০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

শান্তির দেশে শেষ দিন

লেখক : জয়নুল আবেদীন - ফাইল ছবি

মাত্র কয়েক মাস আগে, High pollution hits Bangladesh capital-BBC News. ‘বিশ্বের দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ২০০ (একিউআই) স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী শীর্ষে। যে সময়কার ঘটনা দুর্ভাগ্যক্রমে সে সময়টায় আমি ক্যাপিটেলেই ছিলাম। যানজট ও ধুলাবালুতে যখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল তখন ঈশ্বর গুপ্তের ব্যঙ্গ কবিতা,
‘রাতে মশা দিনে মাছি
এই নিয়ে কলকাতায় আছি’
ছন্দের মতো কণ্ঠ মিলিয়ে আমিও বলেছিলাম,
‘যানজট দূষণ অষ্ট পহর
সুখে আছি ঢাকা শহর।’

সেই সুখের রেশ শেষ হওয়ার আগেই ‘সুখী দেশের তালিকায় আরো ২৪ ধাপ পেছালো বাংলাদেশ’ (ইত্তেফাক অনলাইন ডেস্ক ২০ মার্চ ২০২৩)। প্রকাশ, ‘সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৩’ এর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭ দেশের মধ্যে ১১৮। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী তালিকায় টানা ছয় বছর শীর্ষে রয়েছে ফিনল্যান্ড। এ ছাড়া এই তালিকায় এবারো টপ টেনে রয়েছে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন ও নরওয়ে। ১৩৭ নম্বরে রয়েছে আফগানিস্তান। অবস্থার জন্য দায়ী, বর্তমান রাজনৈতিক অব্যবস্থাসহ ধর্মীয় উন্মাদনা। দায় এড়াতে পারবে না পাকিস্তানও। পাকিস্তান বরাবরই আফগানিস্তানের নীতিকে সমর্থনসহ মদদ দিয়ে আসছিল। এক সময় চলমান বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়াসহ যা হওয়ার তাই হয়েছে। আফগানিস্তান যে কারণে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অশান্তির দেশের শীর্ষে চলে গেছে আমরাও কি পা পা করে তাদের পথ ধরে হাঁটছি?

কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে খুনাখুনি, শিয়াদের পক্ষে কথা বলায় ওয়াজি হুজুরের জিহ্বা কর্তন, মানুষের তৈরি আইন উচ্ছেদের জন্য সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা, দুই পীরের মিছিলে রাজপথে লাশ, সবই সব কিছুর মূলে অসহিষ্ণুতা। ড. মো: গোলাম দস্তগীরের ভাষায়, ‘ওহাবিরা ইসলাম ভিন্ন অন্য কোনো মতাবলম্বীদের স্বীকার করে না। পাশ্চাত্যে এরা ইসলামের জিহাদি, মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী ও উগ্রবাদী হিসেবে পরিচিত। ওসামা-বিন -লাদেন এই ওহাবি আন্দোলনের কেবল অর্থ জোগানদাতা ধনকুবেরই নন, বরং সশস্ত্র জিহাদি জঙ্গি নেতাও।’

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের পরেই সহিষ্ণুতা বা ধৈর্যধারণ মূল্যবান বিশ্লেষণ। দেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার হাওয়া বইতে দেখে মনে পড়ে গেল স্ক্যান্ডিনেভিয়াভুক্ত সুখী দেশের কথা। যে দেশে মুসলমানের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০ ভাগ, নেই হিংসা-বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক হানাহানি। ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেন ও নরওয়ে; পাশাপাশি চারটি দেশ। এই চার দেশের সাথে যুক্ত হয়েছে ইউরোপের আরো ২২টি দেশ। শেনজেনভুক্ত এই ২৬ দেশের সীমানা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে উঠিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের অবশিষ্ট দেশে দৃশ্য জগতে শরীর ও বস্তুকে সীমান্ত আইন দিয়ে আটকাতে সক্ষম হলেও অদৃশ্য জগতের কিছুই সীমান্ত আইন দ্বারা আটকাতে পারছে না। আস্তে আস্তে সব চলে যাচ্ছে অন্তর্জাল বা ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্কের আওতায়।

জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্বজুড়ে বন্ধ হয়েছে অনেক অফিস আদালত। বন্ধ হয়নি ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্র্ক। করোনাকালেও একেবারেই থেমে নেই কর্মচাঞ্চল্য। ফলে বিশ্বজুড়ে কয়েক লাখ মানুষ ঘরে থেকে কাজ করা কর্মীর তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। যুক্তরাজ্যে ১৫ লাখ মানুষ ঘরে বসে কাজ করেছেন। করোনাভাইরাসের বিস্তারের এই সময়ে বাসস্থান থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালনের এই প্রবণতা অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই নিয়ে বিশেষজ্ঞজনের মতামতসহ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।

এক সময় মনুষ্যবাসের অযোগ্য স্ক্যান্ডিনেভিয়ানভুক্ত এসব দেশ। ভাইকিংএজে (৮০০ থেকে ১০৫০) উত্তর ইউরোপের এসব দেশ জলদস্যুদের অভয়াশ্রয় ছিল। ভাইকিংদের অভয়াশ্রয়ই আজ শান্তির আশ্রয়। সুখী দেশের শহর দেখার পর গ্রাম ও নিসর্গ দেখতে মন চাইল। শান্তির দেশের গ্রাম ও নিসর্গ নয়ন ভরে দেখার জন্য বিমানে প্যারিস না গিয়ে ট্রেনে ভ্যাক্সজো থেকে মালমো হয়ে ডেনমার্ক। সুইডেনের তৃতীয় বৃহত্তর শহর মালমো। মালমো থেকে বাল্টিক সাগরের ওপর ও নিচ দিয়ে ওরেসুন্ড ব্রিজ পার হয়ে কোপেনহেগেন। কোপেনহেগেন থেকে রাতের বিমানে প্যারিস। ট্রেনে চড়ে সমস্ত দিন চোখ দুটোকে দেখার কাজে রাখতে পারব।

এই উদ্দেশ্যে ৪ মে ২০২২ সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হই। এক ঘণ্টার মধ্যেই ভ্যাক্সজো পৌঁছে যাই। ভ্যাক্সজো বাস-স্টেশন থেকে ফ্লাইওভার পার হলেই ভ্যাক্সজো রেলওয়ে স্টেশন। আমাদের ট্রেন আসার তখনো ঘণ্টা খানেক বাকি। বিশাল স্টেশন। স্টেশনের ভেতরটা দেখার জন্য নাঈম আমাকে নিয়ে যায়। চোখ ধাঁধানো তিনতলা স্টেশন। সবই কাঠের। যে ফ্লাইওভার দিয়ে পার হয়েছি সে ফ্লাইওভারও কাঠের। অনুপম সুন্দর কাঠের স্টেশন দেখা শেষ করে ট্রেনের অপেক্ষায়। ট্রেন বিদ্যুৎ চালিত। ট্রেনে ওঠা-নামার সিস্টেমটা লন্ডনের মতো। একজন অন্ধ যাত্রীও কারো সাহায্য ছাড়া ট্রেনে উঠতে পারে, সে ব্যবস্থাও চমৎকার।

বেলা ১১টায় ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করে। উত্তর পাশে বসে শহর ছাড়ার অপেক্ষায় বাইরে চোখ রাখি। শহর শেষ হয় শুরু হয় বন। সারা দেশটাইতো বন। বনের ভেতরেই শহর, বন্দর ও লোকালয়। বন আর পাথর কেটে করা হয়েছে পথ-ঘাট ও স্থাপনা। বনের কোনো কোনো গাছ যেন মেঘরাজ্য ছাড়িয়ে গেছে।

ঘণ্টা দেড়েক পরেই কমতে থাকে বন। বনের ফাঁকে ফাঁকে ফসলের জমি। স্থাপনা বাড়িঘর। স্টেশন। স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে কাঠের চালান। দূরে গ্রাম। ছোট ছোট বাড়ি ঘর। বাড়ির সামনে গাছ। আমাদের মতোই গ্রামীণ জীবন। গ্রামীণ জীবন শেষ হওয়ার আগেই চোখ যায় একটি বহুতল ভবনের দিকে।
সুইডেন আসার পর বহুতল ভবনের কথা ভুলেই গিয়েছি। বহুতল ভবন হয় সেখানে যেখানে আবাসিক সমস্যা। অর্থাৎ মানুষ বেশি জমি কম। সুইডেনে জমি বেশি মানুষ কম। এখানে বহুতল ভবন করতে যাবে কোন দুঃখে? ভ্যাক্সজোর একমাত্র বহুতল ভবন কুংছ্গাতান (Kungsgatan)। কোনো এক হাউজিং কোম্পানি করেছে ভবনটা। একটি অখণ্ড পাথরের পাহাড়, এই অখণ্ড পাথরের পাহাড়ের ওপর কী করে এই হাইরাইজ ইমারত দাঁড় করাল, ভাবতে গিয়েই মাথা আউলায়ে যায়। মালমোতে রয়েছে অনেক বহুতল ভবন। মালমোর ছোট-বড় বহুতল ভবন দেখতে দেখতে ট্রেনটি ইঁদুরের মতো গর্তে প্রবেশ করতে শুরু করে। কিছু দূর গিয়েই মালমো আন্ডারগ্রাউন্ড রেলওয়েস্টেশন। কিছু দূর হাঁটতেই এস্কেলেটর। এই যন্ত্র আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আমাদের টেনে নিয়ে আসে বাইরে। বাইরে বের হয়েই দেখি, রাস্তার একদিকে সাইকেল স্ট্যান্ড অপর দিকে সুরম্য হাইরাইজ ভবন।

যখন রাস্তায় চোখ পড়ে তখনই দেখি, চলছে সাইকেল। আবাল বৃদ্ধ বনিতা, সবার প্রধান বাহন সাইকেল। সাইকেল আরো বাড়ানোর জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াচ্ছে সরকার। মালমোতে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সাইকেল রোড রয়েছে। মালমো আর কোপেনহেগেনের মধ্যে সাইকেল নিয়ে ফেরি পারাপার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অফিস, আদালত, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সাইকেলের গ্যারেজ থাকবেই। পাশেই Scandinavian Center-এর বিশাল ভবন। Scandinavian Center-এর লাগ উত্তর দিকের দুটি সুরম্য বহুতল ভবনে MALMO UNIVERSITY।

মালমো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে চোখ ফেরাতেই নজরে পড়ে আকাশের বুকচিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরো তিনটি ভবন। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহরে সুন্দর সুন্দর ইমারত, কিন্তু লোকজন চোখে পড়ে না। কিছুক্ষণ পরপর দুই-একজন সাইকেল আরোহী ছাড়া লোকজন দেখা যায় না বললেই চলে। আমরা প্রথমে যাব টার্নি টরশো। যেতে হবে বাসে করে। বাস নাম্বার জেনে রওনা হই টার্নি টরশো দেখার জন্য। বাসে যাওয়ার পথে রাস্তার দুই পাশে প্রায় একই প্রকারের সুরম্য ভবন দেখতে দেখতে ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাই টার্নিং টরশোর পাদদেশে। ‘মালমোর প্রধান আকর্ষণ Turning Torso. Turning Torso is a neo-futurist rcsidential skyscraper in Sweden and the building in Scandinavia. It is regarded as the twisted skyscraper in the World. মালয়েশিয়ার টুইন টাওয়ার দেখার জন্য একসময় ট্যুরিস্ট হুমড়ি খেয়ে পড়ত। মালমোর টার্নিং টরশো দেখার জন্য আমরাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলাম।’

টার্নিং টরশো দেখা শেষ করে আমরা মালমো দুর্গাসহ সৈকত দেখতে বের হই। সৈকতের আগেই একটি পার্ক ও লেক। লেকে নানা প্রকারের জলচর পাখি। বহু রকমের হাঁস। পাখিরা সাঁতার কাটছে, বাচ্চাসহ পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে কোনো কোনো পাখি। উড়ে যাচ্ছে, আবার উড়ে এসে নামছে। পাখিদের স্বর্গরাজ্য। বাল্টিক সৈকতের জলাশয়ে নির্ভয়ে সাঁতার কাটছে পাখ-পাখালি। সাঁতার কেটে জানিয়ে দিচ্ছে, আমরাও স্বাধীন, এ বিশ্ব আমাদেরও।

আমার কাছে সব কিছু ছবির মতোই মনে হচ্ছিল। দলবদ্ধ গাঙচিল ও বালিহাঁসের সাঁতার কাটা দেখতে দেখতে আমরা একদম বাল্টিক সাগরের তীরে। আমাদের কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের মতোই বালু আর বালু। হাঁটতে গেলেও বালুতে পা দেবে যায়। এই ধু-ধু বালুর ভেতর থেকেও বের হয়ে রয়েছে ফুল। সূর্যমুখীর মতো উজ্জ্বল হলুদ রঙের ফুল। ধু-ধু বালুর মাঝে যেখানে সামান্য কিছু আবর্জনা খড়কুটো পেয়েছে সেখানেই ফুটে রয়েছে নানা রঙের ফুল। একদিন যে উদ্ভিদকে প্রাণহীন জড় পদার্থ মনে করত, সে উদ্ভিদ প্রকৃতির ডাকে কিভাবে জেগে ওঠে নিজ চক্ষে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। নাম না জানা নানা বর্ণের ফুলগুলোও যেন বলছে, এ বিশ্ব আমাদেরও।

সেন্ট পিটার্স চার্চ হলো সুইডেনের মালমোতে অবস্থিত একটি লাল ইটের নির্মিত প্রচীন গির্জা। বর্তমানে দৃশ্যমান গির্জাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৪ শতকের গোড়ার দিকে, এখানে একটি পুরনো গির্জা ছিল। এটি সম্ভবত ১৩১৯ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল, ১৩৮০ সালের দিকে শেষ হয়েছিল। গির্জাটি সেন্টস পিটার ও পলকে উৎসর্গ করা হয়। গির্জাটি বাল্টিক সাগরের চার পাশে পাওয়া লাল ব্রিক স্থাপত্যের একটি উদাহরণ। সেন্ট পিটার্স চার্চে রয়েছে উচ্চ মানের মধ্যযুগীয় ম্যুরাল, সেই সাথে রয়েছে গৃহসজ্জার অস্বাভাবিক সামগ্রী। ১৬১১ সালে তৈরি ম্যুরালটি নর্ডিক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়।

ক্লজ মর্টেন্সেন গির্জায় একজন পুরোহিত ছিলেন। গির্জাটি আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ছিল এবং মধ্যযুগীয় ডেনমার্কের কয়েকটি চার্চের মধ্যে এটি অন্যতম। ডেনিশ সংস্কারের সময় আইকনোক্লাজমের কারণে সহিংসতার চারটি ঘটনার মধ্যে ১৫২৯ সালে একটি ঘটনা সেন্ট পিটার্স চার্চে ঘটেছিল। এর নেতৃত্বে ছিলেন ক্লজ মরটেনসেন। গির্জার মূল্যবান স্থাপত্য ও অলঙ্করণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ষাটটিরও বেশি বেদির মধ্যে, একটি মাত্র বেদি কমবেশি অক্ষত ছিল।

Malmö Castle একটি দুর্গ। বাল্টিক সাগরের দুই পাড়ের মাঝে যুদ্ধ চলছিল হাজার বছর। দুর্গই ছিল আত্মরক্ষার একমাত্র উপায়। এটি সুইডিশ রাষ্ট্রের মালিকানাধীন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত হয়। মালমোর অন্যতম দর্শনীয় স্থান এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার প্রাচীনতম রেনেসাঁ-শৈলীর এই দুর্গটি। ভ্যাক্সজোর ক্রোনেবার্গ দুর্গের মতো মালমো দুর্গের পাথরেও মিশে রয়েছে অসংখ্য বীরসহ হাজার নর-নারীর অশ্রু।

প্রথম দুর্গটি ১৪৩৪ সালে রাজা এরিক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কাঠামোটি ১৬ শতকের প্রথম দিকে আংশিকভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছিল। পরে ১৫৩০-এর দশকে ডেনমার্কের রাজা ক্রিশ্চিয়ান তৃতীয় দ্বারা এর জায়গায় একটি নতুন দুর্গ নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে, এই নতুন দুর্গটিই ডেনমার্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুর্গ হিসেবে পরিচিত।

মেরির তৃতীয় স্বামী চতুর্থ আর্ল (১৫৬৮-১৫৭৩) পাঁচ বছর স্কটসের রানীর এই কারাগারে ছিল। চতুর্থ আর্লের জাহাজ যখন নরওয়ের বার্গেনে ঝড়ের কবলে ভেঙে যায় তখন ডেনিস রাজা ফ্রেডারিক দ্বিতীয়-এর নির্দেশে তাকে বন্দী করে মালমো ক্যাসেলে পাঠানো হয়। মেরির দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়ে ইংল্যান্ডের সাথে বিরোধের কারণেই কিনা আর্লকে বন্দী করা হয়েছিল। পাঁচ বছর ডেনিশ বন্দিত্বের পর তার মুক্তির জন্য আর্লকে ১৫৭৮ সালে ড্র্যাগশোলম ক্যাসেল, জিল্যান্ডে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছিল। রেফারেন্স : Björklund, Eva (1998)| Malmöhus - en vandring genom slottet och dess historia.

মালমো দুর্গসহ সৈকতের যেখানেই যাই, সেখান থেকেই টার্নিং টরশো নজর কাড়ে। টরশোর নজরকাড়া শেষ করেই লাঞ্চ করতে যাই KFCতে। লাঞ্চ করার সময় সামনের স্কোয়ারে কয়েকটি ভাস্কর্য। স্কোয়ার চত্বরেই ছিল ভাস্কর্যগুলো। ঘোড়াই ছিল প্রধান বাহন। ভাস্কর্য থেকেই বুঝতে পারি তৎকালীন লোক কত শক্তিশালী ছিল। মল্লিকার কাছে জানতে চাই, এটা কার ভাস্কর্য? মল্লিকা পলকের মধ্যে গুগলে প্রবেশ করে জানায়, চার্লস এক্স গুস্তাভের যার জন্ম ৮ নভেম্বর, ১৬২২ নিকোপিং ক্যাসল, সুইডেন। মৃত্যু ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৬৬০ গোথেনবার্গ। তার চাচাতো বোন রানী ক্রিস্টিনা, যিনি ১৬৪৪ সালে পনেরো কিলোগ্রাম ওজনের তামার মুদ্রার প্রচলন করে দেশকে দেউলিয়া করেছিলেন। পরিণামে জনরোষে চাচাতো ভাই চার্লস এক্স গুস্তাভের কাছে সিংহাসন ছেড়ে রোমে বসতি স্থাপন করেন।

চার্লস এক্স গুস্তাভ, ১৬৪৪ থেকে ১৬৬০ তার মৃত্যু পর্যন্ত সুইডেনের রাজা ছিলেন। তিনি ১৬৫৫ থেকে ১৬৬০ মৃত্যুকাল পর্যন্ত জোটবদ্ধ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। তিনি স্পষ্টতই সুইডিশ সিংহাসনে পোলিশ দাবির বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করেছিলেন, চার্লস এক্সের প্রধান লক্ষ্য ছিল পোল্যান্ডে সম্ভাব্য রাশিয়ান হুমকি প্রতিহতসহ বাল্টিক অঞ্চলে সুইডেনের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা। তিনি সাহসিকতার সাথে ১৬৫৭ সালে ডেনমার্ক আক্রমণ করেন, দ্রুত জুটল্যান্ড প্রদেশটি জয় করেন। তার আমলেই হাজার বছরের যুদ্ধ নিষ্পত্তির জন্য চুক্তি হয়। ঐতিহাসিক রোসকিল্ড (জড়ংশরষফব) চুক্তির মাধ্যমে (১৬৫৮), ডেনমার্ক তার দক্ষিণ সুইডেনের সমস্ত হোল্ডিং, নরওয়ের ট্রনহাইম কাউন্টি এবং বোর্নহোম দ্বীপকে ছেড়ে দিয়েছিল। ১৬৫৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোপেনহেগেনে আক্রমণ প্রতিহত করে ডেনমার্ক প্রতিরোধ করলে, সামরিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য ১৬৬০ সালে গোথেনবার্গে একটি রিক্সড্যাগকে ডাকা হয়েছিল। রিক্সড্যাগ অধিবেশন চলাকালেই চার্লস মারা যান।

লাঞ্চ শেষ করেই যাই কোপেনহেগেনের টিকিট কাউন্টারে। টিকিট কেটেই প্রবেশ করি আন্ডারগ্রাউন্ডে। সমুদ্রের তলা দিয়ে মালমো থেকে কোপেনহেগেন অর্থাৎ সুইডেন থেকে ডেনমার্ক। রোমাঞ্চ আর রোমাঞ্চ। টিকিট করার পর সকালে যে এস্কেলেটর দিয়ে উপরে উঠে এসেছিলাম সে এস্কেলেটর দিয়েই আন্ডারগ্রাউন্ডে নেমে আসি। ট্রেন চলতে শুরু করে। মিনিট দশের পরেই ওপরে উঠে আসে ট্রেন। পাশে সবুজ মাঠ ঘাসের জমি, দূরে বন গাছ-গাছালি সামনে সাগর। মিনিট তিনেক পরে আবার গর্তে প্রবেশ করে। মিনিট পাঁচেক পর আবার ভেসে ওঠে। প্রকৃত রহস্য, Oresund ইউরোপের দীর্ঘতম রাস্তা এবং রেলপথ উভয়ই একটি একক কাঠামোতে। সুইডিশ উপকূল থেকে প্রণালীর মাঝখানে কৃত্রিম দ্বীপ পর্যন্ত প্রায় আট কিলোমিটার (পাঁচ মাইল) চলে। ক্রসিংটি চার কিলোমিটার (২.৫ মাইল) ড্রগডেন টানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এ কারণেই ট্রেন পানকৌড়ির মতো দুইবার ডুব দিয়েছিল, একবার স্থলে আবার জলে। জল থেকে উঠেই কোপেনহেগেন।

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
তদন্ত প্রতিবেদনসহ আমু-কামরুলকে ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেশের ৬৯ কারাগারের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ : কারা মহাপরিদর্শক আমরা হিন্দু-মুসলমান একসাথে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবো : রিজভী আজমির শরিফ : খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহের ইতিহাস জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও আমেরিকার বাকবিতণ্ডা ‘শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে’ পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ১২ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর দেনার দায়ে শক্ত অবস্থান হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে : প্রধান উপদেষ্টা নতুন মামলায় আনিসুল-ইনু-রাশেদ-পলকসহ গ্রেফতার ৯ যুবদল নেতা শামীম হত্যা : আ.লীগের রোকেয়া-মোস্তফা রিমান্ডে

সকল