২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’: প্রসঙ্গ কথা

‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’: প্রসঙ্গ কথা - ছবি : সংগৃহীত

ডিসেম্বর মাসে আমি বেশ কিছু টেলিফোন পেয়েছি। সাথে খুদে বার্তার আমন্ত্রণ। আমি নিশ্চিত, আমার মতো আরো অনেকেই সম্ভবত এ ধরনের টেলিফোন এবং খুদেবার্তা পেয়েছেন। এর সবগুলোই বিভিন্ন তারকাখচিত হোটেলগুলো থেকে। তাদের ভাষায় ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’-এর আমন্ত্রণ। জমকালো সব আয়োজনের লোভনীয় নিমন্ত্রণ। এসব অনুষ্ঠানে শুনেছি, সীমাহীন আনন্দ-ফুর্তির ব্যবস্থা থাকে। থাকে শালীনতার সীমা পেরিয়ে যাওয়ার হাতছানি; উদ্দাম উল্লাসে মেতে ওঠার সব ধরনের আয়োজন। অবশ্যি ব্যাপারটা মোটেও বিনে পয়সার নয়। এসব নৈশ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য জনপ্রতি যে অর্থ দিতে হয় আমাদের দেশে বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী সারা মাসে তা আয় করতে পারে না। নীতিনৈতিকতা বা পকেটের স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করে কোনো দিন এসব আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারিনি।

এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য যে অর্থ খরচ করা হয় তা অপচয় কি না, নৈতিক মানদণ্ডে কতটুকু গ্রহণযোগ্য, সুধীমহলের কাছে ছেড়ে দিলাম। সাথে সাথে বিষয়টি যে জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি ওএমএসের লাইনে দিন দিন বাড়ছে এবং রাস্তার ধারে সাহায্যের আশায় যে অসহায় পথশিশুরা হাত পাতছে, তাদের প্রতি নির্মম পরিহাস কি না সেটিও ভাবা দরকার। মানবতার আঙ্গিকে এগুলো পর্যালোচনার প্রয়োজন।

‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ নিয়ে এত যে আয়োজন, যারা তা আয়োজন করেন আর যারা তাতে যোগ দেন, পূর্বাপর ভেবে তারা তা করেন কি না এটা আমার একটা মিলিয়ন ডলার জিজ্ঞাসা। মূলত চার হাজার বছর আগে প্রাচীন ব্যাবিলনবাসী বসন্ত বিষুরণের-পরবর্তী (মার্চ মাসে) নতুন চাঁদ ওঠার দিন মহাধুমধামের সাথে পালন করত নতুন বছরের সূচনা রূপে। এই দিনে তারা বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। তাদের ধর্মবিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে আকাশ দেবতা ‘মোরডেক’ সমুদ্রদেবী ‘তিয়ামতকে’ পরাজিত করেছিলেন। এদিন তারা দেবতা মোরডেকের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের উৎসর্গ নিবেদন করত। এ দিন তাদের কাছে এতই মর্যাদাপূর্ণ ছিল যে, এ দিন নতুন রাজা শপথ নিতেন এবং পুরাতন রাজারা তাদের ক্ষমতা নবায়ন করতেন। ব্যবিলনবাসীর এই বর্ষ পরিক্রমা ছিল দশ মাসের বা ৩০৪ দিনের। একই নিয়ম প্রচলিত ছিল রোমেও।

নুমা পম্পিলুয়াস নামে একজন রোমান শাসক জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসকে ক্যালেন্ডার সংযুক্ত করেন। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ অব্দে জুলিয়াস সিজার ১২ মাস বিশিষ্ট জুলিয়ান বর্ষপঞ্জি চালু করেন। নতুন বর্ষপঞ্জিতে মার্চের পরিবর্তে জানুয়ারি মাসকে বছরের সূচনা হিসেবে ধরা হয়; কোনো কিছুর সূচনা দেবতা ‘জেনাস’ এর নাম অনুসারে। এ সময় বছরের শুরুতে তারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেবতা জেনাসের উদ্দেশ্যে প্রাণী বধ, উপহার বিনিময়, বাড়িঘরের সাজসজ্জার মাধ্যমে নতুন বছরের আবাহন করতেন বর্ষবরণ উৎসবের শুরু এভাবেই।

মধ্যযুগীয় ইউরোপে খ্রিষ্টান পাদ্রিরা এটাকে ধর্মাচারে শামিল করে নেন ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন এবং ২৫ মার্চ সম্পৃক্ত করে। খ্রিষ্ট ধর্মানুসারে ২৫ ডিসেম্বর যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন এবং ২৫ মার্চ গ্যাব্রিয়েল ফেরেশতা কর্তৃক মাতা মেরিকে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদানের খবর প্রদানের দিন। পোপ গ্রেগরি ১৩ নতুন বছর উৎসবকে খ্রিষ্টিয় সভ্যতার সাথে একাত্ম করে নেন। তখন থেকে ১ জানুয়ারি খ্রিষ্টান জগতে খ্রিষ্টীয় সভ্যতার নতুন বছরের সূচনা হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

বিভিন্ন দেশে স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক আচারের সাথে মিল রেখে নববর্ষ পালনের আদলে পরিবর্তন ঘটেছে। যোগ হয়েছে নতুন নতুন নিয়ম এবং অনুষ্ঠান। এ দিনে দেবতার উদ্দেশ্যে উপাসনা, জীব উৎসর্গসহ বিভিন্ন ধরনের উপহার বিনিময় এবং বাড়িঘরে আলোক সজ্জা, এসবের প্রচলন সংযুক্ত হয়েছে। সৌভাগ্যের প্রতীক ‘শূকর’ এর মাংস খাওয়ার প্রচলনও এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন দেশে। কালক্রমে এই উৎসব ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে।

১ জানুয়ারি খ্রিষ্টীয় নববর্ষ হলেও এর বাইরে রয়েছে চান্দ্রপঞ্জিকা। এ অনুসারে রয়েছে মুসলিম হিজরি নববর্ষ, চৈনিক নববর্ষ, ইহুদি নববর্ষ, পারসিক নববর্ষ। এগুলো সংযত, শৈল্পিক নৈতিকতায় সুষমামণ্ডিত। মিসরীয় সভ্যতায় নতুন বছর শুরু হয় নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের দিন থেকে। আমাদের দেশে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, এই উন্মাদনাকে ঠেকাতে সরকারকে বিশেষভাবে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ব্যবস্থা করতে হয়। অথচ এই উন্মাদনার সাথে আমাদের জাতীয় চেতনা,সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক কোনো যোগসূত্র নেই।

নতুন বছরের এই আয়োজনের গোড়ার কথা হচ্ছে, দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন, উপাসনা- যা কোনোভাবেই আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ১ বৈশাখের অবস্থান বহুদূর। অজান্তেই আমরা এক বিজাতীয় সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরণে ভেসে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ।
Email-shah.b.islam@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
ফেনী সীমান্তে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ আওয়ামী অত্যাচারে দীর্ঘ ১২ বছর দেশে আসতে পারিনি : সেলিম রেজা ‘সমন্বয়ক’ দাবি করা আহত সোহেলকে ভুয়া বলল ছাত্রদল সিলেটে অস্ত্র ও মাদকসহ নারী গ্রেফতার শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে : শাহজাহান কপ-২৯ : ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ২০০ মিলিয়ন বরাদ্দ দিতে ইইউ’র সমর্থন চাইল বাংলাদেশ আইসিসির পরোয়ানা : গ্রেফতার হবেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী? ছাত্র জমিয়তের ময়মনসিংহ জেলা কমিটি গঠন সবার আগে নির্বাচনী সংস্কার দরকার : এ্যানি হাসিনার নেয়া প্রতিটি রক্তের ফোটার বিচার হবে : ইসহাক খন্দকার ডেঙ্গুতে আরো ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ৪৫৮

সকল