ব্যাংক ও মন্দা মুক্তির পথ দেখিয়ে অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ
- ড. মো: মিজানুর রহমান
- ০৮ নভেম্বর ২০২২, ২০:২৭
ব্যাংক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিন মার্কিন অর্থনীতিবিদ বেন এস বারন্যাঙ্ক, ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডিবভিগ। এর মধ্যে বারন্যাঙ্ক ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এখন ওয়াশিংটনের ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনে আছেন। ডায়মন্ড ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক এবং ডিবভিগ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অলিন বিজনেস স্কুলের অধ্যাপক। এই তিন বিজ্ঞানী দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করছেন ব্যাংক এবং অর্থনৈতিক মন্দা সংক্রান্ত বিষয়ে। বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি মিলবে সেই কাজ করছেন তারা।
নোবেল কমিটি বলেছেন যে, ১৯৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে তাদের কাজ ‘অর্থনীতিতে ব্যাংকের ভূমিকা’ সম্পর্কে, বিশেষ করে আর্থিক সঙ্কটের সময়, তাদের ধারণা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করেছে। পাশাপাশি কেন ব্যাংকের পতন এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়েও তাদের ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। তারা আরো উল্লেখ করেন যে, ১৯৮০ দশকের তাদের কাজের অভিজ্ঞতা ২০০৮-০৯ আর্থিক সঙ্কটের সময় এবং করোনাভাইরাস মহামারীর সময় খুবই কাজে আসে।
বারন্যাঙ্কের ১৯৩০-এর দশকে মহামন্দার বিশ্লেষণ দেখায় যে, ব্যাংক থেকে হঠাৎ টাকা তোলার হিড়িক পড়ার ফলে কিভাবে এবং কেন মহামন্দা এত গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল। ডায়মন্ড এবং ডিবভিগের গবেষণা ছিল ব্যাংকের আমানত গ্রাহকদের স্বল্পমেয়াদি আমানত এবং বিনিয়োগ গ্রাহকদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের প্রয়োজন, এই দুইয়ের মধ্যের সম্ভাব্য দ্বন্দ্বকে মসৃণভাবে সমাধান করতে ব্যাংক যে সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা দেখানো। এ ছাড়াও তারা দেখান যে, কিভাবে সরকার একটি ব্যাংকের সঞ্চয়কারীদের আমানত বীমা প্রদান এবং ঋণগ্রহীতার ঋণের শেষ অবলম্বন হিসেবে কাজ করে ব্যাংকের পতন প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
বর্তমান ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং অর্থনৈতিক মন্দার পূর্বাভাস দেয়ার কারণে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য তার কোনো সতর্কতা আছে কিনা জানতে চাইলে ডায়মন্ড বলেছেন, ‘ফিল ডিবভিগ এবং আমি মনে করি যে, আর্থিক সঙ্কটগুলো আরো খারাপ হয় যখন জনগণ সিস্টেমের স্থিতিশীলতার ওপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করে। ব্যাংক স্থিতিশীল হওয়াসহ এসব কিছুই মূলত নির্ভর করে জনগণ ব্যাংকিং খাতকে কতটা লাভজনক মনে করে তার উপর।’ ‘সুতরাং এক সময় যখন ঘটনাগুলো অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে, যেমন আমি মনে করি, লোকেরা অবাক হয় যে, বিশ্বজুড়ে নমিনাল সুদের হার কত দ্রুত বেড়েছে, তাও জনগণের মধ্যে এই ব্যাংকিং সিস্টেমের ওপর ভীতির সৃষ্টি করে। আমরা ইউনাইটেড কিংডমে তাদের বীমা বাজারের ঋণদায়ের ভিত্তিতে পরিচালিত খাতে এর কিছু নমুনা দেখেছি। সুতরাং আমি মনে করি, সর্বোত্তম পরামর্শ হলো ব্যাংকিং সেক্টরকে সুস্থ রাখা এবং নিজে সুস্থ থাকার জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে আপনি ভালো ভূমিকা রেখেছেন এটা নিশ্চিত হওয়া এবং পাশাপাশি, আর্থিক নীতিতে একটি পরিমাপিত এবং স্বচ্ছ পরিবর্তনের জন্য ভূমিকা রাখার জন্য প্রস্তুত হওয়া।’
আরো কোনো আর্থিক সঙ্কটের পূর্বাভাস পাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে, তিনি বলেন যে, ২০০৮ সালের তুলনায় বিশ্ব অনেক ভালো প্রস্তুত এবং রেগুলেটরি সিস্টেমের উন্নয়নের কারণে ব্যাংকিং সিস্টেম এখন কম ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতের নিজেরই ভিত খুব শক্ত, রয়েছে নিট সম্পদ, ভালো ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা।’ ‘সমস্যাটি হলো যে, এই ধরনের ঝুঁকির ভয়ে গ্রাহকের টাকা তোলার হিড়িক, ব্যাংক থেকে চলে যাওয়ার ভয় এবং সঙ্কটের এই দুর্বলতাগুলো কেবল বাণিজ্যিক ব্যাংক নয়, যেকোনো জায়গায় দেখা যেতে পারে।’
ব্যাংকিং খাতের বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করে তিনি এবং ডিবভিগ বলেছিলেন যে, এটা স্বল্পমেয়াদি, তরল ঋণদায়, যেমন আমানত বা শেয়ার ইত্যাদি, যা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি লিকুইড তাই ইস্যু করা অত্যন্ত কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আবার যুক্তরাজ্যের বীমা খাতের উল্লেখ করে বলেছেন যে, সমস্যা তখন হয়েছিল যখন বীমা কোম্পানিগুলি ব্যাংকের নিকট আরো জামানতের আহ্বান করে এবং একটি বিতর্কিত সরকারি বাজেটের পর বাজারের অশান্তি কমাতে এবং পেনশন তহবিল রক্ষা করতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
নোবেল বিজয়ী বারন্যাঙ্কের আবিষ্কার ছিল, কিভাবে ১৯৩০ এর দশকে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট মন্দাকে মহামন্দায় পরিণত করতে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল এবং সেটি সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কটে পরিণত করেছিল। বিশ্বের কাছে সেই সময় ওই ঘটনা খুবই নতুন কিছু ছিল। তাই লোকেরা সত্যিই বুঝতে পারেনি যে, ঘটনাগুলোর এই খুব নাটকীয় সিরিজে ব্যাংকগুলো কত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। অন্য দুই অর্থনীতিবিদ ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডিবভিগ ছিলেন আরো তাত্ত্বিক। ফলে তারা মডেল সেটআপ করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন যে, কেন ব্যাংক এত গুরুত্বপূর্ণ যাতে তারা না থাকলে অর্থনীতি কাজ করে না এবং কেন আপনি দুর্বল এবং কী করতে পারেন, এই দুর্বলতা সম্পর্কে কী করা যায়? বারন্যাঙ্ক মনে করেন, তাদের এই তাত্ত্বিক অবদানগুলো ১৯৩০ এর দশকে বাস্তবে কী ঘটেছিল তার সাথে খুব ভালোভাবে মিলে যায়।
১৯৩০ সালের পর এখন ওই বিষয়কে নিয়ে কেন ভাবলেন জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা এ ধরনের জিনিসগুলোকে নিয়ে ভাবা এখন সময়োপযোগী হলো কিনা তা বিবেচনায় নিই নাই। আমরা মনে করেছি, এটি একটি মূল্যবান বিষয় এবং আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সঠিকভাবে তদন্ত করতে পেরেছি কিনা সেটাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। তাই এর মূল্যমান সময়োপযোগী কি না তা আমরা যাচাই করি নাই।’
এখন এই গবেষণার শিক্ষা জানতে চাইলে তারা বলেন, ব্যাংক এবং অন্য অনেক প্রতিষ্ঠান যারা সঞ্চয়কে উৎপাদনশীল বিনিয়োগে স্থানান্তর করে সেই সেবা নেয়ার সময় কি নিশ্চিত হয়েছি যে, এই ব্যবস্থাটি ভেঙে পড়বে না? কারণ, যদি এমন হয় তবে এর নাটকীয় পরিণতি রয়েছে এবং সেগুলো খুব দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং আর্থিক সঙ্কটে পরিণত হয়। এমনকি এর ফলে ২০২০ সালের অতিমারী ও অর্থনীতি মন্দায় পরিণত হতো। তাদের এমন ধারণা হয়েছে যদি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ না করে তা হলে ১৯৩০ এর দশকের মতো খারাপ অবস্থা হয়ে যাবে। তাই আল্লাহ সহায় যে, এটা নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ যার ফলে এমনটা না ঘটে। সুতরাং এটি সত্য যে, এটি খুব সময়োপযোগী হয়েছিল। বেন বারন্যাঙ্কে ২০০৮ এবং ২০০৯ এর আর্থিক সঙ্কটের সময়ও মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান ছিলেন। তার ওই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি সত্যিই জানতেন যে, ওই সময় আর্থিক সঙ্কট পরিচালনা না করলে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারত।
এই তিন নোবেল বিজয়ীর তিনটি পেপারের তিন ধরনের অবদান ছিল যা মূলত ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে অর্জিত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছে। তিন অবদান-এর মধ্যে একটিতে ডায়মনড এবং দীপিক একসাথে কাজ করে যাদের কাজ দেখায় যে, ব্যাংক এবং ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মূলত স্বল্পমেয়াদি আমানতকে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদে পরিণত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে তখন তাদের কার্যকারিতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই কাজই মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ব্যাংক করে থাকে। তবে নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরের পরিস্থিতিতেও তারা দেখিয়েছে যে, এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা অর্থনীতিতে ভালো কাজ করার জন্য নেয়া দরকার। তবে এটাও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক ধারণা যাকে বলা হয় পরিপক্বতার রূপান্তর পদ্ধতির মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদি আমানত গ্রহণ করা এবং দীর্ঘমেয়াদি ঋণে পরিণত করা এবং এটি খুব ভালো কিন্তু এটি দুর্বলও।
দুর্বল এই কারণে যে, একটি গুজব যদি শুরু হয় যে, একটি ব্যাংকে সমস্যা হতে চলেছে তাহলে প্রত্যেকেই ব্যাংকে ছুটে যাবে এবং ব্যাংকের লাইনের শেষে না দাঁড়িয়ে বরং স্বপ্রণোদিত হয়ে লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে তার অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করবে। এমনকি কোনো ব্যাংক যদি মৌলিকভাবে সফল এবং ভালো অবস্থানে থাকে তাদের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা হতে পারে। ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময় এটিই ছিল মূল সমস্যা। ডায়মন্ড এবং ডেভিড তাত্ত্বিকভাবে এই ধরনের তথ্যই প্রদর্শন করতে চেয়েছিলেন এবং এমন ক্ষেত্রে আপনি কী করতে পারেন? এই ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ হলো, আপনি একটি আমানত বীমা প্রবর্তন করতে পারেন যাতে সরকার প্রত্যেক আমানতকারীকে তার আমানতের নিশ্চয়তা দেবে। সেটা করলে যদি আপনি গুজব শুনতে পান যে, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে তাহলেও আপনার ব্যাংকে ছুটে যাওয়ার দরকার নেই; কারণ সরকার আপনার আমানতের গ্যারান্টি দিচ্ছে। সরকার এবং বীমা থেকে এ ধরনের নিশ্চয়তা পেলে ব্যাংকও আরো স্থিতিশীল হবে এবং স্বাভাবিকভাবে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত করতে পারবে।
যদিও সমস্যা হলো যে, ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং আর্থিক ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছে; সুতরাং ২০০৭-০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের সময় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মের বাইরে যেয়ে বাড়তি কিছু করতে শুরু করেছিল। এমনকি, তাদের প্রতিষ্ঠানের আমানতে কোনো বীমা ছিল না ফলে এই ক্ষেত্রের কিছু গবেষক বলেছেন যে, এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর ফলে অনেক পরিচিত ব্যাংকে আমানত তুলে নেয়ার হিড়িক পড়েছিল। এগুলোকে সাধারণত শ্যাডো ব্যাংক বলা হয় এবং এই ঘটনাই মূলত ঘটেছিল অর্থনৈতিক মন্দার সময়। সেই সময়ে বেন বারন্যাঙ্কে যখন দেখেছিলেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে তখন ব্যাংকগুলোকে সাহায্য করে এবং তাদের তারল্য প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ব্যবস্থা যাতে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না যায় তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছিলেন। এটি বিশ্বকে একটি নিশ্চিত হতাশা থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয়েছে।
বারন্যাঙ্কের মতে, আর্থিক সঙ্কট এবং হতাশা অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে খারাপ জিনিস। এটি ১৯৩০ এর দশকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী অর্থনীতির দেশেও অনাহার সৃষ্টি করেছিল। তিনি মনে করেন, এ ঘটনা আবার ঘটতে পারে এবং সেগুলোর জন্য তৈরি থাকতে হবে এবং এই বিষয়ে কী করতে হবে তা বোঝা প্রয়োজন। তাদের গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান হলো, কেন ব্যাংকের পতন এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক ব্যাংকিং গবেষণা স্পষ্ট করে যে, কেন ব্যাংক আছে, কিভাবে সঙ্কটের সময় ব্যাংককে কম ঝুঁকিপূর্ণ করা যায় এবং কিভাবে ব্যাংকের পতন আর্থিক সঙ্কটকে আরো বাড়িয়ে তোলে। আর্থিক বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক সঙ্কট মোকাবেলায় তাদের বিশ্লেষণগুলো অত্যন্ত বাস্তবিক গুরুত্ব বহন করে।
উল্লেখ্য, অর্থনীতির কাজ করার জন্য সঞ্চয়কে বিনিয়োগের সাথে যুক্ত করতে হবে। যা হোক, এখানে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে যে, সঞ্চয়কারীরা অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের অর্থের জন্য তাৎক্ষণিক অ্যাক্সেস চায় অথচ ব্যবসায়ী এবং বাড়ির মালিকরা জানতে চায় যে, তারা তাদের ঋণ সময়ের আগে পরিশোধ করতে বাধ্য হবে না। তাদের তত্ত্বে, ডায়মন্ড এবং ডিবভিগ দেখান, কিভাবে ব্যাংকগুলো এই সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান দেয় যেন ব্যাংকগুলো যারা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করে, যারা অনেক সঞ্চয়কারীর কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে, তারা যেন আমানতকারীদের যখন ইচ্ছা তাদের অর্থ উত্তোলন করার সুযোগ দিতে পারে, পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদান করতে পারে।
যা হোক, তাদের বিশ্লেষণ এও দেখায় যে, কিভাবে এই দুটি কার্যক্রমের সংমিশ্রণ ব্যাংকগুলোকে তাদের আসন্ন পতন সম্পর্কে গুজবগুলোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। যদি বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী একযোগে তাদের অর্থ উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে ছুটে যায়, তাহলে গুজবটি একটি স্ব-পরিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীতে পরিণত হতে পারে এবং এতে একটি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যেতে পারে এবং ব্যাংকগুলো ভেঙে পড়তে পারে। এই বিপজ্জনক গতিশীলতাগুলোকে সরকার আমানত বীমা প্রদানের মাধ্যমে এবং ব্যাংকগুলোকে শেষ অবলম্বন হিসেবে ঋণদাতা হয়ে কাজ করার মাধ্যমে রক্ষা করতে পারে।
বেন বারন্যাঙ্কে ১৯৩০-এর দশকের গ্রেট ডিপ্রেশন বিশ্লেষণ করেছেন, যা আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সঙ্কট। তিনি আরো দেখিয়েছেন যে, কিভাবে ব্যাংক পরিচালনা সঙ্কট এত গভীর এবং দীর্ঘায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এই সময় ব্যাংকগুলো ভেঙে পড়েছিল, ঋণগ্রহীতাদের সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য হারিয়ে গিয়েছিল এবং যা দ্রুত পুনরায় তৈরি করা যায়নি। এভাবে সঞ্চয়কে উৎপাদনশীল বিনিয়োগে চালিত করার, সমাজের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
উল্লেখ্য, নোবেল বিজয়ীগণ এই দৃষ্টান্ত পেশ করেন যে, কেউ যদি ভবিষ্যৎ ধারণা করতে না পারে যে, কোনো গুজবের কারণে কোনো ব্যাংকের আমানতকারীরা ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ টাকা উত্তোলন সামলাতে পারবে তার চেয়ে বেশি টাকা উঠাতে পারে তবে সেই অবস্থায় একটি ব্যাংকের টাকা তোলার হিড়িক শুরু হলে তা ব্যাংকটিকে পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তারা আরো বলেন, ব্যাংক একটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে যা স্বল্প পরিপক্বতার সাথে আমানতকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে রূপান্তর করে। একটি ব্যাংক সবসময় তার কয়েকটি ঋণের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাংক দায়িত্বশীলভাবে ঋণ দেয়, ততক্ষণ সমস্ত ঋণের ক্ষতির পরিমাণ ছোট এবং অনুমানযোগ্য হবে।
পরিশেষে বলতে হয়, নোবেল বিজয়ীদের আবিষ্কার হলো, ব্যাকিং কার্যক্রম ধসে পড়ার কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কট মন্দা থেকে মহামন্দায় পরিণত হয়। তদুপরি ব্যাংক ছাড়া মানুষ চলতে পারবে না। তবে কখনো কখনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা আংশিক অথবা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে এবং এর ফলে আর্থিক সঙ্কট উদিত হয়, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকগুলো ধসে যাওয়ায় ঋণ নেয়া আরো ব্যয়বহুল বা অসম্ভব হয়ে ওঠে, সম্পত্তির দাম কমে যায়, ইত্যাদি। এ অবস্থা শুরুতেই বন্ধ করতে না পারলে সমগ্র অর্থনীতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং এর ফলে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং দেউলিয়াত্ব দেখা দিতে পারে। উল্লেখ্য, ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক পতন হলো আর্থিক মন্দা। নোবেল বিজয়ীদের এই আবিষ্কারের ফলে ১৯৩০ সালের মহামন্দা যেমন বিশ্বের অর্থনীতিকে বহু বছর ধরে পঙ্গু করে দিয়েছিল এবং তার সামাজিক পরিণতি হয়েছিল মারাত্মক তেমন অবস্থা পরবর্তী আর্থিক সঙ্কটে হবে না। অর্থনৈতিক বিজ্ঞান পুরস্কারের জন্য কমিটির চেয়ারম্যান টোরে এলিংসেন বলেছেন যে, ‘বিজয়ীদের অন্তর্দৃষ্টি ব্যাংকগুলোকে গুরুতর সঙ্কট এবং ব্যয়বহুল বেলআউট, উভয়ই এড়ানোর বিষয়ে আমাদের ক্ষমতাকে উন্নত করেছে।’
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং কলামিস্ট
ই-মেইল : [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা