আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে জাকাত ও রোজা
- জয়নুল আবেদীন
- ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৫১
কয়েক দিন আগে ফেসবুক ওয়ালে প্রচার করেছিলাম- ‘একই বস্তু যখন বৃহত্তর পরিসরে করা হয় তখন অনুদান, যখন ঊর্ধ্বতন কর্তাকে পরিতুষ্টির জন্য করা হয় তখন সম্মানী, যখন আপনজনকে দেয়া হয় তখন উপহার, যখন রাজি-খুশিসহ সন্তুষ্ট হয়ে দেয়া হয় তখন বকশিশ, যখন আল্লাহর নির্দেশে সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত জন বরাবর পরিশোধ করা হয় তখন জাকাত, যখন আইনের নির্দেশে সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ রাষ্ট্র বরাবর পরিশোধ করতে বাধ্য হয় তখন ট্যাক্স, যখন গরিব পাড়া-পড়শিসহ ফকির-মিসকিনদের দেয়া হয় তখন দান-খয়রাত।’ স্থান-কাল-পাত্রভেদে একই বস্তুর বহু নাম। এই অসংখ্য নামের মধ্যে জাকাত ও ট্যাক্স বাধ্যবাধকতার মধ্যে পড়ে।
‘যখন আল্লাহর নির্দেশে সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ নির্ধারিত জন বরাবর পরিশোধ করা হয় তখন জাকাত’ সংক্ষিপ্ত এই সংজ্ঞাটি ঈষৎ পরিবর্তন হয়েছে সুফিবাদেও। প্রত্যেক ধর্মেরই একটি আধ্যাত্মিক (spiritual) দিক রয়েছে। আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে ইসলাম ধর্মেরও। ইসলাম ধর্মের আধ্যাত্মিক দিকের নাম ‘সুফিবাদ’ যা কলেজ জীবনে ইসলামের ইতিহাসে পাঠ্যতালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
(রাসূল সা: অরো বলেন) হে উমর! শরিয়ত মোতাবেক ২০০ দিনারের মধ্যে মাত্র পাঁচ দিনার জাকাত দান ফরজ। তাহলে তরিকতিদের কাছে ২০০ দিনারের মধ্যে পাঁচ দিনার নিজের জন্য রেখে বাকি সবটুকু দান করা ফরজ। মনে রেখো, জাকাত স্বাধীন (আজাদ) ব্যক্তির ওপর ফরজ, গোলাম বা ক্রীতদাসের ওপর ফরজ নয়। মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত নফসের (খায়েশের) তাবেদারি থেকে মুক্ত হতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত সে আজাদ হতে পারে না। যে পর্যন্ত সে আজাদ হতে না পারে, সে পর্যন্ত তার ওপর কী করে জাকাত ফরজ হতে পারে? অতএব বান্দার প্রথম কর্তব্য হচ্ছে নফসের তাবেদারি থেকে আজাদি হাসিলপূর্বক জাকাতে হাকিকি আদায় করার যোগ্যতা (কাবেলিয়ত) অর্জন করা।’ (দিওয়ান-ই-খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি, পৃষ্ঠা-৪৪২)
গ্রন্থের একই পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে, ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ জাকাত। শরিয়তের বিধান মতে বছরের শেষে উদ্বৃত্ত অর্থ ও স্বর্ণ-রৌপ্যের মূল্যের ওপর শতকরা আড়াই ভাগ এতিম, দুস্থ ও মিসকিনকে দান করতে হয়। এটি বাধ্যতামূলক দান। পবিত্র কুরআনে যতবার সালাত কায়েম করতে বলা হয়েছে প্রায় ততবার জাকাত দানের কথা রয়েছে। ‘আকিমুস সালাতা ওয়া আতুজ জাকাতা’-এ বাক্যাংশ এমনভাবে বলা হয়েছে যেন একটি আরেকটির পরিপূরক। যেকোনো একটিকে বাদ দিলে বাক্যটি মনে হয় অসম্পূর্ণ থেকে যায়। সালাত আর জাকাত পবিত্র কুরআনে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
বুখারি শরিফের নবম অধ্যায়ে জাকাত বিষয়ে আলোচনায় বলা হয়েছে- ‘নামাজ যেমন ইসলামের একটি স্তম্ভ ও অপরিহার্য ফরজ, জাকাতও তদ্রূপ ইসলামের একটি স্তম্ভ ও ফরজ। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দান করো।’ জাকাতও নামাজের মতো হিজরতের আগেই ফরজরূপে নির্ধারিত হয়েছিল। বুখারি শরিফ প্রথম খণ্ডে ৬ নং হাদিসের মধ্যে এই দাবির সমর্থন রয়েছে।
৭২৮ নং হাদিস, যার অর্থ- ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: মোয়াজ রা:-কে ইয়েমেনে শাসনকর্তা হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। তখন তিনি তাকে কতগুলো উপদেশ ও সতর্কবাণী দান করলেন; যার মধ্যে, প্রতি দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। যদি তারা তা গ্রহণ করে নেয়, তবে তাদের জানাবে যে, আল্লাহ তায়ালা (সব মুসলমানের মতো) তাদের ওপরও মালের জাকাত ফরজ করেছেন যা তাদের (ধনীদের) থেকে গরিবদিগকে দান করা হবে। রাসূল সা: মোয়াজ রা:-কে এরূপ সতর্কও করে দিলেন যে, তারা জাকাত দানে স্বীকৃত হলে খবরদার! তখন তাদের ধন-সম্পত্তির মধ্য থেকে সালগুলো বেছে নিও না।’ পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোতে কোনো কল্যাণ নেই; বরং কল্যাণ আছে ...আল্লাহর প্রেমে, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, সফরকারী, সাহায্যপ্রার্থী ও দাস মুক্তির জন্য দান করলে (২:১১৭) লোকে কী ব্যয় করবে? সে সম্পর্কে তোমাকে প্রশ্ন করে। বলো, ‘তোমাদের উত্তম ব্যয় হলো যা তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরের জন্য ব্যয় করবে। (২: ২১৫)
রোজারও রয়েছে আধ্যাত্মিক দিক। রোজার বেলায়ও (রাসূল সা: বললেন) হে উমর, রোজা হাকিকির অর্থ হচ্ছে মানুষ তার অন্তর বা দিল থেকে দ্বীন ও দুনিয়ার সর্বপ্রকার আশা-আকাঙ্ক্ষা দূরীভূত করবে। কারণ দ্বীনের খায়েশ যেমন- বেহেশতের আরাম-আয়েশ, সুখ-শান্তি ও হুরের আকাঙ্ক্ষা আবেদ ও মাবুদের মধ্যে পর্দার অন্তরাল সৃষ্টি করে। এরকম আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বান্দা কখনো তার মাবুদের হকিকতের নৈকট্য লাভ করতে পারে না। অপর দিকে দুনিয়ার খায়েশ হলো- ধন-দৌলত, শান-শওকত, ক্ষমতার দম্ভ, নফসের খায়েশ ইত্যাদি জাগতিক বিষয়াদির আকাঙ্ক্ষা মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে সরিয়ে নেয় এবং এগুলো একেবারে শিরিক। গায়রুল্লাহর প্রতি খেয়াল ও ফিকির করা- কেয়ামতের ভয়, বেহেশতের আশা ও আখিরাত সম্পর্কে ফিকির করা- এসবই রোজা হকিকি নষ্ট করে। রোজা হকিকি তখনই সঠিক হবে যখন মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছু দিল থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয় যাতে গায়রুল্লাহর ইলেম পর্যন্ত থাকে না এবং সব রকমের উমিদ (আশা) ও ডর দিল থেকে দূরীভূত করে (দিওয়ান-ই-খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি, পৃষ্ঠা-৪৩৭)
টীকায় বলা হয়েছে, ‘ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ রোজা বা রমজান। রোজা শব্দটি ‘রমজ’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন যার অর্থ হলো- পোড়ানো বা দাহন (burning)। এ দাহন হলো মানব জীবনের কুপ্রবৃত্তির দাহন। এটি মানব জীবনে সংহতি, ঐক্য, প্রেম, মৈত্রী ও ভালোবাসা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। অপর দিকে কুপ্রবৃত্তিগুলো আমাদেরকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও অসহায় করে মানব জীবনকে অন্ধকারের অতলতলে তলিয়ে দেয় এবং মানব জীবনকে ব্যাহত করে তোলে। কামপ্রবৃত্তির অসংযত সন্তোষ বিধানের ফলে মানুষ পশুত্বের চরম স্তরে নেমে যায়। ক্রোধ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে তোলে। লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। এসব কুপ্রবৃত্তি মানবাত্মাকে কলুষিত করে আত্মিক উন্নতি সাধনের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। সোনা যেমন আগুনে পুড়ে খাঁটি হয় রমজানও তেমনই কুপ্রবৃত্তিগুলোকে দহন করে মানুষকে খাঁটি করে দেয় যাতে সে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং আত্মিক উন্নতির মাধ্যমে তাঁর সান্নিধ্য লাভ করকে পারে। (দিওয়ান-ই-খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি, পৃষ্ঠা-৪৩৯)
ইসলাম শব্দের মূল ধাতু হচ্ছে ‘সিলম’, যার অর্থ শান্তি। সেদিন ‘ঘুম ভাঙতেই জানালার পাশে বসে আকাশের দিকে চোখ যায়। গুমোট আকাশ। মুসলিম কান্ট্রির জন্য ‘শান্তি’ শব্দটিও যেন আজকের আকাশের মতোই গুমোট। কিন্তু কেন? আমাদের গাঁয়ে আগে একটি মসজিদ ছিল, এখন সাতটি মসজিদ। অনুরূপভাবে সারা দেশজুড়ে বাড়ছে মসজিদ-মাদরাসা। কয়েক লাখ মসজিতে প্রতি জুমার দিন হয় ধর্মের ওপর তালিম ও বয়ান। বিশ্বে আর কোনো ধর্মে ধর্ম নিয়ে এত তালিম বয়ান ও আলোচনা হয় না। তার পরও বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ টপটেন, আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, সুইজারল্যান্ড, কানাডা, জাপান ও স্লোভেনিয়া; এর মধ্যে কোনো মুসলিম কান্ট্রির নাম নেই- মুসলিম কান্ট্রির নাম আছে বটমটেনে। শান্তির তালিকায় বিশ্বের শীর্ষে আইসল্যান্ড, সব চেয়ে নিচে আফগানিস্তান।
দান-দক্ষিণা সম্পর্কে প্রায়ই দুই গরিব ভাইয়ের একটি গল্প শোনা যায়। দুই ভাই গরিব হলেও তারা কারো দান গ্রহণ করতে রাজি নন। তখন ধান কাটার মৌসুম। বড় ভাই ছোট ভাইয়ের অভাবের কথা চিন্তা করে রাতের অন্ধকারে গোপনে নিজের টাল থেকে ১০ আঁটি ধান ছোট ভাইয়ের ধানের আঁটির সাথে রেখে আসেন। ঠিক অনুরূপ কাজ করেন ছোট ভাইও। যেমন ধান তেমনই রইল, দু’ভাইয়েরই লাভের ঘরে যোগ হলো দানের পুণ্য। কয়েক মাস আগে এক সুখী দেশে গিয়েছিলাম। সরকার আর জনগণের মধ্যে ট্যাক্সের আদান-প্রদান দেখে আমার কাছে সেরকমই মনে হলো। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ‘অশান্তির দেশে শান্তির সূর্যোদয়’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয়র একাংশে লিখেছিলাম- ‘সামাজিক গণতন্ত্রের দেশ সুইডেন, এখানে অস্বাভাবিক ধনী ও অস্বাভাবিক নির্ধন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো সরকারেরও সুযোগ নেই সামাজিক গণতন্ত্রের বাইরে যাওয়ার। বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কর গ্রহণকারী দেশ সুইডেন।... মোট হিসাবটা চাকরিদাতার ট্যাক্সসহ হিসাব করে দেখলে দেখা যায়, রহিম কাজ করে যদি ১০০ ক্রোনা পায় তার থেকে তার নিজে রাখতে পারে ৪৮ ক্রোনা আর সরকারের ঘরে যায় ৫২ ক্রোনা। ট্যাক্স উপার্জনের অর্ধেকেরও বেশি, যা হাতে পাওয়ার আগেই চলে যায় রাষ্ট্রের তহবিলে। রাষ্ট্রের তহবিল থেকে ওই টাকাই আনে জনকল্যাণে বা নাগরিক সুবিধার জন্য। এত ট্যাক্স দিলে নাগরিক সুবিধা না দিয়ে কারো বাপের ক্ষমতা আছে ক্ষমতায় বসে থাকবে? গণতান্ত্রিক অধিকারে সেটি বন্ধ রাখার ক্ষমতা কি কারো থাকার সম্ভাবনা আছে? ইউরোপকে স্বর্গ মনে করার আগে একবার হিসাবটা দেখুন, সেই স্বর্গের কারণটা কোথায়?
গত ২০ মার্চ ‘দাও ফিরায়ে সে তাওয়া পিঠা’ নিবন্ধের একাংশে লিখেছিলাম, ‘ধর্ম থেকে শিরকমুক্তির অভিযান শুরু আবদুল ওয়াহাবের আমল থেকেই। জান্নাতুল বাকি ও জান্নাতুল মোয়াল্লার সব সমাধি গুঁড়িয়ে ওহাবি আন্দোলনের যাত্রা শুরু যার ফলে, ‘সমগ্র আরবজুড়ে ধর্মের অন্তঃসলিলা মিলাদ মাহফিল, মাজার-সমাধি, খানকা-দরবার, সুফি-সাধক ও ধেয়ান-দর্শন নেই- নেই সুন্নত-নফলসহ হাত তুলে মুনাজাত পদ্ধতিও।’ (আমার দেখা আরব, পৃষ্ঠা : ২১০-২১১)
ওয়াহাবি নীতি যখন থেকে শুরু তখন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইসলামের আধ্যাত্মিক দিক। উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারিত ও প্রসারিত হয়েছে সুফিসাধকদের মাধ্যমে, যারা আরব, ইয়েমেন, পারস্য, মধ্য এশিয়া থেকে এ দেশে এসেছিলেন। তারা আরব বণিকদের সাথে পৃথিবীর দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েন। পরে মুসলিম নৃপতিদের ছত্রচ্ছায়ায় দেশের আনাচে-কানচে গড়ে তোলেন খানকা, দরবার, মাজার, দরগাহ ইত্যাদি। সমাধি ভাঙার ঢেউ লাগে আমাদের দেশেও। আজমির ও দিল্লি ঘুরতে গিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম হজরত খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি রহ:-এর নির্মোহ জীবানাদর্শ দেখে।
‘রাসূল সা: যে এলেম শিক্ষা দিয়েছিলেন তা ছিল মূলত এলমে শরিয়তও এলমে মারিফাতের সর্বোত্তম সমন্বয় এবং দুটো এলেমের সমন্বয়েই ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর কোনো একটিকে বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম বলা যায় না। এ দুটি এলেমের সমন্বয় নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করে রাসূল সা: মানুষের জন্য মহান আদর্শ নির্ধারণ করে গেছেন। কিন্তু কালের প্রবাহে মানুষ রাসূল সা:-এর আদর্শ থেকে সরে গিয়ে দুনিয়াদারি ভোগবিলাস ও রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ইসলামকে ব্যবহার করে এর প্রকৃত আদর্শ ভূলুন্ঠিত করেছে।’ (আমার দেখা আরব, পৃষ্ঠা-২০৮)
শৈশবে মুমূর্ষু অবস্থায় ক্রন্দনরত মায়ের কণ্ঠ নিঃসৃত, ‘আলী (ক:)-এর হাতে জুলফিকার মায়ের হাতে তীর/যেখান থেকে আইছো বালাই সেখানে ফিরাও, আল্লাহ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’। গভীর রাতে অন্ধকার ঘরে বাবার কণ্ঠে, ‘নবী সা:-এর নামে যে না হইছে দিওয়ানা, নবী সা: বলবেন, সে উম্মত আর আমার না।’ হৃদয় নিংসৃত দরুদ শুনে জেগে উঠতাম, সেসব দরুদ এখন আর শোনা যায় না। কী করে শোনা যাবে? ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামে নবীর মর্যাদা’ নামক গ্রন্থে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘মিলাদে রাসূল সা: হাজির আছেন মনে করে দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান করা শিরকের পর্যায়ে পড়ে।
একই সুর পাওয়া যায়, ‘তাকভিয়াতুল ঈমান’-এর মূল কথায়। ইসমাইল দেহলভির ‘তাকভিয়াতুল ঈমান’-এর মূল কথা হলো :
১. ইসমাইল দেহলভির দলই একমাত্র মুসলমান। তারা ছাড়া আর সব মুসলমানই মুশরিক।
২. আল্লাহর পক্ষে মিথ্যা বলা জায়েজ।
৩. রাসূল সা: গায়েব ছিলেন না। এমন কি আল্লাহর কোনো ইলমই গায়েব নেই।
৪. রাসূল সা: শেষ নবী নন, তার পরও কোটি পয়গাম্বর হতে পারেন।
৫. আম্বিয়া ও আউলিয়া-ই কেরাম-এর উপলক্ষ করা শিরক।
ওয়াহাবিদের ধর্মীয় ম্যানিফেস্টো আর ইসমাইল দেহলভির ধর্মীয় ম্যানিফেস্টো অক্ষর ও শব্দ কমবেশি থাকলেও সারমর্ম এক ও অভিন্ন। দেহলভির শিকড়ের সন্ধানে একটু খুঁড়তে শুরু করলেই পাওয়া যাবে ওয়াহাবিদের ধর্মীয় ম্যানিফেস্টো। মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব লিখিত গ্রন্থের নাম ‘কিতাবুল তাওহিদ’। কেতাবুল তাওহিদের অনুবাদ ও অনুকরণই ‘তাকভিয়াতুল ঈমান’ (আমার দেখা আরব, পৃষ্ঠা-২১০)। শিরক দূর করার নামে আম্বিয়া ও আউলিয়া-ই কেরাম-এর সাথে নবী সা:-এর দরুদও দিন দিন ফুরিয়ে যাচ্ছে।
লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা