৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩০ রজব ১৪৪৬
`

একটি সম্মোহিত সম্মেলন

লেখক : ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ - ফাইল ছবি

সুন্দরবনের পূর্বপ্রান্তে সুবিদখালীর হুলোয় হাইভোল্টের একটি সামিট বা সখ্যতার শীর্ষ সম্মেলন হবে এমন কথা বেশ কিছু দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। তোড়জোড় দেখে তেমনি মনে হয়। আমন্ত্রিত অতিথিদের নিরাপত্তা, তাদের সফরসঙ্গীদের সাদর আদর আপ্যায়নের আয়োজনের বাহার দেখে এ এলাকার বাসিন্দা সব সম্প্রদায়ের মধ্যে মুখরোচক কথাকাহিনীর ডালপালা শুধু গজায়নি সেগুলো লক লক করে বেড়ে চলেছে। খুব বড় যে একটা কিছু হতে যাচ্ছে এ ধারণারাও এখন সর্বত্র ঘুর ঘুর করছে। আজ দুপুরে দাতনে খালিতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় তথ্যমন্ত্রী হরিণা হাপান হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে জানালেন- ‘‘বিদ্যমান বিশ্ব বীক্ষায় বাবাহকু [বাঘ বানর হরিণ কুমির কনফেডারেশন, সুন্দরবন]-এর কাছে এটি অতি প্রয়োজনীয় প্রতীয়মান হয়েছে যে, শান্তি সৌহার্দ্য সুনীতি সম্মান সম্ভ্রম সুবচন ও সুশাসন নিয়ে ভাবুক ও চিন্তাবিদ, আঁতেল, আবেদ, টকশো চ্যাম্পিয়ন নেতৃবৃন্দের একত্রিত হয়ে বসা দরকার। সুনির্দিষ্ট কর্মভাবনার লক্ষ্যে সুশীল চিন্তাচেতনার চৌহদ্দি হাতড়ানো অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবাহকু আগামী কোনো এক পূর্ণিমার রাতে সুবিদখালীর শেষ সড়কে ‘বুনো হনুমান সম্মেলন কেন্দ্রে’ দু’দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করবে। এ লক্ষ্যে প্রেসিডিয়াম প্রধান স্বয়ং সুন্দরমিয়াকে প্রধান করে একটি অরণ্যনীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। দূরের ও কাছের সব জঙ্গলের জাঁদরেল ও জৌলুশধারী ধনমান মহলের সবাইকে এ সম্মেলনে শামিল করা হবে। কয়েকটি কর্মশালা ও সেমিনার, ডজনখানেক খোলাদ্বার বৈঠক, ঘণ্টায় ঘণ্টায় মিডিয়া ব্রিফিং, গগনবিদারী গানবাজনা লাফালাফি খানাপিনা নিয়ে নেতাদের ব্যতিব্যস্ত রাখার বন্দোবস্ত হয়েছে। বাবাহকু এ মহতী সম্মেলনের সফলতায় সবার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করে।’’

হরিণার সংক্ষিপ্ত বিবৃতি শেষ হতে না হতে ‘দুপুরের খবর’-এর প্রতিনিধি প্রশ্ন রাখেন- ‘বাবাহকু পরিষদের শেষ বছরে এতবড় সম্মেলন আয়োজনের পেছনে বিশেষ কোনো ধান্ধা আছে কি না।’ হরিণা হাপান দায়িত্বশীল সংবাদ বন্ধুর মুখে ‘ধান্ধা’ শব্দটার ব্যবহারে বিব্রত বোধ করেন, বলেন, বাবাহকুর মতো বহুমুখী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বয়েসী (সাফল্যের সার্ধশত বছর) সংগঠনের সম্মেলনের মধ্যে উদ্দেশ্য বিধেয় বিছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সবার মঙ্গলের কথা ছাড়া এ মুহূর্তে আমরা আর কিছু ভাবছি না।

বাবাহকুর ঘরজামাইতুল্য সংবাদমাধ্যম ‘উড়ো বিব্রতকর সংশয় সন্দেহ’-এর মোহন্ত মুখো সম্মেলন শেষে কোনো ‘ঘোষষা’র পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চান। বাবা হকু সংবাদ কেন্দ্রের পরিচালক শিয়ালেন্দু জবাবে জানান, ‘আমরা অবশ্যই চাঞ্চল্যকর সুবিদখালী ঘোষণার অপেক্ষা করতে পারি। একটা থিম কবিতা দিয়ে সম্মেলন শুরুর পরিকল্পনাও আছে।’ হরিণা হাসিমুখে যোগ করেন, ‘অনেক কিছুর জন্যই অপেক্ষার আমন্ত্রণ জানাতে চাই প্রচারবন্ধুদের।’ সিটিসির বার্তা বিভাগের তুখোড় প্রদায়ক প্রতুন পাখা দূরের প্রতিনিধিদের পরিচয় ও সংখ্যা সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে সুন্দরমিয়ার সচিবালয়ের গৌণ গায়ত্রী জানান, সম্মেলনে আগত নেতাদের নিরাপত্তা বিধানকে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন বিধায় তাদের নামধাম এখন এ পর্যায়ে বলা সমীচীন হবে না। সম্মেলনের বাজেটের আকার জানতে চায় ই-টাইমের ইফাজ ইরাদ। হরিণা জানালেন, ‘অর্থ অধিকর্তারা এখনো এস্টিমেটের কাজ শেষ করতে পারেননি।

‘সংবাদকর্মীদের মধ্যে মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল এ সময়। সংবাদমাধ্যমকে তথ্য জানানোর দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। অতি গোপনীয়তা বিধান করতে গিয়ে অসম্পূর্ণ তথ্য ও বক্তব্য প্রদানে খোদ সম্মেলনের সৌন্দর্যকেই ম্লান করে দিতে পারে। তবে সব কিছু প্রকাশ্য করতে গেলে ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জন সুদূরপরাহত হতে পারে এ বিষয়টির প্রতিও সবার নজর দেয়া দরকার বলে হরিণা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইতোমধ্যে সংবাদসম্মেলনে উপস্থিতজনদের হাতে হাতে পৌঁছানো হয়েছে প্রেস রিলিজের কপি, যাতে বিবৃত হয়েছে-

বাবাহকু পরিষদের ন্যায়নীতিনির্ভরতা ও সুবচন সুশাসন সেলের প্রধান পরিশীলিত পাকাড়িয়া সম্প্রতি পলিটব্যুরোতে দেয়া এক সন্দর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন যে প্রাচীনকালের প্রাজ্ঞ পণ্ডিতেরা যেসব বড় বড় কথা বলে গিয়েছিলেন দিন দিন দেখা যাচ্ছে সেগুলো কেমন যেন এলোমেলো ও ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ড অধিবাসী ম্যালথাস নামের এক জনসংখ্যাবিশারদ বলেছিলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। স¤প্রতি এ অঞ্চলের একটি বড় লোকালয়ের হাফডান সেন্সাসে দেখা গেছে জনসংখ্যা জ্যামিতি তো দূরের কথা গাণিতিক হারেও বাড়েনি। তাদের কানে পৌঁছিয়েছে এ ব্যাপারে স্বয়ং ম্যালথাস সাহেবও নাকি বিচলিত বোধ করেছেন। ম্যালথাস সাহেবের সেই অ-তারবার্তা পেয়ে এক বয়েসী বৃদ্ধ বালক জানিয়েছেন সে লোকালয়ের ললিতমোহন মন্ত্রক সেন্সাস-এর বাইরে আরো বারো শতক জনবৃদ্ধির সম্ভাবনার সন্দেশ। গ্রেশামস নামের আরেক ভদ্রলোক টাকাপয়সা সরবরাহ ও চলাচল নিয়ে যা বলেছিলেন অনেক সমাজে টেকো ও পদ্মলোচন অর্থবিশারদদের কারসাজিতে তা নাকি আর খাটছে না।

সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো এরা হিসাব কিতাব নিরীক্ষা পরিসংখ্যান তথ্য-উপাত্ত এমনকি কৌটিল্য পণ্ডিত গোঁজামিলের বিপক্ষে যেসব মহাজনবাক্য আউড়িয়ে তাদের সময়ে যেভাবে বাজিমাৎ করেছিলেন আজকাল তার নাকি অধিকাংশ বেমানান, বিস্বাদ ও বেকুবের বাক্য বনে যাচ্ছে। অনেক মহাজন বাক্যও, যেমন, ‘অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি’ নাকি আজকাল অনেকে স্থায়ী সত্যবাক্য বলে মানাতে পারছেন না। বিষয়টি বেশ কৌতূহল উদ্রেক করে চলেছে। এসব নিয়ে আজকাল অনেকে বেশ বিব্রতকর আচরণের শিকার হয়ে চলেছেন। গুরুর বাড়ি যেয়ে গরু এষণায় অতীতে যেভাবে দেয়া হয়েছে দক্ষিণা এখন উল্টো দক্ষিণা (মিথ্যা গবেষণা সনদ) হাতে ফিরতে হচ্ছে শিষ্যকে। বড় ধরনের অন্যায় অনিয়ম করেও অন্যরা অতীতে এমন করেছিল এ দোহাই দিয়ে বর্তমানকেও হালাল ও যুক্তিযুক্ত করতে চান অনেকে।

অতীতের ভালো কাজের উদাহরণ নয় খারাপ উদাহরণ টেনে সেই ভুল ও অনিয়ম অব্যাহত রাখা যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে; এমনকি আরো বেশি অনিয়ম করার প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা যায়। বর্তমানে কী করা হচ্ছে সেদিক থেকে দৃষ্টি সরাতে পূর্বপুরুষের স্বপ্ন ও আদর্শ চর্বিত চয়নে ব্যস্ত যেন সবাই। অতীতের অভিযোগ পেড়ে বর্তমানে সাধু পরিচয়ে পার পেয়ে যেতে চাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

অনেকের উপলব্ধিতে এটা যেন থেকেও নেই যে আজকের বর্তমান একদিন অতীত হবে এবং এটি ভবিষ্যতে বিশ্লেষণের ব্যাপার হবে। বাবাহকুর বিশ্ববীক্ষা কেন্দ্রের আলোচনায় তুলে ধরা হয়েছে যে, এখন নিজে গর্ত তৈরি করে সে গর্তে পড়লে তার দোষ চাপানো হয় অন্যের ওপর।

বাবাহকুর সমাজবীক্ষণ কেন্দ্রের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় সমাজে সর্বত্র এখন অন্যের ওপর দোষ চাপানোর মান ও মাত্রা ব্যাপক বাড়ছে বলে ধরা পড়েছে। কেন্দ্রীয় পরিষদের আধ্যাত্মিক উইংয়ের প্রধান চাচাইয়া চানজা এক ডিসপাচে জানিয়েছেন স¤প্রতি স্বর্গে নাকি টমাস ম্যালথাস, ডেভিড রিকার্ডো, অ্যাডাম স্মিথ, জন স্টুয়ার্ট মিল, গ্রেশামস গং একত্রে এক মন্ত্রণাসভায় মিলিত হন এবং তারা মানব সমাজে সাম্প্রতিক সার্বিক প্রবণতার পরিবর্তনশীলতায় দারুণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মনে হয়েছে তাদের ধ্যানধারণাগুলো সময়ের প্রেক্ষাপটে পুনঃপর্যালোচনা বা পরিবর্তনের পরিবেশ সূচিত হচ্ছে। সে বিষয়টি তারা মাথায় রাখছেন। আহূত হলে সে কাজে তারা সাড়া দিতে রাজি। এ ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনে ই-পরামর্শক হিসেবে ধরাধামে অনলাইনে আসতে আগ্রহী।

উপর্যুক্ত অবস্থা ও ব্যবস্থার আলোকে বাবাহকুর উচ্চ পরিষদের বিগত অধিবেশনে সাপখালীর সরিসৃপ গ্রুপের প্রতিশ্রুতিশীল সরদার সখন সসমিয়া একটি মুলতবি প্রস্তাব আনেন। তিনি প্রস্তাব করেন বাবাহকুর উচ্চ পরিষদ অধ্যক্ষ শিয়ালেন্দু মামাইয়া যেন বাবাহকু পরিষদকে নির্দেশনা দেন একটি সর্বদলীয় সর্বজনীন সম্মেলন করতে যেখানে উদ্বেগজনক ব্যাপারগুলোর ওপর ব্যবচ্ছেদ কিংবা রোডশো জাতীয় কিছু করা যায়। অধিবেশনের সমাপ্তি দিনে ৪২ পক্ষে এবং বিপক্ষে ১১ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। তদপ্রেক্ষিতে বাবাহকু পরিষদ অপারেশন ‘পুনর্বিবেচনার বিবেচনা’ শিরোনামীয় কার্যসূচির আওতায় একটি মহাসম্মেলন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাবাহকু তার অধিভুক্ত সব সংগঠন সম্প্রদায় শাখাকে সাড়ম্বরে এই সম্মেলনে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছে।’

সম্মেলনের সূচনা হবে সমবেত কণ্ঠে ‘দুই ইলিশের ইতিবাচক বিবৃতি’ শীর্ষক ভাব কবিতা পাঠ, পঁচিশটি কবুতরের এয়ার মার্চ পাস্ট, দুই কুড়ি আট ডজন ঘটি ঘোড়ার স্যালুট প্যারেড এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের গলায় বকুল গাঁদা গোলাপ সমন্বয়ে তৈরি মালা পরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। বুনো হনুমান সম্মেলন কেন্দ্রে মূল উদ্বোধনসহ ষোলটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সুবিদখালী থেকে কাছের ও দূরের মেহমানদের জন্য প্রমোদতরীতে বলেশ্বর ও হরিণাঘাটা মোহনায় জলকেলির ব্যবস্থা করা হবে। সম্মেলনের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারিত হয়নি। দেখা যাচ্ছে প্রতি মাসে বাবাহকু পরিষদের জন্য কোনো না কোনো স্মরণীয় বরণীয় পালনীয় দিবস পড়ে যাচ্ছে। গোটা মাসে ওই একটা দু’টা আনন্দ কিংবা সর্বনাশের উৎসবের আমেজে কেটে যায়। কত বচন কত অমৃতবাণী কত ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মহড়া। বাবাহকু পরিষদের আগামী পর্ষদসভায় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হবে।

লেখক : রসরচয়িতা
[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement
চকরিয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী খুনের ১৫ দিন পর আহত শাশুড়িরও মৃত্যু কিয়েভের বাহিনী অধিকৃত গ্রামে ২২ জনকে হত্যা করেছে : রাশিয়া ইসলাম ব্যাতিত সামাজিক সুবিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত সম্ভব নয় : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান চাঁদপুরে পিকআপভ্যানের চাপায় মোটরসাইকেল-আরোহী নিহত শনিবার সুনামগঞ্জে কর্মী সম্মেলনে যোগ দিবেন জামায়াত আমির ৮৯ শতাংশ ইসরাইলিই মনে করে, গাজায় তারা ব্যর্থ : জরিপ ময়মনসিংহে মোটরসাইকেল উল্টে দুই তরুণের প্রাণহানি সিলেটে দুই বাসের সংঘর্ষ, আহত ২০ রংপুরে পাঁচ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন রুখতে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে : ড. আবদুল কাদের মেক্সিকোর সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বারোপ আনসারীর

সকল