ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রহ:
- ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৪২
ফকিহুল মিল্লাত অভিধায় পরিচিত আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান রহ: একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসের গৌরবদীপ্ত অংশ। গোটা জীবন তিনি ইলমেদ্বীন চর্চা, বিকাশ ও আধ্যাত্মিক সাধনায় অতিবাহিত করেন। তিনি অসংখ্য আলিম ও মুহাদ্দিসের উস্তাদ এবং বিপুল জনগোষ্ঠীর রুহানি রাহবার। তিনি ছিলেন সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রেকর্ডসংখ্যক মাদরাসার মুরব্বি। অপেক্ষাকৃত দুর্বল মাদরাসাগুলোকে আর্থিক অনুদান প্রদানে তিনি যেভাবে এগিয়ে আসেন তা রীতিমতো বিস্ময়ের উদ্রেক করে। গোটা দেশজুড়ে ছিল তার সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি যেকোনো মানুষকে কাছে টানতে পারতেন। তার সাথে যারা সম্পর্কিত তিনি সবসময় তাদের খোঁজখবর নিতেন এবং সুখে-দুঃখে, বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াতেন। এটি তার চরিত্রের আলোকিত বৈশিষ্ট্য। প্রখর স্মৃতিশক্তি, তীক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা, প্রশাসনিক পারঙ্গমতা, মার্জিত আচরণ, অতিথিসেবা ও মানবহিতৈষণার মতো গুণাবলি তাকে সমসাময়িককালে মহিমান্বিত করেছে। এসব কারণে অন্য দশজন থেকে তিনি আলাদা। অবারিত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি ঢাকায় কোনো বাড়ি করেননি বা প্লট কেনেননি। ইঙ্গিত করলেই ভক্ত অনুরক্তরা রাজপ্রাসাদ গড়ে দিতেন। এ কোরবানি সত্যিই অসাধারণ। এ ক্ষেত্রে তিনি মুরব্বিদের আদর্শ অনুসরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। হাকিমুল উম্মত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রহ:-এর খলিফা পাকিস্তান জাতীয় সংসদ সদস্য মাওলানা আতহার আলী রহ: ও আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ:-এর খলিফা পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক সংসদ সদস্য খতিবে আযম মাওলানাা ছিদ্দিক আহমদ রহ: রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও ঢাকায় কোনো জায়গা-জমি বা বাড়ি তৈরি করেননি।
মুফতি আবদুর রহমান রহ: ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার ইমামনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম চান মিয়া। নাজিরহাট বড় মাদরাসা ও জামিয়া আহলিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারিতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক লেখাপড়া করেন। হাটহাজারী মাদরাসায় উচ্চমাধ্যামিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। ১৯৫০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে কওমি মাদরাসা পাঠ্যক্রমের সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিস কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। শায়খুল ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ:-এর কাছে তিনি বুখারি শরিফ অধ্যয়নের সৌভাগ্য লাভ করেন। তিনি যে বছর দাওরা শেষ করেন সে বছর দেওবন্দে ইফতা বিভাগ খোলা হয়। ১৯৫১ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগে প্রথম ডিগ্রি লাভকারী মুফতি তিনি। দেশে ফেরার পর পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষা কেন্দ্র চট্টগ্রামের পটিয়া আল-জামিয়া আল ইসলামিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হজরত মুফতি আজিজুল হক রহ:-এর আহ্বানে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি উত্তরবঙ্গে গমন করেন। সেখানে জনসাধারণকে নিয়ে তিনি বহু মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দেশের প্রায় ১৮টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলার সহস্রাধিক দ্বীনী প্রতিষ্ঠান নিয়ে গঠিত তানজিমুল মাদারিস আদদ্বীনিয়া বাংলাদেশের (উত্তরবঙ্গ) সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। (কালের কণ্ঠ, ঢাকা, ১০ নভেম্বর-২০১৫)
সুদীর্ঘ ছয় বছরের মিশন শেষে ১৯৬৮ সালে ফকিহুল মিল্লাত আল জামিয়া পটিয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখানে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পুরোদমে জামিয়ার বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাধারে জামিয়ার প্রধান মুফতি, সহকারী মহাপরিচালক ও শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দাওরায়ে হাদিসে সর্বোচ্চ কিতাব বুখারি শরিফের প্রথম খণ্ডের পাঠদান করেন। তিনি দু’দফায় পটিয়া আল জামিয়ায় ২৪ বছর খিদমত করেন। পটিয়ার সহকারী পরিচালক থাকাকালে তিনি দেশব্যাপী ১০০ সদস্যবিশিষ্ট ইফতা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ে শিশু-কিশোররা যাতে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত করতে পারে সে উদ্দেশ্যে পটিয়া আল জামিয়ার প্রধান পরিচালক আলহাজ মাওলানা ইউনুস রহ:-এর তত্ত্বাবধানে ১৯৭৬ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থা’। ১৯৮৯ সালে পটিয়া জামেয়া থেকে চলে আসার পর জামেয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়া নানুপুর ও জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদরাসায় খণ্ডকালীন বুখারি শরিফের দরস দেন। বসুন্ধরায় ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ এবং জামিআতুল আবরার বসুন্ধরা রিভারভিউর প্রতিষ্ঠা করে তিনি রীতিমতো কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। (জাগো নিউজ২৪ ডটকম; দৈনিক ইনকিলাব, ঢাকা, ২১ জানুয়ারি-২০১৬)
মুফতি আবদুর রহমান রহ: ১৯৯০ সালে হাকিমুল উম্মত আল্লামা শাহ আশরাফ আলী থানভী রহ:-এর খলিফা মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ:-এর সংস্পর্শে এসে আধ্যাত্মিক সাধনায় মনোযোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তার কাছ থেকে খেলাফত লাভ করেন। বসুন্ধরা মাদরাসায় তিনি ‘খানকায়ে এমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরারিয়া’ নামে একটি খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতি বছর মাদরাসায় ‘দাওয়াতুল হক’-এর কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইজতেমার ব্যবস্থা করতেন। সারা দেশ থেকে বহু আলেম ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি এতে যোগদান করে থাকেন। রমজানে করতেন ইতেকাফের ব্যবস্থা। অংশগ্রহণকারীদের আবাসন ও পানাহারের ব্যবস্থাও করতেন তিনি। তার আতিথেয়তার সুনাম সর্বজনবিদিত। (মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীম ইসলামাবাদী, দৈনিক ইনকিলাব, ঢাকা, ২১ জানুয়ারি-২০১৬)।
হজরত ফকিহুল মিল্লাত সুদভিত্তিক অর্থনীতির বিপরীতে ইসলামী অর্থনীতি প্রবর্তনে অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও তার অনন্য অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের তিনি শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য মনোনীত হন ১৯৮৩ সালে এবং ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। আমৃত্যু আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ২০১০ পর্যন্ত এ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান মনোনীত হন। দীর্ঘ ছয় বছর তিনি সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড ইসলামিক ব্যাংকসের ভাইস চেয়ারম্যানের ছিলেন। সোশ্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক শরিয়াহ বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেন। অল্প সময়ের জন্য ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের শরিয়াহ উপদেষ্টা ছিলেন। মুফতি আবদুর রহমান রহ: ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইন, কাতারসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে ইসলামী অর্থনৈতিক সেমিনারে যোগ দেন। বসুন্ধরা ইসলামিক সেন্টারে তিনি বেশ ক’টি আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতি সম্মেলনের আয়োজন করেন। এতে সাহরানপুর মাদরাসা ও দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিনিধি ছাড়াও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী স্কলার মুফতি তকি উসমানী অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন
((HYPERLINK "https://web.archive.org/ web/20120324204157/http:/www.probenewsmagazine.com/index.php? index= 2&contentId=4150" Mufti Abdur Rahman elected Chairman of CSBIB", Probe News Magazine, 9 march, 2011; Annual Report 2010" (PDF)? Bank Asia, 25 may, 2012; "Shariah Council". Shahjalal Islami Bank, 19 january, 2012).
তিনি বলেন, যদিও বাংলাদেশের বড় বড় শহরের খ্যাতনামা কিছু বড় মাদরাসায় ‘ফতোয়া বিভাগ’ চালু ছিল; যেখানে একজন মুফতি সাহেব মাসয়ালাগুলোর শরয়ী সমাধান দিয়ে ফতোয়া জারি করতেন; তবে সেগুলোতে তালিবে ইলমদেরকে ফতোয়া ও উসুলে ফতোয়ার শিক্ষাদানসহ ফতোয়ার ওপর অনুশীলন করিয়ে যোগ্য মুফতি হিসেবে গড়ে তোলার নিয়মতান্ত্রিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কেবল দাওরায়ে হাদিস পাস করা একজন ছাত্র ফতোয়া দেয়ার যোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠে না; বরং এতে স্বতন্ত্র সময় লাগিয়ে ফতোয়ার তামরিন করেই পারদর্শিতা অর্জন সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে কোথাও এ ধরনের পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল না। বহু দিন থেকে আন্তরিকভাবে এর তৃষ্ণা অনুভব করতে থাকি। তবে কোনো মোক্ষম সুযোগও হয়ে উঠছিল না এবং কোনো ব্যবস্থাও করতে পারছিলাম না। অতঃপর আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সর্বপ্রথম সত্তরের দশকের শেষের দিকে তখনকার কর্মস্থল জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় শত প্রতিক‚লতা ডিঙ্গিয়ে ‘তাখাসসুস ফিল ফিকহ ওয়াল ইফতা’ নামে ফিকহ ও ফতোয়ার ওপর গবেষণামূলক বিভাগের গোড়াপত্তন হয়। এতে দাওরায়ে হাদিস পাস মেধাবী তালিবে ইলমদেরকে অভিজ্ঞ মুফতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইফতাসহ জরুরি ফতোয়া শিক্ষাদানের জন্য এক বছর মেয়াদি ইফতা কোর্স চালু করা হয়। এর প্রধান ও নেগরানে আ’লা হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালার অশেষ দয়ায় ধীরে ধীরে দারুল ইফতার কাজ শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও এগোতে থাকে (মুফতি আবদুর রহমান রহ:, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত, ঢাকা, ২০১৫, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা : ২২-২৩)
সর্বপ্রথম উচ্চতর ইসলামী শিক্ষার ওপর স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান কায়েম করেন মুফতি আবদুর রহমান রহ:। মাওলানা শাহ আবরারুল হক হারদুয়ী রহ:-এর পরামর্শে ৫ মে, ১৯৯১ ঢাকার উত্তরা জসীমউদদীন রোডের একটি ভাড়া করা বাড়িতে ‘তাখাসসুস ফিল ফিকহিল ইসলামী’ তথা ইসলামী ফিকহের ওপর গবেষণা বিভাগ খোলা হয়। পরবর্তীতে বসুন্ধরায় নিজস্ব জায়গায় এটি স্থানান্তরিত হয়। ‘বাংলাদেশে দাওরায়ে হাদিস পর্যন্ত অনেক মাদরাসাই ছিল ও আছে। তবে সেগুলোতে বিশেষ সাবজেক্টের ওপর বিস্তর পড়াশোনা ও গভীর গবেষণামূলক জ্ঞানার্জনের জন্য স্বতন্ত্র কোনো বিভাগ ছিল না। হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের কিছু জায়গায় থাকলেও তা সেসব জামিয়া ও মাদরাসার আওতাধীন বিভাগ ছিল। কিন্তু উচ্চতর গবেষণামূলক পড়াশোনার জন্য স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তবে এর যথেষ্ট প্রয়োজন ছিল। এই প্রয়োজন পূরণার্থে পুরো উপমহাদেশে সর্বপ্রথম উচ্চতর ইসলামী গবেষণামূলক পড়াশোনার নিমিত্তে স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান ‘মারকাযু ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ’ (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ)-এর ভিত্তি রাখা হয় এবং একই সাথে ১৯৯১ সালে সর্বপ্রথম ফিকহে ইসলামীর ওপর দু’বছর মেয়াদি উচ্চতর বিভাগ চালু করা হয়। অতঃপর ১৯৯৫ সালে ‘উচ্চতর হাদিস শাস্ত্র গবেষণা’-এর ওপর দু’বছর মেয়াদি বিভাগ খোলা হয়। তারপর ১৪১৮ হিজরিতে ‘উচ্চতর উলুমুল কুরআন’ এবং শুরু থেকেই দু’বছর মেয়াদি তাজবিদ ও কিরাত বিভাগ খোলা হয়। অতঃপর ২০০৫ সালে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে যা ফিকহুল মুআমালাতের অন্তর্ভুক্ত, এর জন্য দু’বছর মেয়াদি স্বতন্ত্র বিভাগ খোলা হয়। বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে পরবর্তীতে ২০০৯ সালে ইসলামী স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি রাখা হয় যার নাম দেয়া হয় ‘মারকাযু ইকতিসাদিল ইসলামী বাংলাদেশ’ বা ‘সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ’ (মুফতি আবদুর রহমান রহ:, ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত, ঢাকা, ২০১৫, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৩)
হাদিস, তাফসির ও ফিকহে ইসলামীর পাশাপাশি আল্লামা মুফতি আবদুর রহমান রহ:-এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খিদমত হলো ১৫ খণ্ডের ‘ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত’। ১২ বছরের তার ঐকান্তিক পরিশ্রম, নিরলস প্রচেষ্টা ও সুগভীর ফিকহি চিন্তাধারার ফসল বিশাল এ ফতোয়া ভাণ্ডার। তার সুযোগ্য পুত্র মারকাযুল ফিকরিল ইসলামীর বাংলাদেশের মুহতামিম শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি আরশাদ রহমানীর দা.বা. নেতৃত্বে ১০ জন বিজ্ঞ মুফতির একটি বোর্ড গবেষণা করে ফতোয়াগুলো সুবিন্যস্ত ও নথিবদ্ধ করেন। ফকিহুল মিল্লাতের প্রতিষ্ঠিত সেন্টার থেকে সমসাময়িক ও আধুনিক যুগ জিজ্ঞাসার জবাবে ২০ হাজারের অধিক ফতোয়া জারি করা হয়। ‘আল-আবরার’ নামে সংস্কৃতি, গবেষণা ও ফিকহবিষয়ক একটি মাসিক পত্রিকাও বের করেন তিনি। এটি এখনো বেশ পাঠকনন্দিত।
ঢাকার গবেষণামূলক উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার জিম্মাদার, বিশিষ্ট ফিকহবিদ ও গবেষক মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক দা.বা. ফকিহুল মিল্লাতের স্মৃতিচারণ করে বলেন, হজরত মুফতি আবদুর রহমান রহ: সেই সব বুজুর্গের একজন যাদের আল্লাহ দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ সব ময়দানে খিদমতের তাওফিক দান করেছেন। তালিম ও তারবিয়াত, দাওয়াত ও তাবলিগ, সুলুক ও ইহসান এবং খিদমতে খালকÑ সব ময়দানেই তার খেদমত ছিল বিস্তৃত। হজরতের অনেক বড় একটি খিদমত ছিল, হজরত সব শ্রেণীর লোকের কথা শুনতেন। তাদের সমস্যাবলি শুনে তাদের নেক মাশওয়ারা দিতেন। কত পেরেশানহাল লোক তার ছায়ায় গিয়ে সুকুন ও ইতমিনান হাসিল করেছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ইলম ও আকল, ফাহম ও ফিরাসাত, এবং স্নেহ-ভালোবাসার অধিকারী আল্লাহওয়ালাদের সোহবতেই কেবল এই দৌলত হাসিল হতে পারে। মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী তার সব খেদমতের জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ছিল। এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের আমলি তরবিয়তের ওপর বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়। এটি আমাদের জন্য একটি আদর্শ। ইনশা আল্লাহ এই প্রতিষ্ঠান এবং হজরতের অন্য সব প্রতিষ্ঠান ও দ্বীনী খেদমত সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত বাকি থাকবে। আমরা আশা করব, মারকাযুল ফিকরিল ইসলামীর দায়িত্বশীলরা হজরতের জীবনীর ওপর শয়ানে শান কাজ করবেন। হজরতের গুণাবলি এবং খেদমত আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য শুধু কোনো স্মারকই নয় বরং স্বতন্ত্র গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। আর ‘আল আবরার’-এর বিশেষ সংখ্যা তো বের হবেই। (মাসিক আল কাউসার, ঢাকা, ডিসেম্বর, ২০১৫, বর্ষ-১১, সংখ্য-১১)
দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত থাকার পর ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তার নামাজে জানাজা পরদিন ১১ নভেম্বর সকাল ১০টায় বসুন্ধরা কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বসুন্ধরা নতুন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সারা দেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ নামাজে জানাজায় শরিক হন। ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রাহিমাহুল্লাহকে নিয়ে একটি প্রামাণ্য স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক মাওলানা হুমায়ুন আইয়ুব। স্মারকগ্রন্থের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক ও খানকাহে ইমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরারিয়া জানশীন মুফতি আরশাদ রাহমানী।
লেখক : অবসরপ্রাপ্তঅধ্যাপক ও গবেষক
[email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা