‘জনবুদ্ধিজীবী’
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:২৭
বাংলাদেশের একজন মহৎ মানুষ আকবর আলি খান। না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি। আছে তার কর্ম ও জীবনস্মৃতি। তার জীবন বর্ণাঢ্য ও বহুমাত্রিক। তিনি ছিলেন আমলা, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও শেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। আমলাগিরিতে কেটেছে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। কিন্তু তার শ্রেষ্ঠ অবদান গ্রন্থ রচনায়। নিজেকে ‘গ্রন্থকীট’ বলতেন তিনি। সমসাময়িক বাংলাদেশে গ্রন্থ রচনার গভীরতায়, প্রাঞ্জলতায় ও জনপ্রিয়তায় তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি অনন্য ছিলেন তার ব্যক্তিত্বে, বক্তব্যে ও দেশপ্রেমে। তিনি যা বলতেন নিরাসক্ত দেশপ্রেমের ও নাগরিক দায়িত্ববোধের প্রেরণা থেকেই তা বলতেন।
কাউকে তুষ্ট করার জন্য অথবা দুষ্ট করার জন্য তিনি কথা বলতেন না। যে কথাগুলো অন্যরা বলতে ভয় পেতেন, নির্ভয়ে, নিঃসঙ্কোচে তা বলতেন। এমন ধরনের মহৎ মানুষদের সঙ্গ-সাহচর্য উপভোগ করার মতো। বেশি দিনের কথা নয়, যেন এই সেদিন তিনি কথা বলছিলেন প্রফেসর এমাজউদ্দিন স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে। সেখানে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। এরকম আরো দু-একটি সভায় তাকে নিয়ে আসার এবং তার কাছে যাতায়াতের সুযোগ আমার হয়েছিল। তার প্রতি এই সময়ের নাগরিকদের একটি অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। সে ভালোবাসা সত্য উচ্চারণের। সে ভালোবাসা সাহসী উচ্চারণের। এমাজউদ্দিন স্মারক বক্তৃতার সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ছিল এরকম :
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইতিহাস গণতন্ত্রের। দেশের রাজনীতির মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের জন্য অশনিসঙ্কেত। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এমাজউদ্দিন আহমদ রিসার্চ সেন্টার আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ কথা বলেন। আকবর আলি খান বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া ধর্মনিরপেক্ষতা সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে সবশেষে যদি সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয়, মারামারী ও হিংসার মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে গণতন্ত্রের মাধ্যমে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপাদান গণতন্ত্র। আমরা যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পড়ি তাহলে দেখতে পাব অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রীতি শুরু হয়। আমরা যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার নীতির দিকে দেখি তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র। যে দেশে জনগণ সরকারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে সেটিই হলো গণতন্ত্র। যে দেশে জনগণের নিয়ন্ত্রণ নেই সেটি ভোট হোক আর যাই হোক সেটিকে প্রকৃত নির্বাচন বলা চলে না এবং এদিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের দেশে গণতন্ত্র গড়ার প্রয়োজন রয়েছে। (প্রায় সব সংবাদপত্রে একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ২৪ জুলাই ২০২২)।
এভাবে জনগণের ভাষায় কথা বলার মন ও মানস আকবর আলি খানের ছিল। তিনি তাদের নাড়ির খবর রাখতেন। জীবনের শেষ সময়গুলোতে যখন কোনো দায় অথবা দায়িত্ব তাকে ঘিরে রাখেনি, অবসরে যাওয়া নিঃসঙ্গ মানুষ যখন তিনি, তখন তিনি তার মতো করে বিবেকের ভাষায় কথা বলতেন। দেশের সিভিল সোসাইটি যখন বিভক্ত, সচেতন নাগরিকরা যখন নিরাসক্ত, রাজনীতি যখন ভয়ের কবলে নিপতিত, তিনি তখন জনগণের ভাষায় কথা বলতেন। তাই তিনি সত্যিকার অর্থে ছিলেন একজন ‘জনবুদ্ধিজীবী’। আকবর আলি খান তার অসুস্থতার জন্য, পারিবারিক নিঃসঙ্গতার জন্য খুব কমই জনসম্মুখে আসতেন। যখন আসতেন হুইল চেয়ারে করে, অসম্ভব কষ্ট করে তাকে অনুষ্ঠানস্থলে তুলতে হতো। এসব বিরল অনুষ্ঠানে বিরল কথাবার্তাই তিনি বলতেন। যারা তাকে আনতেন, তারা যেন ওই বিরল বক্তব্যের জন্যই তাকে নিয়ে আনতেন। জনগণের মধ্যে যে অংশ রাজনীতিসচেতন তারাও যেন ওই কথাগুলো শুনবার জন্য উদগ্রীব ও উন্মুখ হয়ে থাকতেন।
তার আমলাজীবন ছিল জনসম্পৃক্ত। যখন তিনি উন্নয়নের কথা বলতেন, তখন সাধারণ মানুষের উন্নয়নের কথা বলতেন। যখন তিনি ইতিহাস চর্চা করতেন, তখন জনগণের ইতিহাস অন্বেষণ করতেন। যখন তিনি সমাজ নিয়ে গবেষণা করতেন, তখন সমাজের গহিন গভীরে প্রবেশ করতেন। তিনি লক্ষ করেছেন বাংলাদেশের বিচিত্র ছলনাজালের রাজনীতি। তার উদ্দীষ্ট ছিল পরার্থপরতার অর্থনীতি। আকবর আলি খান গল্প কথার কল্পলোকে বসবাস করেননি। তার প্রতিটি লেখা উদ্দেশ্যপূর্ণ। মানুষকে একেবারে হাতেনাতে সত্যটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য চিরস্বাধীন প্রয়াস ছিল তার। আর এমনভাবে কঠিন বিষয়গুলোকে লিখেছেন যা হয়ে গেছে সহজ-সরল। স্বাধীন ভারতের নেতা জওয়াহের লাল নেহরু তার দেশকে আবিষ্কার করতে গিয়ে লিখেছিলেন ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’। আর আকবর আলি খান বাংলাদেশকে আবিষ্কার করতে গিয়ে লিখেছেন ‘ডিসকভারি অব বাংলাদেশ’। বইটির পুরো নাম ‘ডিসকভারি অব বাংলাদেশ : এক্সপ্লোরেশন ইনটু ডাইনামিকস অব এ হিডেন ন্যাশন’। এটির বাংলা অনুবাদও রয়েছে।
বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে তার লেখা বই ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ারস হামটি ডামটি ডিজঅর্ডার অ্যান্ড আদার এস্যেজ : রিফ্লেকশনস অব ইকোনমি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স ইন বাংলাদেশ’। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সমাজ সম্পর্কে উৎসাহিত ছিলেন তিনি। এ বিষয়ে তার গ্রন্থ ‘অন্ধকারের উৎস হতে : সাহিত্য, সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতি সম্পর্কে আলোর সন্ধান’। অর্থনীতির মতো কঠিন বিষয়কে সহজ ভাষায় রম্য ঢংয়ে প্রকাশ করেছেন ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ নামক গ্রন্থে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বিশেষত দারিদ্র্যের উৎস অনুসন্ধানমূলক আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন তিনি। এটির নাম ‘দারিদ্র্যের অর্থনীতি : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। বাজেটের মতো জটিল বিষয় নিয়ে তার সহজ উপস্থাপনা ‘বাংলাদেশে বাজেট : অর্থনীতি ও রাজনীতি’। শুধু অর্থনীতি ও রাজনীতি নয়, জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’কে আবিষ্কার করার জন্য তিনি লেখেন, ‘চাবিকাঠির খোঁজে : নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন’। তার চিন্তা-ভাবনা থেকে রবীন্দ্রনাথও বিশ্রুত হননি। সে বইয়ের নাম ‘দুর্ভাবনা ও ভাবনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে’। বাংলায় ইসলাম ধর্মের ইতিহাসভিত্তিক তার গ্রন্থের নাম ‘বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য : একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ’। আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় তার গ্রন্থ ‘বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’। আকবর আলি খান এর ভূমিকায় লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের অনেক অর্জনের জন্য আমি গর্বিত। তবু রাজনৈতিক অবক্ষয় ও সুশাসনের ক্রমাগত অধোগতি আমার প্রজন্মের যারা আমার মতো গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাদের জন্য দৈহিক যন্ত্রণার চেয়েও মর্মান্তিক মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করেছে।’ তার জীবনের প্রতিটি প্রকাশে এর অনুরণন রয়েছে।
আকবর আলি খানের গ্রন্থসংখ্যা ১৮টি। দেশে-বিদেশে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত আরো অনেক গবেষণা নিবন্ধ রয়েছে তার। দেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও গণমাধ্যমে রয়েছে তার অসংখ্য লেখা ও সাক্ষাৎকার। গ্রন্থ, প্রকাশনা ও বক্তব্য সর্বত্রই একটি বিষয় প্রতিফলিত ও প্রতিধ্বনিত, তা হচ্ছে জ্ঞান আলোক ও দেশপ্রেম। দেশ সম্পর্কে আশাবাদী ছিলেন তিনি। তবে নিরেট সত্যটি উচ্চারণ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। আমলাতন্ত্র ও সরকার একাকার হয়ে গেছে : এরকম প্রশ্নের উত্তরে তিনি হতাশার সাথে বলেন, ‘এরপর যারা আসবেন, একইরকম আমরা দেখব। তারা ভাববেন, যদি আমার চাচা দলাদলি করে সচিব হতে পারেন, আমি হবো না কেন? তিনি যদি পাঁচটি খারাপ কাজ করে পার পেতে পারেন, আমি সাতটা করব। আমার ছেলে এসে ৯টা করবে। এভাবেই বাড়তে থাকবে। এ সরকারের পর আরেক সরকার এলে একই ঘটনা ঘটবে। আমাদের সময়েও সেটি ঘটেছিল।’ নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘এমন সম্ভাবনা ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নেই। তবে বাংলাদেশের জনসংখ্যার গরিষ্ঠ অংশ হচ্ছে তরুণরা। বর্তমান নেতৃত্ব হচ্ছে পুরনো। এদের কবল থেকে বের হয়ে তরুণ নেতৃত্ব গড়তে পারলে এখানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ আছে। নয়তো যেভাবে চলছে, সেভাবে চলবে। তবে আমি আশা করতে পারি, তরুণ শক্তি জেগে উঠবে। এরা কারা আমি জানি না। তবে তাদের ওপর আমার আস্থা আছে।’ (প্রথম আলো, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২)
আকবর আলি খানের একান্ত নিজের কথা প্রকাশ পেয়েছে তার আত্মজীবনী ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গ্রন্থে। রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়’। আসলেই আকবর আলি খানের বয়ানে সেই পুরানো দিনের কথা, সেই প্রাণের কথা এখানে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, এটি তার আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড। দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি তার কর্মজীবনের কথা লিখবেন। কতটা লিখে গেছেন তা জানি না, তবে তার দ্বিতীয় খণ্ড জীবনকালেই বের হোক তিনি তা চাননি। তিনি লিখেছেন, এতে অনেকেই বিব্রত হতে পারেন। সে যা হোক, প্রথম খণ্ডে রয়েছে ১৫টি অধ্যায়। আত্মজীবনীর চমৎকার তত্ত¡কথা দিয়ে শুরু হয়েছে পূর্বাভাস নামের প্রথম অধ্যায়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি পিতৃপুরুষের শিকড়ের সন্ধান করেছেন। এই সন্ধান বিস্তৃত হয়েছে চতুর্থ অধ্যায় পর্যন্ত। একটি তাৎপর্য বিষয় হচ্ছে তার পিতৃপুরুষ যে হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছে তার প্রামাণ্য প্রতিবেদন। তার বংশধারায় সুদের প্রভাবকে তিনি অস্বীকার করেননি। তিনি যেমন বংশের গৌরবগাথা গেয়েছেন, ঠিক তদ্রুপভাবে অন্যায়, অসত্য ও প্রচলিত বদনামের কথা বর্ণনা করতেও ভোলেননি। এই ‘পিতৃপুরুষের শেকড়ের সন্ধান’ অংশটি সাধারণ আত্মকথার চেয়ে একটু বেশিই মনে হয়েছে। তবে সেই সাথে তার জন্মভূমি নবীনগরের ইতিহাস, ভূগোল ও লোককথা সব কিছুই এখানে রয়েছে।
মূলত পঞ্চম অধ্যায় থেকে তার প্রকৃত জীবন স্মৃতি শুরু হয়েছে। এখানে ব্যতিক্রমধর্মী বিষয় হচ্ছে পঞ্চাশের দশকের রাজনীতির বর্ণনা। সেই সাথে রয়েছে ভালো বইয়ের সন্ধানে সেই শিশুকালের প্রয়াসের কথা। ষষ্ঠ অধ্যায়ের তার কলেজজীবনের স্মৃতি রয়েছে। ঢাকা কলেজের সেই সময়ের মহৎ শিক্ষকমণ্ডলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি সেখানেও ভালো বইয়ের সন্ধান করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল সার্ভিসে যোগদানের স্মৃতি স্থান পেয়েছে সপ্তম অধ্যায়ে। এখানে জানা যাবে তৎকালীন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতি ও আইয়ুবের বুনিয়াদি গণতন্ত্রের কথা। এরপর শুরু হয়েছে তার সিএসপি হিসেবে বেড়ে ওঠার সময়কাল অষ্টম অধ্যায়ে। রাজশাহীতে তিনি এসডিও হিসেবে শিক্ষানবিসকাল অতিক্রম করেন ১৯৬৮-৬৯ সালে। এটি নবম অধ্যায়ের কথা। আনুষ্ঠানিকভাবে হবিগঞ্জে মহকুমা প্রশাসক হিসেবে তার প্রকৃত প্রশাসনিক কাল শুরু হয়। এটি দশম অধ্যায়ের কথা। হবিগঞ্জ থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আঞ্চলিকভাবেই নেতৃত্ব দেন। এজন্য একাদশ অধ্যায়টি হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ। বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক প্রস্তুতিকালের ঘটনাবলি। দ্বাদশ অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে আগরতলায় মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি। এই বইয়ের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় হচ্ছে ত্রয়োদশ অধ্যায়। এখানে মধ্য জুলাই-১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর-১৯৭১ পর্যন্ত ঘটনাবলি বিবৃত হয়েছে। মুজিবনগর সরকারের অন্তর্দ্ব›দ্ব ও কলহ-বিদ্বেষেরও বয়ান রয়েছে এখানে। এর পরের প্রসঙ্গ ১ জানুয়ারি ১৯৭২ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ পর্যন্ত বিবিধ ঘটনাবলি নির্মোহ ও নিরাসক্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে অনেক অজানা তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। উপসংহার টানা হয়েছে কয়েক পৃষ্ঠায়। তার স্মৃতিকথায় সবক’টা জানালা খুলে দেয়া আছে। যে কেউ যেকোনো বিষয় সত্যিকার ইতিহাস জানতে পারবে।
আকবর আলি খান ছিলেন একজন জনমুখী লেখক, নীতিবান ব্যক্তিত্ব ও আলোকিত মানুষ। মনীষী সক্রেটিস যেভাবে বলেছেন ‘জ্ঞানই শক্তি, জ্ঞানই পুণ্য’, আকবর আলি খানের জীবনে তার প্রতিফলন হয়েছে। তিনি নিজে শুধু পরার্থপরতার অর্থনীতি রচনা করেননি বরং তার যাপিত জীবনে এর প্রমাণ রেখেছেন। জীবনের সব অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি জনমুখী নীতি প্রণয়ন করতে সচেষ্ট ছিলেন। জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান গড়ে জনগণের ঋণ শোধের চেষ্টা করেছেন। তিনি গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতাকে উন্নয়নের সাথে সংযুক্ত করতে কখনো পিছপা হননি। বরং এই সময়ে স্পষ্টভাবেই গণতন্ত্রের তাগিদ দিয়েছেন অনবরত। কোনো রাজনৈতিক সমীকরণে তিনি যে আবদ্ধ নন, তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছেন। তিনি সুশাসন, গণতন্ত্র ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজের বাস্তব চিত্র দেখিয়েছেন। তার চিন্তা ও চেতনা থেকে আগামী প্রজন্ম উদ্দীপ্ত হতে পারে।
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা