২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

জাফরুল্লাহ ভাইকে যেমন দেখেছি

ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। - ছবি : নয়া দিগন্ত

জীবনে চলার পথে এমন কিছু মানুষের সন্ধান মেলে যার সাথে চিন্তার গরমিল থাকলেও নৈতিকতা, বিবেকের দায়বদ্ধতা, মানবতার প্রশ্নে যার প্রতি শ্রদ্ধা জাগে। সে রকমই একজন মানুষ ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যার বিবেক ছিল টনটনে, কথা ছিল ক্ষুরধার। যা বলতেন স্পষ্ট করেই বলতেন। ছিলেন স্বৈরাচারী সরকারের কঠোর সমালোচক ও প্রতিবাদকারী। ছিলেন গণতন্ত্রের সমর্থক। নিজ নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ না করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অন্যায় করলে প্রতিবাদ এবং ভালো কাজে সমর্থন দেয়ার রাজনৈতিক সংস্কৃতি অব্যাহত থাকা বাঞ্ছনীয়।

আমাদের দেশে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এতই চরমে যে, পরস্পরের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। ক্ষমতায় থাকলে আদালত, পুলিশ ও দুদককে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়াসহ অকাতরে গায়েবি মামলায় কারাগারে প্রেরণ এবং নানাবিধ অত্যাচার চলতেই থাকে। মিথ্যা অপবাদ ও প্রতিপক্ষকে কারাবন্দী করার সংস্কৃতি সরকার অত্যন্ত নিরাপদ মনে করে। ফলে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ এখন শূন্যের কোঠায়। প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় যে যত বড় গালি দিতে পারে তারই সমাদর রয়েছে বৃহৎ দলগুলোতে। ক্ষমতাসীনরা যখন কথা বলে তখন জনগণকে বোকা ভেবে মিথ্যার ফুলঝুরির প্রতিযোগিতায় নেমে যায়, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চিন্তাশীলদের কলম তাদের গতিরোধ করতে পারে না। এর ব্যতিক্রম ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিতর্ক শেষ হচ্ছে না, কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বয়স ছিল আট বছর, কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার সুবাদে তিনিও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পেয়েছেন। রাজাকার ছিলেন তাদের নামও মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় এসেছে, বাদ পড়েছেন এমন অনেকে যারা রণাঙ্গনে ছিলেন, রয়েছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরাও। বরিশাল নিবাসী বাসদ নেত্রী ডা: মনীসা চক্রবর্তীর পিতা অ্যাডভোকেট তপন চক্রবর্তীর পরিবার এর অন্যতম দৃষ্টান্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় নতুন করে ‘সতীচ্ছদ’ হয়েছে সম্প্রতি পার্লামেন্টে একটি ভাষণে। আওয়ামী লীগের সিনিয়র পার্লামেন্টারিয়ান চট্টগ্রামের মোশারফ হোসেন জাতীয় সংসদে বলেছেন যে, জেনারেল ওসমানী যাকে খুশি তাকে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়েছেন। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পরপর নারায়ণগঞ্জের হাইস্কুলের সামনে জেনারেল ওসমানীর স্বাক্ষর করা ব্লাঙ্ক সার্টিফিকেট রাস্তায় বিক্রি হতে আমি নিজে দেখেছি। ১৬ ডিসেম্বরের পরে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন যাদের উপহাস করে স্থানীয়রা বলত 16th Divison।

মুক্তিযুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার ও মূল সহায়ক শক্তি ছিল এ দেশের আপামর জনসমর্থন। ফলে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তৎকালীন গোটা বাঙালি সবাই মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার দাবিদার। অথচ শেখ হাসিনা সরকার নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য দেশটিকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে, তার দলকে বানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিপক্ষকে বানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী। ডা: জাফরুল্লাহ এমন একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি লন্ডনে এফআরসিএস ফাইনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে, পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে চলে আসেন। সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য প্রথম স্থাপন করেছেন ফিল্ড হাসপাতাল। নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা সৈনিক। এ দুঃসাহসিক এবং ব্যতিক্রমধর্মী কাজটি যিনি করলেন তার ভাগ্যে জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার গৌরবজনক খেতাব। তবে তিনি খেতাবের জন্য চেষ্টাও করেননি, কোথাও কোথাও ধরনা দিলে হয়তো তার ভাগ্যে অনুরূপ একটি খেতাব জুটে যেত বৈকি।

মওলানা ভাসানীই ছিলেন স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বপ্ন দ্রষ্টা। তিনিই ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসের পর পাকিস্তানি জান্তাদের উদ্দেশে পল্টন ময়দানে জনসভা করে বলেছিলেন ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’। ছাত্রজীবন থেকেই আমি নিজে মওলানা ভাসানীর একজন ভাবশিষ্য এবং অনুরাগী। জাফরুল্লাহ ভাইও ছিলেন মওলানা ভাসানীর অনুসারী। মওলানা ভাসানী সাহেবের মতো জাফরুল্লাহ ভাই নিবিড়ভাবে ধর্ম কর্ম পালন করতেন না, একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন বলে তার ধারণা ছিল বটে, কিন্তু ইসলামিক অনুশাসনে ধার্মিক জীবন তিনি পালন করেন নাই, কিন্তু চলন বলনে ছিল না কোনো দাম্ভিকতা।

আদালত অবমাননা মামলার শুনানি করাও একটি দুরূহ বিষয়। সরকারি আমলাদের পক্ষে আদালত অবমাননা করা যত সহজ, হাইকোর্টে আদালত অবমাননার শুনানি করা তত সহজ নয়। সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি (সৈয়দ মাহমুদ হোসেন) প্রকাশ্যে আদালতে বলেছেন যে, ‘কনটেম্পট করতে করতে আমরা হয়রান।’ ভূমিদস্যুরা অনেক শক্তিশালী, জনশ্রুতি রয়েছে, ভূমিদস্যুরা সরকারি ও বিরোধী উভয় রাজনৈতিক দলকে আর্থিক সাহায্য করে উভয় পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখেন। অন্য দিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মিডিয়া। রূপগঞ্জে দু’টি প্রেস ক্লাব রয়েছে, তারাও ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের কোনো সংবাদ পরিবেশন করে না। স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিগণ ভূমিদস্যুদের জমির দালালি করে। জাতীয় সংসদ সদস্য কৃষকদের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখেন নাই। ফলে এ দস্যুদের গোড়া অনেক শক্ত বিধায় বিচার বিভাগ হয়তো সেখানে দাঁত বসাতে পারে না। তবে কি বিচার বিভাগ শুধুমাত্র গরিবদের শাসন করার জন্য?

অন্য দিকে বিচার বিভাগের সব আদেশ ও সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় শাসন বিভাগ অর্থাৎ প্রশাসনের মাধ্যমে অর্থাৎ সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে। অবস্থা দৃষ্টি মনে হয় যে, আমলা ও শৃঙ্খলা বাহিনী ভূমিদস্যুদের পকেটস্থ, নতুবা অসহায় জমির মালিক কৃষকদের আর্তনাদ তাদের কর্ণকুহরে পৌঁছে না? তিন ফসলি জমিগুলো রক্ষা করার জন্য কোনো উপায়ন্তর না দেখে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জমির মালিক কৃষকদের একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করলাম। ওই সমাবেশকে সফল করার জন্য ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখেছিলেন। তার ভাষণে রূপগঞ্জের তিন ফসলি জমিতে জলসিঁড়ি প্রকল্প না করার জন্য সেনাবাহিনীকে আহ্বান জানিয়ে তাদের জন্য আলাদা জমি সংগ্রহ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেন। তার ওই ভাষণে অসহায় রূপগঞ্জবাসীর মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল। জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওই সমাবেশ করার কারণে ভূমিদস্যুদের মালিকানাধীন চারটি পত্রিকায় পর পর চার দিন আমার বিরুদ্ধে বানোয়াট সংবাদ ছাপায় যাতে আমার বিরুদ্ধে জাতীয় বধির সংস্থায় সভাপতি হিসেবে বোবা-বধিরদের সম্পত্তি আত্মসাৎ, জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে অন্ধদের অর্থ আত্মসাৎ এবং বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে রূপগঞ্জের এক হাজার জনকে প্রচুর ঘুষের মাধ্যমে চাকরি দেয়ার মিথ্যা সংবাদ ছাপায়। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ওই বানোয়াট সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

জাফরুল্লাহ ভাই ছিলেন অত্যন্ত সাদামাটা সহজ সরল একজন সামাজিক ব্যক্তিত্ব। জমিদার পরিবারের সন্তান হয়েও সর্বস্তরের মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করতেন। আমার মেয়ের বিয়েতে টেলিফোনে জাফরুল্লাহ ভাইকে দাওয়াত দিয়েছিলাম। ফোনেই বললেন- ‘আমার নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হয়, আমি অনুষ্ঠানে যাবো, কিন্তু খাবো না।’ দেখলাম তার চিরপরিচিত সেই পোশাক, অতিপুরনো হাফ সার্ট, ট্রাউজার, পুরনো সেন্ডেল ও সেই পুরনো চাদর গায়ে ঠিকই অনুষ্ঠানে এসে আমার মেয়েকে দোয়া করে আমাকে কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ করেছিলেন।

গায়েবি মোকদ্দমা, আওয়ামী দুঃশাসন, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করার সম্পর্কিত দেশী-বিদেশী পত্রিকার রিপোর্ট এবং তদসম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যবহুল প্রতিবেদনসহ আমার লেখা ‘পোস্ট মর্টেম : জাতীয় নির্বাচন-২০১৮’ বইটির মোড়ক উন্মোচনের জন্য জাফরুল্লাহ ভাইকে দাওয়াত করি। আ স ম আব্দুর রব ছিলেন প্রধান অতিথি। সভাপতিত্ব করেন ড. মঈন খান। বিশেষ অতিথির ভাষণে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘এই বইতে তৈমূর শুধু শেখ হাসিনাকে পোস্ট মর্টেম করে নাই: বরং সে আমাদেরও পোস্ট মর্টেম করেছে।’ তার এই মন্তব্যে, আমি নিশ্চিত হই যে, তিনি মনোযোগসহকারে সম্পূর্ণ বইটি পড়ে আমার মন্তব্য উপলব্ধি করেছেন।

২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লিকেজ হয়ে তল্লা জামে মসজিদে ৩৫ জন নামাজী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলে আমি ও আমার জ্যেষ্ঠ কন্যা ব্যারিস্টার মার-ই-য়াম খন্দকার অগ্নিদগ্ধে নিহত প্রতিজনকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে হাইকোর্টে একটি ‘জনস্বার্থ’ রিট পিটিশন দায়ের করি (রিট পিটিশন নং- ৫৪৩৩/২০২০), কয়েক দিন শুনানি হয়। এ সংবাদ পত্রিকা ও মিডিয়া মারফত ডা: জাফরুল্লাহ জানতে পেরে আমাকে ফোনে একটি স্প্র্রে জাতীয় ওষুধের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, অগ্নিদগ্ধের কণ্ঠনালী ও মুখে যদি ওই স্প্রে তৎক্ষণাত হাসপাতালে করা হতো তবে অনেকেই বেঁচে যেত। তার পরামর্শ অনুযায়ী ওই স্প্রেটির নাম উল্লেখ করে চিকিৎসকদের দায়িত্বের অবহেলার অভিযোগ হাইকোর্টে উপস্থাপন করেছিলাম, শুনানিতে আদালত প্রত্যেক জখমি/আহত/মৃত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা করে তৎক্ষণাত পরিশোধ করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তিতাস কোম্পানিকে আদেশ দেন। সরকার প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়, যা অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য ইতঃপূর্বে কোথাও করা হয়নি। ডা: চৌধুরী বেঁচে নেই, কিন্তু জনপ্রতি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন ব্যাঞ্চে শুনানির জন্য দৈনিক কার্য তালিকায় রয়েছে। মামলাটি বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ অ্যাপিলেট ডিভিশনে গেলেও সফল হয়নি। ডা: চৌধুরী বেঁচে থাকাবস্থায় রায় শুনতে পারলে খুশি হতেন।

বিএনপি দলীয় মার্কায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, তবে স্বতন্ত্রভাবে বিএনপির কেউ নির্বাচন করতে পারবে মর্মে প্রকাশ্যে দু’দিন মিডিয়াতে মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেয়ার পর নারায়ণগঞ্জের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কর্মস্থল ও পুনর্বাসন ছাড়াই বস্তিবাসীর বাসস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন যাদের উচ্ছেদ করেছে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে আমাকে দাঁড়াতে হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার পক্ষে নির্বাচন করে। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন এবং আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। বিদেশে থাকেন এমন নেতাও আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই খোঁজ খবর দিয়েছেন। নির্বাচনের দু’দিন পূর্ব থেকেই দল আমাকে বিভিন্ন পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া শুরু করে। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে হতাশা সৃষ্টি হয়। দু’দিন পরে আমাকে ও নির্বাচনের চিফ এজেন্ট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে বহিষ্কার করে (অবশ্য নৌকার মেয়র প্রার্থী ১০ দিন পূর্বেই বলেছিলেন যে, আমাকে বহিষ্কার করা হবে)। তখন ডা: জাফরুল্লাহ বিএনপির এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন। ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী মিডিয়াতে বলেছেন ‘তৈমূরকে বহিষ্কার করা সঠিক হয় নাই।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবে মাহবুবুর রহমান মান্না অনুরূপ মন্তব্য করেছিলেন। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে মেজর হাফিজ (অব:) বলেছিলেন যে, ‘তৈমূর পাস করেছিল, কিন্তু তাকে কেন বহিষ্কার করা হলো তা আমরা বুঝতে পারলাম না।’

২০২২ সালে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করার জন্য বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কোনো প্রস্তুতি না দেখে আমরা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ভবনে দিবসটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা এখন বিএনপির বহিষ্কৃত ও বিদ্রোহী গ্রুপ হিসাবে পরিচিত। সঙ্গত কারণেই বিএনপি স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য আমাদের অনুষ্ঠানে আসবে না জেনে আমি ও অ্যাডভোকট রফিকুল ইসলাম তালুকদার এবং অ্যাডভোকেট শাহ আহাম্মদ বাদল ডা: চৌধুরীকে ফোন করি। কিন্তু ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে আমরা শুনতে পাই যে, তার স্ত্রীর প্রবল বাধা অর্থাৎ শারীরিক অসুস্থতার জন্য ভাবী জাফরুল্লাহ ভাইকে মিটিংয়ে আসতে বারবার বারণ করেছেন। তা সত্ত্বেও স্ত্রীর বাধা উপেক্ষা করে হুইল চেয়ারে বসে লুঙ্গি পরা অবস্থায় তিনি সভার মঞ্চে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলে গেলেন, ‘গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করতে হলে বিএনপিসহ বিরোধী দলের সাথে আপনাকে বসতে হবে।’ নৈতিকতাসম্পন্ন একজন কর্মবীরের পক্ষেই স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও এ ধরনের কাজ করা সম্ভব।

পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষের জন্ম হয় ভোগ বিলাস ও আকাশচুম্বী উচ্চ আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করার জন্য, তাদের চাহিদা ও আশার শেষ নেই। প্রাপ্তির পর প্রাপ্তি পেয়েও যখন মনের আশা পূরণ হয় না, তখন আরো প্রাপ্তির জন্য মনের আগুনের হাহাকার বহুগুণ আকারে জ্বলে। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী এবং ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো কিছু লোকের জন্ম হয় সমাজের ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য যাদের মেরুদণ্ড সোজা থাকে, জানে না কোনো তোষামোদ, করে না কোনো চাটুকারিতা, শুধু অকাতরে দান করে যায়, ত্যাগের মহিমায় থাকে পরিপূর্ণ, তাদের প্রতি রইল সহস্র সালাম ও কৃতজ্ঞতা।

লেখক : রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী (অ্যাপিলেট ডিভিশন)
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement