করোনা-উত্তর প্যারেন্টিং
- ড. এ কে এম মাকসুদুল হক
- ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১৯:৫৬
২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত করোনার ভয়াবহ তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়েছে পুরো দেশ। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষা বিভাগ ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক সম্প্রদায়। তবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে শিশু-কিশোররা। পড়ালেখার চেয়েও ক্ষতি হয়েছে তাদের মনস্তত্ত্বের। বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ থেকে শুরু করে নানা প্রকার নেশা ও অনাকাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা দিয়েছে তাদের মননে। ফলে পিতা-মাতা ও শিক্ষকরা গলদঘর্ম হয়ে পড়ছেন এই শিশু-কিশোরদের সামলানোর জন্য। বিশেষ করে অভিভাবকদের জন্য একটি ভয়ানক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই সন্তানদের স্বাভাবিক ও সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। সন্তান লালন-পালনের এমন কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রত্যেক পিতা-মাতার প্যারেন্টিং বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখা দরকার। এই সময়ের একটি সুসমঞ্জস, ভারসাম্যপূর্ণ ও সতর্ক প্যারেন্টিং পদ্ধতিই পারবে আমাদের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে।
মানুষকে সন্তান দানে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য : এই পৃথিবীতে সবাই সন্তানপ্রাপ্ত হয় না। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) যাকে ইচ্ছা কন্যা বা পুত্র দান করেন বা পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা নিঃসন্তান করেন।’ (৪২ : ৪৯-৫০) আর যাকে আল্লাহ তায়ালা এই সন্তান দান করেন তা দান করেন ওই পিতা-মাতাকে পরীক্ষা করার জন্যই। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘আর জেনে রাখো, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা মাত্র।’ (৬ : ২৮) এই পরীক্ষার অর্থ হলো যে- আল্লাহ তায়ালা দেখতে চান, পিতা-মাতা তাদের সন্তান নামক যে নিয়ামত পেয়েছে তার শুকরিয়া করেন কি না সৃষ্টিকর্তার কাছে। এই সন্তানকে তারা সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথে পরিচালিত করে সুনাগরিক করে গড়ে তোলেন কি না। এই পরীক্ষায় পাস-ফেলের ওপরই নির্ভর করে পিতা-মাতার দুনিয়ার জীবনের সুখ ও আখিরাতের জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি। এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বান্দাকে শিখিয়েছেন সন্তান কিভাবে চাইতে হবে সৃষ্টিকর্তার কাছে- ‘হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন, যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (২৫ : ৭৪) তবে এই সন্তান যদি সৃষ্টিকর্তাকে না চিনেই বেড়ে উঠে, চরিত্রবান না হয় বা সৃষ্টিকর্তার দেখানো পথের উল্টো পথে চলে তবে তার জন্য পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি সবাইকেই পরকালে মহাবিপদে পড়তে হবে। এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন, ‘মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানব ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ।’ (৬৬ : ৬)
প্যারেন্টিং বলতে কী বোঝায় : প্যারেন্টিং হলো সন্তানকে শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লালন-পালনের মাধ্যমে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ভারসাম্যপূর্ণ প্রচেষ্টা। একটি চারাগাছ লাগানোর পর সেটিকে যেমন সময়মতো পানি, সার, ছায়া, রৌদ্র ইত্যাদির মাধ্যমে বড় গাছ হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তেমনি সন্তান জন্ম নেয়ার পর তাকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলতে হয়। অর্থাৎ একটি সন্তানকে বড় করে তুলতে হলে বাবা-মা দুজনেরই পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সন্তানের পরিচর্যা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সন্তানের ক্ষতি হওয়ার বা সন্তান সুসন্তান না হওয়ার মূল কারণগুলো হলো- ক. পিতা-মাতার প্যারেন্টিং সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা; খ. উদাসীনতা : অর্থাৎ পিতা-মাতা শিক্ষিত থাকা সত্ত্বেও সন্তানের ব্যাপারে উদাসীন থাকা; গ. আমার সন্তান খারাপ হতেই পারে না, পিতা-মাতার এমন অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস থাকা; ঘ. পিতা-মাতার নিজস্ব পেশাগত ব্যস্ততা এবং ঙ. পিতা-মাতার মধ্যে সার্বক্ষণিক লেগে থাকা ঝগড়া এমনকি কখনো কখনো পরিবারে ভাঙন সন্তানদের জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।
প্যারেন্টিং সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে- ক. কঠোর শৃঙ্খলামূলক; খ. অতি আদরণীয় এবং গ. ভারসাম্যপূর্ণ। সন্তানদের কঠোর শৃঙ্খলায় রাখলে হিতে বিপরীত হয়ে থাকে। পান থেকে চুন খসলেই শাস্তি বা মারধর খুবই ক্ষতিকারক সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশের পথে। আবার অতি আদরে সন্তান লালন করাও ক্ষতিকারক। সন্তানদের সব কিছুই স্নেহধন্যে মেনে নিলে বা অনুমোদন দিলে তাও সন্তানকে এক ধরনের অস্বাভাবিক ও অনাকাক্সিক্ষত মেজাজের করে গড়ে তোলে। তবে আদর ও শাসনের সংমিশ্রণে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্যারেন্টিং করলে সন্তানও ভারসাম্যপূর্ণ সুন্দর চরিত্র নিয়ে বেড়ে ওঠে।
ভালো সন্তান গড়ে তোলার পদ্ধতি : নিজের সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই পিতা-মাতার সন্তানকে সময় দিতে হবে। শত ব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করে নিতে হবে। সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে জীবনে চলার পথে বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি করে এবং নানারকম মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে পার হয়ে থাকে। এ সময় সন্তানকে সহানুভূতি দেখাতে হবে, আপনার হৃদয়ের উষ্ণতা তাকে বুঝাতে হবে। সন্তান আপনার ঔরসজাত হলেও তার বড় হওয়ার সাথে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে। তার মধ্যে সম্মানবোধ জাগ্রত হবে। তখন তাকে তার প্রাপ্য সম্মান দেখাতে হবে। সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাকে একটি সুস্পষ্ট আদর্শের রেফারেন্স দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শই শ্রেষ্ঠ এ কথাটি তাকে বোঝাতে হবে। এই আদর্শের মধ্যে মহানবী সা:-এর জীবনে মানুষের সব কিছুই যে সুস্পষ্ট করে প্রতিফলিত হয়েছে, সেটি সন্তানকে দেখাতে হবে। জীবনের বিভিন্ন বাঁকে বাঁকে উপদেশ দেয়ার সময় সন্তানের সক্ষমতা অবশ্যই বুঝতে হবে। যে সন্তান পরীক্ষায় পাসের সক্ষমতা অর্জন করেছে মাত্র, তাকে ‘এ প্লাস’ পাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করার অর্থই হচ্ছে অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেয়া। এই অতিরিক্ত বোঝা অবশ্যই সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশের পথে বড় বাধা। সন্তানের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য মননশীলতা সৃষ্টির বইগুলো পড়ার অভ্যাস গড়ার চেষ্টা করতে হবে। বিশেষ করে বিভিন্ন মহামনীষীদের জীবনী, রাসূল সা:-এর জীবনচরিত, সাহাবা কাহিনী ইত্যাদি শিশুতোষ বই তার হাতে তুলে দিতে হবে। সেই সাথে সন্তানের স্কুলের শিক্ষকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সন্তানের বিষয়ে খোঁজখবরের মাধ্যমে নিবিড় পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
পড়ার বাইরে ব্যক্তিগত উন্নয়ন : পড়ার বাইরে সন্তানের উন্নত চরিত্র গড়ার জন্য যে সব পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেগুলো হলো- ১. সন্তানের নিজের রুম নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গুছিয়ে রাখা শেখানো; ২. খাবারের পর নিজের প্লেট-গ্লাস পরিষ্কার করে রাখা; ৩. নিজের জামাকাপড় নিজে ধোয়া; ৪. ঘরের কাজে মা-বাবাকে সাহায্য করা; ৫. স্কুলের বইপত্র ও ড্রেসের ব্যাপারে সচেতন করা; ৬. সময়মত স্কুলের দেয়া হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করা; ৭. দাদা-দাদী, নানা-নানী, মামা, চাচা, খালা, ফুফু ইত্যাদি আত্মীয় স্বজনের সাথে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ করা ও যোগাযোগ রক্ষা করা; ৮. বাইরে থেকে এসে ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশের অভ্যাস করা; ৯. ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার অভ্যাস করানো এবং ১০. সময়ানুবর্তিতা শেখানো।
শাসনের পদ্ধতি : সন্তানকে শাসন করার সময় মা-বাবাকে দায়িত্বশীল পদক্ষেপের অংশ হিসেবে- ১. শান্ত থাকতে হবে; ২. সন্তানের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে, ওকে বুঝিয়ে বললেই সংশোধন হয়ে যাবে; ৩. স্বচ্ছতা থাকতে হবে অর্থাৎ বাবা-মা সন্তানকে যে কাজটি নিষেধ করছেন সেটি তারা নিজেরাই যেন না করে; ৪. শাসন করার সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে, যেন উত্তেজিত হয়ে সন্তানকে গালাগাল বা বেদম প্রহার না করে ফেলেন; ৫. মন্দকাজে শাসনের পাশাপাশি সেটি পুনরায় না করলে অথবা ভালো কাজ করলে পুরস্কার দেয়া যেতে পারে।
সতর্কতা : বর্তমানে আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে কয়েকটি বিষয়ে পিতা-মাতাকে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে। বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে লক্ষ করতে হবে যে, সন্তানের মধ্যে কোনো অরুচিকর ফ্যাশন দেখা যাচ্ছে কি না, যেমন- উদ্ভট ধরনের চুলকাটা, কানে রিঙ লাগানো ইত্যাদি। এগুলো হলো বখে যাওয়ার প্রাথমিক পর্যায়। আজকাল কেউ কেউ হঠাৎ অতিরিক্ত ধার্মিক হয়ে যায়। এরকম হঠাৎ করে বৈপ্লবিকভাবে ধর্মীয় জীবনে পরিবর্তন অনেক সময় চরমপন্থার লক্ষণ হয়ে থাকে। সেটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে পিতা-মাতাকে। এ ছাড়া সন্তানের আচার-আচরণে খেয়াল রাখতে হবে যেন মাদকাসক্ত হয়ে না পড়ে। সন্তান কাদের সাথে মিশছে, আড্ডা দিচ্ছে, তাও খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো কিশোরগ্যাংয়ের সদস্যভুক্ত না হয়ে যায়।
সন্তানের ক্রান্তিকালে করণীয় : বয়োসন্ধিকালে বা বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে সন্তান অনেক সময় বিভিন্ন কারণে ট্রমাটাইজড হতে পারে। পরীক্ষায় ফেল করা, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে পড়া ইত্যাদি জটিল সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। এ সময়গুলোতে করণীয় হলো- ক. সন্তানকে সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্য প্রদর্শন করতে হবে; খ. এ সময় তাদের সাথে সম্মানজক আচরণ করতে হবে। তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। ‘তুমি শেষ বা তুমি ব্যর্থ’ ইত্যাদি বলে ধিক্কার না দিয়ে বরং তাকে বোঝান এবং ইতিবাচকভাবে প্রেষণা প্রদান করুন; গ. ভারসাম্যপূর্ণ বা মধ্যপন্থামূলক আচরণ করতে হবে; ঘ. এ সময় সন্তানকে সামাজিক কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজে শরিক করানোর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে; ঙ. সন্তানের সুস্থ বিনোদনের জন্য সাথে করে গ্রামের বাড়ি, পার্ক, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদিতে পরিদর্শনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার; চ. এ ছাড়া এ ধরনের কঠিন সময়গুলোতে সন্তানের ব্যাপারে অভিজ্ঞজন, মসজিদের ইমাম, মুরব্বিদের সাথে পরামর্শ করা যেতে পারে।
করোনা-উত্তর সন্তানদের ক্ষয়ক্ষতি ও করণীয় : করোনা মহামারীতে সন্তানদের যে ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেগুলো হলো- ১. জ্ঞানার্জনের সামর্থ্য কমেছে; ২. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্ত হয়েছে; ৩. মেজাজ খিটখিটে হয়েছে; ৪. আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছে; ৫. প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে; ৬. রিঅ্যাকটিভ হয়ে উঠেছে; ৭. অবাধ্য হয়ে উঠেছে; ৮. নানান ধরনের নৈতিক স্খলন ঘটেছে; ৯. সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, শিশু-কিশোরদের মনে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।
গত জানুয়ারি ২০২২ থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে মোট ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ১৯৪ জন স্কুলের, ৭৬ জন কলেজের, ৪৪ জন মাদরাসার ও ৫০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীর ৭৯ শতাংশেরই বয়স ১৩ থেকে ২০ বছরের মধ্যে (প্রথম আলো, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২)।
এসব সমস্যা সন্তানের মধ্যে দৃষ্টিগোচর হলে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পিতা-মাতা দয়া করে রিঅ্যাকটিভ হবেন না, উত্তেজিত হবেন না ও হতাশ হবেন না। তবে আপনার করণীয়গুলো হলো- ১. ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে হবে পরিস্থিতি; ২. সন্তানের সাথে আপস-রফার পদ্ধতি অনুসরণ করুন; ৩. দরদ দিয়ে কথা বলুন, বোঝান; ৪. গিফটের ডিলিংসে আসুন; ৫. স্মার্টফোন কেড়ে না নিয়ে বরং ফোন ব্যবহারের সময় বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করুন ও সঙ্গ দিন। পরে ধীরে ধীরে সময়ের মাত্রা কমিয়ে আনুন এবং এক সময় আসক্তি ঝেড়ে ফেলতে উদ্বুদ্ধ করুন; ৬. বিকেলে মাঠে খেলতে পাঠান; ৭. পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে গিয়ে নামাজের অভ্যাস গড়ে তুলুন; ৮. ফজরের নামাজের পর একসাথে কুরআন তিলাওয়াত করতে বসুন; ৯. পড়ালেখার সময় সন্তানের পাশে বসুন এবং পড়ায় সহযোগিতা করুন; ১০. আপনি নিজেই আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
ভালো প্যারেন্টিং : সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ভালো প্যারেন্টিং অত্যন্ত জরুরি। আদর্শ প্যারেন্টিং করতে হলে পিতা-মাতারও কিছু অবশ্য করণীয় কর্তব্য রয়েছে, সেগুলো হলো- ১. নিজেকেই প্রথমে ধর্মীয় আচার-আচরণ এবং মূল্যবোধ ও নৈতিকতা মেনে চলতে হবে; ২. সন্তানদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে; ৩. নিজের কথা বলার ক্ষেত্রে সততা অবলম্বন করতে হবে এবং নিজস্ব কার্যক্রমে পরিবারের কাছে নিজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে; ৪. নিজে ভুল করলে পরিবারের কাছে বা সন্তানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; ৫. বিভিন্ন পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সন্তানদের অংশগ্রহণ করাতে হবে; ৬. বসসুলভ নয়; বরং সন্তানের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে; ৭. সন্তানের যোগ্যতার মূল্যায়ন করতে হবে এবং উত্তম কাজের জন্য পুরস্কৃত করতে হবে; ৮. দিনে কমপক্ষে একবেলা পুরো পরিবার একত্রে খাবারের ব্যবস্থা নিতে হবে; ৯. সপ্তাহে কমপক্ষে দুই-তিন দিন একত্রে বসে কুরআন তরজমাসহ পাঠ করে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে এবং রাসূল সা:-এর হাদিস পাঠ করে শিক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে।
ভালো মানুষ পেতে হলে ভালো প্যারেন্টিংয়ের বিকল্প নেই। আর বর্তমান করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে প্যারেন্টিং ভালো না হলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এমনভাবে গড়ে উঠবে যাতে গোটা জাতি এক ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে পড়তে পারে। কাজেই আসুন, আমরা পিতা-মাতারা সতর্ক হই এবং সুসন্তান তথা সুনাগরিক গড়ার কাজে মনোযোগী হই। যদি আমাদের অসতর্কতা ও অবহেলার কারণে সঠিক প্যারেন্টিংয়ে ব্যত্যয় ঘটে, তবে নির্ঘাত সন্তান বিপথগামী হয়ে আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে এবং জাতীয় জীবনে একটি প্রজন্মের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা