তারুণ্যের সঙ্কট : প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
- অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
- ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৫৮
সাম্প্রতিক গণশুমারির ভিত্তিতে দেশের মোট তরুণের সংখ্যা ৪৫.৯ মিলিয়ন, যা জনসংখ্যার ২৭.৮২ শতাংশ। তরুণ প্রজন্ম দেশের সম্পদ, ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। এদের নেতৃত্বেই ভবিষ্যতে পরিচালিত হবে দেশ। এদের সময়োপযোগী উপযুক্ত শিক্ষা, উন্নত প্রশিক্ষণ, নৈতিকতাসম্পন্ন নাগরিকে পরিণত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এ দায়িত্ব পালন করলেই কেবল ভবিষ্যতের যোগ্য নাগরিক তৈরি হতে পারে। তৈরি হতে পারে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সুযোগ্য নেতৃত্ব, যা জাতিকে ভবিষ্যতে সম্ভাবনার পথে এগিয়ে নেবে। এ জন্যই তরুণ সম্প্রদায়কে জাতির ভবিষ্যৎ বলা হয়ে থাকে। বস্তুত তরুণ প্রজন্মই পারে উন্নয়নের গতিধারাকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নকে ধারণ করে বাস্তবায়ন করতে। এ জন্য বিভিন্ন দেশে রয়েছে তরুণদের জন্য নীতিমালা যার আলোকে তারা নিজেদের তৈরি করে শাণিত করতে পারে নিজের যোগ্যতাকে। জাতির আকাঙ্ক্ষাকে পরিচালিত করতে পারে সঠিকভাবে। রচনা করতে পারে জাতির নতুন গৌরব, সৃষ্টি করতে পারে সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্বলিত নৈতিকতাপূর্ণ শিক্ষা; যা তরুণদের সৃষ্টিমুখী সৃজনশীল কর্মধারাকে উজ্জীবিত করে, দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, অর্থনীতি ও সামাজিকতার দায়বদ্ধতা শেখায়, এ ধরনের শিক্ষার আলোকে তরুণরা বিকশিত হয়- পূর্ণতার পথে এগিয়ে যায়।
আমাদের তরুণদের জন্য এ ধরনের গঠনমুখী কর্মকৌশল দুঃখজনকভাবে অনুপস্থিত। ফলে জীবনের লক্ষ্যহীন এসব তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠ পেরিয়ে কেবল বেকারের সংখ্যাই বাড়াচ্ছে। স্কুলপর্যায়ে তো দূরের কথা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েরাও জীবনের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের কথা আজ বলতে পারে না, চিন্তা করে না, করতে পারে না। তাদের চিন্তায় বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ আশঙ্কাজনকভাবে অনুপস্থিত। দেশ-জাতি ও সমাজ সম্পর্কে, দেশের ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের চিন্তা ধারণাতীতভাবে সীমাবদ্ধ। ফলে তরুণ সম্প্রদায় এক অনিশ্চিত, লক্ষ্যহীন জনপদে পরিণত হচ্ছে। লক্ষ্যহীন জীবনের অনিশ্চয়তায় তারা হতাশা, মাদকাসক্তি, রাহাজানি, ছিনতাই এবং অপরাপর অপকর্মে জড়িয়ে যাচ্ছে অজান্তেই। তাদের কাছে দেশ, জাতি, সমাজ, ভবিষ্যত অপাঙ্ক্তেয়। জাতি তাদের কাছ থেকে কিছুই পায় না। তারাই বরং দিন দিন পরিবার সমাজ ও জাতির ওপর দায় হয়ে চাপছে।
আমাদের তরুণদের একদল স্কুলের পড়া শেষ করে, অনেকে তারও আগে পাড়ি জমায় বিদেশে। উচ্চবিত্ত ও সম্পদশালীরা তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছেন বিদেশে- দেশের অর্থে। এসব তরুণ দেশের সাথে সম্পর্কহীন। তাদের মেধা দেশের কোনো কাজে আসে না। অথচ বিদেশে রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে অতিকষ্টে প্রবাসীদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা এভাবেই খরচ হয়ে যায়, দেশের কল্যাণে আসে না।
আরেকটি অংশ লক্ষ্যহীনভাবে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিড় জমায়। সৃষ্টিধর্মী কর্মকাণ্ড হাতে না থাকায় কোনোমতে একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করে বেকারত্বের অক‚ল সমুদ্রে হাবুডুবু খেতে থাকে। দেশান্তরী হয়। কপাল ভালো হলে বিদেশে গিয়ে রাস্তা ঝাড়– দেয়ার মতো ঙফফ ঔড়ন করে। রাতে টানেলে কিংবা স্টেশনে ঘুমায়, পুলিশের হাতে ধরা পড়ে নাজেহাল হয়। যাদের ভাগ্য ততটা প্রসন্ন হয় না তারা পাচার হতে গিয়ে বিদেশের জেলখানায় ঠিকানাহীন হয়ে যায়। নতুবা গহিন সাগরে হারিয়ে যায়।
আরেক দল রয়েছে যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক আনুক‚ল্যে বিনাপরিশ্রমে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায়। সামাজিক নেতৃত্বে, সরকারি চাকরিতে এদেরই প্রাধান্য। মেধা এখানে বিপর্যস্ত, পরাজিত, মূল্যহীন। এদের দাপট শহর, বন্দর, গ্রাম সর্বত্রই। এরা অনৈতিকতার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। এদেরকে আলোর পথ দেখানোর কেউ থাকে না। এভাবেই এ দেশের তরুণরা জীবনের স্বপ্নহীন যাত্রায় শেষ হয়ে যায়।
যে তারুণ্যের দৃপ্ত পদভারে এদেশের মাটি সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভরে ওঠার কথা, পরিবর্তে তারা আজ দিকভ্রান্তের মতো লক্ষ্যহীন। তাদের সামনে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন নেই। যারা মেধাবী তারাও উপেক্ষিত। ফলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক অনাচারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। এরা একজন দু’জন নয়, এরা একটি প্রজন্ম। ক্ষয়িষ্ণু এই প্রজন্মকে হতাশা থেকে আলোর পথে আনার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও ব্যবস্থা থাকা জরুরি। দরকার সার্টিফিকেট-সর্বস্ব বেকারত্ব থেকে জীবনের মূলধারায় সংযোজন। নইলে একটি বেকার প্রজন্মের দায়ভার জাতিকেই বইতে হবে। জাতির প্রাণবন্ত তরুণরা বিদেশের মাটিতে ঙফফ ঔড়ন করবে; দেশে রিকশা চালিয়ে জীবনীশক্তিকে তিলে তিলে ধ্বংস করবে অথবা পেটোয়াবাহিনীতে নাম লেখাবে- এটি কোনোক্রমেই গৌরবের নয়। এদের কর্মশক্তিকে উৎপাদনশীল শক্তিতে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা প্রয়োজন।
লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা