০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

আসামে মাদরাসা শিক্ষার আলো নিবুনিবু

আসামে মাদরাসা শিক্ষার আলো নিবুনিবু - ছবি : সংগৃহীত

উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের রাজ্যসরকার সরকারি ৬১০টি মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার পর এবার কওমি মাদরাসার প্রতি হাত বাড়িয়েছে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথিত অভিযোগে। সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদরাসাগুলোকে সাধারণ স্কুলে পরিণত করা হয়েছে। ইমাম ও কওমি মাদরাসা শিক্ষকদের নাম-ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য অনলাইনে নথিভুক্ত করতে হবে বলে জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা। আসাম রাজ্যের বেসরকারি মাদরাসা নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যসরকার। গত ২২ আগস্ট গোয়ালপাড়া জেলার দু’টি মসজিদ থেকে দুজন ইমাম ও গত চার মাসে অন্তত ৩০ জনকে গ্রেফতারের পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভারতে এ ধরনের মামলায় বেশ কয়েক বছর জেলে থাকার পরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেকসুর খালাস পান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১৬-১৭ সালে এবিটির কিছু জঙ্গি আসামে প্রবেশ করে স্থানীয় যুবকদের মধ্যে কাজ শুরু করেন। তারা বিভিন্ন মসজিদ ও মাদরাসায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

যদিও আসাম পুলিশ, প্রশাসন ছাড়া তৃতীয় কোনো দায়িত্বশীল ও স্বাধীন ভারতীয় বা আন্তর্জাতিক সংস্থা এখনো এই অভিযোগের বাস্তবতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। আসাম পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল ভাস্কর জ্যোতি মোহন্ত ও গোয়েন্দা বিভাগের দায়িত্বে থাকা হীরেন নাথ বেসরকারি মাদরাসা বোর্ড অল আসাম তানজিম কওমি মাদরাসার সচিব মাওলানা আবদুল কাদিরের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে তানজিম কওমির পক্ষ থেকে তাদের হাতে বেসরকারি মাদরাসার একটি তালিকা তুলে দেয়া হয়। (প্রথম আলো, ২৩ আগস্ট ২০২২) তারা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতবিরোধী জিহাদি শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে তারা মাদরাসাকে ব্যবহার করে মৌলবাদী কাজকর্ম করতে না পারে।’

আসাম পুলিশের মহাপরিচালক ২৬ আগস্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অনুমতি না নিয়ে কোনো মাদরাসা খোলা যাবে না। আসাম রাজ্যে ব্যক্তি অনুদানে পরিচালিত বেসরকারি মাদরাসার সংখ্যা দুই সহস্রাধিক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ, সংস্কৃত ও আরবির মতো ভাষা শিশুদের শেখানো কোনো ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের কাজ নয়। ২০২০ সালে বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, আসাম মাদরাসা শিক্ষা (প্রাদেশিকীকরণ) আইন, ১৯৯৫ এবং আসাম মাদরাসা শিক্ষা (কর্মচারীদের চাকরির প্রাদেশিকীকরণ ও মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন) আইন-২০১৮ দু’টি বাতিল করে দেয়া হয়। বিলটির আওতায় আসামের মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডটিও নিষিদ্ধ করা হয়।

আসাম সরকার গত মাসে তিনটি মাদরাসা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বঙ্গাইগাঁওতে তৃতীয় মাদরাসা ভবনটি ছিল পাকা দ্বিতল। কেউ কোনো অপরাধ করলে প্রচলিত আইনে তার বিচার হতে পারে কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়ে বলেছেন, উগ্রবাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পেলে আমরা মাদরাসা মাটির সাথে মিশিয়ে দেবো। আসাম অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রধান ও লোকসভার এমপি মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল বলেন, ‘আসামে কয়েক লাখ স্কুল রয়েছে। কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধী হন তাহলে তাকে গ্রেফতার করতে হবে। মাদরাসার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য হওয়া উচিত। শুধু দোষীরা শাস্তি পাবে, নির্দোষরা নয়। মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে অসামাজিক ব্যক্তি রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত কিন্তু আসাম সরকার বুলডোজার চালিয়ে একের পর এক মাদরাসা ভাঙছে। এটি আমরা মেনে নেবো না। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আমাদের সুপ্রিম কোর্টে যেতে হবে।’

২০২০ সালে মাদরাসা শিক্ষা আইন পরিবর্তন করে রাজ্যসরকারের অনুদানপ্রাপ্ত মাদরাসাগুলোকে সাধারণ স্কুলে পরিণত করে আসাম সরকার। আসামের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন হেমন্ত বিশ্বশর্মা। এরপর ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। এর এক বছর পরই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই আইনের বৈধতার স্বীকৃতি দেন গুয়াহাটি হাইকোর্ট। মুসলমান সমাজের একটি অংশ ও বিরোধীরা এই আইন এবং রায়ের বিরোধিতা করলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। ফলে আসামে সরকারি মাদরাসা স্তরে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। আসামে একটি মাদরাসা পরিচালন বোর্ডের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একদিকে সরকারি মাদরাসায় ধর্মীয় শিক্ষা বন্ধ হলো, আবার অন্য দিকে ব্যক্তিগত অনুদান নিয়ে যে মাদরাসায় ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়, সরকার এর তালিকা করতে শুরু করল। আমার ব্যক্তিগত মত, ভবিষ্যতে এখানেও ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া বন্ধ হবে। মাদরাসায় জঙ্গিবাদ প্রবেশ করেছে, এই অভিযোগে।’

বিজেপি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জমিয়ত ওলামায়ে হিন্দের প্রভাবশালী নেতা মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল, কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ইতোমধ্যে ব্যাপক সমালোচনা এবং প্রতিবাদের ঝড় শুরু হয়েছে। পশ্চিম গোয়ালপাড়া জেলার কংগ্রেসের এমএলএ মুহাম্মদ আবদুর রশিদ মণ্ডল বলেন, ছোটখাটো অপরাধী বা দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করে সরকার তাদেরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও জিহাদি নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত বলে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল ও ভিত্তিহীন।

উল্লেখ্য, আসামের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা গত অক্টোবরে জানিয়েছিলেন, রাজ্যে মোট ৬১০টি সরকার পরিচালিত মাদরাসা রয়েছে এবং সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বছরে ২০০ কোটি রুপি ব্যয় করে। এসব মাদরাসা উচ্চবিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে নতুন করে ভর্তি করানো হবে। এ ছাড়া সংস্কৃত স্কুলগুলোকে ভারতীয় সংস্কৃতি, সভ্যতা ও জাতীয়তাবাদ শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে। ১৯৩৪ সালে আসামের মুখ্যমন্ত্রী স্যার সৈয়দ সাদুল্লার নেতৃত্বে মুসলিম লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় মাদরাসা শিক্ষা চালু হয়, এ সময় রাজ্য মাদরাসা বোর্ডও গঠিত হয়। ম্যাট্র্রিক স্তর পর্যন্ত স্বাভাবিক কোর্সেও ৫০ নম্বরের একটি অধ্যায় রাখা হয় কুরআন শিক্ষার ওপর।

রাজ্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, আসামের মাদরাসা শিক্ষা আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০০৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিক্ষার উঁচু মানের কারণে অমুসলিম ছাত্রছাত্রীরা বড় সংখ্যায় মাদরাসায় পড়তে আসছে। ২০১৭ সালে মাদরাসার পাশাপাশি সংস্কৃত কেন্দ্র বোর্ডকে মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সাথে একীভ‚ত করা হয়েছিল। এবার তা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলো রাজ্য সরকার। বহু বছর ধরে চলে আসা ধর্মীয় সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে বন্ধ করে দেয়া এবং বেসরকারি মাদরাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত পরধর্ম সহিষ্ণুতার প্রতি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ (নয়া দিগন্ত, ১৩ ফেব্রুয়ারি-১৯২০)।

কিছু দিন আগে মাদরাসাগুলোর শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সংস্কৃত টোলের সংখ্যা ৯৭টি। মাদরাসাগুলোতে হাজার হাজার ছাত্র লেখাপড়া করে, কিন্তু টোলগুলোতে ছাত্র নেই বললেই চলে। কারণ বর্তমান যুগে হিন্দু ছাত্রদের সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার আগ্রহ নেই। সংস্কৃত ভাষা প্রায় অচল হয়ে গেছে। বিশ্বের কোথাও এই ভাষা কোনো কাজে আসে না। অথচ আরবি ভাষা বিশ্বের বেশ কিছু সমৃদ্ধ দেশসহ ২৫টি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা। আরবি বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ও ৪২০ মিলিয়ন লোকের মুখের ভাষা। সংস্কৃত ভাষায় ছাত্রছাত্রীর চেয়ে শিক্ষক বেশি। টোলগুলো বন্ধ করার একটি যুক্তি থাকতে পারে, কারণ টোলগুলো যুগোপযোগিতা হারিয়েছে। কিন্তু মাদরাসার ওপর হাত কেন? ইরাক ও আফগান যুদ্ধ-সংবাদ সংগ্রহের জন্য খ্যাত সাংবাদিক আনিস আলমগীর মনে করেন, ইউরোপে খ্রিষ্টধর্মের প্রসারের চাপে তার আগের প্যাগান ধর্ম বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু ভারতে ইসলাম ধর্মের বিস্তারের ফলে হিন্দুধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়নি। কারণ ভারতবর্ষে ইসলামী শাসকরা তলোয়ার নিয়ে কাউকে ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করেনি।

স্বামী বিবেকানন্দ তার মাদ্রাজের বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘ভারতে মুসলিম বিজয় পিছিয়ে পড়া ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে মুক্তির বার্তা নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। এ কারণে আমাদের দেশবাসী এক-পঞ্চমাংশ মুসলমান হয়ে গেছেন। তলোয়ারের বলে এমনটি হয়নি। এর পেছনে কেবল অস্ত্র আর অগ্নিসংযোগের ভ‚মিকা মনে করা নিতান্ত বাতুলতা মাত্র।’ তিনি অন্য এক জায়গায় বলেন, ‘জমিদার ও পুরোহিতদের দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভের জন্য তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।’ আসাম অনাবাদি জঙ্গলাকীর্ণ এলাকা ছিল। ব্রিটিশরা বাঙালিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসাম আবাদ করেছিল। (বাংলা ট্রিবিউন ডটকম)

মাদরাসা বন্ধের আগে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্যে রাজ্যটিতে বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়। আসাম হচ্ছে ভারতের প্রথম রাজ্য যেখানে এনআরসি তালিকা করা হয়েছে। এবার আসামে শুরু হচ্ছে স্থানের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো শহর, নগর বা গ্রামের নাম তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতার সাথে সঙ্গতি রেখে হওয়া উচিত।’ আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিষয়ক একজন গবেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, আসামে দীর্ঘ সময় ধরেই মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস। এখানে মোট জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ মুসলমান। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নামের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- বরাক উপত্যকার নাম করিমপুর। হয়তো এমন জায়গাগুলোর নাম পাল্টে যাবে (প্রথম আলো, ১৭ ফেব্রুয়ারি-২০২২)। উত্তর প্রদেশের অন্যতম বৃহৎ জংশন মোগলসরাইয়ের নাম পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে রাখা হয়েছে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায়। দীনদয়াল ছিলেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

আসামের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা অত্যন্ত কট্টর হিন্দুত্ববাদী। বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে তিনি বিশ্বাসী নন। তিনি মুসলিম, মুসলিম শিক্ষা-সংস্কৃতি বরদাশত করতে পারেন না। আরএসএসের সাপ্তাহিক পাঞ্চজন্য সংগঠনের একটি মিডিয়া কনক্লেভে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন, ‘মাদরাসা শিক্ষা রাখাই উচিত নয়। শিশুরা কিছুই শিখতে পারে না এই শিক্ষা থেকে। তাই অবলুপ্ত করে দেয়া হোক মাদরাসাগুলোকে।

মাদরাসা ধর্মশিক্ষা দিতে পারে, কিন্তু আধুনিক শিক্ষা কখনোই একটি মাদরাসা দিতে পারবে না। তাদের স্কুলে আধুনিক শিক্ষা দেয়া উচিত যাতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে কিছু করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বাড়িতে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। যেকোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ এমন বয়সে হওয়া উচিত যেখানে ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারে। শিশুরা মাদরাসায় যেতে ইচ্ছুক হবে না যদি তাদের বলা হয় যে, তারা সেখানে পড়াশোনা করার পরে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না। তাদের এ ধরনের ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পাঠানো মানবাধিকারের লঙ্ঘন করার শামিল। হেমন্ত বিশ্বশর্মা আরো বলেন, ‘মাদরাসা,শব্দটির অবলুপ্তি ঘটানো উচিত। যতক্ষণ না এই মাদরাসা শব্দটি মনে থাকবে, শিশুরা কখনোই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে না। মাদরাসায় ভর্তির সময় আপনি যদি একটি শিশুকে জিজ্ঞাসা করেন এই সম্পর্কে, তাকে বিস্তারিত বলেন, কোনো শিশু রাজি হবে না। শিশুদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে মাদরাসায় ভর্তি করা হয়।’ (পর্নাসেন গুপ্তা, কলকাতা, এশিয়া নেটনিউজ ডটকম)

মাদরাসা নিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা হেমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের প্রধান, লোকসভার সদস্য ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেন, মাদরাসাগুলো আত্মসম্মানবোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। ইসলাম শিক্ষার পাশাপাশি বহু মাদরাসায় বিজ্ঞান, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান পড়ানো হয়। যে সময় সঙ্ঘীরা (সঙ্ঘ পরিবারের লোক) ব্রিটিশদের দালাল হিসেবে কাজ করত, সে সময় বহু মাদরাসা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নিয়োজিত ছিল। হিন্দু সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় কেন মাদরাসায় পড়তেন? আসামের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য মুসলমানদের জন্য মানহানিকর। মুসলিমরা ভারতকে গ্রহণ করেছে এবং সেটি তারা অব্যাহত রাখবে। (সূত্র : জি নিউজ, ইন্ডিয়া ডটকম)

দ্বীনি শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে আসামের মাদরাসার ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল। বর্তমানে উত্তর-পূর্ব ভারতের আনাচে-কানাচে দ্বীনি খেদমতে নিয়োজিত আলেমদের বেশির ভাগ এসব মাদরাসার ফসল। শত শত বছর ধরে আসামে ইসলামী শিক্ষা, তাহজিব, তমদ্দুন ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশে মাদরাসার অবদান খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বরাক উপত্যকায় মাদরাসা শিক্ষা অনেক পুরনো। এ অঞ্চলের প্রথম অনানুষ্ঠানিক মাদরাসাটি ১৪ শতকের গোড়ার দিকে বাংলা ও আসামের বিখ্যাত সুফি হজরত শাহজালালের ঘনিষ্ঠ শিষ্য শাহ জিয়াউদ্দিন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি বর্তমান করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে নির্মিত হয়েছিল। মাদরাসার মূল উদ্দেশ্য ছিল, মুসলমানদের বিশেষ করে নতুন ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের ইসলামিক নীতিতে প্রশিক্ষণ দেয়া। সাত শ’ বছর ধরে বাধা-বিপত্তির মধ্যেও উত্তর-পূর্ব ভারতে মাদরাসা শিক্ষা টিকে রয়েছে। সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে মাদরাসা শিক্ষার আলো সাময়িক ম্রিয়মাণ হলেও আগামী দিনে আপন আলোয় উদ্ভাসিত হবে। এই বোধ-বিশ্বাস পোড় খাওয়া অহমীয় মুসলমানদের আছে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement