ঈশ্বর প্রশ্নে অজ্ঞেয়বাদের বিচার ও বৈকল্য
- মুসা আল হাফিজ
- ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৪৩
ঈশ্বর সম্পর্কিত অগম্যতা পশ্চিমা দর্শনের বড় একটি ঘরানাকে অজ্ঞেয়বাদী করে তুলেছে। এর মূলে আছে মানুষের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। সীমিত জ্ঞান অসীমকে ব্যাখ্যা করতে যথেষ্ট নয়, এই উপলব্ধি যখন কথা বলতে শুরু করল, হার্বার্ট স্পেন্সার (১৮২০-১৯০৩) পরম ও আদিসত্তার ব্যাখ্যায় অজ্ঞেয়বাদের আশ্রয় নিলেন। এ মতবাদের দাবি, পরম সত্তা কেবল অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয়ই নয়; বরং আমাদের সীমিত জ্ঞানের আকার ও উপাদান তাকে উপলব্ধি করতে সক্ষম নয় আদৌ। স্পেন্সার দেখান বৈজ্ঞানিক সত্যের ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তির সীমাবদ্ধ অভিজ্ঞতা। বৈজ্ঞানিক সত্য তাই পরম নিশ্চয়তা দিতে পারে না। ফলে অস্তিত্বের রহস্য উদ্ধারে বিজ্ঞানকে সক্ষম বলা যায় না। তার দ্বারা এ কাজ অসম্ভব। অভিজ্ঞতা দিয়ে এ অক্ষমতা দূর করা যায় না। পরম সত্তাকে জানা ও জানানোর সাধ্য যেহেতু বিজ্ঞানের নেই, ফলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বা অস্তিত্বহীনতা বিষয়ে মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এ মতবাদ ধর্মতত্তে¡র বিরুদ্ধে যেতে রাজি নয়, ধর্মতত্ত্বের পক্ষেও সে দাঁড়ায় না। দুই দিকের প্রতি পক্ষপাতহীন এক শূন্যতার দিকে তার অভিগমন। ধর্ম যেভাবে এক ধর্ম, ধর্মবিরোধিতাও এক ধর্ম হয়ে ওঠে।
অজ্ঞেয়বাদ উভয় অবস্থান থেকে পালায়; এ বিষয়ক জ্ঞানের প্রতি আস্থা হারিয়ে। ঈশ্বরে বিশ্বাস পোষণ করা বা বিরোধিতা করার পক্ষে জ্ঞান থাকতে হবে। অজ্ঞেয়বাদের মতে, উভয়টির মধ্যে জ্ঞান নেই। কারণ বিজ্ঞান উভয় বিষয়ের কোনো কিছুকেই প্রমাণে সক্ষম নয়। এর মানে হলো, জ্ঞান ও প্রমাণই কেবল বিজ্ঞান। এর উপরে আর কিছুই হতে পারে না। অন্য কিছুই আমাদের সত্য অবধি নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু বিজ্ঞানই যদি হয় একমাত্র জ্ঞান ও প্রমাণ, তাহলে কেন সে অজ্ঞেয়বাদের মতে, ঈশ্বরকে প্রমাণ বা প্রত্যাখ্যানে অক্ষম? তার এই অক্ষমতা কী দাবি করে? সত্যের জন্য তাকে সর্বোচ্চ উপায় ধরে নিলে তখন মানুষের জন্য অবধারিত হয় একটি সত্যবর্জিত অবস্থা। সেই সত্যরিক্ত জীবনকে স্বীকার করার দিকে আমাদের হাঁকিয়ে নেয় অজ্ঞেয়বাদ। কিন্তু দর্শনের প্রাণভোমরা হচ্ছে সত্যের জন্য নিরন্তর অনুসন্ধান।
ধনাত্মকভাবে অজ্ঞেয়বাদ দাবি করে বুদ্ধির ক্ষেত্রে কারণ অনুসন্ধান করে যেতে হবে। এ অনুসন্ধান আপনাকে যেখান থেকে যেখানে নিয়ে যাক। সেখানে অন্য কোনো বিবেচনার জায়গা নেই। ঋণাত্মকভাবে তার দাবি হলো বুদ্ধির ক্ষেত্রে ফলাফলকে সুনিশ্চিত মনে করতে নেই। যে উপসংহার প্রমাণিত বা প্রমাণযোগ্য, তাকেও সুনিশ্চয় ভাবতে নেই। তাই যদি হবে, তাহলে কেন বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে অনুসন্ধান সামনের দিকে অগ্রসর হবে না? কেন অজ্ঞেয়বাদী বিবেচনার ভিত্তিতে সে অনুসন্ধানকে এগুতে হবে? আর কেনই বা অজ্ঞেয়বাদের উপসংহারকে সুনিশ্চিত ভাবতে হবে?
অজ্ঞেয়বাদের নানামাত্রিক ভাষ্য থেকে অজ্ঞেয়বাদীদের বিভিন্ন ধারা জন্ম নিয়েছে। তাদের একটি অংশ উদাসীন। তারা বলেন, কোনো তর্কের ক্ষমতা নেই এক বা একাধিক ঈশ্বরকে প্রমাণ করবে। ঈশ্বর থাকলে আছে, না থাকলে নেই। যদি ঈশ্বর থাকেনও, তবুও মানুষের কল্যাণ-অকল্যাণের সাথে তার থাকা-না থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে ঈশ্বরের ব্যাপারটি নিতান্তই অগুরুত্বপূর্ণ।
একজন চরম অজ্ঞেয়বাদীর অবস্থান হলো ঈশ্বর আছেন কি নেই, তা আমি কখনো জানতে পারব না, আপনিও জানতে পারবেন না। একজন দুর্বল অজ্ঞেয়বাদী তার তুলনায় ইতিবাচক। তার অবস্থান হলো, ঈশ্বরের থাকা বা না থাকা এখনো অপ্রমাণিত। এর মানে এই নয় যে, চিরকাল তা অপ্রমাণিত থাকবে। তবে যে অবধি প্রমাণ পাচ্ছি না, সে অবধি তার বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
মার্কিন দার্শনিক উইলিয়াম এল. রোয়ে (১৯৩১- ২০১৫) অজ্ঞেয়বাদকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন অনিশ্চয়তা দিয়ে। ঈশ্বরের থাকা বা না থাকার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা আছে এর মর্মমূলে। অজ্ঞেয়বাদ দাবি করে, ঈশ্বর আছেন, এর প্রমাণ মানুষের নাগালের বাইরের বিষয়। আবার ঈশ্বর নেই, তার প্রমাণও মানুষের নাগালের বাইরের বিষয়। ফলে এ মতবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্ব না করে স্বীকার, না করে অস্বীকার। এ পরিস্থিতি ও ভাবধারাকে বোঝাবার জন্য অজ্ঞেয়বাদ বা agnosticism কথাটার প্রথম প্রয়োগ করেন ইংরেজ জীববিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলি (১৮২৫-১৮৯৫) ১৮৬৯ সালে।
জাপানি বংশজাত আমেরিকান দার্শনিক জর্জ এইচ স্মিথ (১৯৪৯-২০২২) অজ্ঞেয়বাদকে বুঝাতে চেষ্টা করেন ভিন্নভাবে। একে ঈশ্বরে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের তৃতীয় বিকল্প হিসেবে মানতে তিনি নারাজ। তিনি ভিন্ন এক অবস্থার নির্দেশ করেন। যেখানে আপনি হতে পারেন অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক কিংবা অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক। অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিক এমন কেউ, যিনি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। তবে বিশ্বাস না করার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ আছে, এমন দাবিও করেন না। অজ্ঞেয়বাদী আস্তিক হলেন এমন কেউ, যিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন। আর সেই বিশ্বাসের পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো যুক্তির ধার ধারেন না। কোনো যুক্তি ছাড়াই তিনি বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর আছেন। আরেকজন কোনো যুক্তি ছাড়াই বিশ্বাস করেন ঈশ্বর নেই। উভয়েই অজ্ঞেয়বাদী হতে পারেন। একজন আস্তিকরূপে, আরেকজন নাস্তিকরূপে। জর্জ স্মিথ তার Atheism: The Case Against God গ্রন্থে এটি খোলাসা করেন স্পষ্টভাবে। তার ভাষ্য হলো, অজ্ঞেয়বাদী নাস্তিকরা নাস্তিক, কারণ তারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখে না। আবার তারা অজ্ঞেয়বাদী, কারণ তারা বিশ্বাস করে, স্রষ্টার অস্তিত্ব মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়।
অজ্ঞেয়বাদী আস্তিকরা আস্তিক। কারণ তারা স্রষ্টার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে। আবার তারা অজ্ঞেয়বাদী। কারণ তারা বিশ্বাস করে স্রষ্টা আছেন, কিন্তু তাকে মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, জর্জ স্মিথে এসে অজ্ঞেয়বাদ নতুন মাত্রায় বিবৃত হয়েছে। কিন্তু এর গোড়ায় থাকছে সন্দেহ। স্কটিশ দার্শনিক ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৬৬) দেখান মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোনো তথ্যই পুরোপুরি সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। মানুষের জ্ঞান-প্রজ্ঞার প্রশ্নে এই যে সন্দেহবাদ, পশ্চিমা দর্শনে এর প্রগলভমুখরতা অনেক প্রাচীন।
গ্রিক দার্শনিক প্রোটাগোরাস (৪৮১ খ্রিষ্টপূর্ব-৪২০), পিরহো (৩৬৫-২৭৫ খ্রি.পূ.), ফিলিয়াসের টিমন (৩২০-২৩৫ খ্রি: পূর্ব), সেক্সটাস এম্পিরিকাসসহ (জীবনকাল: খ্রি: পূর্ব দ্বিতীয় শতক) অনেকের কণ্ঠে সন্দেহবাদ প্রবল মতবাদের রূপে উচ্চকিত। তাদের যাপিত জীবনও ছিল প্রবল সন্দেহের অন্ধকারে আচ্ছাদিত। সন্দেহবাদের প্রবর্তক পিরহোর জীবনের একটি গল্প যাকে ব্যক্ত করে প্রখরভাবে। দুই কাজের মধ্যে একটি অন্যটির চেয়ে উত্তম, এটি তিনি বিশ্বাস করতেন না। একদিন বিকেলে প্রাত্যহিক ভ্রমণের সময় দেখতে পেলেন তার দর্শনের অধ্যাপক একটি গর্তে পড়ে মাথাসমান ডুবে আছেন।
কোনোভাবেই তিনি উপরে উঠতে পারছেন না। পিরহো দৃশ্যটি দেখছিলেন আর ভাবছিলেন। তিনি ভাবছিলেন এই বুড়োকে টেনে তুলে তিনি যে কাজ করবেন, সেটি যে ভালো, এর তো কোনো প্রমাণ নেই। ফলে গর্তে পড়া গুরুকে উদ্ধার করার কাজটি, উদ্ধার না করার চেয়ে উত্তম এমন কোনো প্রমাণ না থাকায় তিনি তাকে উদ্ধার করলেন না। অন্য লোকেরা পিরহোর গুরুকে উদ্ধার করেছিল বটে। কিন্তু গুরু খুবই খুশি ছিলেন পিরহোর প্রতি। কারণ তিনি সংশয়বাদী বিবেচনায় ছিলেন সঠিক। পিরহো বলতেন, আমাদের বিচার বানানো থেকে দূরে থাকা উচিত কারণ আমরা কখনো প্রকৃত সত্যতা কী, তা জানতে পারব না। পিরহোর বিচারে মতামত বানানো সম্ভব, কিন্তু নিশ্চয়তা এবং জ্ঞানকে জানা অসম্ভব। ঈশ্বরের ব্যাপারটিও তার কাছে অন্ধকার এলাকা। প্রোতাগোরাস বলেছিলেন, ঈশ্বর আছেন কি নেই, এটা জানারই কোনো মানে নেই।
যদিও হিন্দু দার্শনিক ঐতিহ্যে অজ্ঞেয়তা ঋগ্বেদের দশম অধ্যায়ের ‘নাসাদিয়া শুক্তা’য় প্রকটিত। ভারতীয় বহু দার্শনিক হয়েছেন সংশয়বাদী এবং প্রাচ্যের দার্শনিকতায় এর প্রভাব যদিও অগভীর নয়, কিন্তু পশ্চিমা দর্শনে সংশয়বাদ যে বলীয়ান বিস্তৃতিতে সক্রিয়, তার নজির কোথাও নেই। ঈশ্বর থাকলে আছে, না থাকলে নেই- এমনতরো ভাবধারা পশ্চিমা মনের গহিন গহনে প্রবলভাবে সক্রিয়। সেখানকার শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, জীবনবোধ ও জীবনবেদ এর প্রভাবকে অস্বীকার করেছে কম, কবুল করেছে বেশি। এর জগদ্দল শিলার আড়ালে পশ্চিমা মন সহস্র বছর ধরে বন্দিত্ব বরণ করছে। এ থেকে বের হতে পারছে না। গ্রিকদের পরে সেন্ট অগাস্টিন (৩৫৪-৪৩০ খ্রি.), টমাস একুইনাস (১২২৫-১২৭৪ খ্রি.) থেকে নিয়ে ডেকার্তে (১৫৯৬-১৬৫০) কিয়ের্কেগার্ড (১৮১৩- ১৮৫৫); চেষ্টা তো কম হয়নি। উল্টো বরং পশ্চিমা দর্শনে অবিশ্বাসের উদযাপন হয়েছে মুক্তি বিবেচনা করে। এ উদযাপনের ধারা কান্ট-স্পেন্সারে এসে নবযুগ লাভ করল।
জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) যদিও ঈশ্বর, স্বাধীনতা ও অমরত্বকে নৈতিকতার প্রতি সর্বোচ্চ অঙ্গীকার ও নিষ্ঠার জন্য আবশ্যক বলে মনে করতেন। তবুও তিনি তার নৈতিক মত তৈরিতে ঈশ্বর ও পরকালকে বাদ দিয়েছেন।
তিনি মানবীয় জ্ঞানের বিশ্লেষণ করেন। তার বিশ্লেষণে মানুষের জ্ঞান কেবলমাত্র পরিদৃশ্যমান বা গোচরীভূত জগতের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। মানব জ্ঞান প্রতিভাসিক জগৎকে অতিক্রম করে কখনো অতীন্দ্রিয়লোকে পৌঁছাতে পারে না।
স্পেন্সারের মতবাদে কান্ট প্রতিধ্বনিত হলেন নানাভাবে। স্পেন্সার দেখাতে চাইলেন সীমাবদ্ধতা মানবজ্ঞানের অলঙ্ঘনীয় বাস্তবতা। যা নিয়ে সে অসীম ও অনন্ত পরম সত্তার জ্ঞান পেতে পারে না। পরম সত্তা স্বাধীন, স্বপ্রতিষ্ঠিত, সাশ্রয়ী ও অনপেক্ষ। কিন্তু মানবজ্ঞান অন্যের মুখাপেক্ষী, পরাধীন ও সীমায়িত। ফলে জ্ঞানের ধর্ম আর পরম সত্তার ধর্ম একেবারেই আলাদা। অতএব জ্ঞানের কাছে পরম সত্তা অজ্ঞাত ও অজ্ঞেয় থাকতে বাধ্য।
তাহলে দেখা যাচ্ছে অজ্ঞেয়বাদ নিরপেক্ষ মতবাদ হিসেবে থাকতে চায়। কিন্তু তাকে কি আমরা নিরপেক্ষ মতবাদ হিসেবে দেখব? সে জ্ঞানের উচ্চতর উৎসসমূহের প্রতি উদাসীন এবং ইলহাম (অন্তরে ঐশী অবগতি ঢেলে দেওয়া), কাশফ (দিব্যচক্ষুর উন্মোচন) ও ওহির মাধ্যমে মানুষের সত্য লাভের সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করেই ধরে নিয়েছে মানুষের পরম সত্যজ্ঞান অসম্ভব। একেবারে ভুল প্রক্রিয়ায় সে কিছু বিষয়কে পরস্পরবিরোধী হিসেবে চিত্রিত করেছে। যেমন নিরপেক্ষতা বনাম সাপেক্ষতা, পরম সত্তা বনাম তার প্রতিভাস। নিরপেক্ষতা ও সাপেক্ষতার মধ্যে ভিন্নতা আছে প্রচুর। কিন্তু তারা সব সময় পরস্পরবিরোধী নয়। তারা নানা জায়গায় বিপরীত বটে, তবে নানা জায়গায় সহযাত্রীও।
অজ্ঞেয়বাদ সীমিত জ্ঞানের কথা বলে। কিন্তু অসীম জ্ঞানের সাথে তার সম্পর্কের সম্ভাবনা কেন অস্বীকার করতে হবে? সাপেক্ষ জ্ঞান পেতে হলেও তাকে যুক্ত করে দেখতে হয় নিরপেক্ষ জ্ঞানের সাথে।
অজ্ঞেয়বাদ যাকে শেষ কথা বলে হাজির করতে চায়, সে আসলে শেষ কথা নয়। বিজ্ঞানে শেষ কথা বলে কিছু নেই। এখানে নানা যুক্তি ও অনুমানের মধ্যে তুলনামূলকভাবে অধিক গ্রহণযোগ্য যুক্তি ও অনুমানকে প্রমাণ মনে করা হয়। কখনো বদলাবে না, এমন কোনো যুক্তি বিজ্ঞানে নেই, দর্শনেও নেই।
সংশয়বাদ যে বিবেচনাকে মাপকাঠি ধরে নিয়েছে, সেই মাপকাঠিরও তো মাপ থাকা উচিত। এখানে যদি শুরুতে থাকে ভুল অনুমান, তাহলে তার শেখানো শেষ কথা সবার জন্য শেষ কথা হবার যুক্তি নেই। ঈশ্বরে বিশ্বাস থেকে সে নিরপেক্ষ হতে চেয়ে তার নিরপেক্ষতায় আমাদের বিশ্বাসী হতে বলছে।
কিন্তু ঈশ্বর প্রশ্নে নিরপেক্ষতায় কেন আমরা বিশ্বাসী হবো? এক ধরনের ভাবাবেগের নাম বিশ্বাস। জ্ঞানও মূলত বিশ্বাস। বিশ্বাসের সত্য যখন নিরপেক্ষ যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হয়, তখন সেটি জ্ঞান। বহু বিশ্বাস এমন আছে, যাকে জ্ঞান বলা যায় না। কারণ তারা স্বাধীন যাচাইয়ে উত্তীর্ণ নয়। সংশয়বাদ বিশ্বাস থেকে জ্ঞানে উত্তীর্ণ হয়েছে, এর নিশ্চয়তা কোথায়?
বিশ্বাস নিজের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তিকে। প্রমাণ হচ্ছে বিশ্বাসের বাহন। প্রমাণের সাথে দাবি ও বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকে। দাবির পক্ষে প্রমাণকে বয়ান করা যায়, উপলব্ধি করা যায়, দেখানো যায় না। দাবি ও বিশ্বাসবিহীন প্রমাণ বলতে কিছু নেই। সংশয়বাদ যখন কোনো কিছুকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে, তখন সেখানেও থাকে দাবি ও বিশ্বাস। ফলে সে নিজস্ব কারণে হারায় নিরপেক্ষতা এবং হয়ে ওঠে স্ববিরোধী। তার এ সঙ্কট তার বুনিয়াদের সাথে যুক্ত। যা থেকে সে বের হতে চাইলে সংশয়বাদী চরিত্র হারায়, আর বের হতে না চাইলে স্ববিরোধে জর্জরিত হয়ে গ্রহণযোগ্যতা হারায়!
সংশয়বাদ দিন শেষে মানুষের জিজ্ঞাসাকে অবদমিত করতে চায়? সহজাত স্বভাব থেকে মানুষ ঈশ্বর সন্ধান করে। এ তার চৈতন্যের গভীর আর্তি। ঈশ্বরও চান মানুষ তার সত্য সন্ধান করুক। আয়াত (বস্তু-অবস্তুগত নিদর্শন) ও বুরহান (স্পষ্ট প্রমাণ) এর মাধ্যমে তাকে জানুক। তার প্রশ্নে প্রত্যয়ী হোক। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদ আগেই বলে দিচ্ছে, এ সন্ধানের কোনো ফল নেই, এ জিজ্ঞাসার কোনো সুরাহা নেই। এখানে গন্তব্যের কোনো দিশা নেই। গন্তব্য বলতে এখানে যা আছে, তা হলো ঈশ্বর-প্রশ্নের উত্তর জানা যায় না।
মানুষের সত্যদর্শনের অমিত সম্ভাবনার জন্য তার এ অবস্থান মোটেও ইতিবাচক নয়।
লেখক : কবি, গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা