উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে টালমাটাল সেই ভোর
- এম আবদুল্লাহ
- ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১৯:৩৫
‘তখনো আকাশে অন্ধকার ছিল। গোলাগুলির শব্দে প্রকম্পিত শেষ রজনীর ঢাকা। শ্বসরুদ্ধকর। মুহূর্তগুলো ছিল যুগের মতো। বিনিদ্র রাতে আতঙ্কিত নগরবাসী হয়তো ভাবিতেছিল একাত্তরের সেই পাষাণ ঢাকার দিনগুলোর কথা। এমনই সময়ে রেডিও বাংলাদেশের ঢাকা কেন্দ্রের ঘোষকের কণ্ঠে ধ্বনিত হলো স্লোগান ‘সিপাহি বিপ্লব জিন্দাবাদ’। উৎকণ্ঠ নগরবাসীর শ্রবণেন্দ্রীয়। এই অসময়ে রেডিও কী বার্তা শুনাবে? ঘোষকের কণ্ঠে ঘোষিত হলো : ‘সিপাহি বিপ্লব সফল হয়েছে। প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের হাত থেকে জেনারেল জিয়াকে মুক্ত করা হয়েছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।’ এটি ১৯৭৫ সালের ৯ নভেম্বরে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ইন্ট্রো বা সূচনা। ৪৭ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহি জনতার বিপ্লবের একদিন পর ‘ইত্তেফাক রিপোর্ট’ ক্রেডিট লাইন দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল- ‘সংশয় ও দুঃস্বপ্নের মেঘ অতিক্রম করিয়া-’।
প্রতিবেদনের পরের অংশটি আরো আবেগ ও উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত। প্রতিবেদনটি এগিয়েছে এভাবে- ‘সকল সংশয়, দ্বিধা আর দুঃস্বপ্নের মেঘ অতিক্রম করিয়া গত শুক্রবার বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব বিজয় সূচিত হইয়াছে। এই বিজয়ে স্বর্ণোজ্জ্বল দলিলে জনতার প্রাণের অর্ঘ্য দিয়া লেখা হইল বাংলার বীর সেনানীদের নাম। আর দলিলের শিরোনামে শোভা পাইল একটি নাম- মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, বীরোত্তম, পিএসসি- এক প্রিয় ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বীর সিপাহিদের এই জাগ্রত চেতনা, বৈপ্লবিক সত্তার এই প্রকাশ প্রমাণ করিল যে, বাঙালি জাতির স্বাধীনতা খর্ব করার সাধ্য নাই কোনো চক্রের, কাহারো ক্ষমতা নেই দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার, দুর্বল করার।’
সিপাহি জনতার বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে ইত্তেফাকের ওই প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে ‘শুক্রবারের প্রভাত জাতির জন্য ছিনাইয়া আনে এক উজ্জ্বল ভবিষৎ, পরাভবহীন এক অপূর্ব আত্মপ্রত্যয়। সিপাহি জনতার এই মিলিত আবেগ, উচ্ছ্বাস, জয়ধ্বনি, আনন্দের কল-কল্লোল, সহস্র কণ্ঠের এই উচ্চকিত নিনাদ সেদিন ঘোষণা করিল সৈনিক ও জনতার একাত্মতা।’
বছর ঘুরে আবার সাতই নভেম্বর আমাদের সামনে উপস্থিত। পঁচাত্তরের পর থেকে তিন দশকের বেশি সময় বাংলাদেশের মানুষ সেই গৌরব ও অহঙ্কারের দিনটিকে স্মরণ করত যথাযোগ্য মর্যাদায়। পালিত হতো নানা কর্মসূচিতে। তবে গত দেড় দশক ধরে চলছে দিনটি ভুলিয়ে দেয়ার নিরন্তর প্রচেষ্টা। সেই বিপ্লবের মহানায়ককে ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে খলনায়ক বানানোর মরিয়া অপচেষ্টা দেখছে দুর্ভাগা বাংলাদেশ। কিন্তু চাইলেই কি ভুলিয়ে দেয়া যাবে ইতিহাসের সেই স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়?
পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লরে তাৎপর্য বুঝতে হলে সেই সামনে রাখতে হবে তখনকার বাংলাদেশের সময়কাল। তখনকার পত্র-পত্রিকায় অবিস্মরণীয় সেই বিপ্লবের চিত্র যেভাবে ফুটে উঠেছে তাতে দৃষ্টিপাত না করে প্রায় চার যুগ পর ইতিহাস বিকৃতির মহাযজ্ঞে বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেদিন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী ভয়ানক ষড়যন্ত্র কারা, কিভাবে নস্যাৎ করেছিলেন তা বুঝতে হবে সাতচল্লিশ নভেম্বর পেছনে ফিরে। সিপাহি-জনতা সেদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ক্যান্টনমেন্টের বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান ঘোষক মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কেন মুক্ত করে আনল তা নতুন প্রজন্মের কাছে বোধগম্য ও স্বচ্ছ ইতিহাসের মাধ্যমে তুলে ধরাই সময়ের দাবি।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের রক্তাক্ত পটপরিবর্তনের পর ৩, ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ছিল কার্যত সরকারবিহীন। কথিত প্রতিবিপ্লবী সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় বন্দী করে রাখেন। শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয় ঘটনাবলির ধারাবাহিকতায় ৬ নভেম্বর রাতে সংঘটিত সিপাহি-জনতার মিলিত বিপ্লবে নস্যাৎ হয়ে যায় আধিপত্যবাদী শক্তির ক্রীড়নকদের সব ষড়যন্ত্র। চার দিনের দুঃস্বপ্নে প্রহর শেষ হয়। বন্দিদশা থেকে মুক্ত হন জিয়া। রেডিওতে ভেসে আসে তার কণ্ঠ- আমি জিয়া বলছি। এক সম্মোহনী ভাষণে তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ এবং কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান। ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় সিক্ত জেনারেল জিয়াউর রহমানের সংক্ষিপ্ত অথচ উদ্দীনতাপূর্ণ ভাষণ জনমনে আশার সঞ্চার করে। সেদিন জাতীয় ঐক্য ও সংহতির যে দৃশ্য জীবন্ত হয়ে উঠেছিল তা ছিল এক কথায় অভূতপূর্ব ও অভাবনীয়।
৬ নভেম্বর রাত ও ভোরে জনতার বাঁধভাঙা উল্লাস-উচ্ছ্বাসসহ ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরতে ৭ নভেম্বর টেলিগ্রাম প্রকাশ করে সরকারি ট্রাস্টের পত্রিকা দৈনিক বাংলা। সে টেলিগ্রামের প্রধান শিরোনাম ছিল ‘আমাদের স্বাধীনতা রাখবোই রাখবো : জিয়ার নেতৃত্বে সিপাহি জনতার বিপ্লব’। এ ছাড়াও টেলিগ্রামে ‘আমি জিয়া বলছি’ ও ‘উল্লাসে উদ্বেল নগরী’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদনসহ আরো করেকটি সাইড স্টোরি প্রকাশ করে। এর পরদিন থেকে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদসহ অন্যান্য পত্রিকা সিপাহি-জনতার বিপ্লব এবং সর্বস্তরের মানুষের অনুভূতি তুলে ধরে।
উপরে বর্ণিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনের শেষ অংশে জিয়াউর রহমানের ভাষণের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়- ‘বিজয়োল্লাসে সমগ্র দেশবাসী যখন আনন্দে উদ্বেলিত, জেনারেল জিয়াউর রহমান তখন শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সশস্ত্র বাহিনী এবং সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাইলেন। দেশের সর্বত্র অফিস, আদালত, যানবাহন, বিমানবন্দর, মিল-কারখানা পূর্ণভাবে চালু রাখার নির্দেশ প্রদান করিলেন। তাঁহার এই আহ্বান ও নির্দেশে সৈনিক ও জনগণ ফিরিয়া পাইল ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা।’
ইত্তেফাকের রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়- ‘স্মরণীয় যে, গত আগস্ট মাসে সরকার পরিবর্তনের পর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান পদে নিয়োগ করা হয়। গত সোমবার তিনি এক চক্রান্তের শিকার হইয়া আটক হন। কিন্তু বাংলার দেশপ্রেমিক বীর সিপাহিরা গত শুক্রবার প্রভাতে সমস্ত চক্রান্তের অবসান ঘটাইয়া তাহাদের প্রিয় মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন এবং তাহাকে স্বীয় পদে বহাল করেন। সেনাবাহিনী আজ তাহার সুযোগ্য পরিচালনায় আস্থাশীল আর দেশবাসী সেনাবাহিনীর জাগ্রত চেতনা ও কর্তব্যবোধে নিশ্চিন্ত, আশাবাদী (দৈনিক ইত্তেফাক : ৯ নভেম্বর, রবিবার ১৯৭৫)।
সিপাহি-জনতার মিলিত বিপ্লবোত্তর বিজয়োল্লাসের বিররণ দিতে গিয়ে দৈনিক বাংলা পত্রিকা ‘কণ্ঠ’ আর ‘বুলেট’-এর মিলিত স্লোগানের কথা তুলে ধরে। অর্থাৎ গগন কাঁপানো স্লোগানের পাশাপাশি সৈনিকরা শূন্যাকাশে তাদের বন্দুকের গুলি ছুড়ে বিজয় উদযাপন করে। তাৎক্ষণিক প্রকাশিত দৈনিক বাংলার টেলিগ্রামের প্রতিবেদনে বলা হয়- ‘সিপাহি জনতার মিলিত বিপ্লবে চার দিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষ হয়েছে। মেজর জেনালের জিয়াউর রহমান সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় একটায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর জোয়ানরা বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটায়। শুক্রবার সকাল সাড়ে চারটায় রেডিও বাংলাদেশ থেকে ঘোষিত হয়- ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে উদ্ধার করেছেন বিপ্লবী সিপাহীরা। এর কিছুক্ষণ পর জেনারেল জিয়া জাতির উদ্দেশে তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।’
প্রতিবেদনটিতে সে দিনের চিত্রটি ফুটিয়ে তোলা হয় এভাবে- “মিছিল মিছিল আর মিছিল- বিপ্লবের, বিজয়ের, উল্লাসের মিছিল। স্লোগান আর স্লোগান- কণ্ঠের আর বুলেটের মিলিত স্লোগান। করতালি আর করতালিতে প্রাণের দুন্দুভি। আকাশে উৎক্ষিপ্ত লাখো হাত একের পর এক হচ্ছে প্রভাতের স্বর্ণ ঈগল। পথে পথে সিপাহি আর জনতা আলিঙ্গন করছে, হাত নেড়ে জানাচ্ছে অভিনন্দন- কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত- এক কণ্ঠে এক আওয়াজ- ‘সিপাহি জনতা ভাই ভাই; জওয়ান জওয়ান ভাই ভাই; বাংলাদেশ জিন্দাবাদ; মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ; আমাদের আজাদি রাখবোই রাখবো; হাতের সঙ্গে হাত মেলাও- সিপাহি জনতা এক হও’।”
প্রতিবেদনে বর্ণনা উঠে আসে- ‘এত আনন্দ, এত উল্লাস- সিপাহি ও জনতার হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের কোরাস, স্লোগানের মধ্যে কামানের এমন অর্কেস্ট্রা- এ এক অজানা ইতিহাস। সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার- এই চার দিনের দুঃস্বপ্নের প্রহর পেরিয়ে এসেছে শুক্রবারের সোবেহ সাদেক, সিপাহি ও জনতার মিলিত বিপ্লব এনেছে শুক্রবারের বিজয়ের সূর্য। ঢাকা উল্লাসে টালমাটাল; বাংলাদেশ আনন্দে উদ্বেল। এই রিপোর্ট আমরা যখন লিখছি তখনো পথে পথে একের পর এক বিজয় মিছিল যাচ্ছে- ট্রাকে চেপে, পায়ে হেঁটে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বাংলাদেশ রাইফেলস, পুলিশ, আনসার ও দমকল বাহিনীর এক একটি দল যাচ্ছে- করছে রাজধানীর পথ পরিক্রম। তাদের সাথে একই ট্রাকে-লরিতে রয়েছে নানা স্তরের জনগণও। পথে পথে ঘুরছে ট্যাংক আর আর্মার্ড কার। পেছনে পেছনে জনতা। কোনো কোনো ট্যাংক ও আর্মার্ড কারেও জনতা উঠে বসেছে। স্লোগানে স্লোগানে আকাশে নিক্ষিপ্ত সিপাহিদের গুলিতে- আনন্দে-উচ্ছ্বাসে উদ্বেল নগরী।’
বিপ্লবের সূত্রপাত সম্পর্কে দৈনিক বাংলা লেখে- ‘শুরু অনেক আগ থেকেই- বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত প্রায় দুটো-আড়াইটা থেকে। ঢাকার জনগণ যখন বুঝতে পারলেন- দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষ হয়ে আসছে- শুরু হয়েছে সিপাহি বিপ্লব- তখন থেকেই তারা রাজপথে নামতে শুরু করেছেন। এক পর্যায়ে দেখা গেল- ময়মনসিংহ রোডে হাজার হাজার লোক- নানা স্তরের নানা বয়সী। সিপাহিরা তাদের পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলেছেন। স্লোগান দিতে দিতে জনতা এগোচ্ছে ফার্মগেটের দিকে। রেডিও-ট্রানজিস্টারের পাশে জনতা উৎকর্ণ- মেজর জেনারেল জিয়া কখন ভাষণ দেবেন।’
বিশেষ টেলিগ্রামের প্রতিবেদনে আরো লেখা হয়- ‘ভোর হল। পথে পথে তখন জনতার জোয়ার। প্রাণের ঢল। ঢাকা নগরে তখন ছড়িয়ে গেছে বিজয়ের বারতা। পথের পাশে মোড়ে মোড়ে জনতা। সিপাহিরা ট্রাকের পর ট্রাকে লরির পর লরিতে যাচ্ছে। তারা উচ্চকণ্ঠে বলে যাচ্ছেন জয়ের কথা। পথের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের বক্তব্য রাখছে; স্লোগান দিচ্ছে আর তার সাথে সাথে স্লোগান জনগণের। বহু মহিলা এসে রাস্তার পাশে এখানে সেখানে জড়ো হয়েছে। স্কুল পড়া ছেলে-মেয়েরা এখানে সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনতা অভিনন্দন জানাচ্ছে, তাদের দিকে ফুল ছুড়ে দিচ্ছে, ফুলের মালা গলায় পরিয়ে দিচ্ছে। সিপাহিরা অভিনন্দন জানাচ্ছে জনতাকে। পথে পথে গাড়ি থেকে নেমে আলিঙ্গন করছে। তাদেরকে দেয়া মালা পরিয়ে দিচ্ছে জনগণের গলায়। ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের তালে তালে পথে পথে আনন্দনৃত্য করছে জনগণ। সকালে পথের পাশে এখানে সেখানে লোকজন আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছে। কোথাও কোথাও সড়কদ্বীপে পথচারীরা মিলিত হয়েছেন তাৎক্ষণিক মিলাদ মাহফিলে’ (দৈনিক বাংলা- টেলিগ্রাম : ৭ নভেম্বর, শুক্রবার, ১৯৭৫)।
সেদিনকার অন্যান্য সংবাদপত্রেও সিপাহি-জনতার বিপ্লবের জয়গান দেখা গেছে। সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে আবেগ মথিত ভাষায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সেই সব সংবাদপত্রই আজ ৭ নভেম্বরকে কলঙ্কিত করতে সচেষ্ট। নতুন প্রজন্মকে ভিন্ন ইতিহাসের পাঠ দিচ্ছে। আজ প্রিয় বাংলাদেশের চিত্র কি ৭ নভেম্বর পঁচাত্তর-পূর্ব পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন? আধিপত্যবাদের ক্রীড়নকরা কি অর্ধ-শতাব্দীর বাংলাদেশকে ফের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে ফেলেনি? আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি, কূটনীতি কি প্রতিবেশী আগ্রাসী শক্তির নাগপাশে নতুন করে আবদ্ধ হয়ে পড়েনি? এসব প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ সূচক হয়, তাহলে সিপাহি জনতার বিপ্লবের গুরুত্ব আজ কেন অপ্রাসঙ্গিক হবে? কোথায় সেই দেশপ্রেমিক সিপাহি-জনতা? কেন নতুন সুবহে সাদেকের জন্য জেগে উঠছে না? আশাবাদী মানুষ হিসেবে বলতে পারি- জেগে উঠবেই ইনশাআল্লাহ। কোনো এক ভোরে নামবে জনতার প্রাণের ঢল।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা