চিকিৎসা ব্যয়
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:৩১, আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:২১
বিভিন্ন সঙ্কটে বিপর্যস্ত জনজীবনে চিকিৎসা খরচ আরো নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের পর হাতে চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শূন্যের কোঠায়। এর ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো যোগ হয়েছে চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি। সব কিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিকিৎসার খরচ যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। জ্বর, সর্দি, আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড, কালাজ্বর, উদরাময়, ম্যালেরিয়া এসব সংক্রামক রোগের জায়গা দখল করেছে অ-সংক্রামক জটিল রোগ। ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ক্যান্সার, লিভারের রোগ, কিডনি রোগ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং সড়ক দুর্ঘটনা এখন মূল স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এসব রোগের চিকিৎসা এক দিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদি, অপর দিকে ব্যয়বহুল। এসব অসুখের ওষুধের এবং বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়, হাসপাতালের খরচ ও চিকিৎসকের সম্মানী এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ছড়াছড়ি সর্বত্র বিরাজমান। আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত মানুষ এসবের দিকে পা বাড়াচ্ছে যা সঙ্কট নিরসনের পরিবর্তে নতুন নতুন স্বাস্থ্য সঙ্কট তৈরি করছে।
পল্লী স্বাস্থ্য ক্লিনিক, উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল এমনকি অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও এসব রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এর সুযোগ নিচ্ছে এক ধরনের প্রতিষ্ঠান। ইদানীং স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক অনুমোদনহীন বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধ করা থেকেই এটা প্রমাণিত হয়। এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসক নন এমন ব্যক্তিদের দিয়ে অপারেশন করানোর কথা প্রায়ই খবরের কাগজে শিরোনাম হয়ে ওঠে।
ওষুধের দুষ্প্রাপ্যতা, উচ্চমূল্য ছাড়াও রয়েছে টেস্ট বাণিজ্য। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় একই পরীক্ষা প্রতিদিন চিকিৎসা খরচকে বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিশন বাণিজ্যের খরচটাও নেপথ্যে রোগীদেরই বহন করতে হয়। এর ওপর রয়েছে দালাল বাণিজ্য। চিকিৎসকদের চেম্বার ছাড়াও গ্রামে গঞ্জেও রয়েছে দালাল নেটওয়ার্ক। এরা বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী জোগাড় করে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসে। এ জন্য তারা কমিশন নেয়। এই খরচটাও রোগীদের বহন করতে হয় পরোক্ষভাবে। সর্বোপরি রয়েছে চিকিৎসকদের জন্য ব্যয়।
এভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীর আর্থিক ও মানসিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়ে। যারা বিত্তবান তারা পাড়ি দেন বিদেশে। সাধারণ জনগণের পক্ষে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবাই কঠিন। তারা চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে সর্বস্ব হারায়, নিঃস্ব হয়ে পড়ে; বিশেষ করে ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগ ও লিভারের রোগীদের পরিবার। এমন অনেকে আছেন, যারা কিছুদিন আগেও সচ্ছল ছিলেন, পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ছিল তাদের আনন্দমুখর জীবন। এখন তাদের শুধু বাড়িটুকুই আছে। বাকি সবই বিক্রি করতে হয়েছে ক্যান্সার, হৃদরোগ, পক্ষাঘাত ও কিডনি রোগের চিকিৎসায়। এসব রোগী নিজের সাথে সাথে গোটা পরিবারকেই বিপর্যয় ও দারিদ্র্যের মুখে ঠেলে দেয়। এদের প্রয়োজন বিশেষায়িত চিকিৎসার। এসব বিশেষায়িত চিকিৎসার পরিধি এবং প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা দরকার। এ জন্য দেশে কতজন ক্যান্সার রোগী, কতজন স্ট্রোকজনিত পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী, তাদের একটি জাতীয় তথ্যভাণ্ডার অপরিহার্য। একইভাবে প্রয়োজন কিডনি রোগীদের তথ্যভাণ্ডার। যেন এর ভিত্তিতে চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করা যায়। কিডনি রোগীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন-বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের ভাষ্যমতে বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ছাড়িয়েছে। এ রোগে প্রতি বছর দেশে আকস্মিক মারা যায় ১৭ লাখ মানুষ। কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসার বাইরে থাকে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ।
প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসাসহায়তা দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে। জাতীয় তথ্যভাণ্ডারে নিবন্ধিত রোগীরা যেন ন্যায্যমূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সহায়তা পেতে পারেন তার নিশ্চয়তা বিধান করা দরকার। অপর দিকে এ ধরনের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং জনশক্তি তৈরির পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকার এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন।
ওষুধের মূল্য সহনীয় রাখা, টেস্ট বাণিজ্য বন্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে হিমালয়সম চিকিৎসা বিলের নিয়ন্ত্রণ, দালাল ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত চিকিৎসা বিকেন্দ্রীকরণ এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমকে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালায় ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। নতুবা চিকিৎসা একসময় সাধারণ জনগণের জন্য সোনার হরিণ হয়ে উঠবে।
লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা