২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

স্মরণীয় একজন নির্বাচন কমিশনার

মাহবুব তালুকদার - ছবি : সংগৃহীত

গত ২৪ আগস্ট পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মাহবুব তালুকদারের ধীরশান্ত অথচ বলিষ্ঠ সত্য ভাষণ আর শোনা যাবে না। একজন সাহসী মানুষ হিসেবে যেটাকে অন্যায় মনে করতেন তাকে নির্দ্বিধায় অন্যায় বলতেন। নিজের অবস্থানে থেকে প্রতিবাদ করতেন, লড়াই করতেন এককভাবে। তার দর্শন ছিল ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে’। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালনকালে মাহবুব তালুকদার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবদান রাখতে। কিন্তু বারবারই তার বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়েছে কমিশনের বাকি চারজনের একত্রিত কণ্ঠের আওয়াজে।

মাহবুব তালুকদার ১৯৪২ সালে নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার নবাবপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ছিলেন ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় ‘করেসপন্ডেন্ট’। কর্মজীবনে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্য বিভাগের বাংলা শাখায় শিক্ষকতা করেন। তিনি ১৯৬৮-৭০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন। মুজিবনগর সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও কাজ করেছেন তিনি।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাহবুব তালুকদার আর শিক্ষকতায় ফিরে যাননি। স্বাধীনতার পর একদিন বঙ্গভবনে যান তার পুরনো বন্ধু সৈয়দ শাহজাহানের সাথে সাক্ষাৎ করতে। সৈয়দ শাহজাহান অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার মনস্থ করেছিলেন। তাই মাহবুব তালুকদারকে তার পদে চাকরিতে যোগদানের প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবে রাজি হন মাহবুব তালুকতার। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে নিজের রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী হন। নতুন রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী মাহবুব তালুকদারকে উপসচিবের পদমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার নিযুক্ত করেন। তারপর টানা পাঁচ বছর বঙ্গভবনে বিভিন্ন পদবিতে কাজ করেন। রাষ্ট্রপতির জনসংযোগ কর্মকর্তা, স্পেশাল অফিসার, উপ-প্রেস সচিব, ওএসডি প্রভৃতি পদে পরপর পাঁচজন রাষ্ট্রপতির সাথে কাজ করে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তিনি। পরবর্তী জীবনে দেশ ও জাতির জন্য অবদান রাখতে নিজেকে তৈরি করেন। বঙ্গভবনে চাকরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির নানা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এক কথায় ক্ষমতায় থাকা মানুষগুলোর আশপাশের ব্যক্তিবর্গের বৈশিষ্ট্যসমূহ তিনি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন পরপর পাঁচজন রাষ্ট্রপতি সর্বজনাব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, মোহাম্মদ উল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, খন্দকার মুশতাক আহমদ ও আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের অধীনে কাজ করে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ্র সময়ে মাহবুব তালুকদার ১৯৭৩ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ১৪ আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর উপ-প্রেস সচিব এবং বক্তৃতা লেখক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী লেখার কাজও একই সাথে করছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিজে বলতেন তা রেকর্ড করা হতো, পরে মাহবুব তালুকদার তা অনুলিখন করতেন। কিন্তু ১৪ আগস্ট ১৯৭৫-এ ওই পাণ্ডুলিপি গণভবনে রেখে বাসায় এসেছিলেন, পরে আর ফিরে পাননি। এ সময় তিনি বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। ১৫ আগস্ট পূর্ববর্তী পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করতে সমবেত হলো আবালবৃদ্ধবনিতা, রাজনীতিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সাংবাদিক, ক্রীড়াবিদ, কৃষক-শ্রমিকসহ সব পেশাজীবী মানুষ। তারা মিছিল করে, নৃত্য করে, বাদ্য বাজিয়ে, উল্লাস করে বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানালেন প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও। কিন্তু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তারা ৩৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেলেন। অনেকেই নতুন সরকারের সঙ্গ লাভে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন’ (সোহরাব হাসান, প্রথম আলো : ২৬/০৮/২০২২)। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাকে তদানীন্তন ক্যাডার সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যা পরে বিসিএস (প্রশাসন) হিসেবে রূপান্তরিত হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর মাহবুব তালুকদারকে ‘ওএসডি’ করা হয়। তিনি তার চাকরি জীবনের এ পদাবনতিকে জীবনের গর্ব হিসেবে উল্লেখ করেছেন নিজের লেখায়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ১৯৯৯ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান।

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মাহবুব তালুকদার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। জনশ্রুতি রয়েছে ‘বিএনপি’র দেয়া প্রস্তাবিত নাম থেকে মাহবুব তালুকদারকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। কাজেই তাকে বিএনপিপন্থী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকারের সময় সেই তিনি ১২২৩ দিন ‘ওএসডি’ ছিলেন। তার লেখায় জানা যায়, ‘তিনি বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, ড. ওয়াজেদ মিয়া, শেখ মনি এবং অন্যদের খুব কাছের মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু বলতে তার খুব কষ্ট হতো। কিন্তু দেশ ও জাতির সর্বোত্তম স্বার্থে তার আর কোনো বিকল্প ছিল না’ (ডেইলি স্টার : ৩১/০৮/২০২২)। বিগত পুরো পাঁচ বছরই তিনি এককভাবে স্বাধীনচেতা মনোভাব নিয়ে নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ বাকি তিনজন কমিশনারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বাতন্ত্র্য অবস্থান ধরে রাখেন। সেই যে, ১৯৭১ সালে তরুণ বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলেন সেই যুদ্ধ, সেই প্রতিবাদ জীবনের শেষ প্রহর পর্যন্ত জারি রেখেছিলেন। তিনি নিজেকে ‘নির্বাক জনগণের নীরব ভাষার মুখপাত্র’ হিসেবে উল্লেখ করতেন। ইসির যেসব সিদ্ধান্ত তার কাছে মনে হতো দেশ-জাতির জন্য অকল্যাণকর; সাহসিকতার সাথে সেসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধ চরণ করতেন। প্রয়োজনে কমিশনের সভা থেকে ‘ওয়াকআউট’ করতেন। ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতেন। এ বিষয়ে তিনি সমালোচনা বা কোনো রক্তচক্ষুর তোয়াক্কা করতেন না। এমনকি সংবাদ সম্মেলন করেও সেসব বিষয়ে জাতির সামনে তুলে ধরতেন। তার মতে, তিনি মনেপ্রাণে নির্বাচন কমিশন, গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে লড়েছেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ১১তম সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে আগস্টে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভায় ওই নির্বাচনে ‘ইভিএম’ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলে তিনি এর বিরোধিতা করে সভা থেকে ওয়াকআউট করেন। তিনি জানান, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা সত্ত্বেও ‘ইভিএম’ ব্যবহার করা সঠিক হবে না। সেই নির্বাচনের কয়েক দিন আগে ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছিলেন এ নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ অনুপস্থিত। পরবর্তীতে তিনি ওই নির্বাচনকে ইসির ‘ব্যর্থতার গ্লানি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। গত ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে প্রথম আলোকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালেট পেপার ভর্তি বাক্সের ছবি বিবিসির সাংবাদিক প্রকাশ করেছেন। এ অভিযোগ খণ্ডনের কোনো উপায় ছিল না। কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত সত্য’ (প্রথম আলো : ২৫/০৮/২০২২)।

মাহবুব তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের ঘোর বিরোধী ছিলেন। ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে তিনি মূল্যহীন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার হিড়িক পড়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০০ জন ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, আরো ৫০ জন নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্বাচন হলো একাধিক প্রার্থী থেকে একজনকে জনগণ বেছে নেবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে তা কিভাবে নির্বাচন হয়?’

২০২০ সালের আগস্টে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ‘আরপিও’তে দেয়া কমিশনের কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা (সেকশন-৯১) অবলোপ করে সংশোধনীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উপস্থাপন করেন তিনি। এটাকে ইসির আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। মাহবুব তালুকদার ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি সিইসি কে এম নুরুল হুদার কাছে একটি নোট পাঠান যেন ৩০ জানুয়ারিতে হতে যাওয়া ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় যোগদান বন্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। কারণ সেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের প্রচারণায় জড়িত না হওয়ার বিধান থাকা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের চারজন সংসদ সদস্য সেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ২০২০ সালের ২ মার্চ তারিখে তিনি জাতীয় ভোটার দিবসে নির্বাচনী ব্যবস্থার সংশোধনীর আহ্বান জানান। তিনি বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থার ভয়াবহতার শঙ্কা প্রকাশ করেন।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও মাহবুব তালুকতার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ত্রæটির কথা তুলে ধরেন। ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি বলেন, ‘৩৬০ জন ইউপি চেয়ারম্যান এবং ১৬০০ জন অন্যান্য পদে বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়া গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক প্রবণতা।’ দেশের মৃতপ্রায় গণতন্ত্র বাঁচিয়ে তুলতে নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রæটি নির্মূল করতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন। ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে বলেন, ‘গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার নীরবতায় আমি মর্মাহত। তিনি প্রশ্ন রাখেন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে আমরা সকলেই কি অনাগ্রহী হয়ে পড়েছি?’ (টিবিএস রিপোর্ট : ২২/০৯/২০২১)।

মাহবুব তালুকদার বৈচিত্র্যময় জীবনের অধিকারী ছিলেন। সাহিত্যাঙ্গনে ছিল তার নীরব পদচারণা। গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, কবিতা, রসরচনা, স্মৃতি কথার নিয়মিত লেখক ছিলেন তিনি। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৪টি। ১৯৬৮ সালে তার প্রথম উপন্যাস বের হয়। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় কবিতার বই। তার অসাধারণ স্মৃতিচারণামূলক বই ‘বঙ্গভবনে পাঁচ বছর’। তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।

মাহবুব তালুকদার নির্বাচন কমিশনার থাকার সময় তার আপসহীন অবস্থানের জন্য সমালোচিতও হয়েছেন। তদানীন্তন সিইসি প্রকাশ্যে এক দিন বলেছিলেন মাহবুব তালুকদার কমিশনের চেয়ে নিজের স্বার্থের জন্যই কাজ করছেন। জাতীয় নেতারাও অনেক সময় তাকে নিয়ে অনেক কটুকথা বলেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অসম সাহসী এবং অদম্য যোদ্ধা। গণতন্ত্রের জন্য, জাতির স্বার্থে, সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্নের জন্য একাই লড়াই করেছেন, যদিও সফলতা পাননি। কিন্তু একজন মাহবুব তালুকদার জাতির ন্যায়পরায়ণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি তার সংগ্রামের জায়গায় সফল হতে পারেননি বটে; তবে ব্যক্তিগতভাবে মানুষের হৃদয় জয় করতে পেরেছেন বলেই মনে হয়। জাতি তাকে দীর্ঘদিন স্মরণ রাখবে। এ কথা ঠিক, জাতি হিসেবে আমরা গুণীদের উদার ও নিরপেক্ষ মন নিয়ে কদর করতে শিখিনি এখনো। যত দিন আমরা দলকানা সংস্কৃতি থেকে বের না হতে পারব তত দিন গুণীজনদের অবদান থেকে বঞ্চিত থাকব। মাহবুব তালুকদারকে নিয়ে সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে তিনি তরুণ বয়সে আরামের চাকরি ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। আমৃত্যু গণতন্ত্রের সংগ্রামের বন্ধুর পথে হেঁটেছেন। নির্বাচন কমিশনে মাহবুব তালুকদারের পাঁচ বছরের কাজ এবং তার ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক
Email : [email protected]

 

 


আরো সংবাদ



premium cement