২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বেসামাল বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ

কম দামে পণ্য কিনতে টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইন - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ১৯৯৬ সম্মেলনে বলা হয়, ‘খাদ্যনিরাপত্তা হলো এরূপ একটি বিষয় যেখানে জনগণ সবসময় ভৌত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করে এবং যা তাদের সুস্বাস্থ্য ও কর্মক্ষম জীবনের জন্য স্বাস্থ্যবিধিসম্মত প্রয়োজন মেটায়।’ অর্থাৎ খাদ্য নিরাপত্তা হলো, নির্ভরশীল স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যের পর্যাপ্ত জোগান যা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে বিদ্যমান থাকাকে।

মানুষের বেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্যকর, পুষ্টিসমৃদ্ধ অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহ সারা বছর ধরে প্রয়োজন যাতে মানুষের কর্মোদ্যম, কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায়। প্রায় ১০ হাজার বছর আগে মিসরীয় ও চায়না সভ্যতায় খাদ্যনিরাপত্তার ধারণা ও এর প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। তখনো দুর্ভিক্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় খাদ্য মজুদ করে রাখা হতো। বিংশ শতাব্দীর ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা ধারণা আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। তখন থেকে খাদ্য নিরাপত্তা ধারণাটি জাতীয় পর্যায়ে চিন্তার বিষয় হিসেবে বিবেচনা শুরু হয়।

বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার অবস্থা
ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও খাদ্যসঙ্কট বিশ্ব খাদ্যনিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঝুঁকি। প্রশ্ন হলো- কিভাবে এই বিশ্বের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমরা খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন করতে পারি। উল্লেখ্য, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে জনসংখ্যা হবে ৯ বিলিয়ন। এখনো এক বিলিয়ন লোক দৈনিক খাবার থেকে বঞ্চিত থাকে। একই সাথে পরিবর্তন হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে এ পথে যাত্রা তত আশাপ্রদ নয়। অথচ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যই মূলত খাদ্যনিরাপত্তা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর অপেক্ষা এশিয়া ও আফ্রিকার শিশুসহ সব মানুষের খাদ্য এবং পুষ্টি নিরাপত্তার দিকগুলো ঝুঁকিবহুল। ১৯৪০-৫০ সালের দিকে সব অঞ্চলের মানুষের খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল। ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৬০ সালের দিকে সম্পদশালী দেশগুলো উন্নয়নের জন্য খাদ্য সাহায্যকে শর্ত হিসেবে ব্যবহার করেছে।

নাটকীয়ভাবে, ১৯৭২-৭৪ সময়ে দাতা দেশগুলোর খাদ্যের জোগান ও দামের মধ্যে অস্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়। ১৯৮০-এর দশকে সবুজ বিপ্লøবের ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তখন খাদ্যনিরাপত্তা ধারণা কাঠামোগত রূপ পায়; অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও দারিদ্র্য দূরীকরণে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচিত হয়; জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ১৯৯০-এর দিকে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা দূরীকরণে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) মতে, করোনা মহামারী, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০১৯ সালের পর বিশ্বজুড়ে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে সাড়ে ৩৪ কোটি ছাড়িয়েছে। অথচ করোনা মহামারী শুরুর আগে তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ছিল সাড়ে ১৩ কোটি। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

ডব্লিউএফপির তথ্য মতে, ‘বিশ্বের এই চাপ বহনের সামর্থ্য নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও সংঘর্ষের ফলে বিশ্বজুড়ে ১০ গুণের বেশি বাস্তুচ্যুতি দেখছি, কারণ এই দুইয়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। সাথে বিশ্ব করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের যৌথ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল খাদ্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন সঙ্কটের ব্যাপক প্রভাব মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় পড়তে দেখা গেছে। ইয়েমেন প্রয়োজনীয় খাদ্যের ৯০ শতাংশ আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ আমদানি হয় কৃষ্ণসাগর দিয়ে। কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে আসা খাদ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় এ অঞ্চলের মানুষগুলোকে; যেখানে যুদ্ধ চলছে।

ডব্লিউএফপির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে এক কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু ডব্লিউএফপির পক্ষে কেবল এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তবে তারা যে সহায়তা দেয়, তাতে একজন মানুষের দৈনন্দিন চাহিদার অর্ধেক পূরণ করা সম্ভব। এর পেছনে তহবিল স্বল্পতার কথা বলেছে জাতিসঙ্ঘের এই সংস্থাটি।

করোনা মহামারীর পর জিনিসপত্রের দাম ৪৫ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা দাতারাও বিশাল অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। চলমান যুদ্ধের ফলে ইরাকের মতো তেল রফতানিকারক দেশগুলো জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লাভবান হলেও খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। সেখানে বছরে ৫২ লাখ টন গমের প্রয়োজন অথচ উৎপন্ন হয় মাত্র ২৩ লাখ টন। বাকি গম আমদানি করতে হয়। খরা ও পানিস্বল্পতার কারণে ইরাকজুড়ে ক্ষুদ্র কৃষকদের জীবিকা বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোতে খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন করা যায়, কারণ ওই সব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নগণ্য অথচ ভূমি, অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ, আর্থিক সামর্থ্য, প্রযুক্তি উচ্চমান ও দক্ষতায় ওই দেশগুলো শীর্ষে। কিন্তু বাংলাদেশসহ এশিয়ার জনবহুল দেশগুলো, আফ্রিকায় যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অপ্রতিরোধ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামর্থ্য অত্যন্ত স্বল্প, প্রযুক্তি ও দক্ষতা নিম্নমানসম্পন্ন, সেখানে খাদ্যের প্রাপ্যতা পর্যাপ্ত নয়। এ সব অঞ্চলের অনেক মানুষ, শিশু দৈনিক দু’বেলা খাবার পায় না, সুতরাং মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাদ্যের সংস্থান এদের জন্য অনেক দূরের স্বপ্ন।

বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিশ্লেষণ
খাদ্যনিরাপত্তার সাথে দারিদ্র্যবিমোচনের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার, তীব্রতা ও গভীরতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছিল। ১৯৯১ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩.৫ শতাংশে। ২০২০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৮.৬ শতাংশে কমিয়ে আনার প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশে ৪৫.১ শতাংশ জনগণের মাথাপিছু জমির পরিমাণ ০.০৫ একরের কম। জনসংখ্যার ক্রমাগত বৃদ্ধি, নগরায়ণ, শিল্পোৎপাদন ও বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে এক দিকে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস, অপর দিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যুগোপযোগী না হওয়ায় বিষয়টি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বর্তমানে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে এ দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ; এর মধ্যে ১২.৫ শতাংশ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে। উল্লিøখিত চ্যালেঞ্জের সাথে পরিবেশগত পরিবর্তন এবং অজ্ঞতা ও অতিমুনাফার লোভে মানুষের মনুষ্যত্ব হ্রাস পাওয়ায় বর্তমানে আরো একটি চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে নিরাপদ খাদ্য ধারণায়।

মানুষের প্রথম মৌলিক ও মানবিক অধিকার হলো খাদ্য। দেশের খাদ্য চাহিদা অতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো- তিন-চতুর্থাংশ দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষ গ্রামে বাস করে। বেশির ভাগ কৃষক খাদ্য উৎপাদন করে কিন্তু ওই খাদ্য তারা গ্রহণ করতে পারে না, সামর্থ্যরে অভাবে। এ কৃষকদের প্রয়োজন হলো স্থিতিশীল উৎপাদিকাশক্তি ও আয় বৃদ্ধির নিশ্চিত ধারা। কিন্তু তাদের অনেক অভাব; অবকাঠামোগত উন্নয়ন না থাকা, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ও নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের ক্রয়যোগ্যতার অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে। জৈব প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন আধুনিক কলাকৌশল প্রয়োগে বিগত তিন দশকে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভূমিহীন জনসংখ্যা ৩৫.৪ শতাংশ এবং ০.০৫ একরের কম ভূমির মালিক ৪৫.১ শতাংশ। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বে¡ও আমদানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন- ১৯৯৫-৯৬ সালে মোট খাদ্য আমদানি ২৪.২৭ লাখ টন যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৩১.২৪ লাখ টন; ২০২২ সালে আমদানির চাহিদা দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টন। অর্থাৎ বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের প্রাপ্যতা অভ্যন্তরীণভাবে পর্যাপ্ত নয়। অথচ বাংলাদেশ ২০১৩ সালের মধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। উল্লেখ, খাদ্যের প্রাপ্যতা মোট দেশজ উৎপাদন, মজুদ, নিট আমদানি, বৈদেশিক সাহায্য এবং নিট বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসংস্থান করার তাড়নায় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন বেশির ভাগই উপেক্ষিত রয়েছে। পুষ্টিহীনতার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি এক হাজার জীবিত শিশুতে মৃত্যুহার এখনো ৪৬ এবং শিশু মৃত্যুহার (এক বছরের কম) প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মধ্যে ৩০ জন। দেশের ৩১.৫০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে এবং ১৭.৬০ শতাংশ লোক চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

বাংলাদেশে খাদ্যনিরাপত্তায় আন্তর্জাতিক মান
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ২০১২ সালের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে শীর্ষ পাঁচটি দেশ হলো- যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডস। মোজাম্বিক, ইথিওপিয়া, রুয়ান্ডা, নাইজেরিয়া হলো ওই সূচকের সর্বনিম্ন দেশ। ওই সূচকের ১০৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম, দক্ষিণ এশিয়াতে নিচের দিক থেকে দ্বিতীয়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৭ লাখ এবং নিরাপত্তা সূচকে অর্জিত স্কোর ৩৪.৬ (১০০ এর মধ্যে)। ২৫টি নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত রিপোর্টে সামর্থ্য, প্রাপ্যতা ও গুণগতমান এই তিনটি উপাদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যথাক্রমে ৭৮, ৮১ ও ৯২।

বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তায় চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ
বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম : প্রতি বছর চাষযোগ্য জমি হ্রাস পাচ্ছে ৬৯ হাজার একর অথচ জনসংখ্যা বছরে দুই মিলিয়ন হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বারবার বিধ্বংসী প্রভাব পড়ছে। গবেষণা ও উন্নয়নে কম বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও মাটির উর্বরতা হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সারের ভারসাম্যহীন প্রয়োগও চ্যালেঞ্জ। বেশির ভাগ ফসলের ফলন সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা (যেমন- হাইব্রিড কাল্টিভার ব্যবহার ও নির্ভুল কৃষি গ্রহণের মাধ্যমে) বর্তমান ফলন স্তরের ব্রেকিং প্রয়োজন। এ ছাড়াও উন্নত প্রযুক্তির ধীর গ্রহণ, জলবায়ু-স্মার্ট বৈচিত্র্য ও প্রযুক্তির অভাব, শিল্পের বর্জ্য, পলিথিন, বিষাক্ত ধোঁয়া দ্বারা ভূমি, নদী ও জলাশয় দূষণ ছাড়াও উপযুক্ত পরিবেশবান্ধব কৃষির জন্য ভূমি জোনিং নেই। সাশ্রয়ী মূল্যে প্রধান ফসলের জন্য মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহ, সার, সেচের পানি ও কীটনাশক ইত্যাদি ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের অভাব। অপর্যাপ্ত খামার যান্ত্রিকীকরণ ও মৌসুমি শ্রমিকের ঘাটতি, শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার ও অপব্যবহার হচ্ছে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না থাকা, বাজার ব্যবস্থাপনা, ফসল কর্তন- পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস ও মূল্য সংযোজন, সব শ্রেণীর কৃষকদের জন্য সহজ ঋণ, জৈবিক আগাছা নিয়ন্ত্রণ, শস্য বহুমুখীকরণ, জনশক্তির সক্ষমতা উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা উন্নয়ন ও খামারের জন্য বীমা, ইত্যাদিও বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা বিধানের চ্যালেঞ্জ।

উপরি উক্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের রয়েছে অপার সুযোগ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, পরিশ্রমী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক; বিশাল ও তুলনামূলক সস্তা শ্রমশক্তি; সারা দেশে ভালো এবং প্রতিষ্ঠিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ নেটওয়ার্ক; কৃষি শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদি। এদেশে মাঝারি মানের মাটি ও অনুকূল জলবায়ু যেখানে সারা বছর বিভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব। উদ্ভাবনী বৈচিত্র্যের উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপনের প্যাকেজের মাধ্যমে বেশির ভাগ ফসল/মাছ/প্রাণীসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ জলের উৎস; আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার; উৎপাদন খরচ প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় বিদেশে রফতানির সুযোগ; শিক্ষিত উদ্যোক্তারা উচ্চমূল্যের ফসল/মৎস্য-প্রাণির খামারের মাধ্যমে অন্যান্য উদ্যোগের তুলনায় লাভজনক হিসেবে কৃষিতে বিনিয়োগ করছেন। বেসরকারি কোম্পানিগুলো কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের জন্য বিশেষ করে পণ্যের মূল্য সংযোজনে বিনিয়োগ করছে। সর্বোপরি, সদ্য উত্থিত বিশাল চরের জমি ভবিষ্যতের কৃষি উৎপাদন ছাড়াও অন্তত শীতকালে এলাকা সম্প্রসারণের সুবিধা, ইত্যাদি অপার সুযোগ রয়েছে এই সোনার বাংলায়।

বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তায় করণীয়
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ মিলিয়ন জনগণ মাঝারি ও তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। প্রশ্ন হলো- কেন পরিবার খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়? প্রধানত স্বল্প ও টেকসই আয় না থাকা; প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাস; পরিবারের কর্মক্ষম লোকটি দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়া; কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সামাজিক কারণ যেমন- সহিংসতা, মামলা, যৌতুক, ঋণের অভাব ও পরিবারে কোনো আয় উপার্জনকারী সদস্য না থাকাই খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার প্রধান কারণ।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা পরিস্থিতি বলতে বর্তমানে দেশ শুধু আলু, মাছ, গোশত ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গম, ডাল, ভোজ্যতেল, মসলা, চিনি, শাকসবজি (মৌসুমি) এবং ফল (মৌসুমি এবং বিদেশী ফল) এর রয়েছে তীব্র ঘাটতি। তবে ধান ও ভুট্টা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কাছাকাছি। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভূমি হ্রাস ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের সাথে প্রধান খাদ্যশস্য- চালের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। শুধু সুষম খাদ্যাভ্যাস ও উল্লেখযোগ্য ফলন বৃদ্ধি ভবিষ্যতে ধানের ঘাটতি কমাতে পারে। অবশ্য চালের দৈনিক চাহিদার মধ্যে বিভিন্ন তথ্যে ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে (প্রতিদিন জনপ্রতি ৩৬৭ গ্রাম থেকে ৪৮৭ গ্রাম)। এই বিস্তৃত পার্থক্য পরিকল্পনাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।

দ্রুত নগরায়ণ এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, ডায়াবেটিস সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসুবিধা এবং বিভিন্ন বেকারি, বিস্কুট ও মিষ্টিজাতীয় পণ্য তৈরির কারণে গমের চাহিদা আগের চেয়ে বেশি এবং তা ৬-৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও আরো পাবে। তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে চাল ও গম আমদানির জন্য বাংলাদেশের ব্যয় ছিল প্রায় ২৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। এটি স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে ডাল, তৈলবীজ ও মসলার মতো পুষ্টির ঘনত্বের ফসলের বড় ঘাটতি রয়েছে। এই ফসলগুলো আমদানি করতে প্রতি বছর ৩৯-৪০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন এবং তা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশেও দুধ উৎপাদনে একটি বড় ঘাটতি রয়েছে যা মেটাতে আমদানি খরচ হয় বছরে দুই হাজার ৬২৪ কোটি টাকা।

সীমিত ভূমি, বিপুল জনসংখ্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের পুনরাবৃত্তিমূলক বিধ্বংসী প্রভাব এবং কম প্রযুক্তি গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণের কারণে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ প্রধান খাদ্যপণ্যের ঘাটতি থাকবে। সুতরাং, কৃষিজাত পণ্যের অভ্যন্তরীণ ফলন বৃদ্ধি সত্ত্বেও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিদেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হবে।

উপরে উল্লিখিত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার ভিত্তিতে টেকসই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান ফলন প্রতি হেক্টরে ৪.১২ টন থেকে ৫.১২ টনে উন্নীত করে বোরো ধান চাষের জমির পরিমাণ ২৫ শতাংশ হ্রাসকরণ করা এবং সেই জমিগুলোকে তেলবীজ, ভুট্টা, ফল, শাকসবজি, ডাল এবং উচ্চ মূল্যের পুষ্টির ঘনত্বের তীব্র ঘাটতি ফসল চাষ এবং পশুপালনের জন্য ছেড়ে দেয়ার কথা বলছেন গবেষকরা। জৈব ও অজৈব উভয় ভাবে মাটির উর্বরতার উন্নতি; মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে সুষম ও বৈচিত্র্যময় খাদ্যের দিকে রূপান্তরকরণ যাতে স্বাস্থ্যকর জীবন ও পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়।

এ ছাড়াও প্রধান ফসল/মৎস্য/প্রাণিসম্পদ উৎপাদনের, ফলনের ব্যবধান কমানো; খাদ্যনিরাপত্তা এবং রফতানির জন্য খামার থেকে টেবিলে ‘গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস’ প্রবর্তন; সর্বস্তরে ফসল-পরবর্তী ক্ষতি এবং খাদ্য অপচয় হ্রাসকরণ; ক্ষুদ্র খামারের জন্য বাণিজ্যনীতি, সহজলভ্য ও সস্তা ঋণের ব্যবস্থা; জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলার জন্য মোট অবকাঠামোগত ব্যবস্থা পরিবর্তনকরণ এবং ফসল/মাছ/গবাদিপশুর ক্ষতির ক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য অনুকূল বীমা প্রচলন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপ
খাদ্যনিরাপত্তার সাথে একটি দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সম্পর্কযুক্ত। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশকে খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ খাদ্যনীতি প্রণয়ন করেছে যাতে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের পর্যাপ্ত ও স্থিতিশীল সরবরাহ; ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ এবং সবার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের জন্য অগ্রাধিকার নীতি গ্রহণ করেছে।

এ ছাড়াও দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে উৎপাদনের উপকরণ সস্তা ও সহজলভ্য করা এবং ব্যাংকঋণ সহজ করাসহ কৃষিতে ভর্তুকি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দিকেও লক্ষ্য রেখেছে। একই সাথে, নিরাপদ খাদ্য মজুদ গড়ে তুলতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে খাদ্যশস্য সংগ্রহ করছে। কৃষি গবেষণায় গুরুত দিয়েছে নব নব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণে। শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার সারা দেশে এক কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার কৃষক পরিবারের মধ্যে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করেছে। লবণাক্ততাসহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনের ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল উপকূলীয় এলাকা ধান চাষের আওতায় আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি শস্যের জাত চাষের ফলে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা দূরীকরণ সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও হাওর এলাকায় পরিকল্পিত পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে কৃষি জমির আওতা সম্প্রসারণ ও একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রতি বছরে কৃষকদের মূল্য সহায়তা ও খাদ্যনিরাপত্তা মজুদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণভাবে খাদ্যশস্য সংগ্রহ কার্যক্রম গ্রহণ করে।

দারিদ্র্য হ্রাস এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ কৌশল
কৃষির আধুনিকায়ন সত্ত্বেও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা ব্যতীত দারিদ্র্য উল্লেøখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যাবে না যদি না একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের কৃষির আয় ২৫ শতাংশ কমিয়ে অকৃষি খাতের আয় ২৫ শতাংশ বাড়াতে পারে। কারণ জনসংখ্যার একটি বড় অংশের মাথাপিছু জমি মাত্র ১১ শতাংশ। এ ছাড়াও দেশের জনসংখ্যা বিশাল অথচ চাষের জমি ক্রমান্বয়ে জমি কমছে, পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে দ্রুত। সুতরাং দেশের ৩৫ মিলিয়ন দরিদ্র জনগণের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য তাদের টেকসই আয় বৃদ্ধির কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

খাদ্যনিরাপত্তা বনাম সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
খাদ্যনিরাপত্তা বিষয়ে সর্বশেষ স্মরণ করিয়ে দেয় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি ২০২০ সালের ৯ অক্টোবর যখন ক্ষুধা মোকাবেলায় প্রচেষ্টার জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়ার মধ্য দিয়ে। ওই কমিটি ক্ষুধা, যুদ্ধ ও শান্তির মধ্যে একটি সুস্পষ্ট সংযোগও স্থাপন করে এবং আরো বলে যে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) বিশ্বের সঙ্ঘাত-আক্রান্ত অঞ্চলে শান্তির জন্য এবং ভালো অবস্থার জন্য কাজ করা প্রয়োজন যাতে ক্ষুধাকে যুদ্ধ ও সঙ্ঘাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে কেউ।

উল্লেখ্য যে, ক্রমবর্ধমান খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, খাদ্যনিরাপত্তার সাথে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ রুটি ও ভাত নেই তো শান্তি নেই। অনাদিকাল থেকেই রাষ্ট্রের মূল আগ্রহ পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা বিধান। কুরআন ও বাইবেলে উল্লিখিত যে, ইউসুফ আ: মিসরের খাদ্যঘাটতি মেটানোর পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। সম্ভবত ঝাউ রাজবংশের প্রথম দিকে, অসংখ্য চীনা সম্রাট ‘স্বর্গের আদেশ’ বা শাসনের অধিকার হারিয়েছিলেন, যখন তারা দুর্ভিক্ষ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তির জন্য খাদ্য কর্মসূচি চালু করার কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা বেশির ভাগই তার মিত্রদের জন্য খাদ্যের সহজলভ্যতা প্রদান করে। ইদানীং শোনা গেছে, শ্রীলঙ্কার সরকার পতনের জন্য খাদ্যঘাটতিও একটি কারণ ছিল; এমন অনেক উদাহরণ বিশ্বে রয়েছে।

পরিশেষে বলতে হয়, জাতীয় নিরাপত্তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অনুস্মারক, যা প্রমাণ করে- যে জন্য খাদ্য অপরিহার্য তা হলো জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২০১৮ সালের সভার ২৪১৭ নং রেজুলেশন; এখানে সর্বসম্মতভাবে প্রথমবারের মতো অনাহারকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের নিন্দা করা হয়। রেজুলেশনে আরো উল্লেøখ করা হয়, সশস্ত্র সঙ্ঘাতে খাদ্য প্রাপ্তির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রভাব রয়েছে। রেজুলেশনটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা ও সঙ্ঘাতের সময় খাদ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার গুরুত্বকে আরো নিশ্চিত করেছে।

লেখক : অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
ইমেইল : [email protected]


আরো সংবাদ



premium cement