০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

পেলোসির ‘এক চীন’ ‘দুই চীন’

লেখক : মো: বজলুর রশীদ - ফাইল ছবি

‘এক চীন’ একটি দীর্ঘস্থায়ী মার্কিন নীতি যা বেইজিংয়ের সাথে তার সম্পর্কের ভিত্তি গঠন করেছে। এই নীতির অধীনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে চীন প্রজাতন্ত্রের (আরোসি) সাথে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং ১৯৭৯ সালে বেইজিংয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (পিআরসি) সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউএস-পিআরসি যৌথ বিবৃতিতে এই নীতির রূপরেখা ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল: ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একে অপরকে স্বীকৃতি দিতে এবং ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারকে চীনের একমাত্র বৈধ সরকার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ তাইওয়ানের জনগণের সাথে সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখবে।’

এতে আরো বলা হয়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনের এই অবস্থান স্বীকার করে যে, সেখানে একটি মাত্র চীন রয়েছে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ।’

সোজা কথায়, এক চীন নীতি একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাজ যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে একটি সরকারি সম্পর্ক বজায় রাখে এবং তাইওয়ানের সাথে একটি অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক চালিয়ে যায়। এই অবস্থান এখন উল্টো হাওয়ায় টালমাটাল হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত মে মাসে বলেছেন, চীন যদি তাইওয়ান আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপ করবে। হোয়াইট হাউজ স্পষ্ট করে বলতে চেয়েছে যে, এই বিরোধের বিষয়ে আমেরিকার নীতির পরিবর্তন হয়েছে।

হোয়াইট হাউজ সংযুক্তি দিয়ে বলেছে, বাইডেন ‘এক চীন নীতি এবং তাইওয়ান প্রণালীজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি মার্কিনিদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন’, একই সঙ্গে ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্টের আওতায় তাইওয়ানকে আত্মরক্ষার জন্য সামরিক উপায়ে সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকারের কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’

স্বশাসিত তাইওয়ান নিয়ে সাম্প্রতিককালে একাধিক সমস্যা তৈরি হতে শুরু করেছে। তাইওয়ান এবং হংকংয়ে নতুন আইন বলবৎ করেছে চীন। চীন এখন তাইওয়ানকে সরাসরি শাসন করতে চাইছে। কিন্তু তাইওয়ান মানতে চাইছে না। তাইওয়ানকে চীনের অংশ ঘোষণার প্রতিবাদ করছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের বহু দেশই। এই পরিস্থিতির মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। চীন রাশিয়াকে সমর্থন দিয়েছে বলে পশ্চিমাদের অভিযোগ এবং এই পরিস্থিতিতে চীন যে কোনো দিন তাইওয়ান আক্রমণ করতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। এরই মধ্যে ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর হলো।

১৯৭১ সালের ‘পিং-পং কূটনীতি’র রাজনৈতিক মোড় দ্রুত কাজ করতে থাকে। সে বছরের এপ্রিলে, আমেরিকান টেবিল টেনিস খেলোয়াড়রা মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করে এবং উভয় পক্ষের জন্য সম্পর্কের অবনতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে। ওই বছরের শেষের দিকে জাতিসঙ্ঘের অনুমোদন আসে এবং ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চীন সফর করেন। সফরটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘এক চীন’ নীতির জন্মের একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা যেতে পারে।

এতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে যে, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশে থাকা সব চীনাই মনে করে যে, সেখানে একটি মাত্র চীন রয়েছে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। মার্কিন সরকার এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে না।’ বর্তমানসহ পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলো এক চীন নীতির প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

দুই দশকেরও বেশি সময় পর ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট বাহিনী চীনা গৃহযুদ্ধে জয়লাভ করার পর, চীন প্রজাতন্ত্র তার রাজধানী তাইওয়ানের তাইপেতে স্থানান্তর করে। গণপ্রজাতন্ত্রী চীন বেইজিংয়ের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। উভয় সরকারই চীনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে, কিন্তু সেই সময়ে মাত্র কয়েকটি সরকার পিআরসিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

আমেরিকার ক্রমাগত উসকানি এবং চীনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের মানসিকতা রাজনীতিতে ঝড় সৃষ্টি করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এক-চীন নীতি স্বীকার করা সত্ত্বেও, মার্কিন রাজনীতিবিদরা আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে আসছেন। হেনরি কিসিঞ্জার ‘দুই-চীন সমাধান’ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের দ্বীপটি পরিদর্শন থেকে শুরু করে পেলোসি ও পরবর্তী কর্মকর্তাদের ভ্রমণ পরিকল্পনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক-চীন নীতিতে লিপ সার্ভিস দিলেও, আমেরিকান রাজনীতিবিদরা অবাধে দ্বীপটিকে চীন থেকে একটি পৃথক সত্তা হিসাবে বিবেচনা করতে উৎসাহ বোধ করছে। তাইওয়ানকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ২০১৬ সাল থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অস্ত্র বিক্রি হয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের যেকোনো পদক্ষেপকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে দ্বীপের চারপাশে মহড়ার মতো সামরিক নৌ-যান জড়ো করেছে।

সমালোচকরা বলছেন, এটি একটি সস্তা কৌশল এবং একটি নির্বোধ প্রক্রিয়া। চীনের তাইওয়ান অঞ্চল ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের একটি বড় গন্তব্য হতে পারে। ২০২১ সালের তথ্যে দেখা গেছে, চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকং স্পেশাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রিজিয়নের রফতানি, তাইওয়ানের ‘রফতানির’ ৪২ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের ছিল মাত্র ১৫ শতাংশ। তাইওয়ান অঞ্চল থেকে মোট ১৮৮.৯১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য চীনা মূল ভূখণ্ড এবং হংকং-এর কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাইওয়ানের বাণিজ্যের চেয়ে এককভাবে বিক্রি হওয়া পণ্যের পরিমাণ বেশি।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৫৫.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার- যা ২০২০ সাল থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা, কোভিড-১৯ মহামারী এবং দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

চীনারা বলছেন, আমেরিকাকে স্পষ্টভাবে দেখতে হবে যে ‘এক চীন’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালো- বিশেষ করে আকাশচুম্বী মুদ্রাস্ফীতি এবং এটি যে জ্বালানি সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে তার কারণে। চীনের এক চীন নীতি অনুসারে বাস্তব সম্পর্ক করে যুক্তরাষ্ট্র মূল চীনা ভূখণ্ড ও তাইওয়ান থেকে ইপ্সিত বাণিজ্যে লাভ করতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটনের শায়েস্তা করার বা লাঠিনীতি তাইওয়ানকে ডি-ফ্যাক্টো স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পদ্ধতিগত চাপ দিচ্ছে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যেমন তাইওয়ান হারাবে তেমনি চীনের সাথে সম্পর্কও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র কোনো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে জয়লাভ করেনি।

কিসিঞ্জার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে না ‘সাবটারফিউজ বা ক্রমান্বয় প্রক্রিয়া’ দিয়ে ‘দুই-চীন’ সমাধান তৈরি করা। পাকিস্তানের মাধ্যমে কিসিঞ্জারের হাতেই চীন-মার্কিন সম্পর্ক সাফল্য অর্জন করে। বৃদ্ধা পেলোসি ‘সেন্ট্রিফিউজে’ যে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন সেটি লঙ্কায় হনুমানের আগুন লাগিয়ে দেয়ার মতো। তার নমুনা আমরা ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। আমেরিকার উচিত হবে না কিসিঞ্জারের সতর্কবাণীতে মনোযোগ না দেয়া।

দুই চীন প্রবক্তা, মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর বিশ্বব্যাপী এক চীন নীতির প্রতি অনেক দেশ আবারো সমর্থন দিয়েছে। মধ্য আফ্রিকা, গিনি, লাইবেরিয়া, সোমালিয়া, আলজেরিয়া, ফিলিপিন্স, ইরাক, বাংলাদেশ, মাদাগাস্কার, জর্দান, ক্যামেরুন, গিনি, বুরকিনা ফাসো, গ্রেনাডা ও সিয়েরা লিওনও ‘এক চীননীতি’র প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। এছাড়া, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি তাইওয়ান সমস্যায় মিসরের অবস্থান দৃঢ় ও অপরিবর্তনীয় জানিয়ে ‘এক চীননীতি’-তে অবিচল থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। সার্বিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকার ভ্লাদিমির যেকোনো ইস্যুতে চীনকে সমর্থন দিয়ে যাবে। নেপাল দৃঢ়ভাবে ‘এক চীন’ নীতিতে অবিচল থাকবে বলে চীন সফরে গিয়ে ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়াও চীনকে সমর্থন দিয়েছে। পাকিস্তান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোও চীনকে সমর্থন দিয়েছে। এভাবে অনেক দেশ চীনা একনীতিতে সমর্থন দিয়ে নতুন করে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে।

পেলোসি আমেরিকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাজনীতিকদের একজন। প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টের পরেই তার অবস্থান। তাকে কট্টর চীনবিরোধী হিসেবে দেখা হয়। তিনি চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও সোচ্চার। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে চীনা সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল, পেলোসি পূর্বে চীন সফরের সময় সেখানে গিয়েছিলেন। নির্বাসিত চীনা ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে তার যোগাযোগ রয়েছে। এসব কারণে চীন পেলোসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফরসহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সফরে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব এবং গণতান্ত্রিক শাসনের ওপর কথা বললেও তাইওয়ান সফর ছিল পেলোসির মুখ্য উদ্দেশ্য। তাই তার তাইওয়ান সফরকে চীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত উসকানি হিসেবে দেখছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাইওয়ান প্রণালীতে পেন্টাগনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে মরিয়া। ক্যাপিটল হিল, যুদ্ধবান্ধব থিংক ট্যাংক এবং গবেষণা কেন্দ্রগুলো পেলোসিকে তাইওয়ানে পাঠিয়েছিল নেত্রী সাই ইং-ওয়েনকে বলার জন্য যে আমেরিকা তাইওয়ানকে পরিত্যাগ করবে না। এই কথাটি বলার জন্য কেন সফরের নাটক সাজানো হলো?

সমর বিশ্লেষকরা বলেছেন, যুদ্ধ হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতির মূল ভিত্তি। আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব এবং অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে সেটি সমৃদ্ধ হয়।

তাইওয়ান প্রণালীতে মার্কিন সামরিক ডামাডোল এই অঞ্চলের আরো সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনাকে বিঘ্নিত করবে।

পেলোসির তাইওয়ান সফর চীন এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান সরাসরি যোগাযোগের চ্যানেলগুলোতে ঝুঁকির অবস্থান ইতোমধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে এবং বর্তমান পরিস্থিতি একটি রাজনৈতিক নাটকে পরিণত হয়েছে। এই নাটক যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন, চীনের ২০তম পার্টি কংগ্রেস এবং তাইওয়ান ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি সরকারের নির্বাচন এ বছর অনুষ্ঠিত হওয়ার পর যারা ক্ষমতায় আসবেন তাদের অভ্যন্তরীণ কর্তৃত্বকে আরো দৃঢ় করতে সহায়তা করবে।

যুক্তরাষ্ট্র হয়তো পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ব্যবহার করে পরিকল্পিত কৌশলগত খেলায় অংশ নিয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থার জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনবিরোধী ডেমোক্র্যাটদের রাজনৈতিক মূল্যায়নকে বৈধতা দিতে পারে এবং তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা চালাতে সহায়তা করতে পারে।

সমস্যা হলো, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যদি সঙ্ঘাত দেখা দেয়, তাহলে ওয়াশিংটন একটি এশীয় ন্যাটোর জন্য চাপ দেয়ার সুযোগ পাবে। এই বিষয়টি হবে চীনের নেতাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সাহসের গুরুতর ও কঠিন পরীক্ষা।

ইতোমধ্যে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাইওয়ান থেকে মাছ এবং ফল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। বলা হয়েছে, অতিরিক্ত কীটনাশক পাওয়া গেছে, কোভিড পজিটিভ নমুনাও পাওয়া গেছে। চীন থেকে তাইওয়ানের বালি আমদানিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে গত মৌসুমে তাইওয়ানের আনারস আমদানি বন্ধ করেছিল চীন। ফলে তাইওয়ান হঠাৎ করে মৌসুমি আনারসের স্টক সামাল দিতে সেফদের ডেকে আনারসের বিভিন্ন পদ হোটেল রেস্তোরাঁয় তৈরি করে বিক্রির আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও জাপান অতিরিক্ত আনারস আমদানি করে তাইপেকে সহায়তা দিয়েছিল। এবার পেলোসির সফর শুরুর সাথে সাথে ১ আগস্ট থেকে তাইওয়ানিজ বিস্কুট এবং পেস্ট্রি আমদানির উপরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বেইজিং। এসব বিষয় ছাড়াও চীন বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র পাঠিয়েছে এবং আধুনিক অস্ত্র ও বিমানবাহিনীকে নিয়োজিত করেছে। ওয়াশিংটনও কায়দা মতো তার যুদ্ধযান পাঠিয়েছে এবং তাইপেতে অস্ত্র প্রেরণ শুরু করেছে।

পেন্টাগন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে যে বলয় তৈরি করছে তার বিস্তারিত জানা না গেলেও, যুদ্ধবিমান, জাহাজ ও নজরদারি সরঞ্জামসহ সামরিক ব্যবস্থার সব উপকরণই সেখানে জমায়েত করার কাজ চলছে। তাইওয়ান এখন একটি উপলক্ষ মাত্র।

কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর ও পরবর্তী সমর প্রস্তুতি প্রসঙ্গে চীনের শি বলেছেন, আগুন নিয়ে খেলবেন না, হাত পুড়বে। হংকং, তাইওয়ান ও ম্যাকাও বিষয়ে চীন দুই দেশ এক নীতি মেনে চলছে এবং আমেরিকা তাইওয়ানের শান্তি রক্ষার জন্য শান্তির নীতি থেকে সরবে না বলে জানিয়েছে। আর, এখন তো শান্তি মানে যুদ্ধ!

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement