কালচারাল হেজিমনি ও রাজনৈতিক দাসত্ব
- মুসা আল হাফিজ
- ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৫৩
হেজিমনি বা সর্বেশ্বরবাদ হচ্ছে নেতৃত্ব ও আধিপত্যের একটি ধারণা, যা তৈরি করে শাসক ও অধিপতি শ্রেণী। প্রাচীন বলপ্রয়োগের পদ্ধতির বদলে সাংস্কৃতিক শক্তি দিয়ে জনগণকে শাসন করা ও দমিয়ে রাখার এই পদ্ধতি আধুনিক দুনিয়ায় খুব করে চলমান। কালচারাল হেজিমনি বা সাংস্কৃতিক সর্বাত্মকতা মূলত এমন এক কাঠামো, যাকে নিয়ন্ত্রণ করে সাম্রাজ্যবাদী, আধিপত্যবাদী, প্রভাবশালী শ্রেণী। তারা এর মাধ্যমে সাধারণ সত্য, সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ আচার হিসেবে নিজেদের পছন্দকে দুর্বল-সাধারণ জনগণের ওপর এমনভাবে চাপিয়ে দেয়, যাকে তারা নিজ থেকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে। হেজিমনি তৈরি করে এমন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুশীলন, যা কতিপয় প্রভাবশালী তত্ত্ব, ধারণা ও ন্যারেটিভের ওপর নির্ভরশীল। এই সব ধারণার জন্ম হয় অধিপতি শ্রেণীর স্বার্থ ও চাহিদার গর্ভ থেকে। কিন্তু তারা একে সর্বজনীন স্বার্থ ও চাহিদা হিসেবে প্রচার করে, প্রতিষ্ঠাদানের চেষ্টা করে।
অ্যান্তোনিও গ্রামসি (১৮৯১-১৯৩৭) এই তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা দেন। তিনি মাকর্সবাদী হলেও কার্ল হাইনরিশ মার্ক্স (১৮১৮- ১৮৮৩) এর সাথে ভিন্নমত পোষণ করেন বহুক্ষেত্রে। মানুষ বস্তু দ্বারা চালিত হয়, এটা গ্রামসির বিচারে ন্যায্য ছিল না। বরং তিনি মনে করতেন মানুষকে চালায় আইডিয়া বা ধারণা। মার্কসের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বেইস বা উৎপাদনের সরঞ্জাম; কারখানা, যন্ত্রপাতি, জমি, উৎপাদনের কাঁচামাল ইত্যাদি। গ্রামসির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুপার স্ট্রাকচার; ধর্ম, দর্শন, শিক্ষা, আইন, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ইত্যাদি। উৎপাদনের সাথে সম্পর্কের প্রশ্নে মার্সসের হিস্ট্রোরিক্যাল ম্যাটেরিয়ালিজম বা ইতিহাসের বস্তুবাদী তত্ত্ব তিনি কবুল করেননি। বাস্তব জীবনে আসল উৎপাদক হচ্ছে আইডিয়া ও ভাবনা, সে হচ্ছে ইতিহাসের আসল নির্ধারক। ফলে জনগণের ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা মূলত সাংস্কৃতিক আধিপত্যেরই কাজ।
সংস্কৃতিকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন, রাজনীতি আপনা আপনি গৃহপালিত পশুর মতো বশীভূত হয়ে যাবে। মানুষকে অন্ধ ও দাস বানিয়ে রাখা কিংবা সমাজ ও রাষ্ট্রকে উপনিবেশ বানিয়ে রাখার মূল চালিকা হচ্ছে সংস্কৃতি। সাংস্কৃতিক আধিপত্য যাদের থাকে, তারা জনগণের সামনে তাদের বন্দিত্বকে তাদের মুক্তি হিসেবে প্রদর্শন করতে পারে। তাদের অবনতিকে দেখাতে পারে উন্নতি হিসেবে। তাদের গোলাম বানাবার সাংস্কৃতিক উপাদানসমূহকে হাজির করে তাদের প্রগতিশীল বানাবার মন্ত্র হিসেবে। পশ্চিমা উপনিবেশ যেমন বলত, হে উপনিবেশিত সমাজ, তোমরা সভ্য হও, আমরা তোমাদের সভ্য বানাবার খেদমত করতে এসেছি। আর এটা তো অবধারিত যে, সভ্য হবার মানে হলো আমাদের মতো হওয়া। যারা এই প্ররোচনায় সাড়া দিতো, তারা সভ্য হবে বলে পশ্চিমাদের সাংস্কৃতিক দাসত্ব বরণ করত। কিন্তু মুশকিল হলো একে তারা পশ্চিমাদের অনুগ্রহ ও সেবা মনে করত।
কালচারাল হেজিমনি যারা প্রতিষ্ঠা করতে অগ্রসর হয়, তারা মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। চিন্তাকে শাসন করতে শুরু করে। পছন্দ-অপছন্দকে পরিচালিত করতে শুরু করে। এর মাধ্যমে তৈরি হয় একটি শ্রেণীর আধিপত্য এবং তারা চলে যায় একটি বিশেষায়িত অবস্থানে। সামনে আসে class leadership and domination একটি শ্রেণী, একটি নেতৃত্ব, একটি প্রভুত্ব। এদের উপর ভর করে অধিপতি সংস্কৃতি টিকে থাকে ও সম্প্রসারিত হয়। এদের হাতে থাকে আধিপত্যের যন্ত্র apparatus of hegamory; প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনমতকে প্রভাবিত করে বা প্রভাবিত করতে সক্ষম সব কিছুই এর অন্তর্গত: লাইব্রেরি, বিদ্যালয়, সাংস্কৃতিক সংগঠন, থিংকট্যাংক, বিভিন্ন ধরনের ক্লাব এমনকি স্থাপত্য এবং রাস্তার নকশা ও নাম। প্রধান যন্ত্রটি অবশ্যই গণযোগাযোগ ক্ষেত্র, মিডিয়া। যা কেবল প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক মিডিয়া নয়, বরং এর সাথে যুক্ত আছে বই, গণমিলনকেন্দ্র, প্রতীকের ব্যবহার, কাব্যের পঙ্ক্তি, সঙ্গীত কিংবা নাটক ও সিনেমার নায়ক-নায়িকার পোশাক ও সংলাপ।
নিপুণভাবে তারা একে কাজে লাগায়। সংস্কৃতির চরিত্র ঠিক করে দেয় এরা। নতুন ফেনোমেনা তৈরি করে। মানুষের আবেগ চেতনা নিয়ন্ত্রণ করে। বস্তুত এরা নিজেরাই আধিপত্যের যন্ত্রপাতি। সেনাবাহিনীর বন্দুক বা পুলিশের লাঠি যে কাজটি করতে পারে না, তারা সেটা করে। সাংস্কৃতিক এই উপনিবেশের জন্যও আধিপত্যবাদীদের দরকার হয় জগৎশেঠ, মীর জাফর, উমিচাঁদ, ঘষেটি বেগম, নন্দ কুমার, রায় ভল্লব প্রমুখের। এরা কোনো জমিদারি, সেনাবাহিনী বা রাজদরবার থেকে আসে না। গ্রামসির ভাষায় নতুন যুগের মীর জাফররা আসে বুদ্ধিজীবীদের ভেতর থেকে, সিভিল সোসাইটির পরিসর থেকে।
আধিপত্যের পক্ষে ধ্যান-ধারণার বিস্তার করে তারা। সম্মতি তৈরি করে গণপরিসরে। যেহেতু রাজনৈতিক কর্তৃত্বের জন্য শাসিতদের সম্মতির দরকার আছে, যেহেতু সম্মতি না থাকলে এ কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখতে হত্যা, রক্তারক্তি ও ধ্বংসযজ্ঞের দরকার হবে, যা শেষ অবধি কর্তৃত্বকেই ধ্বংস করে ছাড়ে, তাই জনগণের ওপর চালাতে হবে সম্মতিভিত্তিক আধিপত্য। অধিপতি গোষ্ঠীর জীবনবোধ, নায়ক-খলনায়ক, উৎসব, দৃষ্টিভঙ্গি, ইতিহাসভাবনা ও মতাদর্শকে শাসিতদের কাছে প্রিয় করে তুলতে হবে। যা কেবল নিশ্চিত হবে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রযোজনার মাধ্যমে। সে জন্য সাংস্কৃতিক নেতৃত্ব জরুরি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব এর ফলে সুগম হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী ও বৃহত্তর আধিপত্য নিশ্চিত হয়। এই আধিপত্য সামাজিক বিশ্বাসকে পুনর্গঠন করে, বিভিন্ন জিনিসের ব্যাখ্যা হাজির করে আপন আদলে, সে সামাজিক দৃষ্টি নির্মাণ করতে চায় আপন প্রয়োজনে, আপন স্বার্থের হাত দিয়ে সেসব কিছুর রিপ্লেসমেন্ট করতে চায়, এমনকি নীতি-নৈতিকতাকেও সে দেয় নতুন অর্থ ও চরিত্র।
জীবনের এক সেট ভাবনা ও পদ্ধতি সে সামনে আনে এবং তাকে ডমিনেন্ট ইডিওলোজি বা প্রভাবশালী ধারণায় রূপান্তরিত করে। যা দিয়ে অধিপতি সংস্কৃতি নিজের সামাজিক কর্মকাণ্ডকে মহান করে তোলে। রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে ন্যায্য করে তোলে। অর্থনৈতিক অবস্থানকে বৈধ করে তোলে। সমাজ আপন বিকাশের ধারায় যে সব মৌলিক মূল্যবোধ গঠন করেছিল, তার সাথে কৃত্রিম মূল্যবোধ যখন সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়, তখন আধিপত্যবাদী সংস্কৃতি রাজনৈতিক কর্তৃত্বকে কাজে লাগায়। গণজীবনের যে ঐতিহ্য নিজস্ব, তাকে পরিত্যক্ত, তার অনুরাগীদের প্রগতিবিরোধী এবং তার প্রতি পক্ষপাতকে প্রতিক্রিয়াশীলতা হিসেবে দেখাতে চেষ্টা করে। এর মানে এই নয় যে, সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন ধারণাকে তারা কাজে লাগায় না। বরং অধিপতি শ্রেণী সমাজের প্রচলিত বিভিন্ন চিন্তা ও ঐতিহ্যকে নিজেদের সাংস্কৃতিক আধিপত্যের শৃঙ্খলায় জড়িয়ে নেয়। এই শৃঙ্খলাকে একটা শৃঙ্খল করে তুলতে এ সংযোজন বেশ কাজে লাগে। আধিপত্যবাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামার সাথে একে সঙ্গতিশীল করার জন্য এর বয়ানকে বদলানো হয়। তারা একে বয়ানের আদিঐতিহ্য হিসেবে দেখাতে চায় এবং জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা বা আবেগের উপলক্ষের সাথে একে জড়াতে চায়।
তাদের এই কৌশল কায়েমি আধিপত্য ও তার উপাদানগুলোকে আরো বেশি প্রতারক সক্ষমতা দেয়, যা কাজে লাগিয়ে ন্যায়বিচার, সামাজিক বৈধতা, সবার জন্য সবচেয়ে ভালো সুবিধার মতো বিষয়কে তারা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে। একে তারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের অনুকূলে কাজে লাগায়। বিরোধী বা সম্ভাব্য বিরোধীদের এসব নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। রাষ্ট্র আর অধিপতি গোষ্ঠী তখন সমার্থক হয়ে উঠতে চায়। সাংস্কৃতিক ঔপনিবেশিক শক্তি তখন হয়তো নিজেদের পক্ষপুটের কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাকেন্দ্রে বসায় বা টিকিয়ে রাখে। ক্ষমতাকেন্দ্রে বসে থাকা সেই শক্তিকেই তারা রাষ্ট্র হিসেবে দেখাবার জন্য তত্ত্ব নির্মাণ করে। এই তত্ত্ব অচিরেই হয়ে ওঠে নিপীড়নের যন্ত্র। আসে নিবর্তনমূলক আইন, আইনের অপব্যবহার, এমনকি আইনবর্জিত স্বেচ্ছাতন্ত্র। সেখানে এমন এক সংস্কৃতি তৈরি হয়, যা শাসকশ্রেণীর ইচ্ছা ও আচারসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে। চতুর্দিকে তৈরি হয় এমন মন ও অনুশীলনের ধারা, যার জন্ম ঘটেছে কারচারাল কলোনি হিসেবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে সাজাবার লক্ষ্য থেকে। এ পরিস্থিতিতে জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠে উপনিবেশিত, সমাজ-সংস্কৃতি হয়ে ওঠে এমন এক অদৃশ্য উপনিবেশ।
কালচারার কলোনিয়ালিজম বা সাংস্কৃতিক উপনিবেশবাদ সম্প্রতি যেসব প্রবণতা নিয়ে অগ্রসর হয়, তা বহুমাত্রিক। সে যেমন অভিজাত শ্রেণীকে টার্গেট করে, তেমনি সাধারণ মানুষকেও নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তথ্য-প্রযুক্তি; গণমাধ্যমকে সে ব্যবহার করে। কারণ গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে সে মানুষের ঘরে ঘরে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়। মিডিয়া আধিপত্যবাদী ইডিওলোজি, বাজার ও রাজনীতির মাহাত্ম্যের গালগল্প সাজায়। তার পক্ষে সারাক্ষণ গলা বাজায়। বুদ্ধিজীবীরা এমন ‘বৌদ্ধিক ও নৈতিক নির্দেশনা দিতে থাকে, যা উৎপাদিত সম্মতির শাসনকে স্থায়ী রূপ দেবে এবং একটি গোষ্ঠীকে সমাজের ওপর কর্তৃত্ববান ও জমিদার বানিয়ে দেবে।
হেজিমনি তৈরির রয়েছে নানা রূপ ও ধরন। দেশীয় ক্ষেত্রে যেমন প্রত্যক্ষ করা যায়, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটেও চলে তার প্রদর্শনী। এটি বিশ্বায়নেরই অমোচনীয় প্রভাব। এখানে বাণিজ্য, বিনোদন, খেলাধুলা, রাজনীতি ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে। এই যে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেস্টুরেন্ট চেইন ম্যাকডোনাল্ডসের লগোকে খ্রিষ্টানদের ক্রসের চেয়েও অধিক পরিচিত বলে মজা করলেন আমেরিকান বুদ্ধিজীবী এরিক ক্লোসা, এটা কি নিছক মজা না তিক্ত বাস্তবতা? দুনিয়াজুড়ে ম্যাকডোনাল্ডস অস্বাভাবিক জনপ্রিয় হয়ে উঠল। মিডিয়া একে প্রচার করল নিয়ত। এর পেছনে কি নেই সাংস্কৃতিক আধিপত্যের কার্যকরণ? বিষয়টির ভেতরে দৃষ্টি দিলেই লক্ষ্য করব পৃথিবীর সর্বত্র খাদ্যাভ্যাস সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেখানে যদি কর্তৃত্ব গ্রহণ করা না যায়, তাহলে তো সাংস্কৃতিক সর্বেশ্বরবাদ প্রতিষ্ঠা হবে না। অতএব বদলাতে হবে মানুষের খাদ্যরুচিও। সেই প্রয়োজন থেকেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের বিশ্বব্যাপী অতিকায় হয়ে ওঠা। বিনোদনের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে হলিউড-বলিউড। হলিউডের যে দাপট আমাদের জীবনদৃষ্টির ওপর আপন প্রলেপ দিতে চায়, তাকে তাই সঙ্গতকারণেই ‘হলিউডাইজেশন’ বলা হচ্ছে। ইন্টারনেটে এই ঘটনা ঘটছে ‘গুগলাইজেশন’ আর ‘ফেসবুকাইজেশন’ এর জোয়ারে। খেলাধুলায়ও এই ঘটনা ঘটছে। অ্যাডিডাস পণ্য-সামগ্রীর দিকে তাকান। এমনকি আপনি যা পান করবেন, সেখানেও একই খেলা। কোকাকোলার বাজার এরই ফলে এত বিশাল।
কালচারাল হেজিমনির অবশ্যম্ভাবী প্রভাবে মানুষ তার সহজাত জীবন থেকে পলায়ন করছে। যা কিছু তার নিজস্ব, তাকে ক্রমেই হারাচ্ছে। যা জীবনের জন্য অবধারিত নয়, তাকে অবধারিত মনে করা হচ্ছে। যা না হলেই তার চলত, তাকে অপরিহার্য করে তোলা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় বহু চাহিদাকে হত্যা করা হচ্ছে। তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম চাহিদার ফর্দ। যা কিছু নিয়ে মানুষ আপন পরিচয়ে বিকশিত হয়, তার ভূগোল বদলে দেয়া হচ্ছে। তার পছন্দ-অপছন্দের দুনিয়া পাল্টে দেয়া হচ্ছে। ভোগের আয়োজন সাজিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম প্রয়োজনের বাজার। সবাই এখানে পণ্য; নতুন এই দৃষ্টি ও সংস্কৃতির পণ্য। এভাবে মানুষ ও তার জীবনযাপন একটি সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রবল স্রোতে মিশে যাচ্ছে। তার ধ্যান-ধারণার ওপর বসিয়ে দেয়া হচ্ছে বিশেষ স্বার্থের মোড়ক। রাজনৈতিক সেই স্বার্থের প্রয়োজনে তৈরি ইডিওলোজিসমূহ তার মনে ও চোখে গেঁথে দেবার ফলে যারা তাকে রাজনৈতিকভাবে পদদলিত করছে, তাদের পদদলনকে সে অবিকল্প বাস্তবতা হিসেবে দেখছে।
তার কাছে এর বিকল্প নেই। কারণ তার বোধে ও দৃষ্টিতে কোনো বিকল্পের স্থান রাখা হয়নি। কিন্তু পৃথিবী প্রতিনিয়ত বিকল্পের জোগান দিচ্ছে। শূন্যতা নেই ইতিহাসে, প্রকৃতিতে। যেকোনো শূন্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী বিকল্প হচ্ছে মানুষ ও সম্মিলিত মানুষ। কিন্তু যখন আপনার দৃষ্টি ও মন শূন্য করে দেয়া হয়, তখন আপনার কাছে পৃথিবীটাই মস্ত এক শূন্য। আপনার ভেতরের বিকল্প শক্তিকে তখন খুঁজে পাবেন না নিজে, নিজেরা। কারণ প্রতিষ্ঠিত হেজিমনি আপনার চেতনালোকে উপনিবেশ গড়েছে, যা আপনাকে ভেতর থেকে মেরে সেরেছে। সাংস্কৃতিক হেজিমনির খেলনা হয়ে উঠলে মানুষকে রাজনৈতিক হেজিমনির খাবার হতেই হয়!
লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা