এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজনটা কী
- সালাহউদ্দিন বাবর
- ২৯ অক্টোবর ২০২২, ২০:২৬
আমাদের এই জনপদের সমস্যা সঙ্কটের কোনো অন্ত নেই। অনেকে হয়ত বললেন দেশের প্রধান সমস্যা রাজনৈতিক, রাজনীতিকদের মধ্যে ধৈর্য-সহ্যের অভাব, পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির সংঘর্ষ-সঙ্ঘাত, পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ সদভাবে-সহিষ্ণুতার অভাব। কেউ কেউ মনে করতে পারেন দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যের স্ফীতি, জ্বালানি-মারাত্মক সঙ্কট, অবনতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে জনদুর্ভোগ, সব মিলিয়ে আর্থসামাজিক অবস্থাকে তছনছ করে দিচ্ছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমঅবনতির কারণে জনগণ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন যাপন করছে। তা ছাড়া আরো অনেক সমস্যার কথাই বলা যায়। এসব সমস্যা অবশ্যই দেশ জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কষ্টকর বটে। এসব সমস্যা দূর করা না গেলে, আমাদের গন্তব্য যে কোন তিমিরে গিয়ে উপনীত হবে সেটি চিন্তা করা যায় না। এমন সমস্যার মিছিলকে সামনে রেখেই বলতে হয়, দেশে দক্ষ, যোগ্য, সক্ষম, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও গতিশীল, সংবেদনশীল একদল মানুষের প্রয়োজনটা এই মুহূর্তে জাতির সব চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেতে পারে। আমাদের সমাজে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় এমন গুণসমৃদ্ধ মানুষ নেই সে কথা বলছি না। কিন্তু তাদের যে সংখ্যা সেটি নিতান্তই মাইক্রোস্কোপিক মাইনোরিটিরই মতো। তা ছাড়া এখন তারাও পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের সযোগ পাচ্ছেন না।
এমন সব মানুষ যদি যথেষ্ট থাকত তাদের উল্লিখিত জ্ঞান-গরিমা বুদ্ধিব্যুৎপত্তি ও তাদের কর্মপটুতা, দূরদৃষ্টি আজকের সমস্যার যত জটজটিলতা সৃষ্টির পূর্বাহ্নে সেটি আঁচ করতে পেরে আগেই তার সমাধানের পথ-পদ্ধতি বের করে ফেলতে পারতেন। এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যবস্থাপনায় যে সব দক্ষ মানুষ নিযুক্ত রয়েছেন, তাদের সংখ্যা স্বল্পতার এবং পেশাদারিত্ব প্রদর্শনের পথ সঙ্কুচিত হওয়ার জন্য তাদের পক্ষে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বাঙ্গে এখন ব্যথা তাই তাদের পক্ষে সর্বত্র মলম লাগানোর কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। আট হাত শাড়িতে যেমন কোনো নারীর পর্দা আব্রু রক্ষিত হয় না, তেমনি আজকে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রে দেহও বেআব্রু থেকে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে একটা কথা মনে রাখতে হবে, যোগ্যতা মানে কিন্তু জাদুর কাঠি হাতে পাওয়া নয় যে, একজনের পক্ষের সব করে ফেলা সম্ভব।
মানুষ মানেই বুঝতে এবং ভাবতে হবে যে, তাদের সীমাবদ্ধতা থাকবেই। সেজন্য স্বল্পসংখ্যকের কাছ থেকে সব কিছু পাওয়ার আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। দুর্ভাগ্য এখানেই, আমাদের যারা রাষ্ট্রব্যবস্থার স্টিয়ারিং ধরে আছেন, তাদের মনমস্তিষ্কে এই বিষয় আছে কি না কে বলবে। আমরা যে অবস্থাটা এখন দেখছি ও জানি, সুচের পেছনে যে খুব সরু ছিদ্রটা রয়েছে তার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করবে, দড়ি নয়। কিন্তু যারা রাষ্ট্রতরীর হালটা ধরে আছেন, তাদের বোধ-বিবেচনায় বিষয়টি খোলাসা কি না, সেটি আমরা বুঝতে পারছি না। কেননা যদি সেই পর্যায়ে সব কিছু থাকত তবে তো দেশের হাল হকিকত এমন হওয়ার নয়। দেশের হাল ধরে থাকা সেই মাঝি যদি না বোঝেন ডুবোচর কোথায় রয়েছে, পানির রঙ দেখেই সেটি তাকে বুঝতে হবে। আমাদের সমস্যার মুখ্য হেতু কী, আমরা হয়ত অল্প বিস্তর বুঝতে পেরেছি।
এ কথাও মনে রাখতে হবে, দক্ষ সক্ষম মানুষ অবশ্যই দেশের মূল্যবান সম্পদ; এসব সম্পদ আকাশ থেকে নেমে আসেনি বা মাটি ফুঁড়ে বের হয়নি। এই ধাঁচের মানুষ এখান থেকেই তৈরি হয়েছে এবং তৈরি করতে হবে। এখান থেকে তারা দক্ষতা পারঙ্গমতা সব কিছু অর্জন করেছেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং স্ব-উদ্যোগে ও অধ্যবসায় ও অনুশীলনের মাধ্যমে। আজো এমন সৃষ্টিশীল প্রাণ তৈরি হচ্ছে না এমন নয়। কিন্তু সমাজ বাস্তবতা তাদের হতাশ নির্জীব করছে। তাদের মনে হামেশাই প্রশ্ন জাগছে। তারা এমন এক অব্যবস্থার খাঁচায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে যেখান থেকে মুক্ত হতে হবে। প্রথম সুযোগেই তারা দেশান্তরিত হচ্ছেন। গুণীর আদর যত্ন করতে আমরা না শিখলেও বিশ্বের বহু দেশেতেই সে শিক্ষা আছে। এদের সঠিক পরিচর্যা করে তাদের আরো তী² শাণিত করে সে মেধার ষোল আনা নির্যাস বের করে নিচ্ছে। আর দিন দিন এরা আরো কর্মপটু হয়ে উঠছে। এভাবেই ‘আমারি বধূয়া আন বাড়ি যায় আমারি আঙ্গিনা দিয়া’। তখন শুধু আক্ষেপ করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এই অবস্থার যদি কোনো পরিবর্তন করা না যায়, তবে এ জনপদ একটি ‘ব্যারিন্ড ল্যান্ড’ এ পরিণত হবে। তখন সে জমিনে কোনো ফলবতী বৃক্ষ বর্ধিত হবে না, এক সময় সেটি ঝাড়-জঙ্গলে পরিণত হবে আর তখন হিংস্র জন্তুর অভয়ারণ্যে পরিণত হবে।
এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আসলে আমরা কী চাই। একটি শ্যামল শোভার স্বদেশ ভূমি নাকি জন্তুদের এমন এক অঞ্চল, যেখানের মানুষের বসবাসের সুযোগ আর কোনোভাবেই থাকবে না।
বিদ্যমান এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে দেশে কেবল পরে থাকবে মেধাহীন অদক্ষ অলস অযোগ্যদের দল। তা-ও যদি এদের গড়ে পিটে নেয়া যেত, অর্থাৎ চলনসই করে নেয়া সম্ভব হতো তবে অন্তত, ‘দুধে স্বাদ ঘোলে’ মেটানো যেত। কিন্তু তার তো কোনো আঞ্জাম আয়োজন দেখতে পাওয়া যায় না।
পক্ষান্তরে এমন সব অদক্ষ, অযোগ্য, অর্বাচীন মানুষের সংখ্যা বেসুমার এবং ক্রমবর্ধমান। এসব মানুষকে গড়ে পিটে কিছুটা কর্মোপযোগী করে তুলতে পারলে এখানে যেমন এদের জাতি গঠনের কাজে লাগানো সম্ভব হতো তারা মধ্যপ্রাচ্যে গেলেও নিছক ‘আদম’ নয়, অনেকটা ‘সক্ষম’ জনশক্তি হিসাবে গিয়েও দেশের মর্যাদা ও অর্থ অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পারত। অবস্থাদৃষ্টে তো অদূর ভবিষ্যতে এমন পরিবর্তনের আশায় বুক বাঁধার কোনো আলামত কেউ দেখছে না। তবে এটা ঠিক, ব্যক্তি বিশেষের তরক্কির এখন আঁখি তা দিয়ে দেয়ার মতো বহু আলোকচ্ছটায় নিয়ত মানুষের চোখের ‘রেটিনায় জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। ক্ষুধার্ত লক্ষ্য মানুষের সম্মুখে গুটিকতক মানুষের সুখাদ্যের ব্যবস্থা করা কতটা নির্মম আর সেটি ভাবলে কার না পিত্তি জ্বালা আপাদমস্তক ছড়িয়ে পড়বে না। সাধারণ নীতি বোধ কি ও দেশের বিধিবিধানে এমন বৈষম্যকে অনুমোদন কি দেয়।
বৈষম্যের এমন কদাকার রূপ দূর করা সদিচ্ছা সক্ষমতা না থাকলেও কর্তৃপক্ষ কিন্তু কথায় খুব ‘দর’, তারা বাক্যবিন্যাস করে আসমান ফুটো করে ফেলতে পারেন, বিশ্বকে উল্টে-পাল্টে ফেলতে পারেন। তবে কাজের বেলায় ‘ঠনঠনা’; বাস্তবে সমস্যার সামনে থেকে ‘রণে ভঙ্গ’ প্রবরদের অর্থহীন, অর্বাচীনের মতো আচরণের নেপথ্যে রয়েছে বোধ ও বুদ্ধিহীনতা। দেশের মৌলিক সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করা এবং সে সবের সুরাহার ক্ষেত্রে রয়েছে অজ্ঞতা বা অনভিজ্ঞ থাকার বিষয়টি এতই প্রকট যে, মনে হবে তারা এই সমাজের কোনো মানুষ নয়- কোনো দূর দেশে তাদের বসবাস। এমন অভিজ্ঞতা ও কষ্ট বেদনা নিয়েই এ দেশের মানুষ গত ৫১টি বছর এভাবে অবহেলার মধ্য দিয়ে যাপন করে চলেছে।
অবাক হই তাদের কাণ্ডজ্ঞান অবলোকন করে, রাষ্ট্রতরীকে ঘাটে বেঁধে রেখেই দাঁড় টেনেছে সম্মুখে যাওয়ার জন্য। এ থেকে বোঝা যায় তারা বাস্তবতা থেকে কতটা দূরে এবং তাদের দায় বোধ নিয়ে কতটা অমনোযোগী। এসবই একান্ত হেলাফেলা আর বেখেয়ালিপনা উদাহরণ। দেশের দায়িত্বটা তখনই সম্পন্ন করা সম্ভব, যখন তার যথাযথ কর্মসূচি নেয়া হয়। সে কর্মসূচি তৈরির জন্য পূর্বাপর সব কিছু বিচার-বিবেচনা করে ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থেকেও উত্তীর্ণ হবার প্রয়াস নিতে হবে। এমন করে রাষ্ট্র তরীকে ভাসিয়ে রাখা এবং তাকে গতি দান করা সম্ভব হবে। কিন্তু এখন কি সেটা প্রতিভাত হয়ে উঠছে? সামগ্রিকভাবে দেশের সব সমস্যা-সঙ্কটকে বিবেচনার বাইরে রেখে এবং সমন্বিত উদ্যোগ আয়োজনকে দূরে রেখে, এখান থেকে ওখান থেকে লোক দেখানোর মতো কিছু কাজ হাতে তুলে নেয়া হচ্ছে রাজধানীতে। কেবল দেহের মুখমণ্ডলে রক্তের প্রবাহ খানিকটা বৃদ্ধি করে সারা শরীরকে পাণ্ডুর করে রাখা, অবশ্যই তাকে স্বাস্থ্য লক্ষণ বলা যাবে না। তাহলে দিন শেষে দেখা যাবে গোটা দেহটাই অচল অসার হয়ে গেছে।
এখন খুব বেশি পেছনে না গিয়ে হাল আমলের কথা নিয়েই আলাপ করি, সেটার অবশ্য কারণ রয়েছে। সে কারণটা এই, যারা দেশের দায়িত্বটা জোর-জবরদস্তি করে নিজেদের স্কন্ধে তুলে নিয়েছেন, সে জন্য তাদের যে প্রস্তুতি সক্ষমতা ও প্রয়াস থাকার দরকার ছিল- সেটা কি তাদের ছিল? সে কথা না হয় থাক। আজকে প্রতিটি মানুষ যদি তার চার পাশে দৃষ্টি ফেলে শান্তি শৃঙ্খলাভাবে বসে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দেখছে কি? কোনো ভরসা স্বস্তি তার মধ্যে সৃষ্টি হবে বলে মনে করা যাবে না কিন্তু এ বিষয়গুলো যদি কাগজের পাতায় বাণীবদ্ধ করা হয় তাতে মহল বিশেষের মধ্যে অপরিসীম ক্রোধ, উষ্মা উন্মত্ততা, সৃষ্টি হচ্ছে। এমন হলে মানুষের ছোট ছোট সুখ, ছোট ছোট অনুভূতি নিয়ে বাঁচা কি সম্ভব হবে?
প্রতি সফল রাষ্ট্র তথা যে রাষ্ট্র, সে দেশের প্রতি নাগরিকের জন্য পাঁচটি মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও চিকিৎসা পূরণের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারপর প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার, নিরাপত্তা বিধান, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পেরেছেন, সেসব দেশের নায়করা অর্থাৎ রাজনীতিকরা দেশ ও দশের কামনা বঞ্চনা পূরণের ক্ষেত্রে যে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছেন। তার পেছনে কোনো জাদুমন্ত্রের কারসাজি ছিল না, ছিল যোগ্যতা, সক্ষমতা ও নিরলস পরিশ্রম প্রিয়তা এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা, বোধ বিবেচনা, দূরদৃষ্টি প্রতিশ্রুতি ও দায়বদ্ধতা। পক্ষান্তরে এই মৃত্তিকার যে সন্তানদের, রাজনৈতিক অঙ্গনে যাদের নিত্য পদচারণা, তাদের মনমানস-মস্তিষ্কেই কি খুব পাক খায় না জনগণের স্বার্থ চিন্তা? বরং দেখা যাচ্ছে, তাদের লক্ষ্য কেবল ব্যক্তি গোষ্ঠীর তরক্কি। এই ক্ষুদ্র বলয় থেকে তাদের বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তাই এই জনপদের সাধারণের দুঃসময় দুর্ভাগ্য, বেদনা কখনো দূর হতে পারেনি। মূল চেতনায় পরিবর্তন না ঘটলে কিছু কি হতে পারে?
এই সব রাজনীতিকের প্রতি মুহূর্তের সহচর অনুরাগীদের বশে রাখতে তাদের কামনা-বাসনা পূরণের জন্য ওদের ‘ওজিএল’ দেয়া হয় তাদের আখের গোছানোর জন্য; লুটপাট দুর্নীতি ও সমাজের রক্ত শুষে খাওয়া জায়েজ করা হয়েছে। এরা সেই সব গুরুজনের আশকারা পেয়ে যে নৈরাজ্য সর্বত্র সৃষ্টি করছে, যা জাতীয় উন্নয়ন আকাঙ্ক্ষাকে দুমড়ে-মুচড়ে তার স্বরূপ পাল্টে দিচ্ছে; তাদের এমন কর্মকাণ্ডে জনগণের লালিত স্বপ্ন খান খান হয়ে ভেঙে পড়তে চলেছে। গত প্রায় দেড় দশক ধরে সেই দুর্জন দুর্বৃত্তরা ধরাকে সরা জ্ঞান করার মতো জঘন্য খেলায় মেতে আছে। এর পরিণতি হয়েছে সব ধরনের শুদ্ধাচার মূল্যবোধ ন্যায়নীতির যে সংস্কৃতি সেটি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। ফলে দেশে আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে এক মহাদুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া।
এই পতন পচনের বিরুদ্ধে যারা রুখে দাঁড়ানোর জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে তৎপর এবং আইনশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে প্রতিপক্ষের সাথে সব রকম সঙ্ঘাত-সংঘর্ষ এড়িয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তা কি না বর্তমান পক্ষশক্তির আহার-নিদ্রাকে বিস্বাদ করে দিচ্ছে, এই শক্তি এখন নিজেদের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার সব রকম আয়োজন করে যাচ্ছে। তাদের প্রতিপক্ষের সভা-সমাবেশে মানুষ পঙ্গপালের মতো গিয়ে হাজির হচ্ছে হাজার বাধা-বিপত্তি ও পথকষ্ট উপেক্ষা করে হাজির হয়ে এ কথা জানান দিচ্ছে যে, তারা এখন অতিষ্ঠ এবং এই মুহূর্তেই পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা করে। এতকাল পক্ষ শক্তি প্রতিপক্ষকে লক্ষ করে বলে আসছে ‘আমি কি ডরাই সখি, ভিখারি রাঘবে’ কিন্তু এখন সব কিছু যেন ওলট-পালট, তারা শুধু ভীত নয় কেউ কেউ ‘অতিসারের রোগী’। বরাবর তারা সোচ্চার ছিল, সব মানুষের মণিকোঠায় কেবল তারাই, সত্যকে কখনোই কেউ কিন্তু দীর্ঘ সময় লুকিয়ে রাখতে পারে না। তারা এতকাল নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের যে প্রবোধ দিয়ে এসেছে, সেখানে ভাঙন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে, এখন তাদের সব খোয়াব ছুটে যাচ্ছে। পরিস্থিতি পক্ষের হাত থেকে ফসকে গিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে ছুটছে। অথচ তারা বলেছিল, তাদের কোনো এক অঙ্গসংগঠনই নাকি প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতেই যথেষ্ট! তারা সব প্রতিপক্ষকেই রুখে দিতে সক্ষম; এটা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য না ভিন্ন কোনো কিছুর ইঙ্গিত সেখানে লুক্কায়িত আছে!
রাজনীতিকে পাল্টা রাজনীতি দিয়েই প্রতিহত করতে হয়, সেটাই শুদ্ধ রাজনীতি। তারা হয়ত ভাবতে পারছেন না, সে বিশ্বাস ভেঙে গেছে, অবস্থাদৃষ্টে এটাই মনে করতে হবে, তাদের রাজনীতি ব্যর্থ। সে জন্য ছল চাতুরী, প্রতিবন্ধকতা ও সঙ্ঘাতের পথ কি ধরতে চলেছেন, সম্মুখে পুলিশি ব্যবস্থাকে রেখে?
পক্ষশক্তি আমলাদের তাদের দলের সুহৃদ করে নিয়ে এতকাল এগিয়ে চলেছেন। এখন কিন্তু আমলাদের ব্যাপারে তাদের বিশ্বাসের ভিত হয়ত কিছু ‘শেইকি’ হয়ে পড়েছে। যেসব আমলা নিজেদের পেশাদারিত্বকে বেশি মূল্য দেয়ার পক্ষপাতী, তাদের নিয়ে এখন পক্ষশক্তি তাদের প্রতি সন্দিহান। এমন সব আমলাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে এবং তাদের বিদায় করে দেয়ার পথ ধরেছে। ইতোমধ্যে কতককে বিদায় করা হয়েছে এবং আরো অনেককে বাদ দেয়ার জন্য তালিকা প্রস্তুত করছে। এটাই যথার্থ যে, যারা পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তারাই আসলে যোগ্য দক্ষ। এদের চাকরিচ্যুত করা হলে প্রশাসনের বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। পরে অন্যরা ক্ষমতাসীন হলে তারা যদি একই পথ ধরে চলতে শুরু করেন, তবে লোম বাছতে বাছতে কম্বলই উজাড় হবে। এই পথ থেকে সরে আসা উচিত। এভাবে যদি এ ধরনের মানসিকতার বিস্তৃতি ঘটতে থাকে তবে গোষ্ঠী স্বার্থের কতটুকু কী হবে জানি না কিন্তু একটা খুব খারাপ নজির দেশে সৃষ্টি হবে। এখন পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় রয়েছেন, তাদের সব কর্মকাণ্ডের যদি পর্যালোচনা করা হয় তবে দেখা যাবে তারা বারবার খারাপ নজিরই রেখে চলেছেন। এসব যদি একত্র করা হয়, তবে এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছতে হবে, আজকে দেশ যে অবস্থায় পৌঁছেছে তার জন্য একক দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।
ndigantababar@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা