ফারদিনের বাবার শোকগাঁথা
- ড. এ কে এম মাকসুদুল হক
- ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:৪০, আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ০৭:২৩
সন্তান হারানো মা-বাবার আর্তনাদে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। সন্তান হারানোর বেদনা শুধু মা-বাবাই বুঝতে পারেন। এই পৃথিবীতে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাবা-মা সন্তান হারাচ্ছেন। তাদের কষ্টের লাঘব কোনো প্রতিদানেই হওয়ার নয়। তবে অস্বাভাবিকভাবে যারা সন্তান হারাচ্ছেন তাদের কষ্ট এককথায় অবর্ণনীয়। সাম্প্রতিককালে এরকম কয়েকজন বাবা-মায়ের সন্তান হারানোর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ, ২০২০ সালে মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান এবং গত নভেম্বরে বুয়েটের আরেক ছাত্র ফারদিনের মৃত্যু শুধু বাবা-মাকে নয়, পুরো দেশবাসীকেই কাঁদিয়েছে। তাদের মৃত্যুতে জাতির মেধাতালিকা শূন্য হয়েছে। এরা তিনজনই জাতিকে অনেক কিছু দেয়ার যোগ্যতাই অর্জন করছিলেন। তাই জাতিও অস্ফুট সুরে আহাজারি করেছে তাদের এই করুণভাবে চলে যাওয়ায়।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রায় হয়েছে। তার বাবা-মা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা পাবেন সেই রায় কার্যকরের মাধ্যমে। মেজর (অব:) সিনহার মা ও বোনও কিছুটা স্বস্তির মধ্যে আছেন প্রদীপ ও লিয়াকতের ফাঁসির আদেশের রায়ের মাধ্যমে। কিন্তু ফারদিনের বাবা-মা কি সেই সান্ত্বনা বা স্বস্তি পাবেন? এই বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা ও মা ফারহানা ইয়াসমিনকে জাতি কী বলে সান্ত্বনা দেবে? ব্যথার বিষে তাদের বুক ভেঙে যে, টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে তা বিবেকবান মা-বাবারা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছেন! টানাটানির সংসারে এই দম্পতি তিন সন্তানকে মানুষ করছেন। বড় সন্তান হিসেবে ফারদিন সবেমাত্র তীরের নাগাল পেতে যাচ্ছিলেন, এমন সময় তারা ফারদিনকে হারালেন। ফারদিনের মৃত্যুই তাদের শেষ কষ্ট ছিল না।
ছেলের লাশ পাওয়ার পর আরো কষ্টের ঢেউ একের পর এক তাদের বুকে আঘাত করেছে! মৃত্যুর পর প্রথমেই কথা উঠল ফারদিন গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে! পত্রিকা পড়ে জানার পর অনেকের মনে হয়তো বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে অথবা প্রেমঘটিত বিষয়ই তার মৃত্যুর কারণ বলে ধরে নিয়েছেন। এরপর প্রকাশিত হলো, চনপাড়া মাদক-আখড়ার কাছে ফারদিনের হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
র্যাবের এসব তথ্য জানার পর মিডিয়াগুলোও ফলাও করে প্রচার করল, মাদক ক্রয় ও সেবন করতে গিয়ে খুন হয়েছেন ফারদিন। যে ছেলে কোনোদিন ধূমপান পর্যন্ত করেনি সেই ছেলের পরিবারের অবস্থা তখন কেমন কষ্টকর হতে পারে, একবারও কি আমরা চিন্তা করেছি? এরপর তদন্তকারী সংস্থা ডিবি ও ছায়া তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের মধ্যে কিছু দিন ধরে চলে ভিন্ন তদন্তে প্রাপ্ত ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশের প্রতিযোগিতা। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এ ধরনের নানা প্রকার তথ্য প্রকাশের বিষয়টি ভিকটিমের পরিবারের জন্য ছিল অত্যন্ত ভারবাহী। এভাবে চলার ৩৮ দিনের মাথায় সবচেয়ে করুণ সংবাদটি প্রকাশিত হলো, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন! সেই সাথে ফারদিনের বিচারপ্রার্থী সহপাঠীরা হত্যার বিচার প্রার্থনার তারুণ্যসুলভ প্রক্রিয়াটিকেও পরিত্যাজ্য ঘোষণা করল। ফলে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন এখন একেবারেই একা হয়ে পড়লেন!
এর মধ্যে আরো কষ্টকর হলো, ফারদিনের একাডেমিক অভিভাবকরা শুরু থেকেই একেবারে নীরব রইলেন। হতে পারে ফারদিন আবাসিক ছাত্র নয় এবং ঘটনাটি ঘটেছে ক্যাম্পাসের বাইরে। কিন্তু একজন ছাত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কি ফারদিনের বাসায় গিয়ে পরিবারকে একটু সমবেদনা জানানোর ভদ্রতাটুকুও দেখাতে ব্যর্থ হলো? বোঝা গেল, এ সব শিক্ষক শুধুই শিক্ষকতার চাকরি করেন, তারা ছাত্রদের বাবা-মা হয়ে উঠতে পারেননি।
৪ নভেম্বর রাতে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফারদিন নূর পরশ নিখোঁজ হন এবং ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। মৃতদেহ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই র্যাব দাবি করে- ফারদিনকে চনপাড়া এলাকায় হত্যা করা হয়েছে এবং খুনিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে ডিবি দাবি করে- ফারদিনকে ঢাকার কোথাও হত্যা করা হয়েছে। আর মৃত্যুর আগে ফারদিনের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে সংস্থা দু’টি ভিন্ন ভিন্ন তথ্য হাজির করে। এরপর ৩৭ দিন টানা তদন্ত করে উভয় সংস্থা একমত হয়ে প্রেস ব্রিফিং করে। র্যাব জানায়- ফারদিন স্বেচ্ছামৃত্যুবরণ করেছেন এবং ডিবি জানায়- আত্মহত্যা করেছেন। সেই সাথে দু’টি সংস্থাই ফারদিন হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রার্থনায় আন্দোলনকারী ৪০ জন সহপাঠীর সাথে পৃথকভাবে দীর্ঘ বৈঠক করে আত্মহত্যার আলামত দেখায়। আলামত দেখে উদ্ভূত প্রশ্নগুলোর সন্তোষজনক জবাব পেয়ে সহপাঠীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন র্যাব ও ডিবির তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য দেন। তিনি আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলেন, ‘আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না’।
আসলে প্রথম থেকেই ফারদিনের অপমৃত্যু সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা দু’টির ফারদিনের অবস্থান সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশ, হত্যাকাণ্ডের নিশ্চিত তথ্য প্রকাশ করা, পরবর্তীতে হঠাৎ চুপ হয়ে যাওয়া ও একমাস পর আত্মহত্যার অভিন্ন তথ্য প্রকাশ এবং হত্যার বিচারপ্রার্থী ছাত্রদের ডেকে মিটিং করে আত্মহত্যার যৌক্তিকতা তুলে ধরা- ইত্যাদি কারণে এক ধরনের রহস্যের সূত্রপাত হয়েছে।
খোদ ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন তদন্তকারী সংস্থাগুলোর ‘আত্মহত্যার’ প্রতিবেদনের বিপরীতে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন-
ক. গত ৪ নভেম্বর বেলা ৩টা থেকে রাত ২.২৩ মিনিট পর্যন্ত ফারদিনের ঢাকা শহর ও নারায়ণগঞ্জের প্রায় ১৩টি স্থানে ঘোরাফেরা করার সিসিটিভি ফুটেজ কোথায়? ফারদিন এই ঘোরাফেরা কি নিজে করেছেন নাকি এ সময় তিনি অন্যের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন? যিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন তার কি আত্মহত্যার নিশ্চিত জায়গা এত সময় ধরে খুঁজতে হবে? এ জন্য তো রামপুরা ব্রিজের কাছে ৯.৪৫ মিনিটেই হাতির ঝিলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করা সম্ভব ছিল। তিনি তো সাঁতার জানতেন না।
খ. সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে শীতলক্ষ্যায় ঝাঁপ দেয়ার যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হচ্ছে তা অস্পষ্ট একটি জিনিস ব্রিজ থেকে পড়ে যাওয়ার মতো দেখা যাচ্ছে। সেটিই যে, ফারদিন তার প্রমাণ কোথায়?
গ. সংসারের টানাপড়েন, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্পেনে যাওয়ার আর্থিক সঙ্কট, পরীক্ষায় খারাপ করা- ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে তদন্তকারী সংস্থা থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে!
বাবার তথ্য মতে, ফারদিন ছোটবেলা থেকে আর্থিক সঙ্কটের সাথে সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। নিয়মিত প্রাইভেট টিউশনি করতেন। তিনি বুয়েট ডিবেট ক্লাবের জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলেন, বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের নিয়মিত পাঠক ছিলেন সেই ছোটবেলা থেকেই। স্পেনে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ৬০ হাজার টাকার মধ্যে ইতোমধ্যেই ৪০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং বাকিটাও সংগ্রহের পথে ছিল। ফারদিনের মানসিক কোনো সমস্যা ছিল না। একজন সাইক্রিয়াট্রিস্ট বলেন, ‘মৃত্যুর আগে ঢাকার রাস্তায় এলোমেলো ঘোরাফেরার ওপর ভিত্তি করে বলা দুরূহ যে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।’ (ডেইলি স্টার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২) তা ছাড়া ফারদিন বিকেলে মায়ের সাথে বসে ভাত খাওয়ার পর পরীক্ষা দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাত্রি যাপনের উদ্দেশে নিত্যদিনের মতো করে স্বাভাবিক মানসিকতা নিয়েই বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। অর্থাৎ আত্মহত্যার কোনো লক্ষণই তার মধ্যে কখনো ছিল না। তা ছাড়া ফারদিন বিভিন্ন সামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত ছিলেন। এমন একজন ইতিবাচক সংগ্রামী তরুণের আত্মহত্যার বিষয়টি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে?
ঘ. ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এটি ‘হত্যাকাণ্ড’। ময়নাতদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার বলেছেন, ‘ফারদিন তিন দিন আগেই নিহত হয়েছে এবং মৃত্যুর আগে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল।’ (ডেইলি স্টার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২) ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার পর নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা: মশিউর রহমান বলেন, ‘ওপর থেকে লাফ দিয়ে পড়ে কোনো ভারী বস্তুর সাথে আঘাত পেয়ে তার শরীরে ক্ষতগুলো সৃষ্টি হয়েছে- এ কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’ (নয়া দিগন্ত, ২৮ ডিসেম্বর ২০২২) আর ফারদিনের বাবা বলছেন, ‘চিকিৎসক, মামলার তদন্ত সংস্থা ও ছায়া তদন্তকারীরা এখন একই সুরে কথা বলছেন। এটি আমার পরিবার ও ছেলের প্রতি অবিচার।’ (প্রাগুক্ত)
ঙ. তদন্তকালীন সময়ে শুরুর দিকে সংস্থাগুলো কয়েকবার ফারদিনের বাবার সাথে কথা বলেছে। কিন্তু তদন্তের গতি পরিবর্তনের সময় বা পরেও ফারদিনের বাবার সাথে তেমন কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। বিগত এক মাসেও হত্যার কোনো আলামত না পেয়েই তদন্তকারীরা হত্যার চিন্তাটি বাদ দিয়ে দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যার বিষয়টি নিয়ে কাজ করে বলে জানানো হয়। আর ফারদিনের বাবা এটি জানতে পারেন প্রতিবেদন সম্পন্ন করে প্রকাশের পর। এ ব্যাপারে আগেই জানালে বা আলামত প্রদর্শন করলে হয়তো বা ফারদিনের বাবা এমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন না বা যৌক্তিক মনে করতে পারতেন।
চ. মৃত্যুর আগে ফারদিনের শেষ অবস্থানস্থল নিয়ে একটি ধূম্র্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ বলেছে, ফারদিনের শেষ অবস্থান ছিল রাত ২টা ৩৫ মিনিটে চনপাড়ায়। র্যাব বলেছে, ২টা ২৩ মিনিটে সর্বশেষ অবস্থান চনপাড়া ছিল এবং তার সাথে আরো চারজন ছিল। আবার ডিবির মতে, ফারদিনের শেষ অবস্থান ছিল তারাব বিশ্বরোড এলাকায়। কিন্তু ডিবির ১৫ ডিসেম্বরের তথ্য মতে, ফারদিনের সাথে অন্য কেউ ছিল না, যদিও ডিবি ১০ নভেম্বর বলেছিল, ফারদিনের মৃত্যুপূর্ব সর্বশেষ স্থান ছিল জুরাইনে। তাকে ঢাকায় হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে।
ছ. ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিনের আরো কয়েকটি প্রশ্ন ও সন্দেহের কথা, উত্থাপন করেছেন। তিনি দাবি করছেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সিটি শাহিন গ্রুপের হাতে খুন হতে পারে বলে শাহিন গ্রেফতার হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই শাহিন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে! তিনি আরো অভিযোগ করেন, ‘একটি মহলকে রক্ষা করতে শুরু থেকেই নানা নাটক সাজানোর চেষ্টা হচ্ছে।’ (নয়া দিগন্ত, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২)
প্রথম থেকেই বিভ্রান্তিমূলক তথ্য আসতে থাকায় তদন্তকারী সংস্থাদ্বয়ের মধ্যে তথ্যের ভিন্নতা হওয়ায় এবং চূড়ান্তভাবে আগের প্রকাশ করা তথ্যের সাথে ব্যাপক অমিল থাকায় ফারদিনের পরিবার ও জনমনে সন্দেহ, গুজব, অবিশ্বাস, অনাস্থা ইত্যাদি সবই সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এমনকি দুর্মুখরা ফারদিনের ‘আবরার স্মরণে’ নির্মিত ওয়েব আর্কাইভের পরিচালক হওয়ার বিষয়টিকেও সন্দেহের চোখে দেখতে চাচ্ছে। আত্মহত্যাই যদি হয়ে থাকে তবে ‘আয়াতুল্লাহ বুশরাকে’ গ্রেফতারের হেতু কী? মামলা হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। কিন্তু সুস্পষ্ট আলামত ছাড়াই তাকে গ্রেফতার করা হলো কেন? এখন এই মেয়েটির জীবনের এত বড় ক্ষতি হওয়ার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? বুশরাকে দ্রুত মুক্ত করার প্রক্রিয়াটি কেন শুধু আদালতের নিজস্ব গতির ওপর ছেড়ে দেয়া হলো? বাংলাদেশে কোনো তদন্তপ্রক্রিয়াকে বিচারপ্রার্থীদের সামনে এভাবে উপস্থাপন করে যৌক্তিকতা প্রমাণের ব্যবস্থার কথা আগে শোনা যায়নি; অপ্রকাশ্যে হলে হতেও পারে। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই এ ধরনের আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়াটি অবশ্যই সচেতন মহলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফারদিনের ৪০ জন সহপাঠীর সাথে বৈঠক করে ফারদিনের আত্মহত্যার সমস্ত আলামত উপস্থাপন করা হয়েছে এবং সব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দেয়া হয়েছে বলে বৈঠককারী ছাত্ররা জানিয়েছেন। সেখানে ফারদিনের বাবা কি উপস্থিত ছিলেন? না থাকলে, কেন ছিলেন না?
তবে এ কথা পরিষ্কার, ফারদিনের অপমৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যথেষ্ট অপরিপক্বতা প্রদর্শন করেছে। মূল তদন্তকারীর চেয়ে ছায়া তদন্তকারীরাই অগ্রণী ভূমিকা নেয়ার প্রয়াস পেয়েছে। মৃতদেহ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকারী শনাক্তের দাবি করেছে। তাদের মধ্যে আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের অভাবে যে যার মতো করে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। যার যার সংস্থার সফলতা প্রদর্শনের প্রবণতা বা প্রতিযোগিতা খারাপ নয়, তবে তা হতে হবে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ। এর আগেও পুরান ঢাকার একজন এমপিপুত্রের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়েও র্যাব ও পুলিশের যথাক্রমে মামলা এবং তদন্ত প্রতিবেদনের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা গিয়েছিল।
একটি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেই দেশের আস্থার প্রতীক। এই আস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা যতটুকু ভালো আছে তাতে র্যাব-পুলিশের অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতাযুদ্ধ ও করোনা সময়সহ জাতির বিভিন্ন ক্রান্তিকালে তারা জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে, অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদের প্রতি জাতির আস্থাটা যেন দুর্বল না হয়ে পড়ে সেদিকে তাদেরই সবচেয়ে বেশি যত্নবান হতে হবে। ফারদিনকে আমরা তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু ফারদিনের বাবার কান্নাজড়িত কথাগুলো আমাদের আমলে নিয়ে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে তার প্রশ্নগুলোর সুরাহা করা দরকার। তাহলে হয়তো এক অসহায় বাবার কষ্ট ও দুঃখিনী মায়ের শূন্য বুকের আহাজারি কিছুটা হলেও কমতে পারে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা