ব্যাপারটি ভাবা দরকার
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ১৬ অক্টোবর ২০২২, ২০:১৯
সকালে অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, ব্যবসায় তথা কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় একটি সাধারণ দৃশ্য দেখে সবাই অভ্যস্ত। অভ্যস্ত বলেই এটি নিয়ে কেউ খুব একটা ভাবি না। দৃশ্যটা হচ্ছে, ছোট ছোট ছেলেরা বলতে গেলে আদুল গায়ে, খালি পায়ে কোনো রকম রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ছাড়াই প্রত্যেক বাসা থেকে গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহ করছে। এসব বর্জ্যরে ভেতর সাধারণ বর্জ্যরে পাশাপাশি থাকে সংক্রামক বর্জ্য, থাকে ধারালো বর্জ্য। বিভিন্ন বাসা থেকে এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে ছেলেরা একটা ড্রামে তোলে। এরপর দু’জন মিলে বর্জ্যভর্তি ড্রাম টেনে নিকটবর্তী নির্দিষ্ট বর্জ্য সংগ্রহের জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে। এখানে আবার এই বর্জ্য থেকে খালি হাতে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্যকে বেছে আলাদা করা হচ্ছে। আলাদা করার কাজে শুধু ছেলেরাই নয়, মহিলাদেরকেও দেখা যায়। সমগ্র ব্যাপারটার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, শহরকে বাসযোগ্য রাখা। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা। দূষিত বর্জ্য থেকে যেন দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যেন বায়ুদূষণ না হয় তার ব্যবস্থা করা।
আধুনিক নগরীতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা যেমন নগরপতিদের দায়িত্ব, তেমনি নগরীর অধিবাসীদেরও এটিই কাম্য। এরই প্রতিফলন ঘটে নগরীকে পরিচ্ছন্ন রাখার মাধ্যমে। পৃথিবীর প্রতিটি বড় শহরে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এ কারণেই একটি মুখ্য বিবেচ্য বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শহরগুলোতেও এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে যে প্রসঙ্গটা উঠে আসে তা হলো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিশু-কিশোরদের ব্যবহার। সাংবিধানিকভাবে এ দেশে রয়েছে শিশুশ্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা। অন্য দিকে বর্জ্য সংগ্রহ একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এখানে রয়েছে সংক্রমিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। রয়েছে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি। এ ক্ষেত্রে শিশুদের ব্যবহার এক দিকে যেমন বেআইনি ও দৃষ্টিকটু, অন্য দিকে তেমনি অমানবিক। শিশুদেরকে দিয়ে ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করার প্রবণতা কোনোক্রমেই কোনো সমাজেই কাম্য নয়। শিশুরা স্কুলে যাবে, লেখাপড়া করবে, মুক্ত বিহঙ্গের মতো দিন কাটাবে, ভবিষ্যতের সোনালি স্বপ্নে পথ চলবে, নিজেকে বিকশিত করবে, নিজ প্রতিভার প্রকাশ ঘটাবে, এটিই হওয়ার কথা। পরিবর্তে অমানবিক, অস্বাস্থ্যকর, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করবে, বিশেষ করে বর্জ্যভাগাড়ে- এটি অনাকাক্সিক্ষত, এটি সামাজিক অপরাধ।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিশুসংগঠন, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো নিশ্চুপ। নিশ্চুপ শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এরাও নীরব।
শুধু ঢাকা শহরে লক্ষাধিক শিশু এ কাজে জড়িত। এদের বেশির ভাগ এসেছে বস্তি থেকে। অনেকেই এতিম বা এক অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে। এদের আর্থিক সঙ্গতি নেই লেখাপড়ার। নেই একটু স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের উপকরণ। এক হাজার টাকা থেকে চার হাজার টাকা মাসিক আয়ে তাদের এ জীবন বেছে নিতে হয়েছে। নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে নগরবাসীর জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে গিয়ে এরা নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করছে। নিজেদের জীবনীশক্তি নিঃশেষ করে দিচ্ছে। তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। একটি সুস্থ জীবনধারার সভ্য সমাজে এটি চলতে দেয়া যায় না।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের রয়েছে মৌলিক ও প্রধান দায়িত্ব। বিভিন্ন সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান ও শিশুসংগঠনকে নিয়ে জাতীয় শিশু নীতির আলোকে অবিলম্বে একটি কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন জরুরি। এসব শিশুকে যারা নিয়োগ দিচ্ছে তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। প্রয়োজন অবিলম্বে এসব শিশুর পুনর্বাসন। এদের সুস্থভাবে বাঁচার জন্য, বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন আবাসন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এরা আমাদের সমাজের অংশ, দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। আমাদের সন্তানদের মতোই তাদের বেড়ে ওঠার অধিকার রয়েছে। তাদের এ অধিকারকে সমুন্নত রাখার, বড় হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব আমরা কোনোভাবেই অস্বীকার করতে বা এড়িয়ে যেতে পারি না।
আর একটি ব্যাপার আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। স্বাভাবিক জীবনধারায় তাদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে এরা অপরাধ জগতে পা বাড়াবে। অপরাধ জগতের হাতছানিতে একবার জড়িয়ে গেলে সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যাহত হবে। একসময় দেখা যাবে তাদেরকে সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে, ক্যান্সারের মতো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্র্রে এরা ঢুকে পড়েছে।
লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email-shah.b.islam@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা