, ১৯৯৬-২০০১ পর্যন্ত আমার চেম্বার পোড়ানো, বাড়িঘরে হামলা, ডিটেনশন দিয়ে ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক, শান্তি চুক্তির প্রতিবাদে বিএনপি মিছিলে আমাকে গুলি, একই গুলিতে সহকর্মী ইব্রাহিম নিহত- প্রভৃতি ঘটনার দালিলিক প্রমাণাদি আদালতে উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রের পক্ষে আদালতে জামিনের বিরোধিতা করেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল (তৎকালীন এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল) অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।

এজাহারে উল্লেখ ছিল, রমনা বটমূল, যশোর উদীচী সম্মেলন, কোটালিপাড়াতে যারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তারাই আওয়ামী লীগ অফিসে ঘটনা ঘটিয়েছে। বিচারপতিদ্বয় এ মর্মে জানতে চান, ওই মোকদ্দমাগুলোতে তৈমূর আলম খন্দকারের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে কি না? মাহবুবে আলম সাহেব এসব প্রমাণ দেখানোর জন্য তিনি সময় প্রার্থনা করলে আদালত এক দিনের সময় মঞ্জুর করে আমাকে এক দিনের জন্য জামিন মঞ্জুর করেন। আমার জামিন হওয়ার প্রতিবাদে শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জে অর্ধবেলা হরতাল আহ্বান করে। ২৩ জুলাই ২০০১ কোর্টে যখন আমার জামিন শুনানি হচ্ছিল তখন চলছিল আমার জামিন বাতিল দাবিতে নারায়ণগঞ্জে হরতাল। অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম যখন এজাহারে উল্লিখিত মোকদ্দমায় আমার সম্পৃক্ততা সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেনি তখন বিচারপতি আমিরুল কবীর ও বিচারপতি আবদুর রাজ্জাক সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ ফৌজদারি মিস ৫২১৬/২০০১ মোকদ্দমায় আমাকে অন্তর্বর্তীকালীন আগাম জামিন দেন।

আমাদের নামে মামলা দেয়ার কারণে সত্য উৎঘাটনের জন্য জাতীয় ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রেখেছেন। কয়েকটি রাষ্ট্রীয় এজেন্সি নানামুখী তদন্তের পর ঘটনা বুঝতে পেরে পরবর্তীতে আমাদের হয়রানি বা গ্রেফতারের কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেয়নি। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর অতি উৎসাহী কয়েকজন ব্যক্তি চা-দোকানি হালিমার পুত্র আবুল কালামকে বাদি করে মূল মামলার বাদিপক্ষ অর্থাৎ নাসিম ওসমান, শামীম ওসমান গংদের আসামি করে একটি কাউন্টার (Counter) মামলা করেছিল, যা আমার দৃষ্টিতে ছিল অগ্রহণযোগ্য, যা তৎসময়ে মিডিয়াতে আমি প্রকাশ করেছি। পরে হাইকোর্ট দ্বিতীয় মামলাটি ছটঅঝঐ করে দেয়। অন্যদিকে প্রতিহিংসাকে প্রতিহিংসা দিয়ে মোকাবেলা করলে প্রতিহিংসা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায়। তবে যেকোনো প্রতিহিংসাকে সাবলীল ও শক্ত মানসিকতা নিয়ে মোকাবেলা করা বাঞ্ছনীয়। যেকোনো পৈশাচিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখাও একজন বিবেকবান মানুষের দায়িত্ব। বাংলাদেশে সব রকম প্রতিহিংসা চিরতরে অবসান হোক এটিই এখন সময়ের দাবি।

এ ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ বা আহত হয়েছে তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পেয়েছে কি না জানি না, তবে এই ক্ষতি পূরণ হওয়ার মতো নয়। কারণ যারা নিহত বা আহত হয়েছে তারা ছিল সম্পূর্ণ নির্দোষ। এ মামলার অন্যতম আসামি আমার সহকর্মী জাহাঙ্গীর কমিশনার, রফিক কমিশনার, মো: সূরুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদ দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে মমিনউল্লাহ ডেভিড, অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন, ইকবাল আহাম্মদ শ্যামল। পৃথিবী থেকে আমরা চলে যাব কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য কী রেখে যাচ্ছি? এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনায় কোনো চিরশত্রুরও মৃত্যু চাই না এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য মিথ্যাভাবে কোনো চিরশত্রুকেও যেন মামলার আসামি না করা হয়। পৃথিবী প্রতিহিংসা বা বর্ণ ও ধর্মীয় বৈষম্যের ভাইরাস থেকে মুক্ত হবে কি না জানি না। মানুষ মানুষকে হত্যা এবং হত্যা মামলায় জেনেশুনে নির্দোষ ব্যক্তিকে জড়িয়ে আসামি করে মামলা করার পৈশাচিক সংস্কৃতি থেকে পৃথিবী বিশেষ করে বাংলাদেশ মুক্তি পাক এটি দৃঢ়ভাবে কামনা করি। মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা চার্জশিট এবং এগুলোর ওপর ভিত্তি করে সাজা প্রদান বাংলাদেশে অহরহ ঘটছে। শামীম ওসমান ২০২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর এ মামলা সাক্ষ্য দিতে এসে আদালতকে জানান, ‘চার্জশিটভুক্ত কাউন্সিলর শওকত হাশেম শকু ও অব্যাহতি পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এ ঘটনায় জড়িত নন।’

তারপরও একটি কথা বলতে চাই, ঘটনা ঘটায় একজন বা একদল অথচ প্রতিহিংসা বা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে মামলায় জড়ানো হয় অন্যজনকে, এ সংস্কৃতি বা মানসিকতা থেকে মানবজাতি বা আমাদের সমাজ কি সরে আসবে না? মিথ্যা আসামি দেয়ার কারণে মূল আসামি রক্ষা পেয়ে যায়। দিল্লির রেলস্টেশন বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার সময় সহোদর আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন যদি নারায়ণগঞ্জে ১৬ জুনের ২০০১ বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার কথা স্বীকার না করত তবে হয়তো এত দিনে দেশের আইন ও আদালত আমাদের গলায় দড়ি লাগিয়ে দিত। পরম করুণাময় আল্লাহপাক বলেছেন- ‘তোমাদের ইচ্ছা কোনো বিষয় গোপন রাখা এবং আমার অভিপ্রায় তা প্রকাশ করা।’ পরম করুণাময় আল্লাহ সত্যকে প্রকাশ করে আমাদের ওপর মেহেরবানি করেছেন, তাই আল্লাহপাকের দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া। যারা নিহত-আহত হয়েছেন তাদের প্রতি রইল গভীর সমবেদনা।

হাইকোর্ট আমাকে জামিন দেয়ার প্রতিবাদে অর্ধবেলা নারায়ণগঞ্জ হরতাল হয়েছিল। প্রতিহিংসার কারণে রাজপথে বিএনপির মিছিলে যে গুলি খেয়েছি, তা শরীরে এখনো বহন করছি, একই ঘটনায় নিহত হয়েছিল সহকর্মী ইব্রাহিম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে, আমার পরিবার ও সহকর্মীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন অকারণে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করেছে, বাড়িঘরে হামলা করেছে, নারায়ণগঞ্জের আমার চেম্বার পুড়িয়ে দিয়েছে, পুলিশ দিয়ে রাজপথে বারবার শারীরিকভাবে নির্যাতিত ও নিগৃহীত হয়েছি। রাষ্ট্রীয় সার্ভেন্ট যারা আমাদের গায়েবি মামলা দিয়েছে, বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে, মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে তাদের সবাইকে আল্লাহ মাফ করে দিন, আমি যদি কারো প্রতি প্রতিহিংসামূলক আচরণ করে থাকি, তার কাছে আমিও জোড় হাতে মাফ চাই।

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
E-mail: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
বিভাগের দাবিতে উত্তাল নোয়াখালী নোয়াখালীতে মসজিদের ইমামকে বিদায়ী সংবর্ধনা ডিজি-মার্ক সল্যুশন এবং জেটকেটেকোর ‘রোড টু এআই’ এবং পার্টনার মিট ২০২৪’ অনুষ্ঠিত দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে বিএনপির আহবায়ক কমিটি সাংবাদিক তুরাব ছিলেন সত্যের পক্ষে, মানবতার পক্ষে : সেলিম উদ্দিন নাটোরের সেই তরুণ দাস মন্দিরের পাহারাদার নয়, ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে সারজিসের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চায় জামায়াত : মোবারক হোসাইন নিজেদের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র! হাসিনা যত টাকা লুট করে নিয়ে গেছে তা দিয়ে ১০০টি পদ্মা সেতু তৈরি করা যেত : টুকু খুলনায় হত্যাসহ ৪ মামলায় সালাম মুর্শেদীর জামিন নামঞ্জুর

সকল