০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

ভ্রমণ, ইউরোপের ৪ দেশ

ভ্রমণ, ইউরোপের ৪ দেশ - নয়া দিগন্ত

[২য় পর্ব]

১০ এপ্রিল। বিকেল ৪টার দিকে আমাকে এয়ারপোর্টের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েই সবাই চলে যায়। দর্শনার্থীদের বাইরে থেকেও লাভ নেই। আগের মতো আড্ডা দেয়াসহ বিমানের ওঠানামাও দেখা যায় না। নিরাপত্তার কারণে সর্বসাধারণের ভেতরে প্রবেশ বারণ। বিমানবন্দরে এক পরিচিত লোকের সাহায্যে মালামালসহ সহজেই ইমিগ্রেশন পার হই। সবাই চলে যাওয়াতে মনটা আবারও খারাপ হতে শুরু করে। ফুরফুরে মেজাজের ভাব নিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করি। নরওয়ে যাওয়ার অভিলাষে ওভারকোটও সাথে নিই। বেল্টের মালামাল ছাড়াও হাতে ছিল সাত কেজি ওজনের হাতব্যাগ, দুই কেজি ওজনের ল্যাপটপ ও চার কেজি ওজনের ওভারকোট। সবাই একটা বিষয়ে সবাই নিশ্চিত, হাতে থাকা এই তিন বস্তুর মধ্যে একটা পথে রয়ে যাবে। সেই ভয় আমারও ছিল।

ল্যাপটপ আর হাতব্যাগ বহু মূল্যবান। বঙ্গবাজার থেকে ওভার কোট পানির দামে পাওয়া যায়। তাই হাতব্যাগ ও ল্যাপটপ বক্সের ফিতা শক্ত গিট্টু দিয়ে এক করে ফেলি, যাতে কোনোভাবেই একটি রেখে আরেকটি যেতে না পারে। একসাথে দুই বস্তু ভুল করে ফেলে যাওয়ার মতো ভোলা মন এখনো হয়নি। নতুন সমস্যা, লেজ বাঁধা নয়, কেজি বস্তু কাঁধেও নিতে পারছি নাÑ হাতেও রাখতে পারি না, সিটের ওপর রেখে দিয়ে হাঁটাহাঁটিও নিরাপদ নয়। রমজান মাস, অকারণ হাঁটাহাঁটি আদিখ্যেতার মতো লাগে। তাই একস্থানে বসে পড়ি।

বসে থাকতে হবে ৬ ঘণ্টা! নিঃসঙ্গ অবস্থায় ৬ ঘণ্টা বড় কঠিন সময়। ‘সময়’ এর আভিধানিক অর্থ ‘কাল’। ভয়ঙ্কর কৃষ্ণবর্ণের সাপের নামও ‘কাল’। কথায় বলে, ‘গলায় লাগলে ফাঁস, পলক-ই হয় মাস। কঠিন সময়ের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমেরিকার টেক্সাসের খুনি প্যাট্রিক নাইট। দুই পড়শিকে খুনের দায়ে ফাঁসির আদেশ হয়। ফাঁসি কার্যকরের আগে অপরাধীর শেষ অভিপ্রায় জানতে চাইলে দণ্ডিতের উত্তর ছিল, ‘শেষ কয়টা দিন হাসি-খুশি থাকতে চাই। হাসি-খুশি থাকার জন্য জোকস-এর একটা ওয়েবসাইট দরকার। হাসি-আনন্দে যেন কঠিন সময়টা পার করতে পারি।’ নিঃসঙ্গ সময়টা বড় ভয়ঙ্কর। আলেকজান্ডার সেলকার্ক যাকে ১৭০৪ সালে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল, নির্জনদ্বীপে তখনই তার অনুভূতি নিয়ে উইলিয়াম কাউপার লিখেছিলেন নিঃসঙ্গতার, The Solitude of AlEXANDER SELKIRK
I am monarch of all I survey
My right ...I am lord of the fowl
and the brute. O Solitude!


নিঃসঙ্গতা ও নির্জনতা দৃশ্যমান বিশ্বের অবিসংবাদিত সম্রাটের প্রতিটি মুহূর্তই ‘কাল’ হয়েছিল। ‘মানুষ একা থাকতে পারে না’ অতি প্রচলিত উক্তিটি বহুভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখন আমার চার পাশেও সাধারণ মানুষ আছে। আমি যাকে চাই, এই মানুষের ভিড়ে আমার সেই মানুষ নেই। এক লেখক বলেছেন, ‘রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে যে মানুষটার কথা মনে পড়লে চোখের কোনে মুক্তোর মতো অশ্রুকণা জমে ওঠে। সেই মানুষটাই আপনার জীবনের মধুর এবং পবিত্রতম পাপ।’ মন ভালো থাকার জন্য সাধারণ মানুষ নয়, দরকার পবিত্রতম পাপের মধুর মানুষটি।

মনের সাথে সম্পর্কের কারণে স্বাস্থ্যের সংজ্ঞাটাই পাল্টে গেছে। এক সময়, শরীরকে কেন্দ্র করে শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিকেই স্বাস্থ্য বলা হতো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ১৯৪৮ সালের ঘোষিত সংজ্ঞা, ‘সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক এবং সামাজিক মঙ্গল বা কল্যাণবোধকে বুঝায়। শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতিকেই স্বাস্থ্য বলে না।’ শরীর সুস্থ থাকা না থাকার সাথে সম্পর্ক রয়েছে মনের। যা দেখা যায় না, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না-পরীক্ষা করা যায় না কোনো ল্যাবরেটরিতে। আমাদের দণ্ডবিধি আইনে যত প্রকারের দণ্ড আছে সব দণ্ড দেহের জন্য। অপরাধ করে মন, শাস্তি পায় দেহ। Mens rea বা 'guilty mind'. Mens rea, in criminal law mens rea is the mental element of a person's intention to commit a crime রোমান আইনের সংজ্ঞায় অপরাধের মূলে ‘মন’-এর কথাটি উল্লেখ থাকলেও ‘মন’কে সাজা দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। দণ্ডবিধির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি। একসময় অপরাধীকে সিদ্ধ করে, পুড়িয়ে, পাথর মেরে, ক্রুশবিদ্ধ করে, ক্ষুধার্ত সিংহের খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়ে, শিরñেদ করে ইত্যাদি কষ্টকর পদ্ধতিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করত। সাম্প্রতিক, মন লাইমলাইটে আসার পর থেকে শরীরের সাথে যোগ হচ্ছে মনের শায়েস্তাও। ফাঁসি কার্যকরের আগে যেখানে রাখা হয় সে স্থানটির নাম কনডেম সেল। কনডেম সেলের দিনগুলোই প্রকৃত সাজা, যা ‘মন’ পেয়ে থাকে। ফাঁসি কার্যকর, অর্থ মুক্তি; গৌতম বৌদ্ধ যার নাম দিয়ে গেছেন নির্বান। দুঃখ, জ্বালা, যন্ত্রণা, রোগ একাকিত্ব সব কিছুরই নির্বাণ বা মৃত্যু।

‘মন’কে সাজা দেবে কী করে? কথায় বলে, প্রাণ থাকলেই প্রাণী হওয়া যায়, মন না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না। মানুষের মধ্যেও সবার মন সমান নয়। যার মন আছে সে ফুলের ঘা-এও মূর্ছা যায়, যার মন নেই সে পাথরের ঘায়েও কিছু হয় না। যার মন যত বড় তার যন্ত্রণাও তত বড়। এই মর্মে কোনো একসময় একটি উপমা পড়েছিলাম। লেখকের নাম মনে করতে পারছি না। আমার বিশ্বাস, ‘মন’ নিয়ে এমন সুন্দর উপমা কবিগুরু ছাড়া আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তুলনাটি কবিগুরু আর তার চাকর গদাধরকে নিয়ে। কবি টেবিলে বসে লিখছেন আর সামনের ফ্লোরের বিছানায় গদাধর ঘুমুচ্ছে। নাকডাকের শব্দে কবির ভাবের ব্যাঘাত ঘটলেই নজর যায় গদাধরের প্রতি। এভাবেই রাত পার হয়। আড়মোড়া দিয়ে বিছানা থেকে ওঠে গদাধর। চোখ কচলাতে কচলাতে যায় গঙ্গার ধারে। সেখানে কাড়াকাড়ি করে কুমারী মেয়েদের পূজার প্রসাদ খেয়েছে। কলাপাতায় করে কিছু প্রসাদ নিয়ে আসে দুপুরের জন্য। যে বিছানায় ঘুমিয়েছিল, সে বিছানার পাশে প্রসাদ রেখে আবার শুয়ে পড়ে। তা দেখে কবি মনে মনেই বলতে শুরু করেন,

- গদাধর, তুই চাকর, আমি মনিব। বিশাল জমিদারিসহ হাজার প্রজার মালিক আমি। তুই, কপর্দকহীন। একবেলা খেয়ে আরেক বেলার চিন্তা মাথায় নিতে হয়। তার পরও তুই আমার চেয়ে অনেক সুখী। সারারাত আরামের ঘুম শেষে উঠে প্রসাদের সিন্নি দিয়ে নাশতা করলি। দুপুরে খাওয়ার চিন্তাও শেষ। তোর চেয়েও সুখী বাড়ির সামনের প্রকাণ্ড নিম গাছটা। খাবারের জন্য তোকে বিছানা ছেড়ে গঙ্গার ধারে যেতে হয়েছিল। কলহ করতে হয়েছে মেয়েদের সাথে। নিমগাছের তাও করতে হয় না। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। মূল খাবার সংগ্রহ করে কাণ্ডের মাধ্যমে পৌঁছে দেয় যেখানে যতটুকু আবশ্যক। এই নিম গাছটার চেয়েও সুখী দরজার সামনে ফেলে রাখা পাথরটা। মাটির রস ফুরিয়ে যাওয়ার চিন্তা নিম গাছের থাকলেও পাথরটির সেই চিন্তাও নেই। যদি কোনো দুষ্ট দেবতা নিম গাছের মাথায় এক ফোঁটা ‘মন’ ঢুকিয়ে দেয় তা হলেই শুরু হবে তুলকালাম। নিম গাছ বিধাতার কাছে ফরিয়াদ করে বলবে, ‘তোমার কেমন বিচার? কলাগাছ অকর্মণ্য এক গাছ, শাখা-কাণ্ড কোনো কাজে লাগে না। পাতাগুলো কী বড় ও চওড়া। ফলগুলো মিষ্টি ও সুস্বাদু। আমার কাণ্ড অনেক কাজে লাগে, ছাল-পাতা দিয়ে মূল্যবান ওষুধ হয়। আমার ছোট ছোট পাতা, ফল কটু ও তিতা। মুখেই তোলে না মানুষ। এই সমস্যার সমাধান চাই। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ফুল-ফল বন্ধ। এরকম দাবি উঠবে হাজারো বৃক্ষের। বিধাতার কাছ থেকে দাবি আদায়ের পর বৈশাখ মাসের আম ফলতে শুরু করবে কার্তিক মাসে।’

কবিগুরু, গদাধর ধর ও তেঁতুল গাছ তিনটিরই প্রাণ আছে- হয়তো মনও আছে, কিন্তু সমান নয়। সবচেয়ে বড় মন কবিগুরুর, কষ্টটাও বড় কবিগুরুরই। আমার বিশ্বাস, মনের দণ্ড ‘শোক’। কোনো কোনো ‘শোক’ কনডেম সেলের চেয়েও যন্ত্রণাদায়ক। স্র্রষ্টা প্রদত্ত নানা রকম দণ্ডের মধ্যে মনের সর্বোচ্চ দণ্ড শোক, সর্বোচ্চ শক্তিও শোক। যার জীবনে শোক যত বড় তার জীবনে শক্তিও তত বড়। একসময় ভাবতাম, বিশে^র বিস্ময়কর ব্যক্তিদের বিস্ময়ের উপাদন সবই গড গিফটেড। পরে বুঝেছি, গড বড় হিসাবি ও কৃপণ। বিনিময় মূল্য বুঝে না পেয়ে কিছুই দেয় না। যেমন বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সারদা সুন্দরী দেবীর ১৫ সন্তানের মধ্যে ১৪তম। ‘সাত বছর বয়স থেকে সাথী নয় বছর বয়সী কাদম্বরী দেবী।

নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবীই ছিল বালক রবীন্দ্রনাথের একমাত্র শ্রোতা, প্রেরণা ও উসকানিদাত্রী। ঠাকুর পরিবারের অবহেলিত কাদম্বরী দেবী রবিঠাকুরের প্রাণপ্রিয় নতুন বৌঠান। ১৮৬৮ সাল থেকে ১৮৮৪ দেড় যুগ তিনি রবীন্দ্রনাথের পাশে ছিলেন। বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ের চার মাসের মাথায় অসহ্য নিঃসঙ্গতা বুকে নিয়ে ১৮৮৪ সালে আফিং সেবন করেন কাদম্বরী দেবী। তিন দিন ছটফট করে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। সেখান থেকেই শুরু হয় শোক। মাত্র ২২ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটিয়ে অচেনা রোগে স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হয় ১৯০২ সালে। ঠিক পরের বছর মৃত্যু হয় মেজো কন্যা রেনুকার। ¯েœহের কনিষ্ঠ পুত্র সমী। স্ত্রী বিয়োগের পাঁচ বছরের মাথায় মৃণালিনীর মারা যাওয়ার তারিখেই মারা যায় সমী। ছোট কন্যা মীরার পুত্র নীতু। কবি যেদিন নীতুর মৃত্যু সংবাদ শোনেন সেদিন অন্তর্ধান যাতনা সহ্য করতে না পেরে বেদনাহত রবীন্দ্রনাথ নিজের নামের আগে ‘শ্রী’ লেখা বর্জন করেন। আদরের বড় কন্যা মাধুরী লতা (বেলা)। ‘যেতে নাহি দেবো’ কবিতায় যে মাধুরী লতাই ছিল তিন বছরের কন্যা। ‘কাবুলিওয়ালা’ গল্পের ‘মিনি’, ‘দেনাপাওনা’ গল্পের নিরুপমা সবই তো কবির প্রিয় কন্যা মাধুরী লতাকে নিয়েই। মরণব্যাধি যক্ষ্মা ১৯১৮ সালে নিয়ে যায় মাধুরী লতাকেও। একমাত্র জীবিত পুত্র রথীন্দ্রনাথ ছিলেন নিঃসন্তান। এই শোকগাথা (ঊষবমু)-ই ছিল কবিজীবনে মহাশক্তি। কয়লা যে কারণে হীরায় পরিণত হয় সে কারণে প্রচণ্ড তাপ ও চাপে সাধারণ মানুষও অসাধারণ হয়ে ওঠে। হয়েছিলেন সারদা সুন্দরী দেবীর ১৪তম সন্তান রবিঠাকুরও। রবিঠাকুরের শোক শক্তি যুগিয়েছিল আমৃত্যু।
কবি মৃত্যুর ছয় বছর আগে ১৬ জুন ১৯৩৫ সালে গিয়েছিলেন কাঞ্চননগর। শরীর দ্রুত ভেঙে পড়ছে। কবির পাশে বাণীচন্দ। সেখানে ২৩ বছর বয়সে নতুন বৌঠানের সাথে কাটিয়েছিলেন দীর্ঘ ছুটির রোমাঞ্চকর দিনগুলো। বৃদ্ধ বয়সে যেন সেই কাদম্বরী দেবীর খোঁজে শেষবারের মতো চন্দননগর ফিরে এলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বললেন বাণীচন্দকে, ‘মনে পড়ে আমার নতুন বৌঠানকে। দেখ, মরে যে যায়, সে যায়ই। আর তাকে দেখতে পাওয়া যায় না। শুনতাম, ডাকলে নাকি আত্মা এসে দেখা দেয়। সে ভুল। নতুন বৌঠান মারা গেলেন, কী বেদনা বাজল বুকে! মনে আছে, সে সময় আমি গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে পায়চারী করেছি, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলেছি, কোথায় তুমি নতুন বৌঠান? একবার এসে আমায় দেখা দাও।’ কতদিন এমন হয়েছে।

- সারারাত এভাবেই কেটেছে। রবীন্দ্র প্রতিভার প্রদীপে তেল সলতে লাগিয়ে আলো জ্বালাবার কাজ যখন সারা তখনই নতুন বৌঠান চলে গেলেন চির অন্ধকারে। কবিগুরুর সৃষ্টি কর্মজুড়েই তো খোঁজাখুঁজির স্তুতি,
‘নয়ন সমুখে তুমি নাই
নয়নের মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই’
কবির মতো নিঃসঙ্গ কি আমিও? আমার নয়নও কি একজনকে খোঁজে? রবীন্দ্রনাথের মতো আমারও একমাত্র শ্রোতা, প্রেরণা ও উসকানিদাত্রী ছিল সালমা যেখানে ২০১৩ সালে সালমাসহ তিন মেয়ে, মেয়ে জামাই, নাতি-নাতনীদের সাথে কাটিয়েছিলাম জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন একটি মাস। একই সাথে দু’জন যাত্রা শুরু করেছিলাম, একজন ঘরে আরেকজন বাইরে। হঠাৎ একজন চলে যাওয়ায় স্তব্ধ হয়ে যায় বাইরের কাজও। মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি না। সামান্য কারণে উত্তেজিত হয়ে পড়ি। এভাবে মনের বিরুদ্ধে চলতে থাকলে কর্মহ্রাসের সাথে সাথে অর্জিত সুনামও হ্রাস পেতে শুরু করবে। ইউরোপের বসন্ত দেখার নাম করে আমি যেন তাকেই খুঁজতে বের হয়েছি।

‘লেখাপড়াকালে স্ত্রী হলো পায়ের বেড়ি। পায়ে বেড়ি পরলে যেমন ইচ্ছেমতো সাঁতার কাটা যায় না; ঠিক তেমনি ঠিকমতো লেখাপড়াও করা যায় না। এ বয়সে এইটুকু মাথায় বিয়ের চিন্তা ঢুকে পড়লে লেখাপড়ার চিন্তা ঢুকবে কী করে?’ বিয়ের আগে আমার মায়ের বলে যাওয়া উক্তিটি সালমা ভোলেনি। উক্তিটি উল্লেখ করে প্রায়ই বলত, এ কারণেই আমার জীবনের সব চাওয়া-পাওয়া, সাধ-আহলাদ বাদ দিয়ে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত দেখতে চেয়েছি।

প্রেরণাদাত্রী হিসেবে কবিগুরুর নতুন বৌঠানের সাথে সালমার মিল-গরমিল বের করার আগেই লাইনে দাঁড়ানোর জন্য চঞ্চলতা শুরু হয়ে যায়। আমিও লাইনে। পা পা করে এগুচ্ছি। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ জোনে পা রাখতে গিয়েই দেখি, সবার মুখে মাস্ক আমার মুখ খালি।

(অবশিষ্ট অংশ ‘লন্ডনের আকাশে ফকফকা আলো’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ ওয়েব সাইটে পাওয়া যাবে)

লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
E-mail: [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement